শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস...কিছু ভাবনা আতংকিত করে...

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস...কিছু ভাবনা আতংকিত করে...

১৩ ই ডিসেম্বর, ২০১০ রাত ৮:৪৮

শেয়ার করুনঃ
0 0

বাংলাদেশের আজকের এই মেরুদণ্ডহীনতার বীজ রোপিত হয়েছিল যে দিবসটির মাধ্যমে সেটি বোধয় ১৪ ডিসেম্বর। একটি দেশকে ভৌগোলিকভাবে পরাধীন করা যতোটা সহজ ততটা সহজ নয় বৌদ্ধিক বা চেতনাগতভাবে। আজ আমরা আক্ষেপ করতে বাধ্য আমরা মানচিত্রগতভাবে স্বাধীন হলেও মনস্তাত্ত্বিকভাবে দাস রয়ে গেছি এখনও। এর কারণটি কি এই ১৪ ডিসেম্বর নয়। যে দিন বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করা হয়েছিল! অনেকের মনে বিতর্ক বাসা বাধতে পারে যারা মারা গেছেন বা যাদের হত্যা করা হয়েছে তারা আদৌ বুদ্ধিজীবী ছিলেন কি না? তাদের এমন সন্দিগ্ধতার জবাব আমার কাছে নেই তবে এটুকু বলতে পারি তাদের মধ্যে মেধা ছিল। আর এটা নিশ্চই স্বীকার করবেন; মেধাবীরা যে কোনও জাতির জন্যই অমূল্য সম্পদ। বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদান রেখে যারা দেশকে শুরুতেই সমৃদ্ধতার সুঘ্রাণ এনে দিয়েছিলেন তাদের এমন গণমৃত্যুই জাতিকে যুগের পর যুগ পরাধীন করে রেখেছে। বানিয়ে রেখেছে মানসদাস। আজও আমরা অন্য দেশকে বড় ভেবে তাকে সমীহ করতেই জানি জানি না অস্তিত্বের লড়াই করতে, অধিকারের লড়াই করতে। পারি, না পেয়েও হারাইনি এই তৃপ্তিতে ঢেকুর তুলতে। এখনও এমন উক্তি আমরা আমাদের মন্ত্রী-আমলাদের কণ্ঠে শুনতে পাই।

বাংলাদেশকে সেদিন যেভাবে নেতৃত্বহীন করা হয়েছে আজও কি সেই চক্রান্ত চলমান নয়? আমরা যদি একটি একটি করে দিক লক্ষ্য করি তাহলে ভয়ে গা শিউরে উঠবে দেশপ্রেমী প্রতিটি মানুষের।

১. খুবই সাম্প্রতিক দুটি ঘটনা লক্ষ করুন: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কতোজন শিক্ষককে একত্রে ছাটাই করা হলো? সংখ্যাটি কি মামূলী? ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একেকটি ছাত্রকে যেখানে গণ্য করা হয় সবচেয়ে মেধাবী হিসেবে, সেখানে তাদের গুরু, শিক্ষকরা নিশ্চই প্রদীপতূল্য! তাদের কেন এমন গণহারে ছাটাই করতে হলো? কেন তারা দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে উপেক্ষা করে বিদেশের মাটিতে বিদেশের শিক্ষায়তনে নিজেদের অমূল্য জ্ঞান ছড়াবার দায়িত্ব নিলেন?

কেন দেশের মেধা এভাবে বাইরে পাচার হয়ে যায়? কেন আমরা রুকতে পারিনি?

এ প্রসঙ্গে একটি কাহিনী শোনাবো তার আগে দুটি বিষয়রে অন্যটি বলি-

২. ড. ইউনূস প্রসঙ্গ: আজ আমরা ইউনূসকে যা-ই বলি বিশ্বপরিমণ্ডলে বাংলাদেশের ভাবমর্যাদা উজ্জ্বল করতে তার ভূমিকা নগণ্য নয়। দেশের এমন একটি নেতৃত্বশীল ব্যক্তিত্বকে এভাবে খাটো করার ঘটনাটি কি চক্রান্ত নয়?

মা কি কখনও সন্তানের খুনের কথা জেনেও বিশ্বাস করেন? করেন না মায়ের জন্য সেটাই স্বাভাবিক। মা তো বিচারক নন। মায়ের কাছ থেকে এটুকু প্রশ্রয় সব সন্তানরাই পায়।...আমি সেদিকে যাচ্ছি না। অন্তত নরওয়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে আরেক ধাপ গলা উঁচু না করলেই কি হতো না?....

৩. পিলখানার ঘটনা: ৫৭জন মেধাবী সেনা অফিসারের এমন মৃত্যু কি জাতিকে দীর্ঘ সময়ের জন্য দুর্বল করে দেয়নি? কেন এসব ধারাবহিক নেতৃত্বশূণ্যতার ঘটনাই ঘটে চলছে বাংলাদেশে?


এরপর আসুন রাজনীতির কথায়- বিএনপি যে আজ কোমরভাঙা একথা নিয়ে তর্ক করলেও মাঠেময়দানে এর প্রমাণই বেশি। দেশের প্রধান বিরোধী দলটি যদি হয় এমন নি:শক্তি দুর্বল সে দেশের সরকার কখনই শক্তসবল হতে পারে না। সরকার হয়ত নানান দেশের নানান জনের সঙ্গে নানানভাবে সখ্য বজায় রাখতে চেষ্টা করবেন, যেন বড়ধরনের বিরোধিতা বা চাপের মুখে তাকে পড়তে না হয়, বিরোধী দলেরই কর্তব্য সরকারের কোনও ভুল পদক্ষেপকে বাঞ্চাল করে দেয়া। ধরা যাক আওয়ামী লীগের সরকার মনে মনে চায় না ভারতের সঙ্গে অনুষ্ঠিত চুক্তিগুলো ইম্প্লিমেন্ট বা পরিপালিত করতে কিন্তু চাপ (মনস্তাত্ত্বিক বা অন্য কোনও...)এর কারণে করতে বাধ্য হচ্ছে এই ক্ষেত্রে বিরোধী দল যদি পারতো আন্দোলন চাঙ্গা করে শেষ পর্যন্ত এটি বন্ধ করে দিতে....তাহলে আমার ধারনা অন্তত সরকারের ভেতরকার একটি গ্রুপও সন্তুষ্ট হতো।

এ সরকার কি এমন উল্লেখযোগ্য কোনও নিপীড়ন চালিয়েছে বিরোধী দলের ওপর? যদি বলি যাও চাপিয়েছে তা বিএনপিকে মাঠে নামাতেই, কারণ তাতে তারা কৈফিয়ত দিতে পারবে আমরা চেয়েছিলাম পারিনি, বিরোধী দলের কারণে...
জাতীয় বিষয়ে এমন ঐক্য আমাদের দেশে নেই তাই তারা ক্ষমতায় আসে নিজের আখের গোছানোর জন্য দেশের জন্য নয়।
৪. গার্মেন্ট শিল্পের এ অস্থিরতা কি প্রতিযোগিতায় পেছনে পড়া দেশের স্বার্থেই নয়। কেন শ্রমিক গুলি করে হত্যা করতে হলো? কেন দেশকে বারবার বিশ্বপরিবারের কাছে মানবতালঙ্ঘনের উদাহরণ করে প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে?
৫. কথায় কথায় বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ: এটি কীভাবে আমাদের দেশকে মেধাশূন্য আর পরনির্ভর করে তা খুলে বলার প্রয়োজন নেই। বাংলাদেশকে এখনও সামান্য ব্রিজ বানাতেও অন্যের দ্বারস্থ হতে হয়। একটু কিছু হলেই চিকিৎসার জন্য বাইরে যেতে হয়।
৬.শাহরুখের নামে দেশের একশ কোটি বিদেশে পাচারও কি স্বাভাবিক ঘটনা? স্বাধীনতার মূলমন্ত্র ঘোষণা দিয়ে আসা চ্যানেলটিতে যখন শাহরুখ আর ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ড এর ডগির কাছে বিজয় মাসের ডগি হারিয়ে যায় তখনকি ভাবতে পারি না, স্বাধীনতা দেশপ্রেম বুকে নয় মুখে। তাই অর্থের কাছে বিক্রি হয়ে যায় সেন্স।

এসব ভাবনা আতংকিত করে তোলে ক্রমশ:

তবে শেষে একটি ভালো খবরও দিয়ে যাই যা পরে বলবো বলেছিলাম;
আমার এক বন্ধু, ইয়ারমেট। সে খুব মেধাবী তাই তার শিক্ষকরা তাকে পরামর্শ দিল বিদেশে ট্রাই করতে। সেও কিছুদিন এদিক ওদিক ধর্না দিল। যখন মোটামুটি সব ঠিকঠাক তখন এক বড়ভাইর কথায় জ্ঞান ফিরে এলো আমাদের। সেই বড়ভাইটি বলে; আমাদের স্যাররা নিজেরা খুব বেশি কিছু জানে না তাই তোমাদের ভয় পায়আর তাই তোমাদের সহকর্মী হিসেবে দেখতে চায় না, চায় পাচার করে দিতে। যদি পারো সিদ্ধান্ত নেও যে তুমিও বিশ্ববিদ্যালয়ের টিচার হবে, গবেষণা করবে, গবেষণার জন্য বিদেশে যাবে কিন্তু সেবা দেবে দেশের মানুষকে দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে।....
বন্ধুটি প্রথমে পলিটেকিনিকে তারপর নিজের বিশ্ববিদ্যালয়ে তারপর এখন আরেকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করছে। সম্প্রতি ওর একটি প্রজেক্ট দেশের বাইরে সুনাম কুড়িয়ে ২ কোটি টাকার বাজেট পেয়েছে ফারদার গবেষণার জন্য।
ও হয়ত বাইরে গেলে নিজের বাড়িগাড়ি পরিবারের জন্য কিছু করতে পারতো, রেমিট্যান্স বাড়াতে পারতো কিন্তু তার বদলে সে দেশের জন্য যা বয়ে আনেলো তা কি কম? এই প্রজেক্টে কাজ করবে মেধাবী আইটি গবেষকরা, দেশে বসেই।...
আমাদের কি উচিৎ নয় নিজেকে কিছুটা কষ্ট দিয়ে হলেও দেশের জন্য এমন কিছু করা? নাকি অর্থ ও জীবনের নিশ্চয়তা চেয়ে বিদেশে পাড়ি দেয়া?

বিজয়ের মাসে আসুন যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত নেই। সব চক্রান্তের জাল ছিন্ন করে দেশকে প্রকৃত স্বাধীনতা উপহার দেবো।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.