গৃহ পরিচারিকা সমাচার (শুধুমাত্র প্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য)
গৃহ পরিচারিকা সমাচার (শুধুমাত্র প্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য)
মোটা মোটি স্বচ্ছল পরিবারের জন্য গৃহ পরিচারিকা একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ পদ। একসময় দাসী-বাঁদি হিসাবে পরিচিতি থাকলেও পরবর্তিতে বুয়া, আয়া, ঝি ইত্যাদি নামে ওদেরকে ডাকা হয়। গার্মেন্টস শিল্পের বদৌলতে গৃহপারিচারিকা এখন অনেকটা দুর্লভ বস্তুতে পরিনত হয়েছে। নানা কারনে যারা গার্মেন্টসফ্যক্টরীতে অযোগ্য তারাই শুধু গৃহ পরিচারিকার জন্য অবশিষ্ট রয়েছে। কেউ কেউ কৌতুক করে বলেন, আগামীতে আমাদেরকে আমাদের চেয়ে গরীব কোন দেশ থেকে গৃহ পরিচারিকা ভিসা দিয়ে নিয়ে আসতে হবে। কৌতুক করে বলা হলেও কথাটি যে একেবারে ফেলে দেয়ার মতো নয়, তা ভুক্তভোগীরা এক বাক্যে স্বীকার করবেন। আমারও প্রার্থনা, প্রয়োজনে গৃহ পরিচারিকা আমদানী করব, তারপরও গার্মেন্টস শিল্প টিকে থাক।
পত্র-পত্রিকা খুললেই গৃহ পরিচারিকা নিয়ে নানা রকম মুখরোচক সংবাদ আমরা দেখতে পাই। যেমন: গৃহ কর্তা-কর্ত্রী কতৃক গৃহ পরিচারিকা নির্যাতন, গৃহ পরিচারিকা কতৃক গৃহ বধূ খুন, চুরি ডাকাতিতে গৃহ পরিচারিকার সহযোগীতা ইত্যাদি। আমি যে দিকটা নিয়ে আলোচনা করতে চাই তা খুব একটা আলোচ্য বিষয় হিসাবে আমার চোখে পড়েনি। আসুন শেয়ার করি আমার অভিজ্ঞতা -
১. আমি ড্রয়িং রুমে বসে আছি এমন সময় একটা ৫/৬ বছর বয়সের শিশু সহ এক বোরকা পড়া মহিলা ঘরে প্রবেশ করলেন। ভাবীকে খুঁজতে খুঁজতে বেড রুমে গিয়ে ভাবীর দেখা পেয়ে প্রায় ঘন্টা খানেক আলাপ চারিতার পর বিদায় হলেন। ওনাদের কথা বার্তা যা আমার কানে এসে পৌঁছল তা ছিল বিচিত্র রকমের। অর্থাৎ ভদ্র মহিলার কথার মধ্যে ছিল আবেগ, কান্না, কারো প্রতি অভিশাপ ইত্যাদি। তিনি চলে যাওয়ার পর গিন্নীর কাছে যানতে চাইলাম, ভদ্র মহিলা কে এবং কি নিয়ে কথা হচ্ছিল।
জওয়াব পেলাম - ভদ্র মহিলা পাশের বিল্ডিং এর ভাড়াটে, এক উকিলের স্ত্রী। কর্তার সাথে পরিচারিকার অসামাজিক কর্মকান্ড ফাঁস হওয়ার পর ভদ্র মহিলা এক ধরনের ভারসাম্যহীন হয়ে ঘটনাগুলি এ ভাবে বলা শুরু করেছেন। গৃহ পরিচারিকা কর্তার গ্রামের মেয়ে। সাবধানের মার নাই, তাই কর্ত্রীর শিখিয়ে দেয়া ‘চাচা’ ‘চাচী’ বলে সম্বোধন করত মেয়েটি ওনাদেরকে। একদিন নাকি সামনের ফ্লাটের আরেক উকিলের স্ত্রী এই ভদ্র মহিলাকে সংকেত ও দিয়েছিলেন ‘চাচা-ভাতিজির’ পিরিতির ব্যপারে । কিন্তু স্বামীর প্রতি অঘাদ বিশ্বাসের কারণে আমলে নেননি, তাছাড়া চাচা-ভাতিজি! বলে কথা। টনক নড়ল যখন ৫/৬ বছর বয়সের মেয়ে মাকে বলল - মা, আব্বু মিনাকে (নামটি কাল্পনিক) আদর করেছে। তার পর থেকে পাহাড়া বসিয়ে একদিন বেড রুমে হাতে নাতে পেয়ে গেলেন.....। অতপর নানা হৈ-হাঙ্গামা, মহিলার আত্ম হননের চেষ্টা, ছোট্ট মেয়ে দুটির কারনে আত্ম হনন না করা, সব মিলিয়ে একটা ককটেল টাইপের বিশৃঙ্খলার পর পরিচারিকা সাহেবাকে বিদায় করে কোন রকম সংসারটা টিকিয়ে রেখেছেন। দিন সাতেক যেতে না যেতেই ভদ্র মহিলা ফোন পেলেন। ওপ্রান্ত থেকে মিনার আকুতি, ‘চাচী আমি এসে যাচ্ছি, চাচাকে ছাড়া আমি বাঁচুম না।’ এই বার্তা পেয়ে ভদ্র মহিলা আবারো আউলা ঝাউলা হয়ে পড়েছেন। শেষ মেশ আমার স্ত্রীর নিকট মনের যাতনা উগলে দিয়ে কোন রকম শান্তি পাওয়ার চেষ্টা করছিলেন হয়ত।
২. আমার দূরসম্পর্কের এক মুরুব্বী, স্ত্রী-সন্তানাদি নিয়ে মহা সুখে না হলেও মোটামুটি শুখেই ছিলেন বলা চলে। স্ত্রীর সারাদিনের কর্ম-ক্লান্ত মলিন মুখ খানা দেখে হৃদয়ে ভালবাসার ঢেউ গোতলা দিয়ে উঠেছিল। তাই প্রিয়তমার সুখের জন্য নিয়োগ দিয়েছিলেন এক পরিচারিকা। অল্প দিনের মধ্যেই ভালবাসার ঢেউ গিয়ে ধাক্বা লেগেছিল পরিচারিকার হৃদয় বন্দরে ...
তার পর হৈ-চৈ, শালিশ-দরবার ইত্যাদি গড়িয়ে বিয়েতে গিয়ে ঠেকল ঘটনাটি। অবহেলিত হল প্রথম স্ত্রী ও সন্তানরা। নিজে কিছুদিন গায়ের জোড়ে ভাল অবস্থানে থাকলেও দ্বিতীয় স্ত্রী ও তার আকাশ-পাতাল বয়সের ব্যবধানের কারনে তিনি ক্রমাগত ফেল মারতে থাকলেন। একসময় ভদ্রলোক অসুস্থ হয়ে চরম অবহেলায় ধুকে ধুকে ইহ জগত ত্যাগ করলেন। এ ছিল এক অপরিনাম দর্শী ব্যক্তির করুন পরিনতি।
৩. আমার এক জোড়া পরিচারিকার সারসংক্ষেপ বর্ণনা করেই শেষ করছি। (!) রীনা নামে চকরিয়ার এক মেয়ে কাজ করত আমার মামার বাসায়। সে সুবাদে আমার স্ত্রী ওর আপু আর আমি দুলাভাই। কি সব কারনে মামার বাসা থেকে কাজ ছেড়ে দিয়ে মাস খানেক পর ওর বাবাকে নিয়ে আমার বাসায় হাজির। আপুকে ভাল লাগে তাই আপুর বাসায় কাজ করবে। মামার বাসায় কাজ করার পূর্বে আরো এক বাসায় কাজ করত রীনা। এক সময় কথায় কথায় ওর আপুকে বলে ফেলেছে ,ও বাসার গৃহকর্তার কূ-নজর ....... ইত্যাদির কারণে সে ওখানথেকে কাজ ছেড়েছিল। আসলে ওর কথা ঠিক নাকি গৃহ কর্ত্রী ওকে বিদায় করে হাঁফছেড়ে বেঁচেছেন কি জানি। মেয়েটির বাবার সাথে বেতন, সুযোগ-সুবিধা ইত্যাদি পাকা পোক্ত করার পর নিয়োগ চুড়ান্ত করা হলো। বেশ আগ্রহ উদ্দীপনা নিয়ে কাজে মন দিল মেয়েটি। লক্ষ্যকরলাম সে ক্রমান্বয়ে নিজের চাকচিক্য- কারিশমা ইত্যাদি প্রদর্শন করে চলেছে। ঘুম থেকে উঠেই তাড়া তাড়ি প্রশাধনী লেপ্টানো, চুলের দুই দিকে কেটে চোখ আর কপালের উপর লুল্লুর করে ঝুলিয়ে দেয়া সহ নিজেকে আকর্ষণীয় করার সব ক’টি টিপস নিখুঁত ভাবে প্রয়োগ করা শুরু করে দিয়েছে। ওর আপু বেশ সেয়ানা ও সতর্ক। দুলা ভাইয়ের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা সন্দেহে ওকে এসবের জন্য বকাঝকা ও সাবধান করতে ভুল করেনি। সম্মানিত পাঠক বন্ধুগন, ‘দুলাভাই’ কে ফেরেস্তা মনে করার কোন কারন নাই। তিনিও এক জন মানুষ হিসাবে মানবিয় দুর্বলতার উর্দ্ধে নন। কিন্তু গোনাহ, আমার সামাজিক অবস্থান এবং সর্বোপরি মেয়েটি প্রায় আমার মেয়ের বয়সের কাছা কাছি - এসব বিবেচনায় আমার চারিত্রিক দৃঢ়তা কঠোর থেকে কঠোরতর ছিল। এবং মেয়েটিকে আমার মেয়ের অবস্থানে দেখার কারনে আল্লাহ আমাকে সাহায্য করেছেন আলহামদু লিল্লাহ। মাস দুয়েক পর মেয়েটি জানাল সে আর কাজ করবে না, বাড়ীতে চলে যাবে। অথচ ওর বাবার ভাষ্যমতে ঠিক মত খাবার ও কাপড় চোপড় দিতে অপারগতার কারনে মেয়েকে বাসার কাজে দিয়েছে। আমার বাসায় খাওয়া দাওয়া, কাপড় চোপড়, বেতন কোন কিছুতেই সমস্যায় ছিলনা সে। কি জানি, দুলা ভাইকে হাত করার ইচ্ছায় গুড়েবালি’র কারণে এমন সিদ্ধান্ত কি না। এদিকে আমার আবুধাবী যাওয়ার সময় সন্নিকটে। ঘরে পরিচারিকা অতিঅত্যাবশ্যক। মেয়েটির বাবাকে ডাকালাম, তিনিও অনেক বুঝালেন, বললাম- ২/৩ বছর কাজ করলে আমার খরছে বিয়ে-শাদী দেব। না, কিছুতেই থাকবেনা। শেষে মেয়েটির বাবা রুমের বাহিরে নিযে গিযে কানে কানে কি যেন বলার পর আবার থাকতে রাজী হল।
আমি আবুধাবী চলে আসার ১০দিনের মাথায় মেয়েটি আমার পরিবারের সদস্যদেরকে দুপুরের ঘুমে রেখে কিছু টাকা, একপদ স্বর্ণালংকার ও নিজের কাপড়চোপড় নিয়ে চম্পট দিয়েছে। এদিকে আমার স্ত্রী তো দারুন অস্থিরতায় পড়ে গিয়েছে। রীনার পাশের বাড়ীর একটা মোবাইল নাম্বার ছিল এক ভাবীর। ঐ ভদ্রমহিলার সাথে ফোনালাপে বেশ পরিচিত হয়েছিল আমার স্ত্রী। রীনার মা-বাবাকে ওর পালিয়ে যাওয়ার সংবাদ দেওয়ার জন্য ভাবীর নাম্বারে ফোন করার সাথে সাথে ভাবী চুপি চুপি জানিয়ে দিলেন - রীনা বাড়ীতে চলে এসেছে, কিন্তু ওর মা-বাবা আপনাদেরকে ফাঁসানোর জন্য রওয়ানা দিয়েছে আপনাদের বাসার উদ্দেশ্যে। ঠিকই সন্ধা নাগাদ ওর মা-বাবা আহাজারী করতে করতে বাসায় হাজির। মেয়ের মা তো প্রায় বেহুস। বুক চাপড়াতে চাপড়াতে আমার মেয়ে দাও, আমার মেয়ে দাও বলে কাহিল অবস্থা। ঘটনার আপডেট আমার নিকট মনিটরিং হচ্ছিল আবুধাবীতে। আমি গিন্নীকে শিখিয়ে দিলাম - ওদেরকে বল, তামাশা বন্ধ করতে, না হলে পুলিশ নিয়ে গিয়ে ওদের মেয়ে সহ সবাইকে জেলে দেব। যা হোক গিন্নীর এত বেশী কথা বলতে হয়নি। কিছুক্ষন তাদের নাটক দেখার পর শান্ত কন্ঠে বলল - রীনাকে নিয়ে আসেন নাই কেন? ও ত একটু আগে ফোন করেছে যে, সে বাড়ীতে গিয়েছে। ওর মা-বাবা কিছুক্ষণ বোকার মত তাকিয়ে থেকে মাথা নিচু করে চলে গেল। টাকা আর স্বর্ণ নেয়ার কথা তখনো জানা হয়নি, তাই এভাবে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। আমি দেশে থাকলে হয়ত তাদেরকে এভাবে ছাড়তাম না। আর ভাবীর নিকট থেকে তথ্য না পেলে আমার পরিবার জেলে যাওয়া ছাড়া কোন বিকল্প ছিল না।
(!!) ময়না নামে নোয়াখালী চরজব্বারের এক মেয়ে। মেয়েটির এক চোখ কানা। অন্য এক মহিলা একে ঠিক করে দিয়েছে আমাদের অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে। ভাবলাম কানা মেয়েটি অন্তত ভাল হবে। দ্বিতীয় দিন সে আমার মেয়ের স্বর্ণের কানের দুলের একটা অংশ হাত দিয়ে টেনে ভেঙ্গে আমার গিন্নীকে বলল - খালাম্মা দেখেন তো এটা কি? স্বর্ণের মত লাগছে, ঘর ঝাড়ু দেওয়ার সময় পেয়েছি। আমার বুঝতে বাকী রইল না যে, বিশ্বাস জন্মানোর জন্যই এ তামাশা। তার পর আস্তে আস্তে লক্ষ্য করলাম, ছাদের উপর গিয়ে এক চোখেই ফিল্ডিং মারা শুরু করেছে। ঘটনাক্রমে জানতে পারলাম মেয়েটি ইতিপূর্বে আমার এক ভাড়াটের বড় ভাইয়ের বাসায় কাজ করত। সেখানে পত্রিকা হকারের সাথে লাইন করে ঘরের দামী মোবাইল সহ আরো কিছু সামগ্রী ওর মাধ্যমে পাচার করেছে। কিন্তু সে অনেক মার হজম করেও ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেনি। আমি একদিন তাকে বসিয়ে শাস্তি না দেয়ার অঙ্গিকার করে সব সত্য কথা বলার পিড়া পিড়ি করাতে সে আমার কাছে স্বীকার করেছে আগের বাসার মোবাইলের ঘটনা এবং আমার মেয়ের স্বর্ণের ঘটনা। তারপর তাকে সৎ ভাবে থাকার পরামর্শ দিলাম, ওকে নিজের মেয়ের মত রাখব, বিয়েশাদী দেব ইত্যাদি বলে ভাল হয়ে চলতে রাজী করালাম। কিন্তু না, কুকুরের লেজ যতক্ষন চোঁঙ্গায় রাখা হয় ততক্ষনই কেবল সোজা থাকে। তার পর যেই সেই। অবশেষে বিদায় করে বাঁচলাম।
পরিচারিকা ছাড়া কি আর চলে? যে ভাবেই হোক অদল বদল করে হলেও একটা নাহয় আরেকটা জোগাড় করতেই হয়। বোন-ভাবীদের প্রতি অনুরোধ সর্বদা সতর্ক থাকুন এবং স্বামীকে চাচ-মামা-খালু ডাকতে দিয়ে নিশ্চিন্ত থাকার কোন সুযোগ নাই।
সূত্র : http://www.somewhereinblog.net/blog/abufaisal/29017457
পত্র-পত্রিকা খুললেই গৃহ পরিচারিকা নিয়ে নানা রকম মুখরোচক সংবাদ আমরা দেখতে পাই। যেমন: গৃহ কর্তা-কর্ত্রী কতৃক গৃহ পরিচারিকা নির্যাতন, গৃহ পরিচারিকা কতৃক গৃহ বধূ খুন, চুরি ডাকাতিতে গৃহ পরিচারিকার সহযোগীতা ইত্যাদি। আমি যে দিকটা নিয়ে আলোচনা করতে চাই তা খুব একটা আলোচ্য বিষয় হিসাবে আমার চোখে পড়েনি। আসুন শেয়ার করি আমার অভিজ্ঞতা -
১. আমি ড্রয়িং রুমে বসে আছি এমন সময় একটা ৫/৬ বছর বয়সের শিশু সহ এক বোরকা পড়া মহিলা ঘরে প্রবেশ করলেন। ভাবীকে খুঁজতে খুঁজতে বেড রুমে গিয়ে ভাবীর দেখা পেয়ে প্রায় ঘন্টা খানেক আলাপ চারিতার পর বিদায় হলেন। ওনাদের কথা বার্তা যা আমার কানে এসে পৌঁছল তা ছিল বিচিত্র রকমের। অর্থাৎ ভদ্র মহিলার কথার মধ্যে ছিল আবেগ, কান্না, কারো প্রতি অভিশাপ ইত্যাদি। তিনি চলে যাওয়ার পর গিন্নীর কাছে যানতে চাইলাম, ভদ্র মহিলা কে এবং কি নিয়ে কথা হচ্ছিল।
জওয়াব পেলাম - ভদ্র মহিলা পাশের বিল্ডিং এর ভাড়াটে, এক উকিলের স্ত্রী। কর্তার সাথে পরিচারিকার অসামাজিক কর্মকান্ড ফাঁস হওয়ার পর ভদ্র মহিলা এক ধরনের ভারসাম্যহীন হয়ে ঘটনাগুলি এ ভাবে বলা শুরু করেছেন। গৃহ পরিচারিকা কর্তার গ্রামের মেয়ে। সাবধানের মার নাই, তাই কর্ত্রীর শিখিয়ে দেয়া ‘চাচা’ ‘চাচী’ বলে সম্বোধন করত মেয়েটি ওনাদেরকে। একদিন নাকি সামনের ফ্লাটের আরেক উকিলের স্ত্রী এই ভদ্র মহিলাকে সংকেত ও দিয়েছিলেন ‘চাচা-ভাতিজির’ পিরিতির ব্যপারে । কিন্তু স্বামীর প্রতি অঘাদ বিশ্বাসের কারণে আমলে নেননি, তাছাড়া চাচা-ভাতিজি! বলে কথা। টনক নড়ল যখন ৫/৬ বছর বয়সের মেয়ে মাকে বলল - মা, আব্বু মিনাকে (নামটি কাল্পনিক) আদর করেছে। তার পর থেকে পাহাড়া বসিয়ে একদিন বেড রুমে হাতে নাতে পেয়ে গেলেন.....। অতপর নানা হৈ-হাঙ্গামা, মহিলার আত্ম হননের চেষ্টা, ছোট্ট মেয়ে দুটির কারনে আত্ম হনন না করা, সব মিলিয়ে একটা ককটেল টাইপের বিশৃঙ্খলার পর পরিচারিকা সাহেবাকে বিদায় করে কোন রকম সংসারটা টিকিয়ে রেখেছেন। দিন সাতেক যেতে না যেতেই ভদ্র মহিলা ফোন পেলেন। ওপ্রান্ত থেকে মিনার আকুতি, ‘চাচী আমি এসে যাচ্ছি, চাচাকে ছাড়া আমি বাঁচুম না।’ এই বার্তা পেয়ে ভদ্র মহিলা আবারো আউলা ঝাউলা হয়ে পড়েছেন। শেষ মেশ আমার স্ত্রীর নিকট মনের যাতনা উগলে দিয়ে কোন রকম শান্তি পাওয়ার চেষ্টা করছিলেন হয়ত।
২. আমার দূরসম্পর্কের এক মুরুব্বী, স্ত্রী-সন্তানাদি নিয়ে মহা সুখে না হলেও মোটামুটি শুখেই ছিলেন বলা চলে। স্ত্রীর সারাদিনের কর্ম-ক্লান্ত মলিন মুখ খানা দেখে হৃদয়ে ভালবাসার ঢেউ গোতলা দিয়ে উঠেছিল। তাই প্রিয়তমার সুখের জন্য নিয়োগ দিয়েছিলেন এক পরিচারিকা। অল্প দিনের মধ্যেই ভালবাসার ঢেউ গিয়ে ধাক্বা লেগেছিল পরিচারিকার হৃদয় বন্দরে ...
তার পর হৈ-চৈ, শালিশ-দরবার ইত্যাদি গড়িয়ে বিয়েতে গিয়ে ঠেকল ঘটনাটি। অবহেলিত হল প্রথম স্ত্রী ও সন্তানরা। নিজে কিছুদিন গায়ের জোড়ে ভাল অবস্থানে থাকলেও দ্বিতীয় স্ত্রী ও তার আকাশ-পাতাল বয়সের ব্যবধানের কারনে তিনি ক্রমাগত ফেল মারতে থাকলেন। একসময় ভদ্রলোক অসুস্থ হয়ে চরম অবহেলায় ধুকে ধুকে ইহ জগত ত্যাগ করলেন। এ ছিল এক অপরিনাম দর্শী ব্যক্তির করুন পরিনতি।
৩. আমার এক জোড়া পরিচারিকার সারসংক্ষেপ বর্ণনা করেই শেষ করছি। (!) রীনা নামে চকরিয়ার এক মেয়ে কাজ করত আমার মামার বাসায়। সে সুবাদে আমার স্ত্রী ওর আপু আর আমি দুলাভাই। কি সব কারনে মামার বাসা থেকে কাজ ছেড়ে দিয়ে মাস খানেক পর ওর বাবাকে নিয়ে আমার বাসায় হাজির। আপুকে ভাল লাগে তাই আপুর বাসায় কাজ করবে। মামার বাসায় কাজ করার পূর্বে আরো এক বাসায় কাজ করত রীনা। এক সময় কথায় কথায় ওর আপুকে বলে ফেলেছে ,ও বাসার গৃহকর্তার কূ-নজর ....... ইত্যাদির কারণে সে ওখানথেকে কাজ ছেড়েছিল। আসলে ওর কথা ঠিক নাকি গৃহ কর্ত্রী ওকে বিদায় করে হাঁফছেড়ে বেঁচেছেন কি জানি। মেয়েটির বাবার সাথে বেতন, সুযোগ-সুবিধা ইত্যাদি পাকা পোক্ত করার পর নিয়োগ চুড়ান্ত করা হলো। বেশ আগ্রহ উদ্দীপনা নিয়ে কাজে মন দিল মেয়েটি। লক্ষ্যকরলাম সে ক্রমান্বয়ে নিজের চাকচিক্য- কারিশমা ইত্যাদি প্রদর্শন করে চলেছে। ঘুম থেকে উঠেই তাড়া তাড়ি প্রশাধনী লেপ্টানো, চুলের দুই দিকে কেটে চোখ আর কপালের উপর লুল্লুর করে ঝুলিয়ে দেয়া সহ নিজেকে আকর্ষণীয় করার সব ক’টি টিপস নিখুঁত ভাবে প্রয়োগ করা শুরু করে দিয়েছে। ওর আপু বেশ সেয়ানা ও সতর্ক। দুলা ভাইয়ের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা সন্দেহে ওকে এসবের জন্য বকাঝকা ও সাবধান করতে ভুল করেনি। সম্মানিত পাঠক বন্ধুগন, ‘দুলাভাই’ কে ফেরেস্তা মনে করার কোন কারন নাই। তিনিও এক জন মানুষ হিসাবে মানবিয় দুর্বলতার উর্দ্ধে নন। কিন্তু গোনাহ, আমার সামাজিক অবস্থান এবং সর্বোপরি মেয়েটি প্রায় আমার মেয়ের বয়সের কাছা কাছি - এসব বিবেচনায় আমার চারিত্রিক দৃঢ়তা কঠোর থেকে কঠোরতর ছিল। এবং মেয়েটিকে আমার মেয়ের অবস্থানে দেখার কারনে আল্লাহ আমাকে সাহায্য করেছেন আলহামদু লিল্লাহ। মাস দুয়েক পর মেয়েটি জানাল সে আর কাজ করবে না, বাড়ীতে চলে যাবে। অথচ ওর বাবার ভাষ্যমতে ঠিক মত খাবার ও কাপড় চোপড় দিতে অপারগতার কারনে মেয়েকে বাসার কাজে দিয়েছে। আমার বাসায় খাওয়া দাওয়া, কাপড় চোপড়, বেতন কোন কিছুতেই সমস্যায় ছিলনা সে। কি জানি, দুলা ভাইকে হাত করার ইচ্ছায় গুড়েবালি’র কারণে এমন সিদ্ধান্ত কি না। এদিকে আমার আবুধাবী যাওয়ার সময় সন্নিকটে। ঘরে পরিচারিকা অতিঅত্যাবশ্যক। মেয়েটির বাবাকে ডাকালাম, তিনিও অনেক বুঝালেন, বললাম- ২/৩ বছর কাজ করলে আমার খরছে বিয়ে-শাদী দেব। না, কিছুতেই থাকবেনা। শেষে মেয়েটির বাবা রুমের বাহিরে নিযে গিযে কানে কানে কি যেন বলার পর আবার থাকতে রাজী হল।
আমি আবুধাবী চলে আসার ১০দিনের মাথায় মেয়েটি আমার পরিবারের সদস্যদেরকে দুপুরের ঘুমে রেখে কিছু টাকা, একপদ স্বর্ণালংকার ও নিজের কাপড়চোপড় নিয়ে চম্পট দিয়েছে। এদিকে আমার স্ত্রী তো দারুন অস্থিরতায় পড়ে গিয়েছে। রীনার পাশের বাড়ীর একটা মোবাইল নাম্বার ছিল এক ভাবীর। ঐ ভদ্রমহিলার সাথে ফোনালাপে বেশ পরিচিত হয়েছিল আমার স্ত্রী। রীনার মা-বাবাকে ওর পালিয়ে যাওয়ার সংবাদ দেওয়ার জন্য ভাবীর নাম্বারে ফোন করার সাথে সাথে ভাবী চুপি চুপি জানিয়ে দিলেন - রীনা বাড়ীতে চলে এসেছে, কিন্তু ওর মা-বাবা আপনাদেরকে ফাঁসানোর জন্য রওয়ানা দিয়েছে আপনাদের বাসার উদ্দেশ্যে। ঠিকই সন্ধা নাগাদ ওর মা-বাবা আহাজারী করতে করতে বাসায় হাজির। মেয়ের মা তো প্রায় বেহুস। বুক চাপড়াতে চাপড়াতে আমার মেয়ে দাও, আমার মেয়ে দাও বলে কাহিল অবস্থা। ঘটনার আপডেট আমার নিকট মনিটরিং হচ্ছিল আবুধাবীতে। আমি গিন্নীকে শিখিয়ে দিলাম - ওদেরকে বল, তামাশা বন্ধ করতে, না হলে পুলিশ নিয়ে গিয়ে ওদের মেয়ে সহ সবাইকে জেলে দেব। যা হোক গিন্নীর এত বেশী কথা বলতে হয়নি। কিছুক্ষন তাদের নাটক দেখার পর শান্ত কন্ঠে বলল - রীনাকে নিয়ে আসেন নাই কেন? ও ত একটু আগে ফোন করেছে যে, সে বাড়ীতে গিয়েছে। ওর মা-বাবা কিছুক্ষণ বোকার মত তাকিয়ে থেকে মাথা নিচু করে চলে গেল। টাকা আর স্বর্ণ নেয়ার কথা তখনো জানা হয়নি, তাই এভাবে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। আমি দেশে থাকলে হয়ত তাদেরকে এভাবে ছাড়তাম না। আর ভাবীর নিকট থেকে তথ্য না পেলে আমার পরিবার জেলে যাওয়া ছাড়া কোন বিকল্প ছিল না।
(!!) ময়না নামে নোয়াখালী চরজব্বারের এক মেয়ে। মেয়েটির এক চোখ কানা। অন্য এক মহিলা একে ঠিক করে দিয়েছে আমাদের অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে। ভাবলাম কানা মেয়েটি অন্তত ভাল হবে। দ্বিতীয় দিন সে আমার মেয়ের স্বর্ণের কানের দুলের একটা অংশ হাত দিয়ে টেনে ভেঙ্গে আমার গিন্নীকে বলল - খালাম্মা দেখেন তো এটা কি? স্বর্ণের মত লাগছে, ঘর ঝাড়ু দেওয়ার সময় পেয়েছি। আমার বুঝতে বাকী রইল না যে, বিশ্বাস জন্মানোর জন্যই এ তামাশা। তার পর আস্তে আস্তে লক্ষ্য করলাম, ছাদের উপর গিয়ে এক চোখেই ফিল্ডিং মারা শুরু করেছে। ঘটনাক্রমে জানতে পারলাম মেয়েটি ইতিপূর্বে আমার এক ভাড়াটের বড় ভাইয়ের বাসায় কাজ করত। সেখানে পত্রিকা হকারের সাথে লাইন করে ঘরের দামী মোবাইল সহ আরো কিছু সামগ্রী ওর মাধ্যমে পাচার করেছে। কিন্তু সে অনেক মার হজম করেও ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেনি। আমি একদিন তাকে বসিয়ে শাস্তি না দেয়ার অঙ্গিকার করে সব সত্য কথা বলার পিড়া পিড়ি করাতে সে আমার কাছে স্বীকার করেছে আগের বাসার মোবাইলের ঘটনা এবং আমার মেয়ের স্বর্ণের ঘটনা। তারপর তাকে সৎ ভাবে থাকার পরামর্শ দিলাম, ওকে নিজের মেয়ের মত রাখব, বিয়েশাদী দেব ইত্যাদি বলে ভাল হয়ে চলতে রাজী করালাম। কিন্তু না, কুকুরের লেজ যতক্ষন চোঁঙ্গায় রাখা হয় ততক্ষনই কেবল সোজা থাকে। তার পর যেই সেই। অবশেষে বিদায় করে বাঁচলাম।
পরিচারিকা ছাড়া কি আর চলে? যে ভাবেই হোক অদল বদল করে হলেও একটা নাহয় আরেকটা জোগাড় করতেই হয়। বোন-ভাবীদের প্রতি অনুরোধ সর্বদা সতর্ক থাকুন এবং স্বামীকে চাচ-মামা-খালু ডাকতে দিয়ে নিশ্চিন্ত থাকার কোন সুযোগ নাই।
সূত্র : http://www.somewhereinblog.net/blog/abufaisal/29017457
কোন মন্তব্য নেই
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন