সর্বগ্রাসী ভালোবাসার চোখে সঁপে দিয়ে সব
নির্বাক জল ফেলে কী চাও বলতে আর তুমি
আমার ভালোবাসা ছিল শিশিরের ফোঁটা
তুমি ছিলে এক শূন্য মরুভূমি?
আমি মানুষটা বরাবরই একটু গোবেচারা থাকতে পছন্দ করি। অথচ ভেতরে প্রকাশের প্রবল আকাঙ্ক্ষা। ভাবটা এরকম আমি কী জিনিস এটা তোমাদের বুঝে নিতে হবে। আমি নিজ থেকে বোঝাতে যাবো না আমি কী! দীর্ঘ সময় পর একদিন রহমান হাবিব স্যারের কথায় এশিয়ান ইউনিভার্সিটিতে অ্যাপ্লাই করি, কর্তৃপক্ষের পছন্দ হলে ক্লাস নিতে শুরু করি। পার্টটাইম জব। খারাপ না ভালোই। একট্যা স্ট্যাটাস এটাই বড় কথা। তবে মাস্টার্সের কয়টা বেশি পাকনা পোলাপানের কারণে একধরণের ক্লাসভীতি তৈরি হলো। তিনটা কোর্স মাস্টার্সের! দুইটা দুই টিচারের সঙ্গে পাল্টিয়ে একটা রাখলাম। একান্নশ চার। সবচে বেশি স্টুডেন্ট এই ক্লাসে। ক্লাস নিতে গিয়ে গলাফাটিয়ে চিৎকার করতে হয় প্রায়। তারওপর এক মুরুব্বি পণ্ডিত কতটুকু জানে কে জানে কিন্তু কথা বলে খুব বেশি। সে নিজেও অবশ্য কোথাকার টিচার যেন!....বিরক্ত ধরে যায় ক্লাস করতে। তবু চেষ্টা করি ভালো ক্লাস নিতে। কিন্তু কেন যেন কিছু স্টুডেন্ট আমাকে কেয়ার করে না,এমন মনে হতে লাগলো। আর আমিও যেন তাদের বাগে আনতে পারছিলাম না। এভাবেই একটা সেমিস্টার চলে গেলো। এলো দ্বিতীয় সেমিস্টার। ক্লাস নেয়া শেষে সবাই কেমন সমস্বরে বলে উঠলো স্যার আপনার ক্লাসটা করে খুব মজা পেলাম।....
আমি নিজেও বেশ মজা পেলাম। গতক্লাসের প্রস্তুতি এবার এসে কাজে লাগলো। অথচ আমি নিজেও জানি না আমি ঠিক পড়াই নাকি ভুল পড়াই! জীবনানন্দ সম্পর্কে যা যা বলছি তা কি ঠিক নাকি ভুল? জসিম উদ্দিন, ফররুখ, আলমাহমুদ, সৈয়দ আলী আহসান? কীইবা জানি আমি এঁদের সম্পর্কে? আর জানবোইবা কী করে? বাসায় একটুও পড়তে বসতে পারি না। প্রস্তুতি ছাড়া ক্লাসে গিয়ে কীইবা দিতে পারি? তবে নতুন কিছু আইডিয়া কাজে লাগাতে শুরু করেছি ইদানীং। এবারের প্রশ্নটা সাজাচ্ছি ভিন্নরকম করে। জীবনানন্দ দাস সম্পর্কে প্রশ্ন করবো জনপ্রিয়তার কারণ কি? ফররুখ আহমদের ব্যক্তিবাচক/ নামবাচক কবিতার বৈশিষ্ট্য আলোচনা করো। এসব কবিতায় তিনি কী বোঝাতে চেয়েছেন? আরবি ফার্সী শব্দের বহুল ব্যবহার ধর্মীয় আবেগের ফল নাকি যৌক্তিক প্রয়োগ তোমার নিজের মত ব্যাখ্যা করো। তবে আমি দুদিকেই যুক্তি দেখাবো। তিনি সাতচল্লিশোত্তর কবি, যে কারণে তার মানসভূমে ইসলামি প্রজাতন্ত্র বিশেষভাবে প্রভাবিত তাছাড়া তিনি মাওলানা আব্দুল খালেকের ধর্মীয় চিন্তা চেতনা দ্বারা প্রভাবিত। অপরপক্ষে যুক্তি হলো বাংলা সাহিত্যকে তিনি সারাবিশ্বের বিশেষকরে বিশাল পাকিস্তানী উর্দু ফার্সী ভাষাভাসীদের কাছে জনপ্রিয় করে তুলতে চেয়েছেন। হয়ত তিনি একাধারে দুদিকেরই জনপ্রিয় কবি হতে চেয়েছেন তারওপর ধর্মীয় অনুভূতিতো থাকতেই পারে। শুধু অনুভূতি কেন বিপরীত চ্যালেঞ্জ নেয়ার অভিপ্রায়ও হতে পারে; কারণ বাংলা সাহিত্য বলতেই যারা হিন্দুয়ানী সাহিত্যরস খুঁজে পান তাদেরকে একহাত দেখিয়ে দেয়ার মানসিকতা থাকতে পারে, থাকা উচিৎ বৈকি। তবে যারা কেবল ইসলামিক কবি বলে তাকে খাটো করতে চান আমি তাদের ঘোর বিরোধী। সাহিত্য রসাস্বাদনের জন্য যারা মহাভারত রামায়ন পড়েন অক্লান্ত পরিশ্রম করে কিংবা চর্যাপদ, বৈষ্ণব পদাবলী, শ্রীকৃষ্ণ ঘাটেন তাদেরকে যেমন আমরা হিন্দু ফ্যানাটিক বলি না তেমনি আরবি ফার্সী শব্দের আধিক্য দেখে কবি ফররুখকে কেবল ইসলামী ভাবধারার কবি আখ্যা দেয়া ভীষণ অন্যায়। তবে কেউ হয়ত বলবেন ইসলামী পুনর্জাগরণের কথা আর কারও মুখে এতো প্রকটভাবে শোনা যায়নি। হ্যাঁ একথা সত্য যে তিনি ইসলামী পুনর্জাগরণের কথা বলেছেন তার বেশিরভাগ কবিতাতেই। প্রায় কবিতার লাইনে লাইনে সেই পুনর্জাগরণ!.....
এই ব্যাপারটিও ভেবে দেখা দরকার, ফররুখের কবিতা লেখা বা প্রকাশের সময়কালটা ছিল কেমন? তার প্রথম কাব্য প্রকাশ পায় সম্ভবত ১৯৪৪ বা ৪৫ সালে। (১৯৪৪সালের ডিসেম্বরে-সাতসাগরের মাঝি) অর্থৎ সাতচল্লিশের প্রেক্ষাপট। এসময় বৃটিশবিরোধী আন্দোলন এবং তারপর ভারত পাকিস্তানের বিচ্ছেদের জন্য একজন কবির দায়তো কোনও অংশেই কম নয়। আর কেই বা না জানে যে ধর্মই মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করে তোলে, শক্তিশালী করে তোলে সর্বাগ্রে এবং অব্যর্থভাবে। তার মানে মুসলমানদের পুনর্জাগরণ ছিল সময়ের দাবি ইতিহাসের দাবি। এ দাবি পূরণে মুসলমানদের ঐক্যবদ্ধ করার দায়িত্ব পালন করেছেন কবি ফররুখ। অতএব ইসলামি ভাবধারার কবি বলার আগে তাকে বলতে হবে দেশপ্রেমের কবি, কান্ডারি কবি। এই ক্ষেত্রে তার কবিতা আর নজরুলের কণ্ঠকি একই বীণায় বেজে ওঠেনি? দুর্গমগিরি কান্তার মরু দুস্তর পারাবার লঙ্ঘিতে হবে রাত্রি নিশীথে যাত্রীরা হুশিঁয়ার। এই যাত্রীরা কি ফররুখের
সেসময় বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলনের অগ্রনায়ক কাজী আবদুল ওদুদ নিজেও বলেছেন- বুদ্ধির মুক্তির পরিবর্তে বাংলার মুসলমান সমাজ আজ ব্যাপকভাবে নিতে চাচ্ছেন আত্মনিয়ন্ত্রণের মন্ত্র।---(১৯৪৫ সালে পিইএন আয়োজিত অল ইন্ডিয়া রাইটার্স কনফান্সে)
বসুধা চক্রবর্তী বলেন-বইটির প্রতি কবিতারই রসাবেশ সৃষ্টির ক্ষমতা রয়েচে। কথা উঠেচে আরবি ফার্সী শব্দের অত্যধিক ব্যবহার নিয়ে, কিন্তু সম্পূর্ণ ভাবযোজনার জন্যে বোধয় তার দরকার ছিল।
১৯৩৯ এর বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য সম্মেলন--খান সাহেব মোহাম্মদ হেদায়তুল্লাহ (সভাপতি) বলেন আবু রুশদ ফররুখ আহমদ, আবু জাফর শামসুদ্দীন, নাজিরুল ইসলাম, আবু হোসেন, আহসান হাবীব, গোলাম কুদ্দুস, শওকত ওসমান।
১৯৪৮ সালে ফররুখ আহমদ কলকাতা থেকে স্থায়ীভাবে ঢাকা চলে আসেন। ১৯৭৪ মৃত্যুকাল পর্যন্ত তার সাহিত্য সাধনা ঢাকাতেই।
আহমদ শরীফ-
আধুনিক যুগেও মুসলমান লেখকের রচনায় হিন্দুয়ানীর অভাব নেই;তাও একই কারণবশত: মুসলমানরা ধর্মাদর্শে আরব্য আর তমদ্দুন-তাহজীবে আরব্য পারসিকপ্রবণ। মীর মশাররফ হোসেন, কায়কোবাদ, নজরুল ইসলাম ও সৈয়দ আলী আহসানের রচনায় হিন্দু প্রভাব রয়েছে। একমাত্র ফররুখ আহমদের মধ্যেই খাটিঁ অনুসরণীয় ইসলামী আদর্শ।:
আমাদের বাংলা ভাষায় স্বকীয় আদর্শে সহিত্য সৃষ্টি করতে হবে, আদর্শ হবে কোরআনের শিক্ষা, আধার হবে মুসলমানি ঐতিহ্যানুগ আর বিষয়বস্তু হবে ব্যক্তি বা সমাজ বৃহদর্থে জগত ও জীবন। এভাবে আমাদের জাতীয় সাহিত্য ও জাতীয় জীবন গড়ে উঠবে। ফররুখ তাই করে পথের দিশারী হয়েছেন।
আলী আহসান ইকবালের সাথে তুলনা করেছেন।ৱৱইসলামী সাংস্কৃতিক সম্মেলন ১৯৫২ সালের ১৭-১৮-১৯-২০শে অক্টোবর ঢাকার কার্জন হলে তমদ্দুন মজলিশ আয়োজিত। প্রবন্ধ-পূর্ব পাকিস্তানের আধুনিক কাব্যসাহিত্য--আল্লামা ইকবাল ও নজরুলের প্রভাবে একদল কবি এগিয়ে এলেন আজাদীপূর্ব দশকে। এঁদের লেখায় ফুটে উঠলো একদিকে নবজাগরণের সুর, অন্যদিকে নিপীড়িত ও নির্যাতিত জনগণের জন্য গবীর দরদ। এঁদের চোখের পাতায় ছিল আজাদীর স্বপ্ন ছড়ানো। ফররুখ আহমদ , বেনজীর আহমদ ,তালিম হোসেন অন্যতম।
তার কবিতায় একাধারে আশবাদ, বাস্তবতা এবং আদর্শের সার্থক সমন্বয়।
দরিয়ার শেষ রাত্রি
রাত্রে ঝড় উঠিয়াছিল; সুবেসাদিকের ম্লান রোশনিতে সমূদ্রের
বুক এখন শান্ত।
পাঞ্জেরী---একাকী রাতের ম্লান জুলমাত হেরি
রাত পোহাবার কত দেরি পাঞ্জেরী।
লাশ, মন, প্রেম-পন্থী, সাতান্নর কবিতা
সিপাহী বিপ্লবের শতবার্ষিকী উপলক্ষে
শহীদ স্মরণে-- মৃত্যু আসে পায় পায় নির্ভত গোপনে হিমেল প্রশ্বাসে।
মুশতারি সিতারা।
সন্ধ্যাতারা, পূর্ণিমা, লোকসাহিত্যের নায়ীকা, রূপকথা, রূপমুগ্ধ, তোমাকে জাগাবো, তুমি জাগলে না,
শাহরিয়ার
আকাশ-নাবিক
হে নিশানবাহী
আউলাদ
সাত সাগরের মাঝি
কায়েদে আজম জিন্দাবাদ
পাকিস্তানের কবি- আল্লামা ইকবাল
কারিগর
জালিম ও মজলুম
সিরাজাম মুনীরা মুহম্মদ মুস্তফা
খোলাফায়ে রাশেদীন- আবুবকর সিদ্দিক
উমর দারাজ দিল।
ওসমান গণি
আলী হায়দার
শহীদে কারবালা
প্রেম-পন্থী
গাউসুল আজম
সুলতানুল হিন্দ
খা’জা নকশবন্দ
মুজাদ্দিদ আলফেসানী
ফেরদৌসি
রুমী
জামী
সাদী
হাফিজ
প্রকৃতি--------কোকিল, ফাল্গুনে, বৈশাখী, ঝড়, বৃষ্টি, বর্ষার বিষণ্ন চাঁদ, ট্রেনে, ময়নামতীর মাঠে, সন্ধ্যায়, গোধূলি সনধ্যার সুর, ধানের কবিতা, চিরাগী পাহাড়, জালারী কবুতর, সেলেট স্টেশনে একটি মীতের প্রভাত, বাংলা ভাষার প্রতি, শাহ গরীবুল্লাহ, তাজকেরাতুল আউলিয়া, কাসাসুল আম্বিয়া, শাহনামা, হাতেম তায়ী
নির্বাক জল ফেলে কী চাও বলতে আর তুমি
আমার ভালোবাসা ছিল শিশিরের ফোঁটা
তুমি ছিলে এক শূন্য মরুভূমি?
আমি মানুষটা বরাবরই একটু গোবেচারা থাকতে পছন্দ করি। অথচ ভেতরে প্রকাশের প্রবল আকাঙ্ক্ষা। ভাবটা এরকম আমি কী জিনিস এটা তোমাদের বুঝে নিতে হবে। আমি নিজ থেকে বোঝাতে যাবো না আমি কী! দীর্ঘ সময় পর একদিন রহমান হাবিব স্যারের কথায় এশিয়ান ইউনিভার্সিটিতে অ্যাপ্লাই করি, কর্তৃপক্ষের পছন্দ হলে ক্লাস নিতে শুরু করি। পার্টটাইম জব। খারাপ না ভালোই। একট্যা স্ট্যাটাস এটাই বড় কথা। তবে মাস্টার্সের কয়টা বেশি পাকনা পোলাপানের কারণে একধরণের ক্লাসভীতি তৈরি হলো। তিনটা কোর্স মাস্টার্সের! দুইটা দুই টিচারের সঙ্গে পাল্টিয়ে একটা রাখলাম। একান্নশ চার। সবচে বেশি স্টুডেন্ট এই ক্লাসে। ক্লাস নিতে গিয়ে গলাফাটিয়ে চিৎকার করতে হয় প্রায়। তারওপর এক মুরুব্বি পণ্ডিত কতটুকু জানে কে জানে কিন্তু কথা বলে খুব বেশি। সে নিজেও অবশ্য কোথাকার টিচার যেন!....বিরক্ত ধরে যায় ক্লাস করতে। তবু চেষ্টা করি ভালো ক্লাস নিতে। কিন্তু কেন যেন কিছু স্টুডেন্ট আমাকে কেয়ার করে না,এমন মনে হতে লাগলো। আর আমিও যেন তাদের বাগে আনতে পারছিলাম না। এভাবেই একটা সেমিস্টার চলে গেলো। এলো দ্বিতীয় সেমিস্টার। ক্লাস নেয়া শেষে সবাই কেমন সমস্বরে বলে উঠলো স্যার আপনার ক্লাসটা করে খুব মজা পেলাম।....
আমি নিজেও বেশ মজা পেলাম। গতক্লাসের প্রস্তুতি এবার এসে কাজে লাগলো। অথচ আমি নিজেও জানি না আমি ঠিক পড়াই নাকি ভুল পড়াই! জীবনানন্দ সম্পর্কে যা যা বলছি তা কি ঠিক নাকি ভুল? জসিম উদ্দিন, ফররুখ, আলমাহমুদ, সৈয়দ আলী আহসান? কীইবা জানি আমি এঁদের সম্পর্কে? আর জানবোইবা কী করে? বাসায় একটুও পড়তে বসতে পারি না। প্রস্তুতি ছাড়া ক্লাসে গিয়ে কীইবা দিতে পারি? তবে নতুন কিছু আইডিয়া কাজে লাগাতে শুরু করেছি ইদানীং। এবারের প্রশ্নটা সাজাচ্ছি ভিন্নরকম করে। জীবনানন্দ দাস সম্পর্কে প্রশ্ন করবো জনপ্রিয়তার কারণ কি? ফররুখ আহমদের ব্যক্তিবাচক/ নামবাচক কবিতার বৈশিষ্ট্য আলোচনা করো। এসব কবিতায় তিনি কী বোঝাতে চেয়েছেন? আরবি ফার্সী শব্দের বহুল ব্যবহার ধর্মীয় আবেগের ফল নাকি যৌক্তিক প্রয়োগ তোমার নিজের মত ব্যাখ্যা করো। তবে আমি দুদিকেই যুক্তি দেখাবো। তিনি সাতচল্লিশোত্তর কবি, যে কারণে তার মানসভূমে ইসলামি প্রজাতন্ত্র বিশেষভাবে প্রভাবিত তাছাড়া তিনি মাওলানা আব্দুল খালেকের ধর্মীয় চিন্তা চেতনা দ্বারা প্রভাবিত। অপরপক্ষে যুক্তি হলো বাংলা সাহিত্যকে তিনি সারাবিশ্বের বিশেষকরে বিশাল পাকিস্তানী উর্দু ফার্সী ভাষাভাসীদের কাছে জনপ্রিয় করে তুলতে চেয়েছেন। হয়ত তিনি একাধারে দুদিকেরই জনপ্রিয় কবি হতে চেয়েছেন তারওপর ধর্মীয় অনুভূতিতো থাকতেই পারে। শুধু অনুভূতি কেন বিপরীত চ্যালেঞ্জ নেয়ার অভিপ্রায়ও হতে পারে; কারণ বাংলা সাহিত্য বলতেই যারা হিন্দুয়ানী সাহিত্যরস খুঁজে পান তাদেরকে একহাত দেখিয়ে দেয়ার মানসিকতা থাকতে পারে, থাকা উচিৎ বৈকি। তবে যারা কেবল ইসলামিক কবি বলে তাকে খাটো করতে চান আমি তাদের ঘোর বিরোধী। সাহিত্য রসাস্বাদনের জন্য যারা মহাভারত রামায়ন পড়েন অক্লান্ত পরিশ্রম করে কিংবা চর্যাপদ, বৈষ্ণব পদাবলী, শ্রীকৃষ্ণ ঘাটেন তাদেরকে যেমন আমরা হিন্দু ফ্যানাটিক বলি না তেমনি আরবি ফার্সী শব্দের আধিক্য দেখে কবি ফররুখকে কেবল ইসলামী ভাবধারার কবি আখ্যা দেয়া ভীষণ অন্যায়। তবে কেউ হয়ত বলবেন ইসলামী পুনর্জাগরণের কথা আর কারও মুখে এতো প্রকটভাবে শোনা যায়নি। হ্যাঁ একথা সত্য যে তিনি ইসলামী পুনর্জাগরণের কথা বলেছেন তার বেশিরভাগ কবিতাতেই। প্রায় কবিতার লাইনে লাইনে সেই পুনর্জাগরণ!.....
এই ব্যাপারটিও ভেবে দেখা দরকার, ফররুখের কবিতা লেখা বা প্রকাশের সময়কালটা ছিল কেমন? তার প্রথম কাব্য প্রকাশ পায় সম্ভবত ১৯৪৪ বা ৪৫ সালে। (১৯৪৪সালের ডিসেম্বরে-সাতসাগরের মাঝি) অর্থৎ সাতচল্লিশের প্রেক্ষাপট। এসময় বৃটিশবিরোধী আন্দোলন এবং তারপর ভারত পাকিস্তানের বিচ্ছেদের জন্য একজন কবির দায়তো কোনও অংশেই কম নয়। আর কেই বা না জানে যে ধর্মই মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করে তোলে, শক্তিশালী করে তোলে সর্বাগ্রে এবং অব্যর্থভাবে। তার মানে মুসলমানদের পুনর্জাগরণ ছিল সময়ের দাবি ইতিহাসের দাবি। এ দাবি পূরণে মুসলমানদের ঐক্যবদ্ধ করার দায়িত্ব পালন করেছেন কবি ফররুখ। অতএব ইসলামি ভাবধারার কবি বলার আগে তাকে বলতে হবে দেশপ্রেমের কবি, কান্ডারি কবি। এই ক্ষেত্রে তার কবিতা আর নজরুলের কণ্ঠকি একই বীণায় বেজে ওঠেনি? দুর্গমগিরি কান্তার মরু দুস্তর পারাবার লঙ্ঘিতে হবে রাত্রি নিশীথে যাত্রীরা হুশিঁয়ার। এই যাত্রীরা কি ফররুখের
সেসময় বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলনের অগ্রনায়ক কাজী আবদুল ওদুদ নিজেও বলেছেন- বুদ্ধির মুক্তির পরিবর্তে বাংলার মুসলমান সমাজ আজ ব্যাপকভাবে নিতে চাচ্ছেন আত্মনিয়ন্ত্রণের মন্ত্র।---(১৯৪৫ সালে পিইএন আয়োজিত অল ইন্ডিয়া রাইটার্স কনফান্সে)
বসুধা চক্রবর্তী বলেন-বইটির প্রতি কবিতারই রসাবেশ সৃষ্টির ক্ষমতা রয়েচে। কথা উঠেচে আরবি ফার্সী শব্দের অত্যধিক ব্যবহার নিয়ে, কিন্তু সম্পূর্ণ ভাবযোজনার জন্যে বোধয় তার দরকার ছিল।
১৯৩৯ এর বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য সম্মেলন--খান সাহেব মোহাম্মদ হেদায়তুল্লাহ (সভাপতি) বলেন আবু রুশদ ফররুখ আহমদ, আবু জাফর শামসুদ্দীন, নাজিরুল ইসলাম, আবু হোসেন, আহসান হাবীব, গোলাম কুদ্দুস, শওকত ওসমান।
১৯৪৮ সালে ফররুখ আহমদ কলকাতা থেকে স্থায়ীভাবে ঢাকা চলে আসেন। ১৯৭৪ মৃত্যুকাল পর্যন্ত তার সাহিত্য সাধনা ঢাকাতেই।
আহমদ শরীফ-
আধুনিক যুগেও মুসলমান লেখকের রচনায় হিন্দুয়ানীর অভাব নেই;তাও একই কারণবশত: মুসলমানরা ধর্মাদর্শে আরব্য আর তমদ্দুন-তাহজীবে আরব্য পারসিকপ্রবণ। মীর মশাররফ হোসেন, কায়কোবাদ, নজরুল ইসলাম ও সৈয়দ আলী আহসানের রচনায় হিন্দু প্রভাব রয়েছে। একমাত্র ফররুখ আহমদের মধ্যেই খাটিঁ অনুসরণীয় ইসলামী আদর্শ।:
আমাদের বাংলা ভাষায় স্বকীয় আদর্শে সহিত্য সৃষ্টি করতে হবে, আদর্শ হবে কোরআনের শিক্ষা, আধার হবে মুসলমানি ঐতিহ্যানুগ আর বিষয়বস্তু হবে ব্যক্তি বা সমাজ বৃহদর্থে জগত ও জীবন। এভাবে আমাদের জাতীয় সাহিত্য ও জাতীয় জীবন গড়ে উঠবে। ফররুখ তাই করে পথের দিশারী হয়েছেন।
আলী আহসান ইকবালের সাথে তুলনা করেছেন।ৱৱইসলামী সাংস্কৃতিক সম্মেলন ১৯৫২ সালের ১৭-১৮-১৯-২০শে অক্টোবর ঢাকার কার্জন হলে তমদ্দুন মজলিশ আয়োজিত। প্রবন্ধ-পূর্ব পাকিস্তানের আধুনিক কাব্যসাহিত্য--আল্লামা ইকবাল ও নজরুলের প্রভাবে একদল কবি এগিয়ে এলেন আজাদীপূর্ব দশকে। এঁদের লেখায় ফুটে উঠলো একদিকে নবজাগরণের সুর, অন্যদিকে নিপীড়িত ও নির্যাতিত জনগণের জন্য গবীর দরদ। এঁদের চোখের পাতায় ছিল আজাদীর স্বপ্ন ছড়ানো। ফররুখ আহমদ , বেনজীর আহমদ ,তালিম হোসেন অন্যতম।
তার কবিতায় একাধারে আশবাদ, বাস্তবতা এবং আদর্শের সার্থক সমন্বয়।
দরিয়ার শেষ রাত্রি
রাত্রে ঝড় উঠিয়াছিল; সুবেসাদিকের ম্লান রোশনিতে সমূদ্রের
বুক এখন শান্ত।
পাঞ্জেরী---একাকী রাতের ম্লান জুলমাত হেরি
রাত পোহাবার কত দেরি পাঞ্জেরী।
লাশ, মন, প্রেম-পন্থী, সাতান্নর কবিতা
সিপাহী বিপ্লবের শতবার্ষিকী উপলক্ষে
শহীদ স্মরণে-- মৃত্যু আসে পায় পায় নির্ভত গোপনে হিমেল প্রশ্বাসে।
মুশতারি সিতারা।
সন্ধ্যাতারা, পূর্ণিমা, লোকসাহিত্যের নায়ীকা, রূপকথা, রূপমুগ্ধ, তোমাকে জাগাবো, তুমি জাগলে না,
শাহরিয়ার
আকাশ-নাবিক
হে নিশানবাহী
আউলাদ
সাত সাগরের মাঝি
কায়েদে আজম জিন্দাবাদ
পাকিস্তানের কবি- আল্লামা ইকবাল
কারিগর
জালিম ও মজলুম
সিরাজাম মুনীরা মুহম্মদ মুস্তফা
খোলাফায়ে রাশেদীন- আবুবকর সিদ্দিক
উমর দারাজ দিল।
ওসমান গণি
আলী হায়দার
শহীদে কারবালা
প্রেম-পন্থী
গাউসুল আজম
সুলতানুল হিন্দ
খা’জা নকশবন্দ
মুজাদ্দিদ আলফেসানী
ফেরদৌসি
রুমী
জামী
সাদী
হাফিজ
প্রকৃতি--------কোকিল, ফাল্গুনে, বৈশাখী, ঝড়, বৃষ্টি, বর্ষার বিষণ্ন চাঁদ, ট্রেনে, ময়নামতীর মাঠে, সন্ধ্যায়, গোধূলি সনধ্যার সুর, ধানের কবিতা, চিরাগী পাহাড়, জালারী কবুতর, সেলেট স্টেশনে একটি মীতের প্রভাত, বাংলা ভাষার প্রতি, শাহ গরীবুল্লাহ, তাজকেরাতুল আউলিয়া, কাসাসুল আম্বিয়া, শাহনামা, হাতেম তায়ী
কোন মন্তব্য নেই
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন