আরেকটা গল্প!
ইদানীং রাতে ভালো ঘুম হয় না সুজনের, কারণটা আর যাই হোক প্রেমে পড়া নয় এটা মোটামুটি নিশ্চিত; তবু আরও নিশ্চিত হতে খুব প্রয়োজন পড়ল একজন একান্ত মানুষকে খুঁজে পাওয়া। সুজনের একান্ত মানুষ অন্তত কাছের বন্ধুবান্ধব কারা এটা জানা দরকার....
প্রয়োজনের তাগিদেই আমাকে খুঁজে বের করা হলো। তদন্তকারী কর্মকর্তা ইতোমধ্যে যে তথ্য উদ্ধার করেছেন তাতে দেখা যাচ্ছে সুজন গত সপ্তাহে আমাদের বাসায় এসেছেন দু'বার। যা আর কারও ক্ষেত্রেই ঘটেনি। আমি একটু চমকালাম! সত্যিই নাকি! সুজনের আর কোনও বন্ধু নাই? আমিই সবচে কাছের? তা হয় কি করে।
এটা ঠিক যে সুজনকে আমি কখনও বিশেষ দিবসে এসএমএস দিতে ভুলি না। ওও রিপ্লি দেয় অথবা নিজেই আগে পাঠায়। সুজন আমার কোনও প্রয়োজনে সর্বাত্মক সক্রিয়তা দেখায়, আমিও....
কিন্তু আর কোনও আলামতই পাচ্ছি না যা থেকে আমিই সুজনের সবচে কাছের বন্ধু এটা প্রমাণ করা যায়। তবু ওর বেয়াই অর্থাৎ ওর বোনের দেবরের কথায় চমকের ভাবটা দূরে রেখে স্বাভাবিকভাবেই বললাম-----আমি কী করতে পারি?
তিনি সঙ্গে সঙ্গে উত্তর দিলেন, যেন জানতেন এই প্রশ্নটাই আমি করবো। বললেন- কিচ্ছু না স্রেফ উদ্ধার করে দেবেন সুজনের ইদানীং রাতে ঘুম হয় না কেন?
তার আগে এটা কি জানতে পারি? যে হঠাৎ সুজন এতোটা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠল কেন?
দেখুন সুজন ওর পরিবারের কাছে বরাবরবি গুরুত্বপূর্ণ ও হয়ত আপনাদের কাছে নিজেকে সেভাবে উপস্থাপন করেনি...
কিন্তু রাতে ঘুম হচ্ছে না এটা কী করে বুঝলেন? ওর রুমে ও ঘুমায় না কী করে তা কী করে জানলেন?
ও ঘুমায় না রীতিমত রোমহর্ষক ব্যাপার! রাতের বেলা ছাদে বেলকনিতে হাটাহাটি করে।
ওদের বাসাতো দুইতলা, ছাদে কেউ হাটলে টের কিছুটা পেলেও পেতে পারেন, কিন্তু সেটা যে ওই এটা কে কীভাবে নিশ্চিত হলো বলেনতো।
আরেব্বাস! আপনিতো দেখছি উল্টো আমাদেরকেই জেরা করতে শুরু করলেন?
সাহায্য করতে পারবেন কি না সেটা বলুন, অযথা সময় নষ্ট করবেন না।
এগজেক্টলি তাই! আসলে আমি ওর ব্যাপারে কিছূই জানি না। সেজন্যই এতো আবলতাবোল বললাম তবে...
হ্যাঁ তবে
বেয়াই ভাবলেন হয়থ এই তবে টাই একটা কিছূ হবে... খুব আগ্রহ তার। আমি হতাশ করলাম তাকে...
তবে...
তবে আমি বলতে পারি ওর সাথে আমার পরিচয়টা কীভাবে হলো, আমার সাথে ও কী কথা বলে, ওর বন্ধুরা কে কে আছে এই তালিকাটা দিতে পারি...
তবে
তবে? আবার আরেকটা তবে?
জ্বি! তবে তার আগে আমাকে জানতে হবে ওর কোন আচরণটার জন্য আপনারা বিশেষ চিন্তিত। এ যুগের ছেলেমেয়েরা এম্নিতে অনেক রাত করে ঘুমায়...এটা নিয়ে..
নারে ভাই ওহ স্যরি আপু... আসলে ব্যাপার আরও আছে, সবটাকি বলতে পারি? তাকায় সঙ্গের লোকটির দিকে...থাক আপনাকে বলে কাজ নেই। আপনি এটুকু বলুন যে ওর কাছের বন্ধুরা কারা?
মেয়ে বন্ধু না ছেলে বন্ধু?
মেয়ে বন্ধু... আছে নাকি? সেটা হলেইতো একটা কিনারা হয়ে যায়।
আছে, মেয়ে বন্ধুটি হলো টুম্পা সরকার আর ছেলে বন্ধুদের মধ্যে সবচে কাছের মনে হয় দিলীপ, হিন্দুবন্ধু।
ছ্যা ছ্যা ছ্যা... হিন্দু বন্ধুও আছে?
বেয়াই মশাইয়ের এই ডায়লগটা শুনে মনে হলো তিনি অতীতে যাত্রাপালা বা মঞ্চনাটকের নট ছিলেন টিলেন। মধুসূদনের নাটকের মতো ....তবে লোকটা যে বেশি সুবিধার হবেন না তাও বুঝতে কষ্ট হলো না। হিন্দুরা বিশেষকরে বাংলাদেশের হিন্দুদের কথা শুনে কেউ ছ্যা ছ্যা করে উঠবে এমন পরিবেশ বাংলাদেশে হয়নি। এখানে হিন্দু-মুসলমান এমন মিলেমিশে একাকার হয়ে আছে যে কারও বুঝতে পারাই মুশকিল! আমাদের এক বড়ভাই ছিল ভরত! সে যে হিন্দু তা আমি আজও বিশ্বাস করতে পারিনি। সবার সঙ্গেই তার দারুণ ভাব, দোস্ত দোস্ত বলে একসঙ্গে খায়, ওঠেবসে....
বাসা কোথায়?
খুঁজে বের করেন? আপনার চোখে আমি গোয়েন্দাসুলভ দীপ্তি দেখতে পাচ্ছি। যেভাবে আমাকে খুঁজে পেলেন.....
তবে ব্যাপারটাকে আমি খুব বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি না। সুজন রাতে ঘুমায় না, হয়ত কারও সাথে মোবাইলে কথাটথা বলে, পায়চারি করে....
আরে তাহলেতো হতোই ম্যাডাম!
বাহ! লোকটার মধ্যে আসলেই নাটুকে ভাব আছে! কখন কী বলছে কোনও ঠিক নাই! একবার বলে ভাই একবার বলে আপু এখন আবার ম্যাডাম!
তো আর কি ব্যাপার আছে বলুন!
বলবো!
বলুন, বলতে চাইলে বলুন! আর না চাইলে....
আচ্ছা শোনেন, ও তো আপনার বন্ধু তাই না।
এবসুলেটলি!
ওর কোনও দোষ দেখে আপনি নিশ্চই ওকে ঘুণা করবেন না, পাগল টাগল ভাববেন না...
নিশ্চই না।
ও প্রতি রাতে কিছু আজব আজব কাজ করছে...
কী রকম?
এই ধরেন...আবার ভাবে ..আমতা আমতা করে...
বলতে না চাইলে না বলাই ভালো(আমি প্রেসার করি)
না মানে, ও রাতে উঠে কেন যে গোসল করে সেটাই বুঝতে পারছে না কেউ। আমি এলাম আপু ডেকে পাঠালো। এসে দুদিন ওর সঙ্গে থেকে রীতিমত ভয় পেয়ে গেছি।
রাতে গোসলকরলে ভয়ের কী আছে? যেই গরম পড়েছে! চৈত্রমাস!
আরে তাহলেও হতো। ভেজা কাপড় পড়ে ঘুমিয়ে থাকে।
ওইতো একই কারণ!প্রচণ্ড গরম!আর হাসিনা ফিরৎ আসছেতো বিদ্যুৎ আবার কানামাছি খেলছে...
আরে রাখেনতো রাজনীতির প্যাচাল! বলেন এর সমাধান কি? আর নাহয় বলেন কার কাছে গেলে পাওয়া যাবে?
টুম্পা আপু অথবা দিলীপ ওরা কেউ বলতে পারবে....
সেইযাত্রায় বেয়াই লোকটার হাত থেকে বাঁচলাম। রুমে এসে বই নিয়ে বসলাম। কিন্তু সত্যিই ব্যাপারটা ভাবনায় ফেলল! এমন আচরণের কারণ কি? ভাবতে বেশি সময় পেলাম না। মা খেতে ডাকল। বেয়াইদের সামনে ডিনার দেওয়া যায়নি বাঙালির একটা ভদ্রতা আছে প্রথম অতিথিকে কিছুতেই খালিভাত দেওয়া যায় না। খালিভাত মানে পোলাওগোশত ছাড়া দেওয়া ঠিক না।...তার চা আর লাচ্ছা সেমাই খেয়ে বিদেয় হলো।
আমিও খাওয়া দাওয়া শেষ করলাম। সুজনের ভাবনায় আমারও মনে হয় ঘুম পাচ্ছে না। অনেক রাতে ফোনটা বেজে উঠলে কেন যেন খুব উৎসাহ পেলাম ফোন ধরতে....যেন মজার বা ইন্টারেস্টিং কোনও ফোন হবে।
কিন্তু না মোটেও ইন্টারেস্টিং হলো না। টুম্পাদি ফোন দিল। সেকি ঝাড়ি তার। তুমি কী আজব একটা লোকরে পাঠালা আমার কাছে বলোতো!
টুম্পাদি! আমি একটু ন্যাকামু করার চেষ্টা করলাম!
তুমিতো আজব লোকদের ব্যাপারে সবসময় ইন্টারেস্টিং ফিল করো! ক্ষেপলে কেন?
আরে লোকটা কী বলে শুনবা!
তুমিকি কিছু খাচ্ছ নাকি আপু?
আরে হ্যাঁ, ব্যাটারা গেলোতো এইমাত্র, খাওয়ার সময় পাইনি।
বলোকি এতো রাত পর্যন্ত?
হ্যা নিজের তালতো ভাই ঘুমাচ্ছে না এই উসিলায় সবার ঘুম হারামকরার পায়তারা।
তো তোমাকে কী বলল একটু বলোতো!
বলছি! দাঁড়া... খাওয়া প্রায় শেষ...
আরে কী যে ইন্টারেস্টিং! শুনলে তুই হা হয়ে যাবি, লোকটা আমাকে সরাসরি বলে সুজন নাকি আমার প্রেমে পড়েছে... আমি যেন ওকে বাঁচাই.... ও নাকি পাগলামি শুরু করেছে। বলতো!
হায়হায়! লোকটারকি কোনও কাণ্ডজ্ঞান নেই? তুমি না তার সিনিয়র?
আরে সেই জ্ঞানকি ঐ খেতটার আছে নাকি?
কী বলে খেত টেত না, মনে হয় বেশি পাকনা।
সে যাই হোক শুনেতো আমার পিত্তি জ্বলে যায়।.... সুজন কে বললেতো ব্যাটারে আস্ত রাখবে না।...
তোমাকে আর কিছু বলেনি? কোনও বন্ধুবান্ধবের ঠিকানা চায়নি?
না, চাইলেও আমি দিতাম না। এই পাগলটা একটা চালাকি শুরু করেছে...
কিন্তু সুজন কি পাগলামি করছে সেটা কিছু বলেছে?
বলেছে, ঘুমায় না, হাটে
রাতে গোসল করে, ভেজা কাপড়ে ঘুমায় এসব বলেছে?
না, এসব সত্য না
আমি বেশ ইন্টারেস্টিং ফিল করছি...
তুমি বোকাতো তাই একটু রগড়ে গেলো...
পরদিন সুজনকে খুঁজে বেরকরলাম। কোচিং থেকে বেরিয়ে স্ন্যাক্সে বসেছিল।
কীরে কীসব শুনি তোকে নিয়ে...
কী শুনেছো?
তুই নাকি রাতবিরাতে গোসল করিস?
হোয়াট! দেখছিস! তোদের না বলেছি এইটা ওই ব্যাটার কাজ? দেখ নিজে কাজটা করল আবার বলে গেলো আমিই নাকি... ওর বন্ধুদের স্বাক্ষী মানে।
আরে শোনো ওদের কাছে সেটাই বলছিলাম! গত কয়েকদিন ধরে আমার উপর একটা শনি আছড়ে পড়েছে... আমি দিব্যি ঘুমিয়ে থাকি ভালোমানুষ সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি আমার সমস্ত শরীর ভেজা। যেনো গোসল করে এসেছি....
বেয়াই শালা এমনই ত্যাদোর! দেখোতো এমন ইয়ার্কি কেউ করে। রাতে ঘুমন্ত মানুষের গায়ে পানি ঢেলে দেয়!
তাই নাকি? তা তুই টের পাসনা?
আরে আমার যে আজকাল কী ঘুমটাই পায়, কিচ্ছু টের পাই না।
ওর আরেক বন্ধু বলে- তাইতো বলি চান্দু ফোন ধরে না ক্যান, মরা ঘুম দ্যাও!
ঘুমটা একটু পাতলাকরো। এদিকে তোমার নামে সেই লোক কী ছড়াচ্ছে তা যদি শোনো!
কী ছড়াচ্ছে?
টুম্পাদির কাছে যাও, শুনতে পাবা।
বলো না কী বলেছে? তুমি বলো! দোস্তনা!
আরে আমি বলতে পারবে না, তুই যা টুম্পাদি তোরে কী করে তাইদ্যাখ!
মানে খারাপ কিছু কইছে!
খাইছে আর বোধয় সমাজে মুখ দেখানো যাবে না। আচ্ছা বলতো এই পাগলটারে কী করি?
বাড়ি থেকে তাড়া...
আরে সেত এম্নিতেই চলে যাবে। আপুর দেবর। কয়দিন থাকবে। কিন্তু সেইলোক যেভাবে আমার ব্যাপারে অপপ্রচার চালাচ্ছে....
তোমাকে খুঁজে বের করলো কীভাবে?
তুই বলছিস! তুই নাকি বলেছিস আমি তোর সবচে কাছের বন্ধু?
হরে আমরা সব তেজপাতা। সেইদিন পরিচয়, এই কোচিংএ... আর এখন তারা তুই তুমিতে... আর আমরা আজও কোনও মেয়ের কণ্ঠে তুইটা শুনতে পরলাম না.... পোড়া কপাল!
টিজ করবানা পলাশ!
স্যরি স্যরি!
দেখো আমি কিন্তু তোমাদের বন্ধু না।
কেন , কেন বন্ধু না। তুমি সজনের বন্ধু হতে পারলে আমাদের বন্ধু নয় কেন?
বন্ধুত্ব কোনও রিলিফের মাল না, যে লাইনধরে যে দাঁড়াবে সবাই পাবে। বন্ধুত্ব তৈরি করতে হয় আলাদা আলাদা ভাবে।
তারচে বলো ওর সাথে তোমার সম্পর্ক অন্যরকম! বন্ধুত্ব নয়....
তোরা থামবি?
কেন দোস্ত! খারাপ লাগছে? স্পেশাল বন্ধু পাইছোতো, এই চলতো, আমরা আলাদা আড্ডা মারি।... ওরা উঠতে যাচ্ছিল। আমি বললাম
দেখো পলাশ-রিপন তোমরা ওর বন্ধু সেভাবেই আমার সাথে পরিচয়, তেমরা কে কি করো, বা কে কোথায় থাকো এসবের কছিুই আমি জানি না।
জানলেই পারো।
দেখো আমি সেরকম ইন্টারেস্ট ফিল করছি না...
ওও আচ্ছা!
আর দেখো... সুজনের সঙ্গে পরিচয় হলো...
হ্যা আমরা জানি...
তুমি খূব সাহসী, সুজনের মা অসুস্থ, রক্ত প্রয়োজন। কোচিংএ ঘোষণা দেওয়ার পর কোনও ছেলে সাহস করেনি, তুমি মেয়ে হয়ে .....
কিন্তু আমরা তোমার বন্ধু নই সেটা কেন বললে?
তোমরা কিন্তু কেউই আমার সঙ্গে আলাদাভাবে পরিচিত হওনি। সুজনের সঙ্গে ঘুরছো ফিরছো... সেইভাবে বন্ধু!
দেখো আমরা সুজনের মতো উঁচু স্ট্যাটাসের নয়। আমি মাইক্রো চালাইম ভাগ্যের ফের, আমারও কথা ছিল সুজনের মতো ইন্টারপাস করে বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢোকার।...যদিও সুজনের ট্র্যাক থেকে আমরা ছিটকে পড়েছি তবু সুজন কিন্তু আমাদের বন্ধুই মনে করে...অবশ্য এখন তোমাকে পেয়ে...(বন্ধূকে খোঁচাদেয়)
আমি বলি-
সুজন তেমন নিচুক্লাসের নয়। এটা তোমাদের ভুল ভাবনা।
যাইহোক! আমি আসছি! সুজন আমি গেলাম, তোমরাও থাকো, কষ্ট নিও না, আমি আসলে ওরকম ফ্লাইং কথা পছন্দ করি না।...সুজন পারলে একবার টুম্পাদির সাথে দেখা করো। তবে পীঠে কিছু বেধে যেও।... হাসতে হাসতে বিদায় নিলাম...ভাবটা এমন যেন কিছুই হয়নি।
টুম্পাদি রাস্তায় দাঁড়িয়ে ছিল।আমাকে দেখে বলল এতো দেরি করলি যে?
আরে ...
সুজনের সাথে দেখা হয়েছে?
তুমিকি খুব এক্সাইটেড ফিল করছো টুমপাপু।
আরে না গাধা, আমি দেখতে চাচ্ছি এসব শুনে ওই গাধাটার অবস্থা কি হয়!
আমি বলছি পীঠে ছালা বেধে তোমার সাথে দেখা করতে।...
আজই করতে বলতি...
দাঁড়াও বলে আসি।
থাক।
শোন চল ওদের বাসায় যাই, বাসার পরিস্থিতিটা একটু দেখে আসি, আর বেয়াইটাকেও একটু নাচিয়ে আসি। যাবি?
না, আপু সুজন যা বলল তাতে লোকটা মনে হয় বেশি সুবিধার না,
সেটাতো আমরাও ধারণা করেছি...
না, শুধু তাই না, লোকটা নিজে পাগলামি করে ওর ঘাড়ে চাপিয়ে দিচ্ছে।
ধরো আমরা গেলাম, না আবার কী বলে দেয়...
থাক কাজ নেই। চল আমাদের ছাদে গিয়ে বসি। বাসায় কাজ আছে?
নাহ! সন্ধার আগে গেলেই হবে।
আমি আর টুম্পাদি ছাদে উঠলাম। ছাদটা অনেক সুন্দর! আমি মনে হয় দুটো জিনিস কখনও অসুন্দর দেখিনি এক হলো নদী দুই হলো ছাদ । এ দুটো যায়গায় গেলেই মনটা কেমন ভরে যায়।
আমরা ছাদে উঠে পোলাপানের ফিল্ডিংমারা দেখলাম।....
অদ্ভুৎ সব দৃশ্য দেখা যায় ছাদে গেলে।
ফ্লাইং কিস, নানানা অঙ্গভঙ্গি, ইত্যাদি।
আমাদের ডানপাশের একটা ছাদ থেকে এক ছেলে তার মোবাইল নাম্বার পাঠাচ্ছে কী কৌশলে তাই দেখছিলাম।
প্রথমে একটা ইট রাখলো। দূরে এক মেয়েকে সেটা দেখাচ্ছে। ইট টা সরিয়ে নিল। হাতের ইশারায় দেখালো কিছু নাই, শুন্য এতো বড় গোল। একটা ইট তারপর ৫টা ইট।
ভাগ্য ভালো যে টেলিটক নাম্বার নয়তো খবর ছিল। বাংলালিংক হলে ৯টা লাগত। ৫টা ইট নামিয়ে আবার ৫টা ইট উঠালো। তারপর দুইটা, তারপর সেগুলো নামিয়ে ৩টা ইট দেখালো। তারপর আটটা। এবার কষ্ট হয়ে গেলো। ইট এতোগুলো নাই। কোত্থেকে যেন খুঁজে আনলো। তাতেও হলো না। তারপর আবার একটা ইট ভাঙলো। ভাঙতে গিয়ে হাতে ব্যথা পাওয়ার ঢঙ করল।....
এভাবে একবার ইট নামায় আর উঠায়। টুম্পাদি বলে ছেলেটা কী করছে? একবার ইট উঠায় একবার নামায়!
আমি মনোযোগ দিয়ে দেখছিলাম। আপুকে বললাম খেয়াল করো, মোবাইল নাম্বার দিচ্ছে।
তাই নাকি? দারুনতো বুদ্ধি!
একটুপর আবার বলে ছেলেটা এতো গাধা কেন? ইট সবগুলো নামায় কেন? ৩হলে বাকীগুলো নামিয়ে নিয়ে এরপর আবার বাকী কয়টা তুললেই হয়।
আমিও ভেবে দেখলাম তাইতো!
নাম্বারটা মনে হয় আমিও ধরে ফেলেছি। ০১৫৫২৩৮৫২১... এর পরের ডিজিটটা বুঝতে কষ্ট হচ্ছে। ইটগুলো এখনও আছে। সাত না আট তাই বুঝতে পারছি না।
রাতে একবার ফোন দিয়ে দেখবো?
রাতে সত্যিই এটা নিয়ে খুব টেনশনে কাটালাম। একটা অপরিচিত মানুষকে কীভাবে অ্যাপ্রোচ করবো।... সে কী বলবে, যদি দেখি সাত আট দুটো নাম্বারেই লোক আছে...
ইত্যাদি ভাবতে ভাবতে ঠিক করলাম কোনও ছেলে বন্ধুকে দিয়ে ট্রাই করাবো।
পরদিন আবার ছাদেওঠার জন্য মন আকুপাকু করছিল। ওদের কি যোগাযোগ হয়েছিল নাকি হয়নি? কীভাবে জানবো?
টুম্পাদিকে বললাম- সে বলে তোর মাথা থেকে এখনও ভুতটা যায়নি? সুজনের খবর কি জানলি সেটা বল?
ধুর! তুমি আছো সুজনের চিন্তায়, এদিকে কতোবড় মজার ঘটনা ঘটে যাচ্ছে... আচ্ছা তুই যা ছাদে যা, আমি একটু দেখি সুজন যায় কি না। ওকে দেখেছিস?
আজতো আমার কোচিং ছিল না। ওর ছিল কি না!
আমি দৌড়ে ছাদে উঠলাম। চারপাশের ছাদে অনেক লোক দেখা যায়। কিন্তু ওদের চিনবো কী করে? তবে ওই ছাদটায় একটা ছেলে দেখছি মোবাইলের ভঙ্গিতে কথা বলে যাচ্ছে। এই ছেলেই কি সেই ছেলে। এতদূরের দখো একজন মানুষের সঙ্গে কি হতে পারে কোনও রিলেশন? না দেখা মানুষের সঙ্গেওতো হয়....
আমি নাম্বারটায় ফোন দিলাম দেখলাম ছেলেটা ফোন ধরছে না, কলওয়েটিংও না। সাথে সাথে কেটে দিলাম, তারপর ভয়ে ভয়ে অপেক্ষা করছিলাম কে না কে ব্যাক করে ঝাড়ি দেয়!...
সত্যি সত্যি ব্যাক করল! আমি ধরলাম না। আবার রিং হলো, এখন কাকে দিয়ে ধরাই? কোনও পিচ্চি পেলে বেঁচে যেতাম!
ভাগ্য ভালো পেয়েও গেলাম! অন্যকে। ওকে ফোন দেওয়া মাত্র সেকি খুশি! হ্যাল্লো! হ্যাল্লো মাম্মা! এই বান্দরটা মামাদের ভক্ত! ফোনে সবাইকে তাই মামাই মনে করে। বেশ চলল কথা । পিচ্চিদের সঙ্গে কেউ মিসবিহেব করে না, সাধারণত। লোকটা ওর নাম জানল। নাম জানতেও অনেক সময় লেগেছে, হয়ত অন্য নামটা কেউ রাখে না তাই।
কিন্তু কে জানতো সে আবার ফোন করবে?
হ্যালো! অন্য আছে?
না, ওতো নাই! কে বলছিলেন?
আমি রিশান!
ও আচ্ছা! তো অন্যর সাথে কীভাবে পরিচয়?
ও একদিন আমাকে মিসকল দিয়েছিল,
ও আচ্ছা, আচ্ছা,তো আজও কি মিসকল দিয়েছিল?
না, তা না আসলে ও এতোসুন্দর করে কথা বলে, আর মাম্মা বলে ডাকে...আমার খুব ভালো লেগেছে ওকে, ওকে কখন পাওয়া যাবে? ও আপনার কে হয়?
কী মনে হয়? আমার মেয়ে
ভাগনি বা ভাতিজিকেও মেয়ে বরা যায়। অসুবিধা নাই। যাইহোক আমি কি মাঝে মাঝে ওর সাথে কথা বলতে পারি?
কীভাবে বলবেন?
ফোনে!
এই ফোনটাতো ওর নয়।
আ আচ্ছা! ফোনটা আপনার।
আপনার কি মনে হয় ওই পিচ্চিটারও ফোন আছে?
আসলে...
ছেলেটা বিপদে পড়েগেছে....আমার খুব মজা লাগে।
আচ্ছা কথা বলবেন তবে আর একবার। ওকে!
কখন?
ওকে পেলে আমি আপনাকে ফোন দেবো! ঠিক আছে?
অনেক ধন্যবাদ! শুনুন আপনি যেন আবার ফোন দিতে যাবেন না।....
ছেলেটার ব্যক্তিত্ব অনেক টনটনে, আর একবারও ফোন দেয়নি। অথচ ছেলেরা দেখেছি কোনও অজুহাতে মেয়ে কণ্ঠ পেলে আর ছাড়তেই চায় না। ইনিয়ে বিনিয়ে কতো রকমের সম্পর্ক জোড়া দিতে চায়।... ছেলেটি তা চায়নি।
আমি আর ফোন দিলাম না, ছেলেটিও আর চায় না। তিনদিন পর ফোন দিলাম নিজের ভিতর লড়াই করে হেরে গিয়ে। বললাম- ও আসলে ছিল না, বেড়াতে গিয়েছিল।
এখন আছে?
হ্যাঁ, কথা বলবেন?
একটু দিন...
ওরা কথা বলে...
এভাবেই একটা ব্রিজ তৈরি হলো।
অন্যর খুব অসুখ! ওকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। রিশান শোনার পর যেন পাগল হয়েগেছে ওকে দেখার জন্য। আমার মনে হলো ওকে দেখার জন্য এটাকি ভান! টুম্পাদিও বলে আসলে ওসব কিছু না, ছেলেটা তোকে দেখার জন্যই মরীয়া! আমি বলি আচ্ছা পরীক্ষা করা যাক।....
অন্যর হাসপাতালের ঠিকানাটা বললাম, আমি ঠিক সেসময় বাসায় চলে এলাম।... আমার নিজেরও খুব কৌতূহল হচ্ছিল ছেলেটাকে দেখার জন্য। টুম্পাদি ছিল, ছেলেটার সঙ্গে ওর দেখা হয়। গায়ের রঙ কালো, তবে অনেক স্মার্ট! সাদা একটা শার্ট পড়াছিল, ওয়েসটেকস এর বোধয়, কারও সঙ্গেই তেমন কথা বলেনি, পুরোটা সময় অন্যর কেবিনে দাঁড়িয়ে থেকেছে। সবচে অবাক হলাম ছেলেটার চোখে পানি দেখে...
ফোন না করে ভাললাগছিল না। আমাকে না পেয়ে ফিলিংসটা কেমন হলো সেটাওতো জানতে হবে। তবে ব্যক্তিত্ব ধরে রাখতে গিয়ে বললাম- একটা কথা খুব জানতে ইচ্ছে করছে কিছু মনে করবেন না,
আচ্ছা বলুন!
আপনি কি সেদির অন্যর অবস্থা দেখে কেঁদে ফেলেছিলেন?
কেন বলুনতো?
বলুন না! কেন কাঁদলেন?
আপনি দেখেছেন?
না টুম্পাদি বলল....
খুব মজার আপু।
খেয়ে দেখেছেন?
ধ্যাত কী বলেন?
ন্যাকুমু করেন কেন, মেয়েদের মতো?
টুম্পাদিকে জিজ্ঞেস করুন সে কি মজার কাণ্ড করেছে....
আপনাকে কাঁদতে দেখে হাসানোর জন্য ওসব করেছে। সে এমনিতে খুব সিরিয়াস মানুষ!
ও সেই তাহলে বলেছে...
শুনুন! আমার খুব কষ্ট হয়েছে সেসময়।...
কেন?
আমার ফোনে একটা মেয়ের নাম লেখা , এটা দেখে আমার এক বন্ধু খুব মাইন্ড করলো, কথাই বলতে চায় না। বেশ কিছুদিন পর জানলাম কারণটা।...
তো নামটা কার জানেন?
আমার খুব ভয় লাগতে লাগলো, নাম টা কার? আমার নাতে! আকাশ পাতাল ভাবতে লাগলাম! প্রেম ব্যাপারটা যেন কেমন অসহ্য মনে হয়।...কার নাম?
ঠিক সেই মুহূর্তে লাইনটা কেটে গেলো। টুট টুট শব্দ! টুম্পাদির ফোন, কীরে কার সাথে কথা বলিস? রিশান?
হ্যা বলতে কেমন জড়তা এসে ভিড় করছে, ইচ্ছে করছে আপুকে এখনই বলে দিই, যে রিশান ওর মোবাইলে আমার নাম লিখে রেখেছে। রিশান আবার ফোন দিল.... আমি আপুর ফোন কাটলাম না। রিশানই কাটলো, হয়ত ওয়েটিং দেখে।
আপু অবশ্য এখনো সুজনের ঘটনাটা উদ্ধারে ব্যস্ত। বলল-
শোন, সমস্যার একটা কিনারা হয়েছে। কাল আমরা ওকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবো।
কী হয়েছে ওর, আমি কিছুটা উৱকণ্ঠা দেখালাম এবং সত্যিই নিজেকে খুব অপরাধী মনে হলো। এ কয়দিন সুজনের ব্যাপারটা একদমই ভুলে গিয়েছিলাম!
আরে ওসব কিছু না। ডাক্তার রাসেল মাহবুবের কাছে নিয়ে যাবো, অথবা মেহতাব খানম! কে ভালো হবে?
মেহতাব খানমকে চিনি, বিন্তু রাসেল মাহবুব কে? সেও মনোরোগ বিশেশজ্ঞ!
সুজন কি তাহলে মানসিক রোগী? কী যা তা বলছ?
হ্যা, দু:খজনক হলেও সত্যি! এটা সিজোফ্রেনিয়া টাইপের একটা রোগ। এ রোগের মানুষ নিজের কর্মের কথা নিজেই ভুরে যায়। এমনকি রাতে সে ডা করেছে দিনে তা কোনওভাবেই মনে করতে পারে না।
তুমি এতোকিছু কীভাবে আবিষ্কার করলে?
আমিতো এর পিছনে লেগেছিলাম...শোন রাখি এখন, কাল ওর সাথে আমরাও যাবো। রেডি থাকিস। ওকে!
ব্যাপারটা নিয়ে আমি খূব ভাবনায় পড়লাম। এমন রোগও আছে নাকি? নিজে নিজে গোসল করবে অথচ টের পাবে না। এমন লোকতো খুনও করতে পারে! সুজনের সাথে খুব কথা বলতে ইচ্ছে করছিল। কিন্তু ফোনে ব্যালান্স নাই। আম্মুর ফোনটা আনতে গিয়ে পড়লাম বিপাকে!
কীরে, ফোন দিয়ে কী করবি?
কিছু না আম্মু, সুজনকে একটুফোন দিব, ও নাকি খুব অসুস্থ!
তাই নাকি কী অসুখ?
তা জানি না, জানার জন্যই...
তুই জানলি কার কাছ থেকে?
টুম্পাপু বলল....
সিরিয়াস কিছু?
মনে হয় না।...
তাহলে আর ফোন দেয়ার দরকার নাই। সকালে খোজ নিলে হবে।
আমার মা চিটাগাঙ এর মেয়ে, কোনোকিছুতেই অপচয় পছন্দ করেন না। সবকিছুতে টাকা বাচাতে চান। যতো কমখরচে কাজ সারা যায়, তার জন্য তিনি তার সর্বোত্তম ব্যবহারটিো করতে রাজি।
বাজারে গিয়ে দোকানদারদের সাথে এমন ব্যবহার করেন যদি ২একটাকা কমায়! তাতে যদি কাজ না হয় মা তাকে পিশাচ মনে করেন! তার ভদ্রতার মুল্য দিল না!
একদিন এক দোকানদারের সাথে আম্মুর প্রায় ঝগড়াই লেগেগেলো। একটা গুড়োদুধের দামাদামি নিয়ে। ৫টাকা কমানোর জন্য আম্মু অনেক বক্তৃতাই দিল। স্কুলের ম্যাডামতো। এমনকি তিনি তার স্কুলের পরিচয়টাও বিনিয়োগ করলেন। আমি যেন লজ্জায় মরে যাই। বাসায় এসে আম্মুর সাথে এটা নিয়ে আমার একটু বাধে। আম্মু তখন বলে তার অতীত জীবনের কথা।
তখন সবেমাত্র আমার বাবার চাকরি হলো। বেশ টানাটুনির সংসার। আমার নানা ছিলেন স্কুলের টিচার। মায়ের চাকরি তাহলে পৈতৃক! কীভাবে কতো কষ্টে কেটেছে তাদের জীবন!
মা তার ডায়রিটা আমাকে পড়তে দিলেন.....
মার লিখার হাত খুব ভালো। সবকথাই তিনি লিখেছেন অত্যন্ত সততার সাথে এবং নি:সংকোচে! কোথাও নিজের দোষ ঢাকেননি, কাউকে অতিরিক্ত দেবত্ব জাতীয় মহতকরেও দেখাননি। বোঝার উপায় নাই বাবা কে সে কতটুকু ভালোবাসতো আর কতটুকু ঘৃণা করতো। তার নিজের বাবা মার প্রতিও তার কোনও পক্ষপাতিত্ব পেলাম না।
মায়ের লেখাটাই এখানে দিয়ে দিচ্ছি----
তবে একটু ওয়েট করতে হবে। ডায়রিটা আনতে হবে.....
মায়ের ডায়রি পড়ে আমার আজন্ম শ্রদ্ধা তারপ্রতি নিবিষ্ট হয়েগেলো। মনে হলো এমন ভালোমানুষ আর হয় না পৃথিবীতে। যে মানুষ নিজের সমালোচনা এতো কঠোরভাবে করতে পারে, তার মতো স্বচ্ছ মানুষ আর হয় না।....
মোবাইলটা না নিয়ে ফিরে এলাম।
ইশ! সুজন যদি ফোন দিত।
কিন্তু ফোন দিল জহির ভাইয়া বলল একটা কাজ করতে হবে, পারবি?
পারবো ভাইয়া! চাটগাইরে একটু ফোন দিবি...
জহির ভাইয়ার সাথে একটা মেয়ের সম্পর্ক চলছে, প্রেম কি না বুঝি না, ভাইয়া স্বীকার করেন না। তার এলাকা চিটাগঙ। ও নাম বলে না, হয়ত প্রিয়ব্যক্তির নাম বলতে নেই। তাই চাটগাই বলে।
আচ্ছা ভাইয়া আমি ফোন দিচ্ছি...
ক্যামনে দিবি? তোর ফোনেতো টাকা নাই!
কে বলল? ও তুমি জানো যে আমার ফোনে প্রায়ই টাকা থাকে না তাই ঠ্যাশ মারলা?
তোর ফোনে আছে একটাকা সাইত্রিশ পয়সা।
ও তুমি আমার ব্যালেন্স দেখেছ!
শোন আমি ৫০টাকা পাঠাচ্ছি। ওকে একটু ফোন দিস, দেখতো কী খবর? আমার ফোন ধরছে না।
কিছুক্ষণ পরই মেসেজ পেলাম, টাকার মেসেজ। ইচ্ছে হচ্ছিল সুজনকে ফোন দিই। কিন্তু যে কাজের জন্য টাকাটা এলা সেটা আগে করাই বোধয় সততা।....
সাথী আপুকে ফোন দিলাম। ফোন ধরলো আরেকজন। চিটাগংএর আঞ্চলিক ভাষা। আমিতো বুঝিইনি, সেও কি আমার কথা বুঝল কি না কে জানে। আমার আম্মু যে শিক্ষার জোরে আঞ্চলিক ভাষাটার মাধূর্য লুকিয়েছেন , তাই আর শেখা হয়নি একটা বিখ্যাত আঞ্চলিক ভাষা।
অমুক খুব ব্যস্ত আছে তা বুঝলাম এবং প্রচুর হৈচৈ শুনলাম। মনে হলো কোনও বড় আয়োজনের মধ্যে! আর তখনই মনে হলো তবেকি কোনও বিয়ের আসরে আছেন? বিয়েটাকি তার নিজের? এজন্যইকি ভাইয়ার ফোন ধরছে না?
সুজনকে ফোন দিলাম। ও ফোন ধরল না। ও বেশিরভাগ সময় একাজ করে, আমি ফোন দিলে কেটে নিজে ফোন করে। কিন্তু কই আজতো করছে না।... কোনও প্রবলেম?
দ্বিতীয়বার ফোন না দিয়ে টুম্পাদিকে ফোন দিলাম, আশ্চর্য! সেও ধরল না!
আর কাউকে ফোন না দিয়ে টেবিলে বসলাম। মনে পড়ল চাটগাইয়ের কথা। তার সাথেতো কথা হলো না। ফোন দিলাম। ফোন রিসিভ হলো। প্রচণ্ড শব্দ। এটুকু বঝিলাম আমরা এয়ারপোর্ট এ আছি পরে ফোন দিয়েন....
টেবিলে বসে রাজ্যের ঘুম জড়িয়ে এলো। বইয়ের প্রতি একদমই নজর দেয়া যায় না। চোখ জলে। মাথা ঘোরে, ঘুম পায়।.... কাল কোচিং আছে , একটা টেস্টও আছে...প্রস্তুতি নেওয়া দরকার।
বইটা নিয়ে প্রথমে বসে তারপর শুয়ে তারপর বইটা বুকে রেখে কখন ঘুমিয়ে গেলাম আর টের পাইনি। তবে খুব আরামের ঘুম হয়েছে এটা বুঝলাম।.... শরীর কেমন ঝড়ঝড়ে লাগছে, মনটা ফুরফুরে।....চলবে....
প্রয়োজনের তাগিদেই আমাকে খুঁজে বের করা হলো। তদন্তকারী কর্মকর্তা ইতোমধ্যে যে তথ্য উদ্ধার করেছেন তাতে দেখা যাচ্ছে সুজন গত সপ্তাহে আমাদের বাসায় এসেছেন দু'বার। যা আর কারও ক্ষেত্রেই ঘটেনি। আমি একটু চমকালাম! সত্যিই নাকি! সুজনের আর কোনও বন্ধু নাই? আমিই সবচে কাছের? তা হয় কি করে।
এটা ঠিক যে সুজনকে আমি কখনও বিশেষ দিবসে এসএমএস দিতে ভুলি না। ওও রিপ্লি দেয় অথবা নিজেই আগে পাঠায়। সুজন আমার কোনও প্রয়োজনে সর্বাত্মক সক্রিয়তা দেখায়, আমিও....
কিন্তু আর কোনও আলামতই পাচ্ছি না যা থেকে আমিই সুজনের সবচে কাছের বন্ধু এটা প্রমাণ করা যায়। তবু ওর বেয়াই অর্থাৎ ওর বোনের দেবরের কথায় চমকের ভাবটা দূরে রেখে স্বাভাবিকভাবেই বললাম-----আমি কী করতে পারি?
তিনি সঙ্গে সঙ্গে উত্তর দিলেন, যেন জানতেন এই প্রশ্নটাই আমি করবো। বললেন- কিচ্ছু না স্রেফ উদ্ধার করে দেবেন সুজনের ইদানীং রাতে ঘুম হয় না কেন?
তার আগে এটা কি জানতে পারি? যে হঠাৎ সুজন এতোটা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠল কেন?
দেখুন সুজন ওর পরিবারের কাছে বরাবরবি গুরুত্বপূর্ণ ও হয়ত আপনাদের কাছে নিজেকে সেভাবে উপস্থাপন করেনি...
কিন্তু রাতে ঘুম হচ্ছে না এটা কী করে বুঝলেন? ওর রুমে ও ঘুমায় না কী করে তা কী করে জানলেন?
ও ঘুমায় না রীতিমত রোমহর্ষক ব্যাপার! রাতের বেলা ছাদে বেলকনিতে হাটাহাটি করে।
ওদের বাসাতো দুইতলা, ছাদে কেউ হাটলে টের কিছুটা পেলেও পেতে পারেন, কিন্তু সেটা যে ওই এটা কে কীভাবে নিশ্চিত হলো বলেনতো।
আরেব্বাস! আপনিতো দেখছি উল্টো আমাদেরকেই জেরা করতে শুরু করলেন?
সাহায্য করতে পারবেন কি না সেটা বলুন, অযথা সময় নষ্ট করবেন না।
এগজেক্টলি তাই! আসলে আমি ওর ব্যাপারে কিছূই জানি না। সেজন্যই এতো আবলতাবোল বললাম তবে...
হ্যাঁ তবে
বেয়াই ভাবলেন হয়থ এই তবে টাই একটা কিছূ হবে... খুব আগ্রহ তার। আমি হতাশ করলাম তাকে...
তবে...
তবে আমি বলতে পারি ওর সাথে আমার পরিচয়টা কীভাবে হলো, আমার সাথে ও কী কথা বলে, ওর বন্ধুরা কে কে আছে এই তালিকাটা দিতে পারি...
তবে
তবে? আবার আরেকটা তবে?
জ্বি! তবে তার আগে আমাকে জানতে হবে ওর কোন আচরণটার জন্য আপনারা বিশেষ চিন্তিত। এ যুগের ছেলেমেয়েরা এম্নিতে অনেক রাত করে ঘুমায়...এটা নিয়ে..
নারে ভাই ওহ স্যরি আপু... আসলে ব্যাপার আরও আছে, সবটাকি বলতে পারি? তাকায় সঙ্গের লোকটির দিকে...থাক আপনাকে বলে কাজ নেই। আপনি এটুকু বলুন যে ওর কাছের বন্ধুরা কারা?
মেয়ে বন্ধু না ছেলে বন্ধু?
মেয়ে বন্ধু... আছে নাকি? সেটা হলেইতো একটা কিনারা হয়ে যায়।
আছে, মেয়ে বন্ধুটি হলো টুম্পা সরকার আর ছেলে বন্ধুদের মধ্যে সবচে কাছের মনে হয় দিলীপ, হিন্দুবন্ধু।
ছ্যা ছ্যা ছ্যা... হিন্দু বন্ধুও আছে?
বেয়াই মশাইয়ের এই ডায়লগটা শুনে মনে হলো তিনি অতীতে যাত্রাপালা বা মঞ্চনাটকের নট ছিলেন টিলেন। মধুসূদনের নাটকের মতো ....তবে লোকটা যে বেশি সুবিধার হবেন না তাও বুঝতে কষ্ট হলো না। হিন্দুরা বিশেষকরে বাংলাদেশের হিন্দুদের কথা শুনে কেউ ছ্যা ছ্যা করে উঠবে এমন পরিবেশ বাংলাদেশে হয়নি। এখানে হিন্দু-মুসলমান এমন মিলেমিশে একাকার হয়ে আছে যে কারও বুঝতে পারাই মুশকিল! আমাদের এক বড়ভাই ছিল ভরত! সে যে হিন্দু তা আমি আজও বিশ্বাস করতে পারিনি। সবার সঙ্গেই তার দারুণ ভাব, দোস্ত দোস্ত বলে একসঙ্গে খায়, ওঠেবসে....
বাসা কোথায়?
খুঁজে বের করেন? আপনার চোখে আমি গোয়েন্দাসুলভ দীপ্তি দেখতে পাচ্ছি। যেভাবে আমাকে খুঁজে পেলেন.....
তবে ব্যাপারটাকে আমি খুব বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি না। সুজন রাতে ঘুমায় না, হয়ত কারও সাথে মোবাইলে কথাটথা বলে, পায়চারি করে....
আরে তাহলেতো হতোই ম্যাডাম!
বাহ! লোকটার মধ্যে আসলেই নাটুকে ভাব আছে! কখন কী বলছে কোনও ঠিক নাই! একবার বলে ভাই একবার বলে আপু এখন আবার ম্যাডাম!
তো আর কি ব্যাপার আছে বলুন!
বলবো!
বলুন, বলতে চাইলে বলুন! আর না চাইলে....
আচ্ছা শোনেন, ও তো আপনার বন্ধু তাই না।
এবসুলেটলি!
ওর কোনও দোষ দেখে আপনি নিশ্চই ওকে ঘুণা করবেন না, পাগল টাগল ভাববেন না...
নিশ্চই না।
ও প্রতি রাতে কিছু আজব আজব কাজ করছে...
কী রকম?
এই ধরেন...আবার ভাবে ..আমতা আমতা করে...
বলতে না চাইলে না বলাই ভালো(আমি প্রেসার করি)
না মানে, ও রাতে উঠে কেন যে গোসল করে সেটাই বুঝতে পারছে না কেউ। আমি এলাম আপু ডেকে পাঠালো। এসে দুদিন ওর সঙ্গে থেকে রীতিমত ভয় পেয়ে গেছি।
রাতে গোসলকরলে ভয়ের কী আছে? যেই গরম পড়েছে! চৈত্রমাস!
আরে তাহলেও হতো। ভেজা কাপড় পড়ে ঘুমিয়ে থাকে।
ওইতো একই কারণ!প্রচণ্ড গরম!আর হাসিনা ফিরৎ আসছেতো বিদ্যুৎ আবার কানামাছি খেলছে...
আরে রাখেনতো রাজনীতির প্যাচাল! বলেন এর সমাধান কি? আর নাহয় বলেন কার কাছে গেলে পাওয়া যাবে?
টুম্পা আপু অথবা দিলীপ ওরা কেউ বলতে পারবে....
সেইযাত্রায় বেয়াই লোকটার হাত থেকে বাঁচলাম। রুমে এসে বই নিয়ে বসলাম। কিন্তু সত্যিই ব্যাপারটা ভাবনায় ফেলল! এমন আচরণের কারণ কি? ভাবতে বেশি সময় পেলাম না। মা খেতে ডাকল। বেয়াইদের সামনে ডিনার দেওয়া যায়নি বাঙালির একটা ভদ্রতা আছে প্রথম অতিথিকে কিছুতেই খালিভাত দেওয়া যায় না। খালিভাত মানে পোলাওগোশত ছাড়া দেওয়া ঠিক না।...তার চা আর লাচ্ছা সেমাই খেয়ে বিদেয় হলো।
আমিও খাওয়া দাওয়া শেষ করলাম। সুজনের ভাবনায় আমারও মনে হয় ঘুম পাচ্ছে না। অনেক রাতে ফোনটা বেজে উঠলে কেন যেন খুব উৎসাহ পেলাম ফোন ধরতে....যেন মজার বা ইন্টারেস্টিং কোনও ফোন হবে।
কিন্তু না মোটেও ইন্টারেস্টিং হলো না। টুম্পাদি ফোন দিল। সেকি ঝাড়ি তার। তুমি কী আজব একটা লোকরে পাঠালা আমার কাছে বলোতো!
টুম্পাদি! আমি একটু ন্যাকামু করার চেষ্টা করলাম!
তুমিতো আজব লোকদের ব্যাপারে সবসময় ইন্টারেস্টিং ফিল করো! ক্ষেপলে কেন?
আরে লোকটা কী বলে শুনবা!
তুমিকি কিছু খাচ্ছ নাকি আপু?
আরে হ্যাঁ, ব্যাটারা গেলোতো এইমাত্র, খাওয়ার সময় পাইনি।
বলোকি এতো রাত পর্যন্ত?
হ্যা নিজের তালতো ভাই ঘুমাচ্ছে না এই উসিলায় সবার ঘুম হারামকরার পায়তারা।
তো তোমাকে কী বলল একটু বলোতো!
বলছি! দাঁড়া... খাওয়া প্রায় শেষ...
আরে কী যে ইন্টারেস্টিং! শুনলে তুই হা হয়ে যাবি, লোকটা আমাকে সরাসরি বলে সুজন নাকি আমার প্রেমে পড়েছে... আমি যেন ওকে বাঁচাই.... ও নাকি পাগলামি শুরু করেছে। বলতো!
হায়হায়! লোকটারকি কোনও কাণ্ডজ্ঞান নেই? তুমি না তার সিনিয়র?
আরে সেই জ্ঞানকি ঐ খেতটার আছে নাকি?
কী বলে খেত টেত না, মনে হয় বেশি পাকনা।
সে যাই হোক শুনেতো আমার পিত্তি জ্বলে যায়।.... সুজন কে বললেতো ব্যাটারে আস্ত রাখবে না।...
তোমাকে আর কিছু বলেনি? কোনও বন্ধুবান্ধবের ঠিকানা চায়নি?
না, চাইলেও আমি দিতাম না। এই পাগলটা একটা চালাকি শুরু করেছে...
কিন্তু সুজন কি পাগলামি করছে সেটা কিছু বলেছে?
বলেছে, ঘুমায় না, হাটে
রাতে গোসল করে, ভেজা কাপড়ে ঘুমায় এসব বলেছে?
না, এসব সত্য না
আমি বেশ ইন্টারেস্টিং ফিল করছি...
তুমি বোকাতো তাই একটু রগড়ে গেলো...
পরদিন সুজনকে খুঁজে বেরকরলাম। কোচিং থেকে বেরিয়ে স্ন্যাক্সে বসেছিল।
কীরে কীসব শুনি তোকে নিয়ে...
কী শুনেছো?
তুই নাকি রাতবিরাতে গোসল করিস?
হোয়াট! দেখছিস! তোদের না বলেছি এইটা ওই ব্যাটার কাজ? দেখ নিজে কাজটা করল আবার বলে গেলো আমিই নাকি... ওর বন্ধুদের স্বাক্ষী মানে।
আরে শোনো ওদের কাছে সেটাই বলছিলাম! গত কয়েকদিন ধরে আমার উপর একটা শনি আছড়ে পড়েছে... আমি দিব্যি ঘুমিয়ে থাকি ভালোমানুষ সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি আমার সমস্ত শরীর ভেজা। যেনো গোসল করে এসেছি....
বেয়াই শালা এমনই ত্যাদোর! দেখোতো এমন ইয়ার্কি কেউ করে। রাতে ঘুমন্ত মানুষের গায়ে পানি ঢেলে দেয়!
তাই নাকি? তা তুই টের পাসনা?
আরে আমার যে আজকাল কী ঘুমটাই পায়, কিচ্ছু টের পাই না।
ওর আরেক বন্ধু বলে- তাইতো বলি চান্দু ফোন ধরে না ক্যান, মরা ঘুম দ্যাও!
ঘুমটা একটু পাতলাকরো। এদিকে তোমার নামে সেই লোক কী ছড়াচ্ছে তা যদি শোনো!
কী ছড়াচ্ছে?
টুম্পাদির কাছে যাও, শুনতে পাবা।
বলো না কী বলেছে? তুমি বলো! দোস্তনা!
আরে আমি বলতে পারবে না, তুই যা টুম্পাদি তোরে কী করে তাইদ্যাখ!
মানে খারাপ কিছু কইছে!
খাইছে আর বোধয় সমাজে মুখ দেখানো যাবে না। আচ্ছা বলতো এই পাগলটারে কী করি?
বাড়ি থেকে তাড়া...
আরে সেত এম্নিতেই চলে যাবে। আপুর দেবর। কয়দিন থাকবে। কিন্তু সেইলোক যেভাবে আমার ব্যাপারে অপপ্রচার চালাচ্ছে....
তোমাকে খুঁজে বের করলো কীভাবে?
তুই বলছিস! তুই নাকি বলেছিস আমি তোর সবচে কাছের বন্ধু?
হরে আমরা সব তেজপাতা। সেইদিন পরিচয়, এই কোচিংএ... আর এখন তারা তুই তুমিতে... আর আমরা আজও কোনও মেয়ের কণ্ঠে তুইটা শুনতে পরলাম না.... পোড়া কপাল!
টিজ করবানা পলাশ!
স্যরি স্যরি!
দেখো আমি কিন্তু তোমাদের বন্ধু না।
কেন , কেন বন্ধু না। তুমি সজনের বন্ধু হতে পারলে আমাদের বন্ধু নয় কেন?
বন্ধুত্ব কোনও রিলিফের মাল না, যে লাইনধরে যে দাঁড়াবে সবাই পাবে। বন্ধুত্ব তৈরি করতে হয় আলাদা আলাদা ভাবে।
তারচে বলো ওর সাথে তোমার সম্পর্ক অন্যরকম! বন্ধুত্ব নয়....
তোরা থামবি?
কেন দোস্ত! খারাপ লাগছে? স্পেশাল বন্ধু পাইছোতো, এই চলতো, আমরা আলাদা আড্ডা মারি।... ওরা উঠতে যাচ্ছিল। আমি বললাম
দেখো পলাশ-রিপন তোমরা ওর বন্ধু সেভাবেই আমার সাথে পরিচয়, তেমরা কে কি করো, বা কে কোথায় থাকো এসবের কছিুই আমি জানি না।
জানলেই পারো।
দেখো আমি সেরকম ইন্টারেস্ট ফিল করছি না...
ওও আচ্ছা!
আর দেখো... সুজনের সঙ্গে পরিচয় হলো...
হ্যা আমরা জানি...
তুমি খূব সাহসী, সুজনের মা অসুস্থ, রক্ত প্রয়োজন। কোচিংএ ঘোষণা দেওয়ার পর কোনও ছেলে সাহস করেনি, তুমি মেয়ে হয়ে .....
কিন্তু আমরা তোমার বন্ধু নই সেটা কেন বললে?
তোমরা কিন্তু কেউই আমার সঙ্গে আলাদাভাবে পরিচিত হওনি। সুজনের সঙ্গে ঘুরছো ফিরছো... সেইভাবে বন্ধু!
দেখো আমরা সুজনের মতো উঁচু স্ট্যাটাসের নয়। আমি মাইক্রো চালাইম ভাগ্যের ফের, আমারও কথা ছিল সুজনের মতো ইন্টারপাস করে বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢোকার।...যদিও সুজনের ট্র্যাক থেকে আমরা ছিটকে পড়েছি তবু সুজন কিন্তু আমাদের বন্ধুই মনে করে...অবশ্য এখন তোমাকে পেয়ে...(বন্ধূকে খোঁচাদেয়)
আমি বলি-
সুজন তেমন নিচুক্লাসের নয়। এটা তোমাদের ভুল ভাবনা।
যাইহোক! আমি আসছি! সুজন আমি গেলাম, তোমরাও থাকো, কষ্ট নিও না, আমি আসলে ওরকম ফ্লাইং কথা পছন্দ করি না।...সুজন পারলে একবার টুম্পাদির সাথে দেখা করো। তবে পীঠে কিছু বেধে যেও।... হাসতে হাসতে বিদায় নিলাম...ভাবটা এমন যেন কিছুই হয়নি।
টুম্পাদি রাস্তায় দাঁড়িয়ে ছিল।আমাকে দেখে বলল এতো দেরি করলি যে?
আরে ...
সুজনের সাথে দেখা হয়েছে?
তুমিকি খুব এক্সাইটেড ফিল করছো টুমপাপু।
আরে না গাধা, আমি দেখতে চাচ্ছি এসব শুনে ওই গাধাটার অবস্থা কি হয়!
আমি বলছি পীঠে ছালা বেধে তোমার সাথে দেখা করতে।...
আজই করতে বলতি...
দাঁড়াও বলে আসি।
থাক।
শোন চল ওদের বাসায় যাই, বাসার পরিস্থিতিটা একটু দেখে আসি, আর বেয়াইটাকেও একটু নাচিয়ে আসি। যাবি?
না, আপু সুজন যা বলল তাতে লোকটা মনে হয় বেশি সুবিধার না,
সেটাতো আমরাও ধারণা করেছি...
না, শুধু তাই না, লোকটা নিজে পাগলামি করে ওর ঘাড়ে চাপিয়ে দিচ্ছে।
ধরো আমরা গেলাম, না আবার কী বলে দেয়...
থাক কাজ নেই। চল আমাদের ছাদে গিয়ে বসি। বাসায় কাজ আছে?
নাহ! সন্ধার আগে গেলেই হবে।
আমি আর টুম্পাদি ছাদে উঠলাম। ছাদটা অনেক সুন্দর! আমি মনে হয় দুটো জিনিস কখনও অসুন্দর দেখিনি এক হলো নদী দুই হলো ছাদ । এ দুটো যায়গায় গেলেই মনটা কেমন ভরে যায়।
আমরা ছাদে উঠে পোলাপানের ফিল্ডিংমারা দেখলাম।....
অদ্ভুৎ সব দৃশ্য দেখা যায় ছাদে গেলে।
ফ্লাইং কিস, নানানা অঙ্গভঙ্গি, ইত্যাদি।
আমাদের ডানপাশের একটা ছাদ থেকে এক ছেলে তার মোবাইল নাম্বার পাঠাচ্ছে কী কৌশলে তাই দেখছিলাম।
প্রথমে একটা ইট রাখলো। দূরে এক মেয়েকে সেটা দেখাচ্ছে। ইট টা সরিয়ে নিল। হাতের ইশারায় দেখালো কিছু নাই, শুন্য এতো বড় গোল। একটা ইট তারপর ৫টা ইট।
ভাগ্য ভালো যে টেলিটক নাম্বার নয়তো খবর ছিল। বাংলালিংক হলে ৯টা লাগত। ৫টা ইট নামিয়ে আবার ৫টা ইট উঠালো। তারপর দুইটা, তারপর সেগুলো নামিয়ে ৩টা ইট দেখালো। তারপর আটটা। এবার কষ্ট হয়ে গেলো। ইট এতোগুলো নাই। কোত্থেকে যেন খুঁজে আনলো। তাতেও হলো না। তারপর আবার একটা ইট ভাঙলো। ভাঙতে গিয়ে হাতে ব্যথা পাওয়ার ঢঙ করল।....
এভাবে একবার ইট নামায় আর উঠায়। টুম্পাদি বলে ছেলেটা কী করছে? একবার ইট উঠায় একবার নামায়!
আমি মনোযোগ দিয়ে দেখছিলাম। আপুকে বললাম খেয়াল করো, মোবাইল নাম্বার দিচ্ছে।
তাই নাকি? দারুনতো বুদ্ধি!
একটুপর আবার বলে ছেলেটা এতো গাধা কেন? ইট সবগুলো নামায় কেন? ৩হলে বাকীগুলো নামিয়ে নিয়ে এরপর আবার বাকী কয়টা তুললেই হয়।
আমিও ভেবে দেখলাম তাইতো!
নাম্বারটা মনে হয় আমিও ধরে ফেলেছি। ০১৫৫২৩৮৫২১... এর পরের ডিজিটটা বুঝতে কষ্ট হচ্ছে। ইটগুলো এখনও আছে। সাত না আট তাই বুঝতে পারছি না।
রাতে একবার ফোন দিয়ে দেখবো?
রাতে সত্যিই এটা নিয়ে খুব টেনশনে কাটালাম। একটা অপরিচিত মানুষকে কীভাবে অ্যাপ্রোচ করবো।... সে কী বলবে, যদি দেখি সাত আট দুটো নাম্বারেই লোক আছে...
ইত্যাদি ভাবতে ভাবতে ঠিক করলাম কোনও ছেলে বন্ধুকে দিয়ে ট্রাই করাবো।
পরদিন আবার ছাদেওঠার জন্য মন আকুপাকু করছিল। ওদের কি যোগাযোগ হয়েছিল নাকি হয়নি? কীভাবে জানবো?
টুম্পাদিকে বললাম- সে বলে তোর মাথা থেকে এখনও ভুতটা যায়নি? সুজনের খবর কি জানলি সেটা বল?
ধুর! তুমি আছো সুজনের চিন্তায়, এদিকে কতোবড় মজার ঘটনা ঘটে যাচ্ছে... আচ্ছা তুই যা ছাদে যা, আমি একটু দেখি সুজন যায় কি না। ওকে দেখেছিস?
আজতো আমার কোচিং ছিল না। ওর ছিল কি না!
আমি দৌড়ে ছাদে উঠলাম। চারপাশের ছাদে অনেক লোক দেখা যায়। কিন্তু ওদের চিনবো কী করে? তবে ওই ছাদটায় একটা ছেলে দেখছি মোবাইলের ভঙ্গিতে কথা বলে যাচ্ছে। এই ছেলেই কি সেই ছেলে। এতদূরের দখো একজন মানুষের সঙ্গে কি হতে পারে কোনও রিলেশন? না দেখা মানুষের সঙ্গেওতো হয়....
আমি নাম্বারটায় ফোন দিলাম দেখলাম ছেলেটা ফোন ধরছে না, কলওয়েটিংও না। সাথে সাথে কেটে দিলাম, তারপর ভয়ে ভয়ে অপেক্ষা করছিলাম কে না কে ব্যাক করে ঝাড়ি দেয়!...
সত্যি সত্যি ব্যাক করল! আমি ধরলাম না। আবার রিং হলো, এখন কাকে দিয়ে ধরাই? কোনও পিচ্চি পেলে বেঁচে যেতাম!
ভাগ্য ভালো পেয়েও গেলাম! অন্যকে। ওকে ফোন দেওয়া মাত্র সেকি খুশি! হ্যাল্লো! হ্যাল্লো মাম্মা! এই বান্দরটা মামাদের ভক্ত! ফোনে সবাইকে তাই মামাই মনে করে। বেশ চলল কথা । পিচ্চিদের সঙ্গে কেউ মিসবিহেব করে না, সাধারণত। লোকটা ওর নাম জানল। নাম জানতেও অনেক সময় লেগেছে, হয়ত অন্য নামটা কেউ রাখে না তাই।
কিন্তু কে জানতো সে আবার ফোন করবে?
হ্যালো! অন্য আছে?
না, ওতো নাই! কে বলছিলেন?
আমি রিশান!
ও আচ্ছা! তো অন্যর সাথে কীভাবে পরিচয়?
ও একদিন আমাকে মিসকল দিয়েছিল,
ও আচ্ছা, আচ্ছা,তো আজও কি মিসকল দিয়েছিল?
না, তা না আসলে ও এতোসুন্দর করে কথা বলে, আর মাম্মা বলে ডাকে...আমার খুব ভালো লেগেছে ওকে, ওকে কখন পাওয়া যাবে? ও আপনার কে হয়?
কী মনে হয়? আমার মেয়ে
ভাগনি বা ভাতিজিকেও মেয়ে বরা যায়। অসুবিধা নাই। যাইহোক আমি কি মাঝে মাঝে ওর সাথে কথা বলতে পারি?
কীভাবে বলবেন?
ফোনে!
এই ফোনটাতো ওর নয়।
আ আচ্ছা! ফোনটা আপনার।
আপনার কি মনে হয় ওই পিচ্চিটারও ফোন আছে?
আসলে...
ছেলেটা বিপদে পড়েগেছে....আমার খুব মজা লাগে।
আচ্ছা কথা বলবেন তবে আর একবার। ওকে!
কখন?
ওকে পেলে আমি আপনাকে ফোন দেবো! ঠিক আছে?
অনেক ধন্যবাদ! শুনুন আপনি যেন আবার ফোন দিতে যাবেন না।....
ছেলেটার ব্যক্তিত্ব অনেক টনটনে, আর একবারও ফোন দেয়নি। অথচ ছেলেরা দেখেছি কোনও অজুহাতে মেয়ে কণ্ঠ পেলে আর ছাড়তেই চায় না। ইনিয়ে বিনিয়ে কতো রকমের সম্পর্ক জোড়া দিতে চায়।... ছেলেটি তা চায়নি।
আমি আর ফোন দিলাম না, ছেলেটিও আর চায় না। তিনদিন পর ফোন দিলাম নিজের ভিতর লড়াই করে হেরে গিয়ে। বললাম- ও আসলে ছিল না, বেড়াতে গিয়েছিল।
এখন আছে?
হ্যাঁ, কথা বলবেন?
একটু দিন...
ওরা কথা বলে...
এভাবেই একটা ব্রিজ তৈরি হলো।
অন্যর খুব অসুখ! ওকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। রিশান শোনার পর যেন পাগল হয়েগেছে ওকে দেখার জন্য। আমার মনে হলো ওকে দেখার জন্য এটাকি ভান! টুম্পাদিও বলে আসলে ওসব কিছু না, ছেলেটা তোকে দেখার জন্যই মরীয়া! আমি বলি আচ্ছা পরীক্ষা করা যাক।....
অন্যর হাসপাতালের ঠিকানাটা বললাম, আমি ঠিক সেসময় বাসায় চলে এলাম।... আমার নিজেরও খুব কৌতূহল হচ্ছিল ছেলেটাকে দেখার জন্য। টুম্পাদি ছিল, ছেলেটার সঙ্গে ওর দেখা হয়। গায়ের রঙ কালো, তবে অনেক স্মার্ট! সাদা একটা শার্ট পড়াছিল, ওয়েসটেকস এর বোধয়, কারও সঙ্গেই তেমন কথা বলেনি, পুরোটা সময় অন্যর কেবিনে দাঁড়িয়ে থেকেছে। সবচে অবাক হলাম ছেলেটার চোখে পানি দেখে...
ফোন না করে ভাললাগছিল না। আমাকে না পেয়ে ফিলিংসটা কেমন হলো সেটাওতো জানতে হবে। তবে ব্যক্তিত্ব ধরে রাখতে গিয়ে বললাম- একটা কথা খুব জানতে ইচ্ছে করছে কিছু মনে করবেন না,
আচ্ছা বলুন!
আপনি কি সেদির অন্যর অবস্থা দেখে কেঁদে ফেলেছিলেন?
কেন বলুনতো?
বলুন না! কেন কাঁদলেন?
আপনি দেখেছেন?
না টুম্পাদি বলল....
খুব মজার আপু।
খেয়ে দেখেছেন?
ধ্যাত কী বলেন?
ন্যাকুমু করেন কেন, মেয়েদের মতো?
টুম্পাদিকে জিজ্ঞেস করুন সে কি মজার কাণ্ড করেছে....
আপনাকে কাঁদতে দেখে হাসানোর জন্য ওসব করেছে। সে এমনিতে খুব সিরিয়াস মানুষ!
ও সেই তাহলে বলেছে...
শুনুন! আমার খুব কষ্ট হয়েছে সেসময়।...
কেন?
আমার ফোনে একটা মেয়ের নাম লেখা , এটা দেখে আমার এক বন্ধু খুব মাইন্ড করলো, কথাই বলতে চায় না। বেশ কিছুদিন পর জানলাম কারণটা।...
তো নামটা কার জানেন?
আমার খুব ভয় লাগতে লাগলো, নাম টা কার? আমার নাতে! আকাশ পাতাল ভাবতে লাগলাম! প্রেম ব্যাপারটা যেন কেমন অসহ্য মনে হয়।...কার নাম?
ঠিক সেই মুহূর্তে লাইনটা কেটে গেলো। টুট টুট শব্দ! টুম্পাদির ফোন, কীরে কার সাথে কথা বলিস? রিশান?
হ্যা বলতে কেমন জড়তা এসে ভিড় করছে, ইচ্ছে করছে আপুকে এখনই বলে দিই, যে রিশান ওর মোবাইলে আমার নাম লিখে রেখেছে। রিশান আবার ফোন দিল.... আমি আপুর ফোন কাটলাম না। রিশানই কাটলো, হয়ত ওয়েটিং দেখে।
আপু অবশ্য এখনো সুজনের ঘটনাটা উদ্ধারে ব্যস্ত। বলল-
শোন, সমস্যার একটা কিনারা হয়েছে। কাল আমরা ওকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবো।
কী হয়েছে ওর, আমি কিছুটা উৱকণ্ঠা দেখালাম এবং সত্যিই নিজেকে খুব অপরাধী মনে হলো। এ কয়দিন সুজনের ব্যাপারটা একদমই ভুলে গিয়েছিলাম!
আরে ওসব কিছু না। ডাক্তার রাসেল মাহবুবের কাছে নিয়ে যাবো, অথবা মেহতাব খানম! কে ভালো হবে?
মেহতাব খানমকে চিনি, বিন্তু রাসেল মাহবুব কে? সেও মনোরোগ বিশেশজ্ঞ!
সুজন কি তাহলে মানসিক রোগী? কী যা তা বলছ?
হ্যা, দু:খজনক হলেও সত্যি! এটা সিজোফ্রেনিয়া টাইপের একটা রোগ। এ রোগের মানুষ নিজের কর্মের কথা নিজেই ভুরে যায়। এমনকি রাতে সে ডা করেছে দিনে তা কোনওভাবেই মনে করতে পারে না।
তুমি এতোকিছু কীভাবে আবিষ্কার করলে?
আমিতো এর পিছনে লেগেছিলাম...শোন রাখি এখন, কাল ওর সাথে আমরাও যাবো। রেডি থাকিস। ওকে!
ব্যাপারটা নিয়ে আমি খূব ভাবনায় পড়লাম। এমন রোগও আছে নাকি? নিজে নিজে গোসল করবে অথচ টের পাবে না। এমন লোকতো খুনও করতে পারে! সুজনের সাথে খুব কথা বলতে ইচ্ছে করছিল। কিন্তু ফোনে ব্যালান্স নাই। আম্মুর ফোনটা আনতে গিয়ে পড়লাম বিপাকে!
কীরে, ফোন দিয়ে কী করবি?
কিছু না আম্মু, সুজনকে একটুফোন দিব, ও নাকি খুব অসুস্থ!
তাই নাকি কী অসুখ?
তা জানি না, জানার জন্যই...
তুই জানলি কার কাছ থেকে?
টুম্পাপু বলল....
সিরিয়াস কিছু?
মনে হয় না।...
তাহলে আর ফোন দেয়ার দরকার নাই। সকালে খোজ নিলে হবে।
আমার মা চিটাগাঙ এর মেয়ে, কোনোকিছুতেই অপচয় পছন্দ করেন না। সবকিছুতে টাকা বাচাতে চান। যতো কমখরচে কাজ সারা যায়, তার জন্য তিনি তার সর্বোত্তম ব্যবহারটিো করতে রাজি।
বাজারে গিয়ে দোকানদারদের সাথে এমন ব্যবহার করেন যদি ২একটাকা কমায়! তাতে যদি কাজ না হয় মা তাকে পিশাচ মনে করেন! তার ভদ্রতার মুল্য দিল না!
একদিন এক দোকানদারের সাথে আম্মুর প্রায় ঝগড়াই লেগেগেলো। একটা গুড়োদুধের দামাদামি নিয়ে। ৫টাকা কমানোর জন্য আম্মু অনেক বক্তৃতাই দিল। স্কুলের ম্যাডামতো। এমনকি তিনি তার স্কুলের পরিচয়টাও বিনিয়োগ করলেন। আমি যেন লজ্জায় মরে যাই। বাসায় এসে আম্মুর সাথে এটা নিয়ে আমার একটু বাধে। আম্মু তখন বলে তার অতীত জীবনের কথা।
তখন সবেমাত্র আমার বাবার চাকরি হলো। বেশ টানাটুনির সংসার। আমার নানা ছিলেন স্কুলের টিচার। মায়ের চাকরি তাহলে পৈতৃক! কীভাবে কতো কষ্টে কেটেছে তাদের জীবন!
মা তার ডায়রিটা আমাকে পড়তে দিলেন.....
মার লিখার হাত খুব ভালো। সবকথাই তিনি লিখেছেন অত্যন্ত সততার সাথে এবং নি:সংকোচে! কোথাও নিজের দোষ ঢাকেননি, কাউকে অতিরিক্ত দেবত্ব জাতীয় মহতকরেও দেখাননি। বোঝার উপায় নাই বাবা কে সে কতটুকু ভালোবাসতো আর কতটুকু ঘৃণা করতো। তার নিজের বাবা মার প্রতিও তার কোনও পক্ষপাতিত্ব পেলাম না।
মায়ের লেখাটাই এখানে দিয়ে দিচ্ছি----
তবে একটু ওয়েট করতে হবে। ডায়রিটা আনতে হবে.....
মায়ের ডায়রি পড়ে আমার আজন্ম শ্রদ্ধা তারপ্রতি নিবিষ্ট হয়েগেলো। মনে হলো এমন ভালোমানুষ আর হয় না পৃথিবীতে। যে মানুষ নিজের সমালোচনা এতো কঠোরভাবে করতে পারে, তার মতো স্বচ্ছ মানুষ আর হয় না।....
মোবাইলটা না নিয়ে ফিরে এলাম।
ইশ! সুজন যদি ফোন দিত।
কিন্তু ফোন দিল জহির ভাইয়া বলল একটা কাজ করতে হবে, পারবি?
পারবো ভাইয়া! চাটগাইরে একটু ফোন দিবি...
জহির ভাইয়ার সাথে একটা মেয়ের সম্পর্ক চলছে, প্রেম কি না বুঝি না, ভাইয়া স্বীকার করেন না। তার এলাকা চিটাগঙ। ও নাম বলে না, হয়ত প্রিয়ব্যক্তির নাম বলতে নেই। তাই চাটগাই বলে।
আচ্ছা ভাইয়া আমি ফোন দিচ্ছি...
ক্যামনে দিবি? তোর ফোনেতো টাকা নাই!
কে বলল? ও তুমি জানো যে আমার ফোনে প্রায়ই টাকা থাকে না তাই ঠ্যাশ মারলা?
তোর ফোনে আছে একটাকা সাইত্রিশ পয়সা।
ও তুমি আমার ব্যালেন্স দেখেছ!
শোন আমি ৫০টাকা পাঠাচ্ছি। ওকে একটু ফোন দিস, দেখতো কী খবর? আমার ফোন ধরছে না।
কিছুক্ষণ পরই মেসেজ পেলাম, টাকার মেসেজ। ইচ্ছে হচ্ছিল সুজনকে ফোন দিই। কিন্তু যে কাজের জন্য টাকাটা এলা সেটা আগে করাই বোধয় সততা।....
সাথী আপুকে ফোন দিলাম। ফোন ধরলো আরেকজন। চিটাগংএর আঞ্চলিক ভাষা। আমিতো বুঝিইনি, সেও কি আমার কথা বুঝল কি না কে জানে। আমার আম্মু যে শিক্ষার জোরে আঞ্চলিক ভাষাটার মাধূর্য লুকিয়েছেন , তাই আর শেখা হয়নি একটা বিখ্যাত আঞ্চলিক ভাষা।
অমুক খুব ব্যস্ত আছে তা বুঝলাম এবং প্রচুর হৈচৈ শুনলাম। মনে হলো কোনও বড় আয়োজনের মধ্যে! আর তখনই মনে হলো তবেকি কোনও বিয়ের আসরে আছেন? বিয়েটাকি তার নিজের? এজন্যইকি ভাইয়ার ফোন ধরছে না?
সুজনকে ফোন দিলাম। ও ফোন ধরল না। ও বেশিরভাগ সময় একাজ করে, আমি ফোন দিলে কেটে নিজে ফোন করে। কিন্তু কই আজতো করছে না।... কোনও প্রবলেম?
দ্বিতীয়বার ফোন না দিয়ে টুম্পাদিকে ফোন দিলাম, আশ্চর্য! সেও ধরল না!
আর কাউকে ফোন না দিয়ে টেবিলে বসলাম। মনে পড়ল চাটগাইয়ের কথা। তার সাথেতো কথা হলো না। ফোন দিলাম। ফোন রিসিভ হলো। প্রচণ্ড শব্দ। এটুকু বঝিলাম আমরা এয়ারপোর্ট এ আছি পরে ফোন দিয়েন....
টেবিলে বসে রাজ্যের ঘুম জড়িয়ে এলো। বইয়ের প্রতি একদমই নজর দেয়া যায় না। চোখ জলে। মাথা ঘোরে, ঘুম পায়।.... কাল কোচিং আছে , একটা টেস্টও আছে...প্রস্তুতি নেওয়া দরকার।
বইটা নিয়ে প্রথমে বসে তারপর শুয়ে তারপর বইটা বুকে রেখে কখন ঘুমিয়ে গেলাম আর টের পাইনি। তবে খুব আরামের ঘুম হয়েছে এটা বুঝলাম।.... শরীর কেমন ঝড়ঝড়ে লাগছে, মনটা ফুরফুরে।....চলবে....
কোন মন্তব্য নেই
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন