রাষ্ট্রক্ষমতার লোভে বেইমানী, বিশ্বাসঘাতকতা, শৃঙ্খলাভঙ্গ, দেশবিক্রি ও রাষ্ট্রদ্রোহিতার সম্মিলিত নাম ‘ওয়ান ইলেভেন'
রাজনৈতিক বিবাদ এদেশে নতুন কিছু নয়। বাংলাদেশের জন্মই হয়েছে বিশাল রাজনৈতিক সংগ্রাম ও রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মধ্য দিয়ে। যুদ্ধোত্তর দেশে যথাযথ রাষ্ট্রগঠন প্রক্রিয়ার অভাবে নেমে আসে কারচুপিময় তিহাত্তরের নির্বাচন, লাগামহীন দুর্নীতি, সমাজজীবনে অস্থিরতা, দুর্ভিক্ষ, আন্ডারগ্রাউন্ড রাজনীতির উদ্ভব, রাষ্ট্রক্ষমতার অপপ্রয়োগে হাজার হাজার গুপ্ত হত্যা, বহুদলীয় গণতন্ত্র বিলুপ্ত করে একদলীয় শাসন জারী করা, বাক ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা হরন ইত্যাদি। অপশাসনে অতিষ্ট জাতি মুক্তি পায় পচাত্তরের মধ্য আগষ্টে ক্ষমতাসীন দলের একটি অংশের নেতৃত্বে সামরিক অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে, এবং ৭ নভেম্বর বিপ্লবের মাধ্যমে সংহত হয়। অরাজকতা দমনে সামরিক শাসন জারী করা হয় এবং পরে ধীরে ধীরে তা জেনারেল জিয়ার হাতে প্রত্যাহৃত হয়; যুদ্ধবিধ্বস্ত দুর্ভিক্ষপীড়িত দেশ পূনর্গঠিত হয়; এবং জাতি প্রত্যাবর্তন করে বহুদলীয় গণতন্ত্রে। উনাশি সালে অনুষ্ঠিত সাধারন নির্বাচনে অংশ নেয় দেশের সকল রাজনৈতিক দল। দুর্ভাগ্যজনকভাবে দু’বছরের মধ্যে প্রতিবেশী দেশের চক্রান্তে রাষ্ট্রপতি জিয়াকে হত্যা করা হয় এবং ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ শিশু গণতন্ত্র আবার চাপা পরে স্বৈরশাসকের বুটের তলায়, যাকে স্বাগত জানায় তৎকালীন বিরোধী দল আওয়ামীলীগ। এরপর ন’বছর চলে গণতন্ত্রের জন্য বিরামহীন সংগ্রাম। ছাত্র-জনতার প্রবল আন্দোলনে নব্বই সালের ৬ ডিসেম্বর পতন হয় এরশাদ স্বৈরাচারের।
বিচারপতি সাহাবুদ্দিনের কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে একানব্বইয়ের সাধারন নির্বাচনের মধ্য দিয়ে পুনরায় শুরু হয় গণতন্ত্রের পথচলা, ক্ষমতায় আসে বিএনপি। ভালোই চলছিলো দেশ। কিন্তু তিন বছরের মধ্যেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবীতে সংসদ থেকে পদত্যাগ করে রাস্তায় নেমে আসে আওয়ামীলীগ। চুড়ান্ত অরাজকতার মধ্যে অনুষ্ঠিত হয় ছিয়ানব্বইর ১৫ই ফ্রেব্রুয়ারীর নির্বাচন ও আওয়ামীলীগের চাহিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিল পাশ। ‘জনতার মঞ্চ’ নামক সিভিল ডিজঅর্ডার তৈরী করে সরকারকে অচল করে দেয় আওয়ামীলীগ। ফলে ৩০ মার্চ ভঙ্গ হয় ষষ্ঠ সংসদ ও স্বল্পকালীন সরকারের। দায়িত্ব নেয় বিচারপতি হাবিবুর রহমান শেলীর কেয়ারটেকার সরকার। এর মধ্যে আওয়ামীলীগের ইন্ধনে সেনাপ্রধান জেনারেল নাসিম ব্যর্থ সামরিক অভ্যুত্থান ঘটায় ২০ মে। অনেক চড়াই উৎরাইয়ের পরে সপ্তম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান হয় ১২ জুন ১৯৯৬। অথচ ফলাফল প্রকাশের সময় বিএনপির প্রাপ্ত আসন সংখ্যাগরিষ্ঠতার দিকে আগাতে থাকলে মধ্য রাতে ফলাফল ঘোষণা বন্ধ করে দেয়া হয় এবং কয়েক ঘন্টা পরে আওয়ামীলীগের পক্ষে ফলাফল ঘোষণা করা হয়। জনতার মঞ্চের ১০ জেলা প্রশাসকের কারসাজিতে বন্ধ রাখা হয় ২৩ আসনের নির্বাচন, পরে কারচুপিপূর্ন পুনঃনির্বাচনে বেশীরভাগ আসন দেয়া হয় আওয়ামীলীগকে। এ ফলাফলের ওপর ভিত্তি করেই সরকারে আসীন হয় আওয়ামীলীগ। ৯৬ থেকে ২০০১ পাঁচ বছরের অপশাসনে জন্ম হওয়া জয়নাল হাজারী, শামীম ওসমানের মত শত শত গডফাদারের নির্যাতনে অতিষ্ট হয় জনগন, যার জবাব দেয় ২০০১ সালের নির্বাচনে ব্যালটের মাধ্যমে।
২০০১ সালে ১ অক্টোবরে নির্বাচনে দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় আসে বিএনপি নেতৃত্বাধীন চার দলীয় জোট। শেষ বছরে ২০০৬ সালে কেয়ারটেকার সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নিয়ে সৃষ্ট জটিলতা সরকারের শেষ দিন পর্যন্ত গড়ায়। ২৮ অক্টোবর ইতিহাসের ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটায় আওয়ামীলীগ, যখন লগি-বৈঠা দিয়ে পিটিয়ে বিপক্ষ দলের এক ডজন মানুষকে হত্যা করে। পিটিয়ে পিটিয়ে হত্যা করে লাশের ওপর হত্যাকারীদের উল্লম্ফন টেলিভিশনে দেখে জাতি স্তব্ধ হয়ে যায়। এর নাম কি রাজনীতি! চুড়ান্ত অরাজকতার মুখে বিচারপতি হাসান অস্বীকার করেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দায়িত্ব নিতে। সংবিধানের বিধান মেনে রাষ্ট্রপতি ডঃ ইয়াজউদ্দিন আহমেদ নিজেই অতিরিক্ত দায়িত্ব নেন কেয়ারটেকার সরকারের। শুরু হয় নির্বাচন প্রস্তুতি। কিন্তু পরবর্তী তিন মাস সরকারে ও ময়দানে চলে রাজনৈতিক টানাপোড়েন। আওয়ামীলীগের নেতৃত্বে ১৪ দলীয় জোট রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টা ডঃ ইয়াজউদ্দিনের বিরুদ্ধে বিএনপির প্রতি পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ তোলে এবং বিচারপতি আজিজের নির্বাচন কমিশন মেনে নিতে অস্বীকার করে। এর বাইরেও বিভিন্ন দাবী দাওয়া নিয়ে রাজপথ উত্তপ্ত করে, যা সহিংসতায় রূপ নেয়। ডিসেম্বরের ৩য় সপ্তাহে সমঝোতা ও রাজনৈতিক ঐক্যমত সৃষ্টি হলে আওয়ামীলীগ বিএনপিসহ সকল দল ২২ জানুয়ারী অনুষ্ঠিতব্য সাধারন নির্বাচনে অংশ নেয়। কিন্তু হঠাৎ করেই ২০০৭ সালের ২ জানুয়ারী আওয়ামীলীগ প্রধান শেখ হাসিনার নেতৃত্বে মহাজোট নির্বাচন বর্জন করে ও প্রতিহত করার ঘোষণা দেয়। আবার শুরু হয় রাজপথে সংঘাত এবং অসংখ্য হত্যার ঘটনা। অন্যদিক চলতে থাকে সেনাপ্রধান জেনারেল মইনের সামরিক অভ্যুত্থান প্রস্তুতি। নেপথ্যে শাটল-ডিপ্লোমেসি চালায় বৃটিশ ও মার্কিন রাষ্ট্রদূত। জাতীয় আন্তর্জাতিক চক্রান্তের ফলাফল হয়- সামরিক অভ্যুত্থানের ২য় বিকল্প ‘জরুরী অবস্থা’, যাকে প্রতিবেশী দেশের মধ্যস্ততায় আওয়ামীলীগের হাইকমান্ড আগেই গ্রীণ সিগনাল জানায়।
১১ই জানুয়ারী ২০০৭ জরুরী অবস্থা জারী করার ষড়যন্ত্রে প্রত্যক্ষভাবে অংশ নেন জাতিসংঘের তৎকালীন ঢাকাস্থ প্রতিনিধি রেনাটা লক ডেসালিয়ন। তিনি জাতিসংঘ মহাসচিবের নামে একটি বানোয়াট বিবৃতি সেনাপ্রধান জেনারেল মইনের হাতে তুলে দেন, যাতে বলা হয় ২২ জানুয়ারীর নির্বাচনে সামরিক বাহিনী অংশ নিলে বাংলাদেশ সেনাদের জাতিসংঘ শান্তি রক্ষী বাহিনীতে নিয়োগ অনিশ্চিত হয়ে পড়বে। অথচ প্রকৃতপক্ষে জাতিসংঘ এমন কোনো অবস্থানও নেয়নি বা রেনাটা এ সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত জানানোর জন্য উপযুক্ত কতৃপক্ষও ছিলেন না। সেনাপ্রধান মইনের সামরিক অভ্যুত্থানের অযুহাত সৃষ্টির উদ্দেশ্যে রেনাটার ঐ বানোয়াট বিবৃতি সংগ্রহ করেন জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের প্রতিনিধি ইফতেখার আহমেদ চোধুরী, যাকে পরবর্তীতে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা নিয়োগ করে পুরস্কৃত করা হয়। ১১ জানুয়ারী অপরাহ্নে সেনাপ্রধান মইন রেনাটার ঐ বার্তাটি সাথে নিয়ে নৌ ও বিমান বাহিনী প্রধানসহ অনুপ্রবেশ করেন বঙ্গভবনে। এর আগেই বঙ্গভবনের চারিপাশে এবং অভ্যন্তরে সেনাপ্রধানের অনুগত সশস্ত্র সেনারা অবস্থান নেয়। রাষ্ট্রপতির নিরাপত্তা বাহিনী থেকে ক্ষুদ্রাস্ত্র নিয়ে জেনারেল মইন প্রবেশ করেন রাষ্ট্রপতির কক্ষে এং রাষ্ট্রপতিকে জিম্মি করে ফেলেন। এর সাথে সসৈন্যে যোগ দেয় নবম ডিভিশনের জিওসি জেনারেল মাসুদ। বয়োবৃদ্ধ রাষ্ট্রপতিকে ভীতি প্রদর্শনও চাপপ্রয়োগ করে সাক্ষর করানো হয় জরুরী অবস্থা জারীর নথিতে এবং কেয়ারটেকার সরকারের প্রধানের পদ ত্যাগ করানো হয়। মইনের দেয়া লিখিত একটি ভাষণ জাতির উদ্দেশ্যে পড়তে বাধ্য করা হয় রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিনকে, যাতে লেখা ছিলো বিগত সরকারের “সীমাহীন দুর্নীতি”র কথা। এ অজুহাতের ওপরে ভিত্তি করেই রাতে কারফিউ জারী করে রাজনীতিকদের আটক শুরু করে সেনারা। মইন-মাসুদ চক্র সংবিধান লংঘন করে সরকার প্রধান পদে অবৈধভাবে নিয়োগ দেয় সাবেক বিশ্বব্যাংক কর্মকর্তা ডঃ ফখরুদ্দিনকে। ১১ সদস্যর একটি বেসামরিক সরকার দৃশ্যমান হলেও মূলতঃ সরকার পরিচালনা হতো সেনাসদর থেকে। ঐ অবৈধ সরকারকে স্বাগত জানায় আওয়ামীলীগ, এবং তাদের আন্দোলনের ফসল হিসাবে অভিহিত করে। আরো পরে শেখ হাসিনা ঘোষণা করেন, ক্ষমতায় এলে এ সরকারের সকল কার্যক্রমকে বৈধতা দেয়া হবে!
ক্যান্টমেন্টের ক্ষমতা সংহত করেই সেনাপ্রধান মইন রাষ্ট্রক্ষমতায় বসার লক্ষে প্রকাশ্যে ঘোষণা করেন “অউন ব্রান্ড ডেমোক্রেসি” চালু করবেন এবং দু’বছর পরে নির্বাচন। মার্চ মাসে স্বাধীনতা দিবস পালন উপলক্ষে ভারতীয় জেনারেল ও কর্মকর্তাদের আনাগোনা বেড়ে যায় ঢাকায়। বিরাজনীতিকরন ও জনমনে ভীত সঞ্চারের উদ্দেশ্যে পরবর্তী কয়েক মাসে হাজার হাজার লোক আটক করে সেনাবাহিনী, যার মধ্যে রাজনীতিক, ব্যবসায়ী, আমলা, পেশাজীবি সহ সকল ধরনের মানুষ ছিলেন। তবে বাদ রাখা হয় এক শ্রেণীর রাজনীতিবিদকে, যাদের দ্বারা প্রথমে দু’টি বড় দলের নেতৃত্ব (বিএনপি ও আওয়ামীলীগ) অপদখলের চেষ্টা করে সেনা গোয়েন্দারা। এর নেতৃত্ব দেন ব্রিগেডিয়ার এটিএম আমিন ও ব্রিগেডিয়ার ফজলুল বারী। আটককৃতদের গোয়েন্দা অন্ধকার প্রকোষ্ঠে নিয়ে নির্যাতন করা হয়, কেউ কেউ মারা গেছেন, অনেকে পঙ্গুত্ব বরন করে এখন বেঁচে আছেন। অত্যাচার নির্যাতনের মূল লক্ষ ছিলো চাহিদামত স্বীকারোক্তি সংগ্রহ করা, এমনকি হাতিয়ে নেয়া হয়েছে হাজার হাজার কোটি টাকা। দুই প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও শেখ হাসিনাকে রাজনীতি থেকে বাদ দেয়ার জন্য ‘মাইনাস টু থিউরি' বাস্তবায়নের চেষ্টা করা হয়। ব্যর্থ হয়ে শেখ হাসিনা ও সপুত্র খালেদা জিয়াকে আটক করা হয়। ডজনখানেক ‘ক্যাঙ্গারু কোর্ট’ তৈরী করা হয় রাজনীতিকদের শায়েস্তা করতে। নামে আদালত হলেও কার্যত ওখানে বিচারকরা পাঠ করতেন গোয়েন্দা সংস্থার লিখে দেয়া রায়। এমনকি অভিযুক্তকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেয়া হতো না। আইনজীবি ও বিচারকদের ক্যান্টমেন্টের ভয় দিয়ে মুখ বন্ধ রাখা হতো। প্রধান বিচারপতির ব্যক্তিগত অসততাকে জিম্মি করে জেনারেলরা তাদের কৃত অপকর্মের বৈধতা উচ্চ আদালত থেকে জোগাড় করতো। প্রেস ও মিডিয়ার কন্ঠরোধ করা হয় শক্তভাবে। বলপ্রয়োগ করে এক এক করে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানসমুহ কুক্ষিগত করা হয়। দুর্নীতি দমন কমিশন পুর্নগঠন করা হয় সাবেক সেনাপ্রধানকে দিয়ে। তার হাতে ধরিয়ে দেয়া হতো দফায় দফায় তালিকা, যাদের ধরপাকড়ের জন্য সারা দেশ জুড়ে চলে সেনা অভিযান। কেবল নির্দিষ্ট ব্যক্তিরাই নন, তাদের স্বজনদের করা হতো অত্যাচার ও চুড়ান্ত হয়রানি। এক বছরের মধ্যে প্রায় অর্ধ মিলিয়ন লোক আটক করে জেলখানা ভরে ফেলা হয়। মানুষজন ঘরে-বাইরে কোথাও শান্তিতে ঘুমাতে পারত না। সারা দেশজুড়ে চলে আরাজক অস্থিরতা।
মূলতঃ সেনা-পরিচালিত ঐ অদ্ভুত সরকারের কেন্দ্রবিন্দু ছিল সেনাপ্রধান জেনারেল মইন। ঐ সময় বিদেশী মন্ত্রী ও অভ্যাগতের প্রধান উপদেষ্টার পাশাপাশি সেনাপ্রধানের সাথে দেখা করতে হতো, যেনো এক বিকল্প সরকারপ্রধান। রাষ্ট্রক্ষমতায় পূর্ণ আসীন হবার লক্ষে জেনারেল মইন আমেরিকা ও ভারত সফর করেন, কিন্তু আশানুরূপ সাড়া মেলেনি। এ সময় দু’নেত্রীকে রাজনীতির বাইরে যেতে রাজী করানোর নিমিত্ত ডজনখানেক দুর্নীতির বানোয়াট মামলা করে ফরমায়শী কোর্টে টানা হ্যাচড়া করা হয়। নোংরামির চুড়ান্ত অবস্থা ঘটে, যখন বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম জিয়ার পুত্রকে হত্যার উদ্দেশ্যে গোয়েন্দা হেফাজতে নির্যাতনের পরে উঁচু দেয়াল থেকে ফেলে মেরুদন্ড ভেঙ্গে দেয়া হয়। এত করেও আপোষহীন নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে টলাতে পারেনি জান্তা। ব্যর্থ হয় তাদের ক্ষমতায় বসার নীলনকশা। মধ্যরাতে অস্ত্রের মুখে বয়োবৃদ্ধ নেতা সাইফুর রহমান ও মেজর হাফিজকে দিয়ে বিএনপির কমান্ড হাইজ্যাক করার অপচেষ্টা করা হয়, যা চৌকস মহাসচিব খন্দাকার দেলোয়ার হোসেনের কার্যকর পদক্ষেপে ব্যর্থ হয়। এ অবস্থায়, সেনাকতৃপক্ষ কারাবন্দী আওয়ামীলীগ প্রধানের সাথে শুরু করে গোপন আঁতাত, যার ফলশ্রুতিতে অস্বাভাবিক দ্রুততায় মুক্তি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান শেখ হাসিনা, কিন্তু জেলে থাকেন অপর নেত্রী মিসেস জিয়া। মার্কিন ষ্টেট ডিপার্টমেন্টে দফায় দফায় ধর্না দেন হাসিনা, ছুটে যায় জেনারেল মইনের প্রতিনিধিও। সেখানে আপোষ রফা হয় মইন-ভারত-হাসিনা। এরপর দেশীয় ও বর্হিদেশীয় চাপে অনেক নাটকীয়তার পরে ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর সাধারন নির্বাচন অনুষ্টিত হয়। তার আগে নির্বাচনে অংশ নেয়ার জন্য মুক্তি দেয়া হয় বিএনপি প্রধান বেগম খালেদা জিয়াকে। দৃশ্যমান শান্তিপূর্ন নির্বাচন হলেও প্রস্তত করা হয় অস্বাভাবিক স্ফীত এক ফলাফল, যার ভিত্তিতে ৯০ শতাংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা দিয়ে ক্ষমতায় আনা হয় শেখ হাসিনার নেতৃত্বে মহাজোটকে। এ নতুন সরকারের মুল প্রতিপাদ্য “ঢাকাকে আর দিল্লির রাডারের বাইরে যেতে দেয়া হবে না” প্রকাশ করেন ভারতের সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল শংকর চৌধুরী; প্রয়োজনবোধে সংবিধান সংশোধন করে ট্রানজিট দেয়া; এবং সজীব ওয়াজেদ জয়ের “Stemming the Rise of Islamic Extremism in Bangladesh” মোতাবেক ইসলাম দমন ও দাড়ি-টুপিঅলাদের ওপর নিবর্তন। এ যেনো এক নব্য ফিলিস্তিন।
রাষ্ট্রক্ষমতার লোভে বেইমানী, বিশ্বাসঘাতকতা, শৃঙ্খলাভঙ্গ, দেশবিক্রি ও রাষ্ট্রদ্রোহিতার সম্মিলিত নাম ‘ওয়ান ইলেভেন।’ সংবিধান লংঘন করে অবৈধভাবে দু’বছর সরকার দখলে রাখা; রাষ্ট্রকাঠামো, বিচার ব্যবস্থা এবং রাজনীতি ধংস করা; চুড়ান্ত লুটপাট; ও চরম মানবাধিকার লংঘনের দায়ে অভিযুক্ত হয় জেনারেল মইন ও তার দলবল। মূলতঃ ১১ জানুয়ারী ২০০৭ জরুরী অবস্থার নামে সংঘটিত হয় এক বড় ধরনের রাষ্ট্রীয় অপরাধ, যার একদিকে ছিলো সেনাপতি মইন, অন্যদিকে ক্ষমতালিপ্সু রাজনীতিকরা। বাইরে থেকে উস্কানি দেয় ভারত, আমেরিকা, বৃটেন। ভারতের লক্ষ ছিলো বিএনপিকে রাষ্ট্রক্ষমতায় না আসতে দেয়া। কার্যত, ০০৪ সালে চট্টগ্রামে ১০ ট্রাক অস্ত্র আটকের ঘটনার পরে বিএনপিকে বৈরী ঘোষনা করে ভারত। ঐ সময় মর্কিন দক্ষিন এশিয়া পলিসি ভারত-নির্ভর হয়ে পড়ে। বিশেষ করে বিএনপি সরকারের বিরুদ্ধে জঙ্গীবাদের যোগসাজসের বানোয়াট অভিযোগ তোলে আওয়ামীলীগ ও ভারত, এ যৌথ প্রচারণায় বিভ্রান্ত হয় মার্কিন প্রশাসন। অন্যদিকে বাঙ্গালী বংশোদ্ভূত বৃটিশ রাষ্ট্রদূত আনোয়ার চৌধুরী নিজ জেলা সিলেটে বোমা হামলার শিকার হয়ে চার দলীয় জোট সরকারের বিরুদ্ধে ব্যক্তিগতভাবে বৈরীতায় লিপ্ত হন। আওয়ামীলীগকে রাষ্ট্রক্ষমতায় আনার জন্য ভারত সফলভাবে ব্যবহার করে জেনারেল মইনকে। এ প্রয়োজনে বিএনপির নেতাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির প্রোপাগান্ডা ছড়ায় বিশ্বব্যাপী, মূলত ভারতীয় প্রচার মাধ্যম এ সময় বিএনপি-বিরোধী প্রচারণায় নেতৃত্ব দেয়। জেনারেল মইন ও শেখ হাসিনার যে পথে রাষ্ট্রক্ষমতায় বসার লোভ, সংবিধান লংঘন, রাষ্ট্রপতির প্রতি আনুগত্যের সাথে বেইমানী ও বিশ্বাসঘাতকতা, সেনাবাহিনীর শৃঙ্খলা ভঙ্গ, ভারত-মাতার পদতলে বাংলাদেশকে বলি দেয়া সম্মিলিত হয়ে বাংলাদেশের উপর চালায় “ওয়ান ইলেভেনের” এক চোখ কানা দৈত্যের ধংসলীলা।
হিতাংশু, পচাত্তরোত্তর রাজনীতি নিয়ে আলোচনা করার জন্য তুমি অনেক বালক। ৭৫ সালের
পরে তোমার জন্ম। তুমি দেখোনি, গোটা আর্মি কিভাবে জড়িয়ে গিয়েছিলো ৭৫ সালের পটপরিবর্তনে। ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররফের
নিজের উক্তি, “Whole army is celebrating." যুদ্ধাপরাধের বিচার বন্ধ করে গেছেন শেখ মুজিব নিজে, জিয়া নন। মুজিবের সাধারন ক্ষমায় সব সমান হয়ে গেছে। কেবল বাকী ছিল মানবতাবিরোধী অপরাধের
বিচার। ওটা কখনই বিএনপি বা আওয়ামীলীগের এজেন্ডা ছিলো না। ১৯৯৬ সালের
আওয়ামীলীগ সরকার একবার মুখ ফুটে এ শব্দটি বলেনি। ২০১০ সালে এসে এজেন্ডার
ঘাটতি দেখা দিলে ঘাদানিকের এজেন্ডা হাইজ্যাক করে লীগ। স্বাধীনতা বিরোধীদের
পূনর্বাসন হয় মুজিবের হাতে। শাহ আজিজের মত চরম স্বাধীনতা বিরোধীকে
কারামুক্ত ও কালিমামুক্ত করে বন্ধু মুজিব সাথে করে নিয়ে যান করাচীর ওআইসিতে,
সেখানে গিয়ে
ভুট্টোর সাথে লিটারালি গলাগলি করে আসেন। দেখো এটা: https://www.facebook.com/photo.php... এসব গোপন করার উপায় নাই। মুজিবের দোস্ত
শাহ আজিজকে জিয়া পরে প্রধানমন্ত্রী করে কোনো অপরাধ করেননি। নূরু রাজকারকে যদি
শেখ মুজিবের কন্যা ফ্লাগ দিতে পারেন, তবে মুজাহিদ নিজামীতে কোনো অপরাধ নাই।
সংবিধানে স্বাধীনতাযুদ্ধের চেতনা জিয়াই ঢুকিয়েছেন, যেটা আওয়ামীলীগের কাকে ছিল ক্ষীন
মুক্তিযুদ্ধ। আর পচাত্তরের ইনডেমনিটি জিয়া দেননি, দিয়েছেন আজন্ম আওয়ামী মোশতাক. হয়ত আগষ্ট বিপ্লবকে সংহতকরনে ওটারও দরকার ছিল। আমি সঠিক জানি না এর মাজেজা। দেখো এখানে, http://en.wikipedia.org/wiki/Indemnity_Act,_Bangladesh
অতীত না দেখে হাল জমানার সস্তা প্রচারণায় তোমরা খুব জ্ঞানী সেজেছো! উপদেশ হলো, পড়াশুনা করো। সবার মতই পড়তে হয়। তবেই না জ্ঞান বাড়বে।
অতীত না দেখে হাল জমানার সস্তা প্রচারণায় তোমরা খুব জ্ঞানী সেজেছো! উপদেশ হলো, পড়াশুনা করো। সবার মতই পড়তে হয়। তবেই না জ্ঞান বাড়বে।
১১ জানুয়ারী বাংলা ভিশনের “সংবাদ
প্রতিদিন” টক শোতে নিউ এইজ পত্রিকার সম্পাদক নুরুল
কবীর বললেন:
“ঐ দিন সন্ধ্যার সময় কতিপয় উচ্চাভিলাষী সামরিক কর্মকর্তা সেনাবাহিনীকে নেতৃত্ব দেওয়ার অজুহাতে তাদেরকে ক্যান্টনম্যান্টে রেখে আগ্নেয়াস্ত্র সহ অবৈধভাবে প্রেসিডেন্টের ঘরে ঢুকেছিল। ঢুকে তাঁকে দিয়ে কাগজসই করিয়েছিলেন। সই করার পর তারা পুরো ক্ষমতাটাই গ্রহণ করে ফেলে এবং আগে থেকেই প্রস্তুত করা একটি কেবিনেট ঘোষণা করে। সেই কেবিনেট দুই বছর ধরে অবৈধভাবে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে দেশ পরিচালনা করে।
সেই দুই বছরে তাদের বড় অপরাধগুলির মধ্যে একটি হচ্ছে সংবিধান স্বীকৃত জনগণের মৌলিক অধিকারগুলিকে স্থগিত করা। তাছাড়া দেশের শহরগুলিকে পরিচ্ছন্ন করার নামে প্রথম কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই হাজার হাজার লক্ষ লক্ষ ছোটখাট দোকানপাট, ছোট ছোট ব্যবসা প্রতিষ্ঠানতে উচ্ছেদ করার মধ্যে দিয়ে তারা হাজার হাজার উপার্জনশীল পরিবারকে উপার্জনহীন করে ফেলে। জীবনধারণের জন্য তারা অসহায় অবস্থার মধ্যে পড়ে যায়। দূর্নীতি দমনের নামে তারা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী সহ ছোট বড় নানান ব্যবসায়ীদেরকে অবৈধভাবে গ্রেফতার করে তাদের উপর টর্চার করার পর জোর করে তাদেরকে দিয়ে লিখিয়ে কয়েক’শ কোটি টাকা আদায় করে। আজ পর্যন্ত সেই টাকার সমস্যার কোনো সমাধান হয় নাই। রাজনৈতিক ল্যান্ডস্কেপ পরিবর্তন করার নামে নিজেদের ক্ষমতা পাকাপোক্ত করার আকাঙ্খায় তারা নানান রাজনৈতিক দল খুঁজছিল। কিন্তু তাদের সেই যোগ্যতা না থাকায় তারা সেইক্ষেত্রে কামিয়াব হতে পারে নাই। তারা মূলত মিডিয়ার চাপে এবং মানুষের পূঞ্জিভূত ক্ষোভ বিস্ফোরিত হওয়ার প্রাক্কালে শেষপর্যন্ত নতজানু হয়ে প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের নেতা নেত্রীদের সাথে সমঝোতা করবার আশায় দৌড়াদৌড়ি শুরু করে। বলা হয়ে থাকে নির্বাচনটাও তারা সমঝোতার ভিত্তিতেই করেছে। যারা বাংলাদেশের জাতীয় সেনাবাহিনীকে জনগণের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিয়ে সেনাবাহিনীর ইমেজ নষ্ট করেছে এবং সেটার পিছনে ক্রীড়নক হিসাবে কাজ করেছে তাদের একজনেরও বিচার করা হয় নাই।”
“ঐ দিন সন্ধ্যার সময় কতিপয় উচ্চাভিলাষী সামরিক কর্মকর্তা সেনাবাহিনীকে নেতৃত্ব দেওয়ার অজুহাতে তাদেরকে ক্যান্টনম্যান্টে রেখে আগ্নেয়াস্ত্র সহ অবৈধভাবে প্রেসিডেন্টের ঘরে ঢুকেছিল। ঢুকে তাঁকে দিয়ে কাগজসই করিয়েছিলেন। সই করার পর তারা পুরো ক্ষমতাটাই গ্রহণ করে ফেলে এবং আগে থেকেই প্রস্তুত করা একটি কেবিনেট ঘোষণা করে। সেই কেবিনেট দুই বছর ধরে অবৈধভাবে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে দেশ পরিচালনা করে।
সেই দুই বছরে তাদের বড় অপরাধগুলির মধ্যে একটি হচ্ছে সংবিধান স্বীকৃত জনগণের মৌলিক অধিকারগুলিকে স্থগিত করা। তাছাড়া দেশের শহরগুলিকে পরিচ্ছন্ন করার নামে প্রথম কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই হাজার হাজার লক্ষ লক্ষ ছোটখাট দোকানপাট, ছোট ছোট ব্যবসা প্রতিষ্ঠানতে উচ্ছেদ করার মধ্যে দিয়ে তারা হাজার হাজার উপার্জনশীল পরিবারকে উপার্জনহীন করে ফেলে। জীবনধারণের জন্য তারা অসহায় অবস্থার মধ্যে পড়ে যায়। দূর্নীতি দমনের নামে তারা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী সহ ছোট বড় নানান ব্যবসায়ীদেরকে অবৈধভাবে গ্রেফতার করে তাদের উপর টর্চার করার পর জোর করে তাদেরকে দিয়ে লিখিয়ে কয়েক’শ কোটি টাকা আদায় করে। আজ পর্যন্ত সেই টাকার সমস্যার কোনো সমাধান হয় নাই। রাজনৈতিক ল্যান্ডস্কেপ পরিবর্তন করার নামে নিজেদের ক্ষমতা পাকাপোক্ত করার আকাঙ্খায় তারা নানান রাজনৈতিক দল খুঁজছিল। কিন্তু তাদের সেই যোগ্যতা না থাকায় তারা সেইক্ষেত্রে কামিয়াব হতে পারে নাই। তারা মূলত মিডিয়ার চাপে এবং মানুষের পূঞ্জিভূত ক্ষোভ বিস্ফোরিত হওয়ার প্রাক্কালে শেষপর্যন্ত নতজানু হয়ে প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের নেতা নেত্রীদের সাথে সমঝোতা করবার আশায় দৌড়াদৌড়ি শুরু করে। বলা হয়ে থাকে নির্বাচনটাও তারা সমঝোতার ভিত্তিতেই করেছে। যারা বাংলাদেশের জাতীয় সেনাবাহিনীকে জনগণের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিয়ে সেনাবাহিনীর ইমেজ নষ্ট করেছে এবং সেটার পিছনে ক্রীড়নক হিসাবে কাজ করেছে তাদের একজনেরও বিচার করা হয় নাই।”
কোন মন্তব্য নেই
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন