প্রতিদ্বন্দ্বিতা নয় বন্ধুতা!
প্রতিদ্বন্দ্বিতা নয় বন্ধুতা!
খুব ছোটবেলাকার কথা! মনে পড়লে এখনও হাসি পায়। খুব অল্পতেই এতো রেগে যেতাম যে বন্ধুরাও অনেক সমীহ করে চলতো। একটু একরোখাছিলাম। একটু বেশিরকম জেদী্ও ছিলাম...এখন শুনতে পাই হোমিও ওষুধ খেলে নাকি জেদ, কড়া রাগ, মেজাজ বিগড়ানো, খিটখিটে মেজাজা টাইপের রোগগুলো ভালো হয়ে যায়....তবে সে সময় এটাকে খুবই বাজে দৃষ্টিতে দেখা হতো মা-বাবার কথায় তেমন প্রমাণই পাই। তো একবার হলো কি....
মাস-টাস মনে নাই, তবে এটুকু জানি রাত হলেই ঝড় হতো। প্রচুর আম পড়তো। আর আমরা তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতার মধ্য দিয়ে সেসব আম কুড়াতাম।...একরাতে আমরা সবাই ঘুমিয়ে পড়েছি; সেই গভীর রাতে সেই ঝড় উঠলো আকাশে। কিন্তু কোনওভাবেই আমার ঘুম ভাঙল না। সকালে উঠে দেখি পাশের বাসার মৌসুমীদের করিডোরে আমের টাল পড়ে আছে। আম্মুকে জিজ্ঞেস করে জানতে পারি কাল রাতের ঝড়ের কথা। কিন্তু আমাকে কেন ডাকা হলো না? আম্মু সে প্রশ্নের কোনও উত্তর দিতে পারেনি।...
আমার ভীষণ আফসোস হলো। আম কুড়ানোর সুখ থেকে বঞ্চিত হলাম। যেন দারুণ একটা প্রতিযোগিতায় হেরে গেলাম। কে কতো আম কুড়াতে পারে এই নিয়ে চলতো লড়াই আর সেই লড়াইয়ে একটা মেয়ের কাছে আমি হেরে গেলাম? আম্মুর সঙ্গে ঝগড়া করে আমার প্রিয় হাঙ্গারস্ট্রাইক শুরু করলাম।...
একবেলা দুবেলা তিন বেলা...আম্মু আর পথ খুঁজে পেলেন না,আমাকে কিছুতেই কিছু খা্ওয়াতে পারছেন না দেখে বেশ চিন্তিত হয়ে পড়লেন। আর এমন কি ভাগ্য পরের রাতে আর ঝড় হলো না। এদিকে অতোগুলো আম ওরা সবার বাসায় বাসায় বিলিয়ে দিল তারপরও আচার হলো কয়েক বয়াম। একদিন আগেও ওদের চেয়ে আমাদের আচারের বয়াম ছিল অন্তত তিনটা বেশি। ছাদে বসে গুণে দেখতাম। তোমাদের আচার ৬টা, আমাদের...একটা দুইটা...তিনটা....
পরদিন ও বারবার কাশছিল। আমি বললাম ঠিক হইছে, অতো রাতে ঝড়ে ভিজলা ক্যান....তর্ক বাধে...ও রাগ করে নিচে চলে যায়। আর কথা হয় না। পরে যখন জানলাম ওর গায়ে খুব জ্বর তখন আম্মু বলল মৌসুমকে একবার দেখতে গেলি না? তুই খুব হিংসুটে।...অতো আম দিয়ে তুই কী করবি? খাস কয়টা?
এখনও ভেবে অবাক হই, সত্যিতো অতো ছোটবেলা থেকেই কেন এমন চিন্তা মাথায় ঢুকেছিল? ভোগ করতে পারি না পারি অর্জন করতে চাই সবার বেশি! কেন? একেই কি বলে পুঁজিবাদি সমাজ? আমরা ক্রমশ পুঁজি বাড়াতে চাই! যাহোক মায়ের অনুরোধে এবং সত্যিই বোধয় খেলার সাথীর এবং প্রতিদ্বন্দ্বীর অসুস্থতায় আমি একটু কষ্টই পেলাম। তারচেয়ে বেশি কষ্ট লাগলো আমি ওর কাশি দেখে বলেছিলাম ভালো হইছে....
মৌসুমি জ্বরের ঘোরে আবল তাবল বকছিল। আসলে আবল তাবল না্ যা যখন মুখে আসছে তাই বলছে। বইয়েরমুখস্থ যতো পড়া সব উগড়ে দিচ্ছে....আমাকে কাছে পেয়ে বলল..আমাদের আমগুলো সব তুমি নিয়ে যাও, আচার গুলিও নেও....আমি আর কোনওদিন আম কুড়াতে যাবো না।.......
বাহ জ্বরটা যেন আমার জন্য এসছে। আমার খুব কষ্ট লাগলো ওর অভিমানে। বাসায় এসে আম্মুকে বললাম ওদের আমগুলো ফেরৎ দিয়ে আসো। ওদের কিচ্ছু আমাদের বাসায় রাখবে না।....আম্মু খেপে গিয়ে বলে - যা হইছে অসুস্থ মেয়েটার সাথে আর পাল্লা দিয়ে ঝগড়া করতে হবে না।....
এর কিছুদিন পরও যখন জ্বর সারল না তখন ডাক্তার বলল টাইফয়েড সহসা সারবে না, ওকে চেইঞ্জে নিয়ে যান। এবং ক’দিন পরই ওরা ইন্ডিয়া চলে গেলো। ওর দাদা বাড়ি ছিল ইন্ডিয়া। যদিও দাদা নেই, এক চাচা বেঁচে আছেন। এবং তার কাছে ওরা সব সম্পত্তি বিক্রি করে ঢাকা চলে এসছে। আবার দাদার আগের পুরুষ নাকি এ দেশেরই। কীভাবে এটা জানি না, হয়ত ¯^vaxbZvhy‡×i সময় কোনও মেলবন্ধন বা বিচ্ছেদের মতো কিছু ঘটেছিল।...
ওরা চলে যাওয়ার পর পুরো বাড়িতে আমরা একা হয়ে গেলাম। একদমই আর ভালো লাগছে না। সবচেয়ে অবাক হলাম! আম কুড়াতেও এখন আর ভাললাগে না। আম ঝরে পড়ে থাকে কেউ কুড়াতে যায় না। আম্মু ফাঁকে ফাঁকে গিয়ে নিয়ে আসে। কেন ভালো লাগে না? প্রতিদ্বন্দ্বি নেই বলে? সম্পদ উপার্জনেওকি মানুষের মধ্যে একই রকম প্রতিদ্বন্দ্বিতা কাজ করে? তাই কি মানুষ এতো ছুটে বেড়ায়?
অর্থনৈতিক প্রতিযোগিতাই কি তবে সব অনিষ্টের মূল? মানুষ অন্যেরটা দেখে নিজেরটা বাড়াতে চায়, সেও আবার আরেকজনেরটা চেয়ে নিজের টা বাড়াতে চায়...এভাবেই চলে দুর্নীতি লোকঠকানো, হত্যা খুন টেন্ডারবাজি, ছিনতাই, রাহাজানির মতো ঘটনা? কিন্তু সেই ছোটবেলা থেকেই কেন এমন প্রবণতা জেঁকে বসে? দেখে দেখে নিশ্চই। যখন দেখি বা দেখানো হয় অমুকের এটা আছে আমার ওটা নাই...যখনই এমন কম্পেয়ারগুলো নিজের মধ্যে জেগে ওঠে বা জাগিয়ে তোলা হয় সামাজিক আচারঅনুষ্ঠানে, সংস্কৃতিতে জীবনযাপনে...তখন নিজের মধ্যেও তৈরি হয় বঞ্চনার ক্ষোভ, প্রাপ্তির লোভ!
একমাস পর মৌসুমিরা যখন ফিরে এলো ততদিনে স্কুলে প্রথম সেমিস্টার শেষ হয়ে গেছে। ও অংশ নিতে পারেনি। এবং ফিরে আসার পর ওর আর পড়ার প্রতি তেমন আগ্রহই দেখতে পেলাম না। যে স্কুলে যেতে আমাকে ডাকতে আসতো সে-ই বলে স্কুলে যাবা? চলো না মনোপলি খেলি! ইন্ডিয়া থেকে শহর কেনার বাড়ি কেনার অদ্ভুত একটা খেলা নিয়ে এসছে ও। দারুণ নেশার। কে কয়টা শহর রাস্তা বাড়ি কিনতে পারল, মার্কেট কিনতে পারল এই প্রতিযোগিতা! খেলাটা খুব ভালো মনে নেই তবে এখন ঢাকায় যে মীনা বাজার দেখি তেমন মীনা বাজার সে খেলায় কিনতে পাওয়া যেত।....সম্ভবত ধনী হবার মজার খেলা...বলা হতো এটাকে।
বাস্তবের মাঠ ছেড়ে খেলার মাঠে আমরা একে অপরকে হারাবার আপ্রাণ চেষ্টায় লেগে থাকতাম। আর কোনও কম্পিটিশান নেই, শুধু খেলায় কে কতো ধনী হতে পারে। গ্রামেও বেড়াতে গিয়ে দেখলাম কুতকুত খেলায় ঘর কেনার প্রতিযোগিতা। একজন একটা ঘর কিনে ফেললে সে ঘরে আর প্রতিপক্ষ পা ফেলতে পারবে না। এখনকার তিনবিঘা করিডোরের মতোই?...
মৌসুমিরা ঢাকাতে বাড়ি করেছে, সাভারে। আমার বাবা পারেনি বা যোগ দেয়নি সেই কম্পিটিশনে, তাই নিজেরা চেষ্টা করছি ঢাকায় একটা স্থায়ী আবাস গড়তে...অনেক সহজ একটা সুযোগ পেয়েও পেরে উঠছি না। কিন্তু খুব কি জরুরি এটা? জরুরি মনে হয় যখন আর সব ভুলে গেলেও মনে থাকে বাড়িঅলাদের আধিপত্যে বিড়ালের মতো থাকতে হয় ভাড়া বাড়িতে, দারোয়ানের ডাক শুনতে হয়, এদিক চলতে বাধা এদিক চলতে নিষেধ...ব্যক্তিত্বের সবটুকুই যেন বিসর্জন দিতে হয় ভাড়াটিয়া বলে। অথচ আমারা ভাড়াটিয়ারাই সংখ্যায় বেশি।
বৈশাখ এলে আমরা ব্যস্ত হই নিজস্ব সংস্কৃতি চর্চায়, ইলিশ-পান্তার নামে সংস্কৃতি বাঁচানোর প্রচেষ্টায় রত! অথচ বাজারে চলে তুমুল প্রতিযোগিতা! কে কাকে ঠেলে ফেলে যতো দামই হোক ইলিশ কিনবে, নইলে আর ইজ্জত থাকে না জাতীয় মনোভাব! সত্যিই কি এটাই আমাদের ঐতিহ্য? বাঙালির ঐতিহ্য জানি না, কারণ বাঙারি ঐতিহ্য জানার কোনও পথ আমার নেই। তবে মুসলিম ঐতিহ্য বলছে বিজয়ের পর সবার সমান অধিকার। মুসলমানরা যতো রাজ্য অধিকার করেছে, সেখানকার অধিবাসীদের ভাই করে নিয়েছে। এমনকি, পাল রাজাদের পতন ঘটিয়ে সমধর্মী সেন রাজারা যখন ক্ষমতা দখল করলো তখন বিজিতদের মারা হলো কচুকাটা করে আর বাকীদের রাখা হলো অচ্ছুত করে...অথচ সেই সেনদের পরাজিত করে ইখতিয়ার উদ্দিন বখতিয়ার খিলজি যখন ক্ষমতায় আসীন হলো, ঘোষণা দিল যারা ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করবে তারা আমাদের ভাই। আমাদের এবং তাদের সমান অধিকার। আর যারা নিজধর্মে থাকতে চায় তারা সবধরণের নিরাপত্তাই পাবে তবে তাদের আনুগত্য ¯^xKvi করতে হবে।....এমন মানবতার কথা যারা বলতে পারে সেই ঐতিহ্য কি আমাদের আসল সম্পদ নাকি আজ যা দেখছি...সেটা?
বৈশাখ আমাদের মূল সংস্কৃতির ধারায় ফিরিয়ে আনুক এটাই চাই।
খুব ছোটবেলাকার কথা! মনে পড়লে এখনও হাসি পায়। খুব অল্পতেই এতো রেগে যেতাম যে বন্ধুরাও অনেক সমীহ করে চলতো। একটু একরোখাছিলাম। একটু বেশিরকম জেদী্ও ছিলাম...এখন শুনতে পাই হোমিও ওষুধ খেলে নাকি জেদ, কড়া রাগ, মেজাজ বিগড়ানো, খিটখিটে মেজাজা টাইপের রোগগুলো ভালো হয়ে যায়....তবে সে সময় এটাকে খুবই বাজে দৃষ্টিতে দেখা হতো মা-বাবার কথায় তেমন প্রমাণই পাই। তো একবার হলো কি....
মাস-টাস মনে নাই, তবে এটুকু জানি রাত হলেই ঝড় হতো। প্রচুর আম পড়তো। আর আমরা তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতার মধ্য দিয়ে সেসব আম কুড়াতাম।...একরাতে আমরা সবাই ঘুমিয়ে পড়েছি; সেই গভীর রাতে সেই ঝড় উঠলো আকাশে। কিন্তু কোনওভাবেই আমার ঘুম ভাঙল না। সকালে উঠে দেখি পাশের বাসার মৌসুমীদের করিডোরে আমের টাল পড়ে আছে। আম্মুকে জিজ্ঞেস করে জানতে পারি কাল রাতের ঝড়ের কথা। কিন্তু আমাকে কেন ডাকা হলো না? আম্মু সে প্রশ্নের কোনও উত্তর দিতে পারেনি।...
আমার ভীষণ আফসোস হলো। আম কুড়ানোর সুখ থেকে বঞ্চিত হলাম। যেন দারুণ একটা প্রতিযোগিতায় হেরে গেলাম। কে কতো আম কুড়াতে পারে এই নিয়ে চলতো লড়াই আর সেই লড়াইয়ে একটা মেয়ের কাছে আমি হেরে গেলাম? আম্মুর সঙ্গে ঝগড়া করে আমার প্রিয় হাঙ্গারস্ট্রাইক শুরু করলাম।...
একবেলা দুবেলা তিন বেলা...আম্মু আর পথ খুঁজে পেলেন না,আমাকে কিছুতেই কিছু খা্ওয়াতে পারছেন না দেখে বেশ চিন্তিত হয়ে পড়লেন। আর এমন কি ভাগ্য পরের রাতে আর ঝড় হলো না। এদিকে অতোগুলো আম ওরা সবার বাসায় বাসায় বিলিয়ে দিল তারপরও আচার হলো কয়েক বয়াম। একদিন আগেও ওদের চেয়ে আমাদের আচারের বয়াম ছিল অন্তত তিনটা বেশি। ছাদে বসে গুণে দেখতাম। তোমাদের আচার ৬টা, আমাদের...একটা দুইটা...তিনটা....
পরদিন ও বারবার কাশছিল। আমি বললাম ঠিক হইছে, অতো রাতে ঝড়ে ভিজলা ক্যান....তর্ক বাধে...ও রাগ করে নিচে চলে যায়। আর কথা হয় না। পরে যখন জানলাম ওর গায়ে খুব জ্বর তখন আম্মু বলল মৌসুমকে একবার দেখতে গেলি না? তুই খুব হিংসুটে।...অতো আম দিয়ে তুই কী করবি? খাস কয়টা?
এখনও ভেবে অবাক হই, সত্যিতো অতো ছোটবেলা থেকেই কেন এমন চিন্তা মাথায় ঢুকেছিল? ভোগ করতে পারি না পারি অর্জন করতে চাই সবার বেশি! কেন? একেই কি বলে পুঁজিবাদি সমাজ? আমরা ক্রমশ পুঁজি বাড়াতে চাই! যাহোক মায়ের অনুরোধে এবং সত্যিই বোধয় খেলার সাথীর এবং প্রতিদ্বন্দ্বীর অসুস্থতায় আমি একটু কষ্টই পেলাম। তারচেয়ে বেশি কষ্ট লাগলো আমি ওর কাশি দেখে বলেছিলাম ভালো হইছে....
মৌসুমি জ্বরের ঘোরে আবল তাবল বকছিল। আসলে আবল তাবল না্ যা যখন মুখে আসছে তাই বলছে। বইয়েরমুখস্থ যতো পড়া সব উগড়ে দিচ্ছে....আমাকে কাছে পেয়ে বলল..আমাদের আমগুলো সব তুমি নিয়ে যাও, আচার গুলিও নেও....আমি আর কোনওদিন আম কুড়াতে যাবো না।.......
বাহ জ্বরটা যেন আমার জন্য এসছে। আমার খুব কষ্ট লাগলো ওর অভিমানে। বাসায় এসে আম্মুকে বললাম ওদের আমগুলো ফেরৎ দিয়ে আসো। ওদের কিচ্ছু আমাদের বাসায় রাখবে না।....আম্মু খেপে গিয়ে বলে - যা হইছে অসুস্থ মেয়েটার সাথে আর পাল্লা দিয়ে ঝগড়া করতে হবে না।....
এর কিছুদিন পরও যখন জ্বর সারল না তখন ডাক্তার বলল টাইফয়েড সহসা সারবে না, ওকে চেইঞ্জে নিয়ে যান। এবং ক’দিন পরই ওরা ইন্ডিয়া চলে গেলো। ওর দাদা বাড়ি ছিল ইন্ডিয়া। যদিও দাদা নেই, এক চাচা বেঁচে আছেন। এবং তার কাছে ওরা সব সম্পত্তি বিক্রি করে ঢাকা চলে এসছে। আবার দাদার আগের পুরুষ নাকি এ দেশেরই। কীভাবে এটা জানি না, হয়ত ¯^vaxbZvhy‡×i সময় কোনও মেলবন্ধন বা বিচ্ছেদের মতো কিছু ঘটেছিল।...
ওরা চলে যাওয়ার পর পুরো বাড়িতে আমরা একা হয়ে গেলাম। একদমই আর ভালো লাগছে না। সবচেয়ে অবাক হলাম! আম কুড়াতেও এখন আর ভাললাগে না। আম ঝরে পড়ে থাকে কেউ কুড়াতে যায় না। আম্মু ফাঁকে ফাঁকে গিয়ে নিয়ে আসে। কেন ভালো লাগে না? প্রতিদ্বন্দ্বি নেই বলে? সম্পদ উপার্জনেওকি মানুষের মধ্যে একই রকম প্রতিদ্বন্দ্বিতা কাজ করে? তাই কি মানুষ এতো ছুটে বেড়ায়?
অর্থনৈতিক প্রতিযোগিতাই কি তবে সব অনিষ্টের মূল? মানুষ অন্যেরটা দেখে নিজেরটা বাড়াতে চায়, সেও আবার আরেকজনেরটা চেয়ে নিজের টা বাড়াতে চায়...এভাবেই চলে দুর্নীতি লোকঠকানো, হত্যা খুন টেন্ডারবাজি, ছিনতাই, রাহাজানির মতো ঘটনা? কিন্তু সেই ছোটবেলা থেকেই কেন এমন প্রবণতা জেঁকে বসে? দেখে দেখে নিশ্চই। যখন দেখি বা দেখানো হয় অমুকের এটা আছে আমার ওটা নাই...যখনই এমন কম্পেয়ারগুলো নিজের মধ্যে জেগে ওঠে বা জাগিয়ে তোলা হয় সামাজিক আচারঅনুষ্ঠানে, সংস্কৃতিতে জীবনযাপনে...তখন নিজের মধ্যেও তৈরি হয় বঞ্চনার ক্ষোভ, প্রাপ্তির লোভ!
একমাস পর মৌসুমিরা যখন ফিরে এলো ততদিনে স্কুলে প্রথম সেমিস্টার শেষ হয়ে গেছে। ও অংশ নিতে পারেনি। এবং ফিরে আসার পর ওর আর পড়ার প্রতি তেমন আগ্রহই দেখতে পেলাম না। যে স্কুলে যেতে আমাকে ডাকতে আসতো সে-ই বলে স্কুলে যাবা? চলো না মনোপলি খেলি! ইন্ডিয়া থেকে শহর কেনার বাড়ি কেনার অদ্ভুত একটা খেলা নিয়ে এসছে ও। দারুণ নেশার। কে কয়টা শহর রাস্তা বাড়ি কিনতে পারল, মার্কেট কিনতে পারল এই প্রতিযোগিতা! খেলাটা খুব ভালো মনে নেই তবে এখন ঢাকায় যে মীনা বাজার দেখি তেমন মীনা বাজার সে খেলায় কিনতে পাওয়া যেত।....সম্ভবত ধনী হবার মজার খেলা...বলা হতো এটাকে।
বাস্তবের মাঠ ছেড়ে খেলার মাঠে আমরা একে অপরকে হারাবার আপ্রাণ চেষ্টায় লেগে থাকতাম। আর কোনও কম্পিটিশান নেই, শুধু খেলায় কে কতো ধনী হতে পারে। গ্রামেও বেড়াতে গিয়ে দেখলাম কুতকুত খেলায় ঘর কেনার প্রতিযোগিতা। একজন একটা ঘর কিনে ফেললে সে ঘরে আর প্রতিপক্ষ পা ফেলতে পারবে না। এখনকার তিনবিঘা করিডোরের মতোই?...
মৌসুমিরা ঢাকাতে বাড়ি করেছে, সাভারে। আমার বাবা পারেনি বা যোগ দেয়নি সেই কম্পিটিশনে, তাই নিজেরা চেষ্টা করছি ঢাকায় একটা স্থায়ী আবাস গড়তে...অনেক সহজ একটা সুযোগ পেয়েও পেরে উঠছি না। কিন্তু খুব কি জরুরি এটা? জরুরি মনে হয় যখন আর সব ভুলে গেলেও মনে থাকে বাড়িঅলাদের আধিপত্যে বিড়ালের মতো থাকতে হয় ভাড়া বাড়িতে, দারোয়ানের ডাক শুনতে হয়, এদিক চলতে বাধা এদিক চলতে নিষেধ...ব্যক্তিত্বের সবটুকুই যেন বিসর্জন দিতে হয় ভাড়াটিয়া বলে। অথচ আমারা ভাড়াটিয়ারাই সংখ্যায় বেশি।
বৈশাখ এলে আমরা ব্যস্ত হই নিজস্ব সংস্কৃতি চর্চায়, ইলিশ-পান্তার নামে সংস্কৃতি বাঁচানোর প্রচেষ্টায় রত! অথচ বাজারে চলে তুমুল প্রতিযোগিতা! কে কাকে ঠেলে ফেলে যতো দামই হোক ইলিশ কিনবে, নইলে আর ইজ্জত থাকে না জাতীয় মনোভাব! সত্যিই কি এটাই আমাদের ঐতিহ্য? বাঙালির ঐতিহ্য জানি না, কারণ বাঙারি ঐতিহ্য জানার কোনও পথ আমার নেই। তবে মুসলিম ঐতিহ্য বলছে বিজয়ের পর সবার সমান অধিকার। মুসলমানরা যতো রাজ্য অধিকার করেছে, সেখানকার অধিবাসীদের ভাই করে নিয়েছে। এমনকি, পাল রাজাদের পতন ঘটিয়ে সমধর্মী সেন রাজারা যখন ক্ষমতা দখল করলো তখন বিজিতদের মারা হলো কচুকাটা করে আর বাকীদের রাখা হলো অচ্ছুত করে...অথচ সেই সেনদের পরাজিত করে ইখতিয়ার উদ্দিন বখতিয়ার খিলজি যখন ক্ষমতায় আসীন হলো, ঘোষণা দিল যারা ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করবে তারা আমাদের ভাই। আমাদের এবং তাদের সমান অধিকার। আর যারা নিজধর্মে থাকতে চায় তারা সবধরণের নিরাপত্তাই পাবে তবে তাদের আনুগত্য ¯^xKvi করতে হবে।....এমন মানবতার কথা যারা বলতে পারে সেই ঐতিহ্য কি আমাদের আসল সম্পদ নাকি আজ যা দেখছি...সেটা?
বৈশাখ আমাদের মূল সংস্কৃতির ধারায় ফিরিয়ে আনুক এটাই চাই।
কোন মন্তব্য নেই
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন