ইলিয়াস নাইট
জিন্দেগিমে কয়ি কভি আয়েনা রাব্বা....
গানটা খুব জোরে বাজছে। একধরণের উন্মাদনা, একধরণের অতিশয়োক্তি। এক্সট্রিম তারুণ্য জাতীয় মুড লাগছে। যদিও নিজের বয়সটা আর সে পর্যায়ে নেই....তবু কিছুক্ষণের জন্য ভাসিয়ে দিলাম.....
আজ অফিস নাইট শিফ্ট। রাত ১২টায় যাবো। নাইট শিফ্ট অবশ্য আমার বরাদ্দে ছিল না। ইলিয়াস কাজটা করেছে। প্রথম যেদিন ডিরেক্টর নিউজ নিউজরুমে নিয়ে গিয়ে আমাকে পরিচয় করিয়ে দিলেন ঠিক তখনই ইলিয়াস আমাকে বলে আসেন কাজ শুরু করে দেন। সিএনই অবশ্য বলেছিল আরে আসলো মাত্র।...তবু কাজ করার সুযোগ পেয়ে আমি খুশিই হলাম। লোকটাকে ভাবলাম আমার উপকারী বন্ধু হিসেবেই। কিন্তু দুদিন না যেতেই বুঝলাম লোকটার আরেকটা চরিত্র আছে...সে অনেক কিছুই আমার উপর চাপাতে চায়। নিজের বার্ডেন অন্যের উপর চাপানোর কৌশল ভালো জানে। একদিন বলল আমি আপনার বিকেলের শিফটটা করবো আপনি আমার সকালের ডিউটিটা করে দেন..আমি সেদিন ভাবলাম আমি এখনও সবকিছু বুঝে উঠতে পারিনি তার কাজকি আমায় দিয়ে হবে? আপত্তি জানাই...তবু সে জোর খাটায়....পরে মেনে নেয়। এরপর আরেকদিন বলে তার নাইট শিফ্টটা করে দিতে হবে আমাকে...এটা এবার সে বলায় কোঅর্ডিনেটরকে দিয়ে।...কিন্তু তখন আমার বাসার অবস্থা খুবই খারাপ। সারক্ষণ বাবুকে নিয়ে টেনশনে কাটাতে হচ্ছে। বাবুর খুব অসুখ তখন।... সেবার সে খুব রাফ ব্যবহার করে...আমাকে চাকরি শেখায়।..চাকরি করতে গেলে সবকিছু মেনে নিতে হবে।...এরপরই চাপিয়ে দেয় এই নাইট শিফ্ট।.....সবাই করে আমাকেও করতে হবে...কোনও সমস্যা নাই কিন্তু খারাপ লাগছে ইলিয়াসের ভাবভঙ্গি দেখে।
অনেক কিছুই মানিয়ে নিতে হবে। একটা কথা ভেবে খুব লজ্জা পাচ্ছি। আমাকে যেদিন ডিউটি রোস্টারে ঢোকানো হলো সেদিন আমি বলেছিলাম ইলিয়াসের সাথে দিতে...তখন ভাবতাম ইলিয়াসই বোধয় সবচে ভালো বন্ধু হবে আমার। হয়ত হতো...যদি না আমি হুটকরে একেরপরএক প্যাকেজ না করে ওর কথামত ওর ফরমায়েশে উভ করতে থাকতাম আর তাকে গুরু মনে করে কুর্নিশ করতাম।...কিন্তু মাসুম মাহবুব কৌশলে আমার চোখ খুলে দিল। বলল এই নে এই প্যাকেজটা কর..নিউজরুমে সে সিনিয়র তার উপর আমার বড়ভাই সে নিশ্চই আমার ভালো চায়...তবু ইলিয়াসের সাথে উভ করতেই সময় নষ্ট করছিলাম...মাসুম মাহবুব ঘুরে এসে জিজ্ঞেস করে প্যাকেজটা করছিস? টনক নড়ে আমার। আমি হাতের কাজটা শেষ করে প্যাকেজটা ধরলাম । মাসুম মাহবুব দেখে কেবল একটি লাইন যোগ করে সেটা সিএনইর কাছে পাঠালো সে ওকে করে দিল তারপর ভয়েস যোগ...ওয়ানটেকে ভয়েস দিলাম। ইলিয়াসের মতো সতেরবার লাগেনি। দুইটা ভয়েস দিলাম দেখি কোনটা ভালো লাগে...। প্যাকেজ হয়ে গেল ব্যাপক সাড়াও পড়লো।...আর কে খুঁজতে যায় ইলিয়াসকে। তবু কিছুদিন প্রথমবন্ধু হিসেবে তার আশপাশেই ঘুরঘুর করতাম। পরামর্শের নামে তারকাছে নিজেকে ছোটকরে তার প্রিয়ভাজন থাকতে চেষ্টা করলাম কিন্তু তার আচরণ ততক্ষণে পাল্টে গেছে। কিছু জানতে চাইলে প্রফেশনাল উত্তর দিচ্ছে। ......বাকী পথটা একাই চলার চেষ্টা করলাম। অনেক বড় ধাক্কা খেলাম ভিডিও এডিটরদের কাছে। সেটাও সামলে উঠলাম। চলছে সেভাবেই। এদিকে বাবার খুব শখ তার ছেলেদের নাম টিভিতে দেখবে। তাকে বললাম ব্যাপারটা আমি এড়িয়ে চলি, প্রচারবিমুখ আরকি...কিন্তু তার বন্ধুবান্ধব ভক্তশ্রেণীরা দিগন্ত দেখে শুধু আমাদের দুইভাইকে দেখার জন্য...কিন্তু কোথাও নামধাম পায় না সেই চাপ এসে পড়ে আব্বার উপর....প্যাকেজগুলো সারাদিন ঘণ্টায় ঘণ্টায় প্রচার হতে থাকে...ভেড়ামারার মানুষজন দেখতে পায়...ফোনকরে জানায়...বাবাও খুশি...সেও বাসায় বসে নিউজ দেখে...নিউজ সেকশনে ঢোকার এইটুকু লাভ হলো। আল্লাহর রহমতে।
কোন মন্তব্য নেই
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন