একটা ফোনের অপেক্ষায় আছি
একটা ফোনের অপেক্ষায় আছি দীর্ঘদিন! জানি না লোকভেদে ’দীর্ঘ’ শব্দটার সীমা কতটুকু! তবে আমি অপেক্ষায় আছি প্রায় তিনমাস। একটা মেয়ের ফোনের অপেক্ষায়। মেয়েটাকে আমি চিনি। জানিও খানিকটা। রিসিপশনে বসে। সবাইকে অহেতুক ভাইয়া ভাইয়া সম্বোধন করে। এ জাতীয় মেয়েরা সাধারণত সবাইকে স্যার সম্বোধন করে। কিন্তু মেয়েটা বেশ স্টাইলিস্ট! একটু ন্যাকামু করে ভাইয়া ডাকে, সবার যেন তাতেই অন্তর জুড়ায়। হাসেও বেশ সুন্দর করে। আমি তারই ফোনের অপেক্ষায় আছি। ইন্টারভিউ দিতে গিয়েছিলাম তারই আহ্বানে।
হ্যালো ভাইয়া!
হ্যা বলছি
অমুক ভাইয়া?
হুম!
ভাইয়া আমি নুসরাত, অটবি হেড অফিস থেকে বলছি।
জ্বি বলুন!
আপনি বোধয় আমাদের এখানে একটা সিভি জমা দিয়েছেন, আগামী শুক্রবার আপনাদের ইন্টারভিউ কল করা হয়েছে।...ভেন্যুটা লিখে রাখবেন? হ্যা হেড অফিস বোর্ডরুমে।...
এইটুকুই কথা হয়েছে। তবে বৃহস্পতিবার আরেকবার ফোন দিয়েছিল, ইন্টারভিউ দিতে আসছি কি না কনফার্ম করতে... কর্তৃপক্ষ কি আমাকে বিশেষভাবে বিবেচনা করছে? সে জন্যই এরকম ফোন? নাকি এটি মেয়েটির নিজেরই কোনও অতিউৎসাহী আচরণ? তার ব্যক্তিগত ভালোলাগা কি? যেটাই হোক আমি বেশ রোমাঞ্চিত।
শুক্রবার সকাল থেকেই নিজেকে বেশ পরিপাটি করে সাজালাম। যাকে বলে মাঞ্জামারা টাইপের। যেন ইন্টারভিউ ফেস করতে যাচ্ছি না, যাচ্ছি ডেটিং এ। লোকেশনটা খুজেঁপেতে খুব একটা কষ্ট হলো না; বড় সাইনবোর্ড ছিল, মেইন রাস্তার মোড় থেকেই দেখা যায়। রিসিপশনে মেয়েটাকে পেয়ে গেলাম। চিহ্নিত করা সহজ হয়ে গেলো তার ভাইয়া ভাইয়া সম্বোধনের অহেতুক ব্যবহার দেখে। মেয়েটা যতোটা না সুন্দর তার চেয়ে বেশি পরিপাটি। ড্রেসটাও আনকমন ম্যাচিং। তবে এটি ইউনিফর্ম। অন্য মেয়েদেরও একই পোষাক পরিধেয়। ভাইয়া ভিতরে আসুন! আমি চমকে গেলাম! এটাওতো ভাইয়া ডাকছে...ব্যাপার কি? আমার চমকানোর অর্থ খুঁজছে সে ইন্টারভিউ দিতে এসছেন?
হ্যাঁ, বলে আমি তাকে অনুসরণ করলাম। আমাকে আমার সিরিয়াল জানিয়ে দেয়া হলো। ফোর্টি সিক্স।
ইনটারভিউ শেষ করে ফেরার সময় রিসিপশনে জানতে চাইলাম নুসরাত কে? নুসরাত মেয়েটি নিজেই জানাল সেই নুসরাত। আমার অনুমান ঠিক। বললাম রেজাল্ট জানা যাবে কবে?
আমরাই ফোনে জানাবো।
সে তো জানাবেন যাদের সিলেকশন হবে যারা তাদের, আমরাতো ওয়েট করবো।
এপ্রশ্নের উত্তর বোধয় ওদের জানা নেই। ওদেরতো তোতাপাখির মতো কিছু বুলি শেখানো হয়। সেসব খুব সুন্দর করে ডেলিভারি দিতে পারে এরা, অন্য কোনও প্রশ্নের পরিপাটি উত্তর দূরে থাক কিছুই বলতে পারে না। আমি আবার বললাম-
আপনার পারসোনাল নাম্বারটা দেয়া যাবে? অথবা ফলাফল যা-ই হোক আমাকে একটু জানাবেন? আমার অপেক্ষা করতে খুব কষ্ট হয়।
মেয়টার চেহারাটা কেমন সিমপ্যাথেটিক আকার ধারণ করলো। হয়ত ভাবছে একটি চাকরির জন্য কতো পেরেশান এই ছেলে টা! আমি ওকে হালকা করার জন্য বললাম-
রিজিকের মালিক আল্লাহ! চাকরি কোথায় হবে জানি না, তবে আশায় থাকতে থাকতে নিরাশ হলে খুব কষ্ট পেতে হয়। ধরুন দুই তিনদিনের মধ্যেই তারা সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলবে কাকে নেবে, আমি না হয় আপনাকে ফোনকরে জেনে নেবো! অথবা আপনি...
মেয়েটি রাজি হয়...বলে ওকে আমি জানাবো।
থ্যাংক্যু!
উইশ ইউ বেস্টঅফ লাক।
মেয়েটার উইশ শুনে সত্যিই কেন যেন প্রাণটা ভরে গেলো! এটি কি স্রেফ কোনও লৌকিকতার খাতিরে নাকি আন্তরিক!.....
সেই থেকে অপেক্ষায় আছি, একটা ফোন আসবে। উত্তরটা নেতিবাচক হবে হয়ত তবু ভাবতে ভালো লাগছে একটা মেয়ে আমার রিকোয়েস্ট রাখবে। কিন্তু তিনমাসেও যখন সাড়া পেলাম না তখন ভাবতেই হলো এরাও বারবণিতাদের মতোই, সবাইকে খুশি করে কিন্তু কাউকেই মনে রাখা চলে না এদের।
আজ শুক্রবার, তাই বাসায় বসে ফোনটার জন্য তীব্র আকাঙ্ক্ষা নিয়ে অপেক্ষা করছি। দেশথেকে কি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি সব উঠে গেলো? ইদানীং পত্রিকার পাতায় আর নিয়োগবিজ্ঞপ্তি চোখেই পড়ে না। একটা কোম্পানীর বিজ্ঞাপন ম্যানেজার এবং বিজ্ঞাপন এক্সিকিউটিভ পদে লোক নিয়োগ হবে। পদটা ভালো বুঝি না। তবে কোয়ালিফিকেশন আইমিন শিক্ষাগত যোগ্যতা চাহিদামাফিক তাই অ্যাপ্লিকেশন করবো ভাবলাম। পদটা সম্পর্কে ভালোভাবে জানার জন্য এক বড়ভাইকে ফোন দেই। সে বলে এটা অনেক বড় পদ, এক্সপেরিয়েন্সড লোক ছাড়া নেয়ার কথা না। বেতন উল্লেখ আছে?
না, নাই।
এক্সপেরিয়েন্স চাইছে?
না, কিছু উল্লেখ নাই।
তাইলে দেখ ট্রাই করে। তবে কাজটা হলো বিজ্ঞাপন বিভাগটা দেখা। ধর কয়েকজন প্রতিনিধি থাকবে বিজ্ঞাপন সংগ্রহ করার জন্য তাদের ডিল করতে হবে।...পারবি?
বড়ভাইর কথা শুনে হতাশ হলাম। জিজ্ঞেম করলাম বেতন কতো হতে পারে?
কোম্পানী বুঝে, তবে চল্লিশ হাজার থেকে ১লাখ পর্যন্ততো হবেই। তবে ওরা কীরকম লোক চাচ্ছে তা কে জানে!
জানি এখানে অ্যাপ্লিকেশন করে লাভ হবে না। তবু করবো স্থির করলাম কারণ ব্যাংক ড্রাফটতো আর চায়নি।।
বেরিয়ে পড়লাম রাস্তায়। রোদের তেজ অনেক বেড়েছে। সিভিটা কপি করতে হবে। পরিচিত দোকানটায় যাওয়া যাবে না। সেদিন অতোগুলো সিভি কপি করলাম আজ আবার। কী ভাবছে ছেলেটা? এমআর ফটোস্ট্যাট এর ছেলেটার নাম রিপন। আরেকজন আছে সে মুরুব্বি। এই ছেলেটাই বেশি থাকে। এই এলাকায় প্রায় দুইবছর আছি, তাই পরিচিতি হয়ে গেছে। তাছাড়া মাঝেমধ্যে হাতে টাকা না থাকলে বা ভাংতি না থাকলে দুয়েকটাকা বাকীতে সারতে হয়, পরিচয় না থাকলে চলে!
তিনপৃষ্ঠার সিভি। একপৃষ্ঠা ফটোকপি করামাত্র বিদ্যুত নাই। ঘণ্টা দুই অপেক্ষা করতে হবে। রুমে ফিরে এলাম। একই অবস্থা এখানকারও। প্রচণ্ড রোদে হেঁটে এসে গরমে আর ঘামে জীবন অতিষ্ঠ। অথচ সরকার নিজের ঢোল পিটিয়েই চলেছে। সরকারি চাকরি, পিএসসি সবখানে কোটায় বরাদ্দ অধিকাংশ পদ। ঘরে ঘরে চাকরি দেবে, কাদের যে দিচ্ছে বুঝি না।
হাতপাখা নিয়ে বারান্দায় গেলাম। যৌথ বারান্দা। ওপাশে দুইটা মেয়ে এসে বসেছে। অতএব আমাকে ভিতরে ঢুকতে হলো। বিকেলে ছাদে ওঠা নিষেধ। অমুকের মেয়েরা বউরা যায়, বারান্দায় যখন তখন যাওয়া যাবে না, মেয়েরা থাকলে সাবধানে চলতে হয়। এই এক অত্যাচার! গাড়িতে ৬ থেকে ৯সিট মেয়েদের। পুরুষদের সিটগুলোও তাদের দখলে থাকে। যখন আর ফাঁকা না থকে তখন কোটার আসনে যায়। এটাই নাকি নিয়ম। আর যদি কেউ ভুলে সংরক্ষিত আসনে বসে অন্য পুরুষরা যে কী বিহেব করে! ভাবটা এমন আমি বসতে পারিনি তুই শালা বসবি ক্যান? হিংসা! মেয়েরাও এমন চটাঙ চটাঙ ব্যবাহার করে যে সংরক্ষিত আসনে বসার মতো বড় অপরাধ সমাজে আর কিছু হতে পারে না। কিন্তু পত্রিকার পাতায় যখন দেখি ধর্ষণ ইভটিজিং মেয়েদের পাচার করা পতিতাবৃত্তিতে বাধকরা, জোরকরে পর্ণো সিডি করা ইত্যাদি বাড়ছেই তখন ভেতরটা কিছুটা আঘাত পেলেও উল্লসিত হয় প্রতিশোধস্পৃহায়।
ব্যাচেলর থাকার আরো যন্ত্রণা আছে। বাসাতো পাওয়াই যায় না। এখানে আছি ফুপাতো বোনের সঙ্গে। ওরা দুটো রুম নিয়ে থাকে, আমাকে গেস্ট রুমটা দিয়েছে। থাকা খাওয়াসহ মাসে তিনহাজার দেই। অনেকের মতে বিশাল সুখে আছি। এমন সুযোগ রাজধানীতে কেউ কাউকে দেয় না। আমি বন্ধুদের কাছে নিজের সুখটা আরও বাড়িয়ে দেখাবার চেষ্টা করি। যদিও শর্ত আছে গেস্ট অ্যালাউ না। তবু মাঝে মাঝে রান্নাঘরে গিয়ে আপুকে মিন মিন করে বলি কিছু একটা দেয়া যাবে আপু? চা টা? চোখ গরম করে রাজি হলেও বন্ধুর কাছে এসে বলি...আপুতো তোকে চা খেয়ে যেতে বলল...একটু বস!
নারে যাই, অন্যদিন
আরে বস না, চাটা খেয়ে যা
যদি আপু নুডলস বা সেমাই দিয়ে পাঠায় তাহলেতো পোয়া বারো। বন্ধুদের কাছে নিজের সম্মান কতোটা যে বেড়ে যায়। আরও অনেক গল্প ওদের বানিয়ে বানিয়ে বলতে হয়। পাশের ফ্লাটের মেয়েদুটোও আমাকে যথেষ্ট সম্মান করে। বারান্দায় গেলে গায়েপড়ে কথা বলতে আসে। নিজেদের মধ্যে টেপাটেপি করে। কী ঢঙ করে হাসে।...বন্ধুরা এসব শুনে পুলকিত হয়, ঈর্ষাকাতর হয়। ওদেরতো আর বলা যায় না যে যদিবা কোনও সময় মেয়েগুলোর সঙ্গে দেখা হয়ে যায় আমি ভয়ে ফুটা বেলুন হয়ে যাই, না জানি কী কম্প্লেইন করে বসে। বাড়িঅলাকে অনেক বলে-কয়ে আমার ব্যাপারে রাজী করানো হয়েছে। এমন কিছু কারও কানে গেলে রক্ষা নাই। তাই কানে দেয়ার ইস্যু যেন ওরা খুজেঁ ফেরে। ছেলেটা কেমন করে তাকায়, হাবভাব ভালো না, সারাদিন বারান্দায় বসে থাকে...কতো কী যে আছে বলার। আর ছেলেদের সম্পর্কে মেয়েদের কোনও কমপ্লেইন মানে হান্ড্রেডে হান্ড্রেড টেন পারসেন্ট ঠিক। পুরুষ শাসিত সমাজে এ এক একচেটিয়া বিচারবোধ মানুষের।
ঘণ্টা দেড়েক পর বিদ্যুত এলো, টিভিটা অন করলাম। সংবাদ! কী যে এমন সংবাদ এলো দেশে। সব চ্যানেলই এতো গুরুত্বের সঙ্গে সংবাদ দেখায় যেন কী ইম্পর্ট্যান্ট নিউজ! অথচ হাসিনার কীর্তি, ছাত্রলীগের গঠনমূলক সমালোচনা, শিবির পেদানো, ছাত্রদলের মিছিলে প্রতিপক্ষের হামলা (অনেকেই ছাত্রলীগের হামলা বা সন্ত্রাসী হামলা বলতে ভয় পায়) টকশোতো নিয়ন্ত্রণহীন ছাত্রলীগ নিয়ে আলোচনা হয়...বক্তারা বলে এমন ঐতিহ্যবাহী সংগঠনটির এমন দশা হতে দেওয়া যাবে না, যদি শিবির ডুকে থাকে তাদেরও খুজেঁ বের করতে হবে। অথচ মন্ত্রীরা নেত্রীরা প্রতিনিয়তই ব্যাংকলুটের দীক্ষা দিচ্ছেন কর্মীদের। পত্রিকায় সেটা শিরোনাম হয় তবু কেউ প্রশ্ন করে না। সাজেদা সেদিন বলে প্রয়োজনে লুট করে নিতে হবে....বাহ! গণতান্ত্রিক দেশ, স্বাদীন দেশের এই চিত্র! বিদেশী প্রভুরাও খুশি। সন্ত্রাস দমনে সরকার সফল। অনেকটা কৌতুকের মতোই....এক লোক পাঁচতলা থেকে পড়ে গিয়েও বেঁচে আছে। কিন্তু অন্যরা বলছে তুমি বললেতো আর হবে না, ডাক্তারকে জিজ্ঞেস করতে হবে তুমি বেঁচে আছ না মরে গেছ। আমাদের দেশে কখন কী অবস্থা তা শুনতে হবে বিদেশী প্রভূদের কাছ থেকে। তার বলছে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে আপত্তি নেই তাই বিচার হচ্ছে। তবে আমার যেটা মনে হয় শেষমেষ কয়েকজন রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ফাঁসিতে ঝুলিয়েই এই বিচার কাজ শেষ হবে। তারপর জাতির ওপর চাপিয়ে দেয়া হবে ভয়াল এক ঋণের বোঝা। ওদের আইনজীবীরা কোটি কোটি টাকা লুট করবে এ কাজের নামে। বিভিন্ন সংস্থা সংগঠন হাতড়ে নেবে জনগণের টাকা। বন্ধ করে দেয়া হবে অথবা দলীয় ভাড় এবং গোয়ারদের নিয়োগ দেয়া হবে সেসব প্রতিষ্ঠানে যেসব এতোদিন যুদ্ধাপরাধীরা? চালাতো। নি:স্ব হবে কয়েকশ পরিবার। তবু হয়ত কেউ শেষ নি:শ্বাস ফেলবার আগে বলবে.. তবু বিচার পাইছি।....
বাংলাদেশের সংস্কৃতি হলো গরিবরা সুবিচার পায় না, কারণ তারা বিচার চাইতে যায় না। সবাই জানে বিচার চাইতে গেলে যার জন্য বিচার চাইবে তারচে বেশি হারাতে হবে। তাই মামলামকদ্দমায় পারতপক্ষে দরিদ্র-মধ্যবিত্তরা জড়ায় না। যা গেছে গেছে- কেস করে কী লাভ। এমন কথাই শুনি এদেশের বেশিরভাগ পরিবারগুলোর মুখে। তাই পুলিশও নাকি অপরাধীদের ধরতে পারে না। ওদের হয়ত গরিবের টাকা ছাড়া চলতে কষ্ট হয়। তাই নিজেরা কেস করে না। চায় ক্ষতিগ্রস্ত কেউ মামলা করুক তদন্তের নামে কিছু হাতড়ানো যাবে। সেই জনগণ যে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চাইবে আমার তা মনে হয় না। সরকার চাইলে যাচাই করে দেখতে পারে। আজই বলুক যে যারা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চায় তাদের কে আদালতের খরচ চালাতে হবে। আমার মনে হয় এ কথা শোনা মাত্র পড় মরি করে দৌড়াবে জনগণ। বলবে ভিক্ষা চাই না কুত্তা ঠেকাও। খাওন পাই না বিচার!
আমার এক কাজিন আত্মহত্যা করেছে, বখাটেদের উৎপাতে। সোহেল, জাকির নামের চিহ্নিত ছাত্রলীগ ক্যাডারদের প্রেমের প্রস্তাব অস্বীকার করায় তারা অতিষ্ঠ করে তুলেছিল ওর জীবন। বাধ্য হয়ে সে....
সে হয়ত ভেবেছিল তার এই প্রতিবাদে টনক নড়বে তার প্রিয় দেশের মানুষের প্রশাসনের, আইনপ্রণেতাদের। কিন্তু তা হয়নি, তা হয় না কখনও। সরকার কোনওদিন জনগণের হয় না। হয় নিজের পরিবারের আর হয় বিদেশী প্রভূদের। আমার বোনের মতো আরও অনেক মেয়েই সেই পথ বেছে নিয়েছে, সরকারের মুখে বিচারের শব্দটি কেউ শুনতে পায়নি। পাবেও না কারণ এই ছেলেগুলো না থাকলে ভোটকেন্দ্র দখল করবে কারা? কারা মাসে মাসে মাসোহারা দিয়ে চাঙ্গা করবে দলীয় অর্থনীতি? আমার খালা কোনও মামলা করেননি। আমরা; সচেতন ছাত্রসমাজও এর বিরুদ্ধে কোনও মামলা করতে যাইনি। কারণ আমরা জানি বিচার চাইতে গেলে যে টাকা খরচ করতে হয় সে সামর্থ্য আমাদের নেই। দরিদ্র দেশের মানুষ বিচার চায় না। আজ যদি শেখ হাসিনা তার ভাষণে বলেন যে দ্রব্যমূল্য কম চান নাকি যুদ্ধাপরাধীর বিচার চান আমি নিশ্চিত শতকরা নিরানব্বই দশমিক নয়নয় ভাগ মানুষ বলবে যুদ্ধাপরাধীর বিচার নয় দ্রব্যমূল্য কম চাই। গ্যাস চাই পানি চাই বিদ্যুত চাই। তবে এই বলেতো আর যুদ্ধাপরাধী বা অপরাধীকে ছেড়ে দেয়া যায় না!....এসব ইস্যু নিয়ে সরকার ব্যাস্ত, মিডিয়াগুলো ব্যাস্ত....আমাদের কথা বলবার কেউ নেই। বিরক্ত হয়ে টিভি বন্ধ করে দেই। একপক্ষীয় আচরণ কোনও পক্ষেরই ভালো লাগে না। যদি লাগতো তাহলে আজ আর একুশে টিভি এবং জনকণ্ঠ, দিনকাল, সংগ্রাম পত্রিকার এ হাল হতো না।
মিডিয়ার মিথ্যাচার বা মিসগাইড করার এসব প্রচেষ্টা উপভোগ করার চেয়ে লোডশেডিংএ বসে সাধারণ জ্ঞান পড়াই শ্রেয় মনে করি। টেবিলে এ সংক্রান্ত বইয়ের অভাব নাই। পড়তে বসে গেলাম।....
আজ শনিবার! সকাল থেকেই ভাবছি সিভিটা ড্রপ করতে যাবো। পত্রিকা কেটে লোকেশানটা মানিব্যাগে ভরে রেখেছি। কিন্তু রোদের অবস্থা দেখে কিছুতেই সাহস হচ্ছে না বেরুতে। এতো রোদ! উফ! বৈশাখের ১১তম দিন। চৈত্রতো গেছে খরতাপের দুর্নাম ঘুচলো না। ঝড় বা বৃষ্টি কোনওটারই দেখা মিলছে না। একেই বলে পরিবেশ বিপর্যয়! জলবায়ু সম্মেলন নিয়ে অনেক হৈ চৈ হলো কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হলো না। তার ফলভোগ করছি আমরা। জনমনে স্বস্তি বা শান্তি বিরাজ করুক এমনটি চায় না কেউ। শুধু শুধু আমরা জনগণ কেন যে রাজনীতির পেছনে ঘুরে নিজেদের বিপন্ন করি! অবশ্য সাময়িক লাভতো আছেই। আমরা বাঙালি তাই দূরভবিষ্যত চিন্তা আমরা করতে পারি না। যে কারণে লড়াইতে নেমেছি বারবার। যারা জিতে গেছে তার ফলভোগ করেছে আর যারা প্রাণ দিয়েছে?....কোনও প্রাণবিয়োগ ছাড়া বা রক্তপাত ছাড়া কি স্বাধীনতা অর্জন সম্ভব ছিল না? পাকিস্তান পিরিয়ডেরতো অনেক সুনাম শুনি এখনও। খুজেঁ খুজেঁ চাকরি দেয়া হতো। দেলু কাকাকে মাঠ থেকে ডেকে এনে চাকরিতে ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছিল। সরকারি চাকরি। অন্যদের সঙ্গে কাজ করতে করতে কিছুটা শিখে নিয়েছে। একসময় রিটায়ার করে কয়েকলক্ষ টাকা পেনশন নিয়ে এখন স্ত্রী-পরিবার নিয়ে সুখে দিন কাটাচ্ছে। তেমন লেখাপড়া জানত না। মাঠে কাজ করতো। অথচ আজ আমাদের অবস্থা কি? স্বাধীনতার পর দুর্ভিক্ষ শুরু হয়, কেন দুর্ভিক্ষ হলো। এমন নাকি হয়, কিন্তু আমাদেরতো অনেক আগবাড়িয়ে সাহায্য করার বন্ধু বা মিত্ররা ছিল, তারা কি একবেলা না খেয়ে কাটিয়েছে? যারা অস্ত্রসস্ত্র প্রশিক্ষণ ইত্যাদি দিয়ে পাকিদের বিরুদ্ধে অস্ত্রধারণ করালো আমাদের? কোথায় ছিলেন তারা? যারা দুর্ভিক্ষে মারা গেছেন তারা কি মুক্তিযোদ্ধার সম্মান পেয়েছেন? তাদের সন্তানরা কি কোটায় চাকরি পান? পান না তারা শুধু হারিয়েছেন। অতএব যে দেশ আমার জন্য ভাবে না আমি সে দেশের জন্য ভাবতে পারি না।... আফটার অল দেশের জন্য বলতে কিছু নেই। আশরাফ ভাই বাজারে টেলিটক আসার পর আর অন্য অপারেটর ব্যবহার করে না, টেলিটক দেশের ফোন। কিন্তু আদৌ কি টেলিটক দেশের বা সরকারের জন্য তোমন কোনো লাভজনক প্রতিষ্ঠান হতে পেরেছে? বরং আমলারা ঠিকই উদরপুর্তি করতে সক্ষম হয়েছেন। দেশের জন্য জনগণ যাই করুক তার ফল ভোগ করে কতিপয় সরকারি ব্যক্তি , মন্ত্রী এমপি আমলারা। আর দুর্ভোগ কিছু হলে সেটা বহন করে জনগণ। আমি ট্যাক্স বাড়ানোর পক্ষে ছিলাম, কিন্তু যখন শুনি এসব রাজস্ব অর্তমন্ত্রীর নেতৃত্বে কীভাবে লুট করে তখন মনে হয় যারা করফাকিঁ দেয় তারা ঠিকই করে। আর করফাঁকি যারা দেয় তারা সবসময় ক্ষমতাসীনদের আঁচলের আশ্রয়ে থেকেই তা করে। তারা জানে প্রতিটি সরকারই কালোটাকা সাদা করার সুযোগ দেবে। অতএব দেশপ্রেম নামে যা বলা হয় করা হয় তা আসলে স্যাবোটইজ! একটি ফোন কোম্পানী দেশের টাকা দেশে রাখুন, লোগোতে জাতীয় পতাকার রং মাখানো...সেদিন দেখলাম অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসার দায়ে তাদের কার্যক্রম ক্লোজড। লালসবুজটা ছিল তাদের ফাঁদ? দেশের পণ্য ছেড়ে প্রতিনিয়ত যারা বিদেশী পণ্যের প্রতি আকৃষ্ট করে মার্চ মাসে তাদেরই দেখি স্বাধীনতার রঙে প্যাভিলিয়ন সাজিয়ে রাখে। আসলে ওরা বোঝে এদেশের বোকা মানুষ একবার যখন স্বাধীনতার জন্য জীবন দিয়েছে তখন দেশেপ্রেমের ধুয়া তুলে এদের ধোঁকা দেয়া কঠিন কিছু না। আমরা বোকা জনগণ আসলেও বোকা। যে কারণে দেশেপ্রেম কাকে বলে জানি না। আমরা মনে করি মুক্তিযোদ্ধাদের পুজো করাই দেশপ্রেম। যদিও প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধারা নিজেদের স্বার্থ আদায়ের চেয়ে নিজেকে আড়ালে রাখতেই বেশি পছন্দ করে এবং তালিকার অধিকাংশই ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা এমন সংবাদও পত্রিকার পাতায় দেখি। আমরা আম জনতা মনে করি নিজেকে নি:শেষ করে দেশের জন্য কিছু করা, জীবনুৎসর্গ করাই দেশে প্রেম! তাই তারা দেশের মঙ্গলহিত কামনায় নিজেদের ধংস হতে দিতেও দ্বিধা করে না। অথচ দেশ যে মানুষকে নিয়ে সে মানুষটি সে নিজেও, সে যদি দেশকে গড়ার জন্য নিজেকে গড়ে তুলতে পারত, দেশের প্রকৃত মানবসম্পদ হিসেবে গড়ে উঠতে পারত সেটাই কি দেশের জন্য সবেচয়ে বড় উপকার হতে পারত না। সে যদি পারতো বড় গবেষক হতে, বিশ্বখ্যাত বিজ্ঞানী হতে তাহলে কি তথাকথিত বুদ্ধিজীবীদের পরামর্শে দেশেকে অন্যের করুণাপ্রার্থী হতে হতো? বুদ্ধিজীবী নামের বিদেশী মানসপ্রভূদের দাস হতে হতো?
এটা জনগণকে ভাবতে দেয়া যাবে না। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সব ছাত্রই যদি নিজেদের ক্যারিয়ারগঠনের মাধ্যমে দেশকে গড়ার চেষ্টা করে তাহলে ছাত্রদল ছাত্রলীগ ছাত্রশিবিরের মিছল কারা করবে? বড় কর্মী বাহিনী না থাকলে ছাত্রনেতারা কোনও পেশা ছাড়াই কী করে বড় বড় দালানকোঠা নির্মাণ করবে? বড় বড় ব্যবসায়ী হবে, ব্যাংক ব্যালেন্স করবে? অতএব দেশেপ্রেমের নামে তাদের কানে ক্যারিয়ার সেক্রিফাইসের মন্ত্রটা ঢুকিয়ে দিতে হবে। এতে করে যে ছেলেটার পরমাণু বিজ্ঞানী হওয়ার কথা ছিল সে হচ্ছে টেন্ডারবাজ, যে ছেলেটার ডাক্তার হয়ে দেশের জনগণকে অকালমৃত্যুর হাত থেকে বাঁচাবার কথা ছিল সে নিজেই হচ্ছে অকালমৃত্যুর শিকার। যে ছেলেটার কথা ছিল দেশের যে কোনও দুর্যোগ মুহূর্তে নেতৃত্বশীল ভূমিকা রাখা সে নিজেই হচ্ছে অস্ত্রবাজ কারও দাস। এমন দেশপ্রেম আমি শিকার করি না। দেশ প্রেম শব্দটিকে ব্যাপক অর্থে দেখতে হবে। আমি নিজেকে গড়ে তুলতে পারলে আমার পরিবারটি গড়ে উঠবে, আমি সঠিক পথে চললে আমার পরের জেনারেশন সঠিক পথে চলবে, আমার মাধ্যমে আমার পরিবার এভাবে প্রতেত্যকটি পরিবারের মাধ্যমে সমাজ এবং দেশ স্বচ্ছল হবে, স্বয়ংসম্পূর্ণ হবে। আজ আমি কেন চাকরির জন্য পথে পথে ঘুরছি? এদেশের সজনগণ বা সরকার কি আমার পেছনে কাড়ি কাড়ি টাকা ঢালেনি। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন শুনেছি প্রতিটি ছাত্রের জন্য মাথাপিছু সরকারের ব্যায় আছে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা। সরকার জনগণের এ টাকা কেন খরচ করে আমাকে শিক্ষিত করেছে? রোদে পুড়ে পথে পথে ঘুরবার জন্য? কেন নেই কর্মসংস্থান? অনেক বয়স্ক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষককে বলতে শুনি স্বাধীনতার মধ্য দিয়ে দেশকে অন্তত ২০০বছর পিছিয়ে দেয়া হয়েছে। সময়ের আগে কোনও কিছুই ফলবান হয় না , জোর করে হওয়ালে তার সুফল পাওয়া যায় না। অল্প বয়সে মা যেমন হলে ক্ষতি তেমনি কাঁচা আম-কাঁঠালকে-কলাকে কৃত্রিম উপায়ে পাকালে তার স্বাদ এবং পুষ্টি ধংস হয়, কিছু পুজিপতি, শিল্পপতি এবং স্বার্থান্বেষী মহল দেশটাকেযুগের পর শোষণ করার জন্য স্বাধীনতার দিকে ঠেলে দিয়েছিল। আজ দেশ বেকারত্বের অভিশাপে ধুঁকে মরছে, বেকার যুবকেরা আত্মসম্মান হারিয়ে আত্মহত্যা করছে। অথচ শিল্পপতিরা পৃথিবীর সবচেয়ে কমমূল্যে তাদের কাজে লাগাচ্ছে। এটা তাদেরই চক্রান্ত। তারা চেয়েছে দেশে অরাজক পরিস্থিতি দেশে অভাব দেশে দুর্ভিক্ষ লাগিয়ে রাখতে পারলে তাদের কোম্পানিতে মানুষের ভিড় বাড়বে। তা না হলেতো তাদের নিজেদের ঘানী নিজেদেরই টানতে হবে। শিল্পপতিরা অনেককে চাকরি দেয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের সেরা ছাত্রটিকেও তারা চাকর বানায়। তারা সার্ভিস শব্দের অর্থ শেখায় চাকরি বা চাকরগিরি, সার্ভিস অর্থ সেবা সেটা তারা ভুলিয়ে দেয়।কারণ ওসব শিক্ষিত কর্মচারীরা একবার জেগে উঠলে তাদের সর্বনাশ হয়ে যাবে। তাদের এতোদিনের কুক্ষিগত ধনদৌলৎ বেহাত হয়ে যাবে। স্বাধীন দেশের সরকারের পক্ষে সম্ভব হবে না দেশের সবদিকে খেয়াল রাখা, সম্ভব হবে না দেশকে রাতারাতি স্বয়ংসম্পূর্ণ করা সে সুযোগে পৃষ্ঠপোষকতার নামে দেশের মানুষ এবং সরকার উভয়কেই করতলগত করা সম্ভব হবে। এসব বণিক-শিল্পপতিদের মধ্যে দেশীয় বিদেমী উভয় শ্রেণী আছে। ব্যবসায়ীদের দল থাকে না, দেশ থাকে না। সকল দেশের ব্যবসায়ীরা নিজেদের ব্যবসাকেই প্রধান আরাধ্য মনে করে। আর ইংরেজ বেনিয়াদের কাছ থেকেতো সেই সর্বগ্রাসী বাণিজ্যনীতি আমাদের রক্তে মিশে গিয়েছিল । সরকার তার দেশের উন্নয়নের জন্যই আমাকে এতো টাকা খরচ করে আমাকে শিক্ষিত করেছে অথচ আমার সে জ্ঞানকে কাজে লাগাবার পাত্র তার নাই....তাই পরের হিতসাধনে আমরা নিজেদের বিলিয়ে দেয়ার সুযোগ খুঁজি পথে পথে।
অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের মতো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও অপেক্ষাকৃত মেধাবীদের নিয়োগ না দিয়ে দলীয় সম্প্রীতি, আত্মীয়তা ও দুর্নীতির মাধ্যমে অদক্ষ-অনভিজ্ঞদের নিয়োগ দেয়া হয়। এটিও সেই চক্রান্তের ফল। মেধাবী শিক্ষক মানে ছাত্ররা মেধাবী হয়ে উঠবে, তারা জেনে যাবে তাদের নিজেদের শক্তির কথা, তারা সচেতন হয়ে যাবে এতে অনেকেরই গদি বুজরকি ভুলুণ্ঠিত হবে। অতএব জেনেশুনে বেশিজানা লোকদের আনা যাবে না, রাখা যাবে না। এমন দৃশ্য অহরহ চোখে পড়ে থার্ডক্লাস ছেলেগুলোর চাকরি হয় আর বহু ফার্স্টক্লাস ছেলে বেকার ঘুরে ঘুরে মরে। এর অন্য কারণও আছে ফার্স্টক্লাস ছেলেরা হয়ত নিজেদের ওয়েট বোঝে তাই যে সে যায়গায় তারা চাকরি করতেও চায় না। তার তেলবাজ হতে পারে না, তারা নত হতে জানে না। তবে বিনয় নিশ্চই জানে! ‘যে যতো জ্ঞানী সে ততো বিনয়ী’ যে বিনয়ী নয় সে প্রকৃত অর্থে জ্ঞানী নয়।
সংবাদে দেখি অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক সংকট। খুব হাসি পায়, কর্মসংস্থানের চেয়ে বেশি ছেলেমেয়ে আউটপুট দেয় দেশের উচ্চশিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো অথচ শিক্ষক সংকট? কী করে সম্ভব? সম্ভব এ কারণে যার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হবার কথা ছিল সে হয়েছে কোনও হাউজিং কোম্পানীর অ্যাডমিনিস্ট্রেটর অথবা পিআরও খুব ভালো হলে ব্যাংকার। ম্যাচিং করতে আমরা জানি না। সুইটেবল লোক আমাদের কর্মকর্তারা চায় না, তারা চায় অল্প বেতনে, আয়ত্তাধীন রাখা সম্ভব এমন লোক।
স্বাধীনতা যুদ্ধে আমাদের আরো একটা ক্ষতি হয়েছে। সেটি হচ্ছে ছাত্রদের অংশগ্রহণ। কথায় আছে একবার যে নেকড়ে নর মাংসের স্বাদ পেয়েছে সে হিংস্র হবেই, আবার যে পুরুষ নারী মাংসের স্বাদ পেয়ে যায় তাকে সামাল দেওয়া কঠিন একবার যে ছাত্ররা লড়াইতে নেমেছে তাদের আর টেবিলে ফেরানো সহজ নয়। অতএব দেশ গঠনে আইমিন ক্যরিয়ার গঠনে যাদের ভূমিকা থাকার কথা সবেচয়ে অগ্রগণ্য তারা রক্তজাত স্বাভাবগত আন্দোলনপ্রতিভার কারণে পড়ার টেবিলে বসার চেয়ে বিভিন্ন ইস্যুতে মাঠে ময়দানে থাকাটাকেই বেশি কর্তব্য বলে মনে করে। এবং সেটাকেই ভাবে দেশের জন্য লড়াই। তাতে কী হলো? যোগ্য দক্ষ মানব সম্পদ থেকে দেশ বঞ্চিত হলো। আজ যখন বিশ্ব রাজপথের লড়াই বা অস্ত্রের লড়াই নয় জ্ঞানের যুদ্ধে লিপ্ত আমরা সেখানে গোঁয়ার এবং জঙ্গী। এ সবই চক্রান্তের ফসল আমরা যাকে নিয়তি বলে ক্ষমা করে দেই।
আমার এসব নীতির সাথে বেশিরভাগ লোকই ভিন্নমত পোষণ করে, বিশেষত স্বাধীনতাকে তারা বিতর্কিত করতে চায় না। এটা তাদের আবেগ। দেশ-পরিবার-আত্মজ এরা অবিচ্ছেদ্য নিজেকে ভালোবাসার প্রমাণ যেমন দিতে হয় না তেমনি দেশপ্রেমের প্রমাণ দেয়ার এসব সংস্কৃতিও যুক্তিহীন।....
আজ রোববার।
গতকাল সিভিটা জমা দিয়েছি, অনেক কষ্ট হয়েছে। চাকরির ইচ্ছে আর নেই তবে বাবা মার চাপটা বুকে বাধে তাই বারবার বাস্তবতার সংঘাতে নিজেকে খাপখাইয়ে নিতে চেষ্টা করি। একটা চাকরি হলে বাবা মা খুশি হবেন এটাই সান্ত্বনা। আমি স্বপ্ন দেখি বিশ্ববিদ্যালয়েল শিক্ষক হবো। দেশের বাইরে গিয়ে গবেষণা করবো, দেখবো ওদের শিক্ষাপদ্ধতি কেমন, আমাদের দেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে আরো কী করে যুগোপযোগী করা যায় সেসব। শুনেছি বাইরের দেশে কোনও পেশা আছে কি নেই সেটা দেখা হয় না শিক্ষা ও গবেষণার মাধ্যমে প্রফেসর অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর হওয়া যায় এবং সে সম্মানও পাওয়া যায়। সে দেশেতো আর কেউ কাজের জন্য ঘুরে বেড়ায় না, কাজই নাকি তাদের খুজেঁ বের করে।....
কিন্তু সে স্বপ্নটা বুকে লালন করে কর্মহীন ঘরে বসে থাকলেতো আরও অপচয় তাই কোনও একটা কিছুতে ঢুকতে পারলেই যেন বেঁচে যাই।
অনেক্ষণ ধরে ফোনের মিউজিকটা বাজছে। গানের শব্দে টের পাইনি। দেখলাম টিএন্ডটি নাম্বার। ব্যাক করার সুযোগ নাই। মোবাইল হলেও কথা ছিল। একটু পর ফোনটা আবার বাজলো।
হ্যালো!
হ্যালো অমুক বলছেন?
হ্যা, বলছি
স্যার আমি নুসরাত
একবাক্যেই চিনে ফেললাম। তবে সম্বোধনটা অপরিচিত।
অটবি থেকে..স্যার আপনাকে যে কাল একটু আসতে হবে!
কেন? মেয়েটা যেন মজা করছে, হয়ত আমার আগ্রহটা বাড়াতে চাইছে। ওতো একসাথেই বলতে পারতো।
স্যার আপনার অ্যাপয়েন্টমেন্ট লেটারটা হয়ে গেছে সেটা নিতে আসবেন নাকি আমরা কুরিয়ারে পাঠাবো।
আমি একটু চুপ করে থাকলাম। হয়ত কোনও আনন্দ সংবাদ হঠাৎ করেই মানুষকে বিমূঢ় করে ফেলে।
হ্যাঁ আমি নিতে আসবো। কখন আসতে হবে?
আজতো আসতে পারবেন না কাল আসবেন?
আজ কেন পারব না সেটা জানতে পারি?
পারবেন আসতে? আচ্ছা আপনার বাসা কোথায়? মানে কোথায় থাকেন?
বনশ্রী! ও...সেখান থেকে আসতে আসতে আমাদের অফিস টাইম বোধয় পার হয়ে যাবে।
তাহলে কালই আসি...
আচ্ছা আমার বাসাও বনশ্রী ই ব্লকে, কিছু মনে না করলে আমি নিয়ে আসি?
আমি স্বাগত জানালাম।
ভাবতেই যেন কেমন লাগছে। চাকরি হতে না হতেই স্যার বলা শুরু। ওদের অবস্থানটাকি এমনই? কদিন আগে ভাইয়া বলেছে তাতে কী এমন ক্ষতি হয়েছে? স্যার বলতেই হবে কেন? জানি না হয়ত বেনিয়াদের শেখানো কোনও ফর্মালিটি। যা লঙ্ঘন করা পাপ! ইংরেজদের তাড়িয়েছি বহু আগে কিন্তু কিন্তু ওদের কিছু দুষ্ট সংস্কৃতি চেপে বসে আছে আমাদের ঘাড়ে। আমাদের বেনিয়াদের ঘাড়ে। প্রতিটি ব্যবসায়ীর রক্তেই যেন ইংরেজ বেনিয়াদের আদর্শ! তবে ওদের ভালো গুণগুলো আমরা আয়ত্ত করতে পারিনি। চলচ্চিত্র দেখে যেমন নায়কের অন্যায়ের প্রতিবাদে অন্যায় করতে দেখে অন্যায় করতে শিখি কিন্তু নায়কের ন্যায়বোধ শিখি না তেমনি ওদের দাসবানানো নীতিটা ভালো লাগলেও গ্রহণ করতে পারিনি উদারতা, দূরদৃষ্টি এবং শিক্ষানুরাগ।
বিকেলে দেখা হবে নুসরাতের সঙ্গে। আমি আবার নিজেকে পরিপাটি করতে ব্যস্ত! ও যেন আমার অ্যপয়েন্ট রেঠার বয়ে আনছে না, আসছে আমার সঙ্গে একান্তে সাক্ষাত করতে! ও কি নিজের কোনও কথা বলতে চায়? প্রেম জাতীয় কিছু হলে নিশ্চই এতোদিনে বলতে পারতো! অফিসঘটিত কিছু বলতে চায়? নয়তো এতো আগ্রহ নিয়ে কেন আসছে?...আমি অপেক্ষায় থাকলাম, আর নিজেকে তৈরি করলাম ও যাই বলুক ওকে রিসিভ করার মতো করে।।
হ্যালো ভাইয়া!
হ্যা বলছি
অমুক ভাইয়া?
হুম!
ভাইয়া আমি নুসরাত, অটবি হেড অফিস থেকে বলছি।
জ্বি বলুন!
আপনি বোধয় আমাদের এখানে একটা সিভি জমা দিয়েছেন, আগামী শুক্রবার আপনাদের ইন্টারভিউ কল করা হয়েছে।...ভেন্যুটা লিখে রাখবেন? হ্যা হেড অফিস বোর্ডরুমে।...
এইটুকুই কথা হয়েছে। তবে বৃহস্পতিবার আরেকবার ফোন দিয়েছিল, ইন্টারভিউ দিতে আসছি কি না কনফার্ম করতে... কর্তৃপক্ষ কি আমাকে বিশেষভাবে বিবেচনা করছে? সে জন্যই এরকম ফোন? নাকি এটি মেয়েটির নিজেরই কোনও অতিউৎসাহী আচরণ? তার ব্যক্তিগত ভালোলাগা কি? যেটাই হোক আমি বেশ রোমাঞ্চিত।
শুক্রবার সকাল থেকেই নিজেকে বেশ পরিপাটি করে সাজালাম। যাকে বলে মাঞ্জামারা টাইপের। যেন ইন্টারভিউ ফেস করতে যাচ্ছি না, যাচ্ছি ডেটিং এ। লোকেশনটা খুজেঁপেতে খুব একটা কষ্ট হলো না; বড় সাইনবোর্ড ছিল, মেইন রাস্তার মোড় থেকেই দেখা যায়। রিসিপশনে মেয়েটাকে পেয়ে গেলাম। চিহ্নিত করা সহজ হয়ে গেলো তার ভাইয়া ভাইয়া সম্বোধনের অহেতুক ব্যবহার দেখে। মেয়েটা যতোটা না সুন্দর তার চেয়ে বেশি পরিপাটি। ড্রেসটাও আনকমন ম্যাচিং। তবে এটি ইউনিফর্ম। অন্য মেয়েদেরও একই পোষাক পরিধেয়। ভাইয়া ভিতরে আসুন! আমি চমকে গেলাম! এটাওতো ভাইয়া ডাকছে...ব্যাপার কি? আমার চমকানোর অর্থ খুঁজছে সে ইন্টারভিউ দিতে এসছেন?
হ্যাঁ, বলে আমি তাকে অনুসরণ করলাম। আমাকে আমার সিরিয়াল জানিয়ে দেয়া হলো। ফোর্টি সিক্স।
ইনটারভিউ শেষ করে ফেরার সময় রিসিপশনে জানতে চাইলাম নুসরাত কে? নুসরাত মেয়েটি নিজেই জানাল সেই নুসরাত। আমার অনুমান ঠিক। বললাম রেজাল্ট জানা যাবে কবে?
আমরাই ফোনে জানাবো।
সে তো জানাবেন যাদের সিলেকশন হবে যারা তাদের, আমরাতো ওয়েট করবো।
এপ্রশ্নের উত্তর বোধয় ওদের জানা নেই। ওদেরতো তোতাপাখির মতো কিছু বুলি শেখানো হয়। সেসব খুব সুন্দর করে ডেলিভারি দিতে পারে এরা, অন্য কোনও প্রশ্নের পরিপাটি উত্তর দূরে থাক কিছুই বলতে পারে না। আমি আবার বললাম-
আপনার পারসোনাল নাম্বারটা দেয়া যাবে? অথবা ফলাফল যা-ই হোক আমাকে একটু জানাবেন? আমার অপেক্ষা করতে খুব কষ্ট হয়।
মেয়টার চেহারাটা কেমন সিমপ্যাথেটিক আকার ধারণ করলো। হয়ত ভাবছে একটি চাকরির জন্য কতো পেরেশান এই ছেলে টা! আমি ওকে হালকা করার জন্য বললাম-
রিজিকের মালিক আল্লাহ! চাকরি কোথায় হবে জানি না, তবে আশায় থাকতে থাকতে নিরাশ হলে খুব কষ্ট পেতে হয়। ধরুন দুই তিনদিনের মধ্যেই তারা সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলবে কাকে নেবে, আমি না হয় আপনাকে ফোনকরে জেনে নেবো! অথবা আপনি...
মেয়েটি রাজি হয়...বলে ওকে আমি জানাবো।
থ্যাংক্যু!
উইশ ইউ বেস্টঅফ লাক।
মেয়েটার উইশ শুনে সত্যিই কেন যেন প্রাণটা ভরে গেলো! এটি কি স্রেফ কোনও লৌকিকতার খাতিরে নাকি আন্তরিক!.....
সেই থেকে অপেক্ষায় আছি, একটা ফোন আসবে। উত্তরটা নেতিবাচক হবে হয়ত তবু ভাবতে ভালো লাগছে একটা মেয়ে আমার রিকোয়েস্ট রাখবে। কিন্তু তিনমাসেও যখন সাড়া পেলাম না তখন ভাবতেই হলো এরাও বারবণিতাদের মতোই, সবাইকে খুশি করে কিন্তু কাউকেই মনে রাখা চলে না এদের।
আজ শুক্রবার, তাই বাসায় বসে ফোনটার জন্য তীব্র আকাঙ্ক্ষা নিয়ে অপেক্ষা করছি। দেশথেকে কি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি সব উঠে গেলো? ইদানীং পত্রিকার পাতায় আর নিয়োগবিজ্ঞপ্তি চোখেই পড়ে না। একটা কোম্পানীর বিজ্ঞাপন ম্যানেজার এবং বিজ্ঞাপন এক্সিকিউটিভ পদে লোক নিয়োগ হবে। পদটা ভালো বুঝি না। তবে কোয়ালিফিকেশন আইমিন শিক্ষাগত যোগ্যতা চাহিদামাফিক তাই অ্যাপ্লিকেশন করবো ভাবলাম। পদটা সম্পর্কে ভালোভাবে জানার জন্য এক বড়ভাইকে ফোন দেই। সে বলে এটা অনেক বড় পদ, এক্সপেরিয়েন্সড লোক ছাড়া নেয়ার কথা না। বেতন উল্লেখ আছে?
না, নাই।
এক্সপেরিয়েন্স চাইছে?
না, কিছু উল্লেখ নাই।
তাইলে দেখ ট্রাই করে। তবে কাজটা হলো বিজ্ঞাপন বিভাগটা দেখা। ধর কয়েকজন প্রতিনিধি থাকবে বিজ্ঞাপন সংগ্রহ করার জন্য তাদের ডিল করতে হবে।...পারবি?
বড়ভাইর কথা শুনে হতাশ হলাম। জিজ্ঞেম করলাম বেতন কতো হতে পারে?
কোম্পানী বুঝে, তবে চল্লিশ হাজার থেকে ১লাখ পর্যন্ততো হবেই। তবে ওরা কীরকম লোক চাচ্ছে তা কে জানে!
জানি এখানে অ্যাপ্লিকেশন করে লাভ হবে না। তবু করবো স্থির করলাম কারণ ব্যাংক ড্রাফটতো আর চায়নি।।
বেরিয়ে পড়লাম রাস্তায়। রোদের তেজ অনেক বেড়েছে। সিভিটা কপি করতে হবে। পরিচিত দোকানটায় যাওয়া যাবে না। সেদিন অতোগুলো সিভি কপি করলাম আজ আবার। কী ভাবছে ছেলেটা? এমআর ফটোস্ট্যাট এর ছেলেটার নাম রিপন। আরেকজন আছে সে মুরুব্বি। এই ছেলেটাই বেশি থাকে। এই এলাকায় প্রায় দুইবছর আছি, তাই পরিচিতি হয়ে গেছে। তাছাড়া মাঝেমধ্যে হাতে টাকা না থাকলে বা ভাংতি না থাকলে দুয়েকটাকা বাকীতে সারতে হয়, পরিচয় না থাকলে চলে!
তিনপৃষ্ঠার সিভি। একপৃষ্ঠা ফটোকপি করামাত্র বিদ্যুত নাই। ঘণ্টা দুই অপেক্ষা করতে হবে। রুমে ফিরে এলাম। একই অবস্থা এখানকারও। প্রচণ্ড রোদে হেঁটে এসে গরমে আর ঘামে জীবন অতিষ্ঠ। অথচ সরকার নিজের ঢোল পিটিয়েই চলেছে। সরকারি চাকরি, পিএসসি সবখানে কোটায় বরাদ্দ অধিকাংশ পদ। ঘরে ঘরে চাকরি দেবে, কাদের যে দিচ্ছে বুঝি না।
হাতপাখা নিয়ে বারান্দায় গেলাম। যৌথ বারান্দা। ওপাশে দুইটা মেয়ে এসে বসেছে। অতএব আমাকে ভিতরে ঢুকতে হলো। বিকেলে ছাদে ওঠা নিষেধ। অমুকের মেয়েরা বউরা যায়, বারান্দায় যখন তখন যাওয়া যাবে না, মেয়েরা থাকলে সাবধানে চলতে হয়। এই এক অত্যাচার! গাড়িতে ৬ থেকে ৯সিট মেয়েদের। পুরুষদের সিটগুলোও তাদের দখলে থাকে। যখন আর ফাঁকা না থকে তখন কোটার আসনে যায়। এটাই নাকি নিয়ম। আর যদি কেউ ভুলে সংরক্ষিত আসনে বসে অন্য পুরুষরা যে কী বিহেব করে! ভাবটা এমন আমি বসতে পারিনি তুই শালা বসবি ক্যান? হিংসা! মেয়েরাও এমন চটাঙ চটাঙ ব্যবাহার করে যে সংরক্ষিত আসনে বসার মতো বড় অপরাধ সমাজে আর কিছু হতে পারে না। কিন্তু পত্রিকার পাতায় যখন দেখি ধর্ষণ ইভটিজিং মেয়েদের পাচার করা পতিতাবৃত্তিতে বাধকরা, জোরকরে পর্ণো সিডি করা ইত্যাদি বাড়ছেই তখন ভেতরটা কিছুটা আঘাত পেলেও উল্লসিত হয় প্রতিশোধস্পৃহায়।
ব্যাচেলর থাকার আরো যন্ত্রণা আছে। বাসাতো পাওয়াই যায় না। এখানে আছি ফুপাতো বোনের সঙ্গে। ওরা দুটো রুম নিয়ে থাকে, আমাকে গেস্ট রুমটা দিয়েছে। থাকা খাওয়াসহ মাসে তিনহাজার দেই। অনেকের মতে বিশাল সুখে আছি। এমন সুযোগ রাজধানীতে কেউ কাউকে দেয় না। আমি বন্ধুদের কাছে নিজের সুখটা আরও বাড়িয়ে দেখাবার চেষ্টা করি। যদিও শর্ত আছে গেস্ট অ্যালাউ না। তবু মাঝে মাঝে রান্নাঘরে গিয়ে আপুকে মিন মিন করে বলি কিছু একটা দেয়া যাবে আপু? চা টা? চোখ গরম করে রাজি হলেও বন্ধুর কাছে এসে বলি...আপুতো তোকে চা খেয়ে যেতে বলল...একটু বস!
নারে যাই, অন্যদিন
আরে বস না, চাটা খেয়ে যা
যদি আপু নুডলস বা সেমাই দিয়ে পাঠায় তাহলেতো পোয়া বারো। বন্ধুদের কাছে নিজের সম্মান কতোটা যে বেড়ে যায়। আরও অনেক গল্প ওদের বানিয়ে বানিয়ে বলতে হয়। পাশের ফ্লাটের মেয়েদুটোও আমাকে যথেষ্ট সম্মান করে। বারান্দায় গেলে গায়েপড়ে কথা বলতে আসে। নিজেদের মধ্যে টেপাটেপি করে। কী ঢঙ করে হাসে।...বন্ধুরা এসব শুনে পুলকিত হয়, ঈর্ষাকাতর হয়। ওদেরতো আর বলা যায় না যে যদিবা কোনও সময় মেয়েগুলোর সঙ্গে দেখা হয়ে যায় আমি ভয়ে ফুটা বেলুন হয়ে যাই, না জানি কী কম্প্লেইন করে বসে। বাড়িঅলাকে অনেক বলে-কয়ে আমার ব্যাপারে রাজী করানো হয়েছে। এমন কিছু কারও কানে গেলে রক্ষা নাই। তাই কানে দেয়ার ইস্যু যেন ওরা খুজেঁ ফেরে। ছেলেটা কেমন করে তাকায়, হাবভাব ভালো না, সারাদিন বারান্দায় বসে থাকে...কতো কী যে আছে বলার। আর ছেলেদের সম্পর্কে মেয়েদের কোনও কমপ্লেইন মানে হান্ড্রেডে হান্ড্রেড টেন পারসেন্ট ঠিক। পুরুষ শাসিত সমাজে এ এক একচেটিয়া বিচারবোধ মানুষের।
ঘণ্টা দেড়েক পর বিদ্যুত এলো, টিভিটা অন করলাম। সংবাদ! কী যে এমন সংবাদ এলো দেশে। সব চ্যানেলই এতো গুরুত্বের সঙ্গে সংবাদ দেখায় যেন কী ইম্পর্ট্যান্ট নিউজ! অথচ হাসিনার কীর্তি, ছাত্রলীগের গঠনমূলক সমালোচনা, শিবির পেদানো, ছাত্রদলের মিছিলে প্রতিপক্ষের হামলা (অনেকেই ছাত্রলীগের হামলা বা সন্ত্রাসী হামলা বলতে ভয় পায়) টকশোতো নিয়ন্ত্রণহীন ছাত্রলীগ নিয়ে আলোচনা হয়...বক্তারা বলে এমন ঐতিহ্যবাহী সংগঠনটির এমন দশা হতে দেওয়া যাবে না, যদি শিবির ডুকে থাকে তাদেরও খুজেঁ বের করতে হবে। অথচ মন্ত্রীরা নেত্রীরা প্রতিনিয়তই ব্যাংকলুটের দীক্ষা দিচ্ছেন কর্মীদের। পত্রিকায় সেটা শিরোনাম হয় তবু কেউ প্রশ্ন করে না। সাজেদা সেদিন বলে প্রয়োজনে লুট করে নিতে হবে....বাহ! গণতান্ত্রিক দেশ, স্বাদীন দেশের এই চিত্র! বিদেশী প্রভুরাও খুশি। সন্ত্রাস দমনে সরকার সফল। অনেকটা কৌতুকের মতোই....এক লোক পাঁচতলা থেকে পড়ে গিয়েও বেঁচে আছে। কিন্তু অন্যরা বলছে তুমি বললেতো আর হবে না, ডাক্তারকে জিজ্ঞেস করতে হবে তুমি বেঁচে আছ না মরে গেছ। আমাদের দেশে কখন কী অবস্থা তা শুনতে হবে বিদেশী প্রভূদের কাছ থেকে। তার বলছে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে আপত্তি নেই তাই বিচার হচ্ছে। তবে আমার যেটা মনে হয় শেষমেষ কয়েকজন রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ফাঁসিতে ঝুলিয়েই এই বিচার কাজ শেষ হবে। তারপর জাতির ওপর চাপিয়ে দেয়া হবে ভয়াল এক ঋণের বোঝা। ওদের আইনজীবীরা কোটি কোটি টাকা লুট করবে এ কাজের নামে। বিভিন্ন সংস্থা সংগঠন হাতড়ে নেবে জনগণের টাকা। বন্ধ করে দেয়া হবে অথবা দলীয় ভাড় এবং গোয়ারদের নিয়োগ দেয়া হবে সেসব প্রতিষ্ঠানে যেসব এতোদিন যুদ্ধাপরাধীরা? চালাতো। নি:স্ব হবে কয়েকশ পরিবার। তবু হয়ত কেউ শেষ নি:শ্বাস ফেলবার আগে বলবে.. তবু বিচার পাইছি।....
বাংলাদেশের সংস্কৃতি হলো গরিবরা সুবিচার পায় না, কারণ তারা বিচার চাইতে যায় না। সবাই জানে বিচার চাইতে গেলে যার জন্য বিচার চাইবে তারচে বেশি হারাতে হবে। তাই মামলামকদ্দমায় পারতপক্ষে দরিদ্র-মধ্যবিত্তরা জড়ায় না। যা গেছে গেছে- কেস করে কী লাভ। এমন কথাই শুনি এদেশের বেশিরভাগ পরিবারগুলোর মুখে। তাই পুলিশও নাকি অপরাধীদের ধরতে পারে না। ওদের হয়ত গরিবের টাকা ছাড়া চলতে কষ্ট হয়। তাই নিজেরা কেস করে না। চায় ক্ষতিগ্রস্ত কেউ মামলা করুক তদন্তের নামে কিছু হাতড়ানো যাবে। সেই জনগণ যে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চাইবে আমার তা মনে হয় না। সরকার চাইলে যাচাই করে দেখতে পারে। আজই বলুক যে যারা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চায় তাদের কে আদালতের খরচ চালাতে হবে। আমার মনে হয় এ কথা শোনা মাত্র পড় মরি করে দৌড়াবে জনগণ। বলবে ভিক্ষা চাই না কুত্তা ঠেকাও। খাওন পাই না বিচার!
আমার এক কাজিন আত্মহত্যা করেছে, বখাটেদের উৎপাতে। সোহেল, জাকির নামের চিহ্নিত ছাত্রলীগ ক্যাডারদের প্রেমের প্রস্তাব অস্বীকার করায় তারা অতিষ্ঠ করে তুলেছিল ওর জীবন। বাধ্য হয়ে সে....
সে হয়ত ভেবেছিল তার এই প্রতিবাদে টনক নড়বে তার প্রিয় দেশের মানুষের প্রশাসনের, আইনপ্রণেতাদের। কিন্তু তা হয়নি, তা হয় না কখনও। সরকার কোনওদিন জনগণের হয় না। হয় নিজের পরিবারের আর হয় বিদেশী প্রভূদের। আমার বোনের মতো আরও অনেক মেয়েই সেই পথ বেছে নিয়েছে, সরকারের মুখে বিচারের শব্দটি কেউ শুনতে পায়নি। পাবেও না কারণ এই ছেলেগুলো না থাকলে ভোটকেন্দ্র দখল করবে কারা? কারা মাসে মাসে মাসোহারা দিয়ে চাঙ্গা করবে দলীয় অর্থনীতি? আমার খালা কোনও মামলা করেননি। আমরা; সচেতন ছাত্রসমাজও এর বিরুদ্ধে কোনও মামলা করতে যাইনি। কারণ আমরা জানি বিচার চাইতে গেলে যে টাকা খরচ করতে হয় সে সামর্থ্য আমাদের নেই। দরিদ্র দেশের মানুষ বিচার চায় না। আজ যদি শেখ হাসিনা তার ভাষণে বলেন যে দ্রব্যমূল্য কম চান নাকি যুদ্ধাপরাধীর বিচার চান আমি নিশ্চিত শতকরা নিরানব্বই দশমিক নয়নয় ভাগ মানুষ বলবে যুদ্ধাপরাধীর বিচার নয় দ্রব্যমূল্য কম চাই। গ্যাস চাই পানি চাই বিদ্যুত চাই। তবে এই বলেতো আর যুদ্ধাপরাধী বা অপরাধীকে ছেড়ে দেয়া যায় না!....এসব ইস্যু নিয়ে সরকার ব্যাস্ত, মিডিয়াগুলো ব্যাস্ত....আমাদের কথা বলবার কেউ নেই। বিরক্ত হয়ে টিভি বন্ধ করে দেই। একপক্ষীয় আচরণ কোনও পক্ষেরই ভালো লাগে না। যদি লাগতো তাহলে আজ আর একুশে টিভি এবং জনকণ্ঠ, দিনকাল, সংগ্রাম পত্রিকার এ হাল হতো না।
মিডিয়ার মিথ্যাচার বা মিসগাইড করার এসব প্রচেষ্টা উপভোগ করার চেয়ে লোডশেডিংএ বসে সাধারণ জ্ঞান পড়াই শ্রেয় মনে করি। টেবিলে এ সংক্রান্ত বইয়ের অভাব নাই। পড়তে বসে গেলাম।....
আজ শনিবার! সকাল থেকেই ভাবছি সিভিটা ড্রপ করতে যাবো। পত্রিকা কেটে লোকেশানটা মানিব্যাগে ভরে রেখেছি। কিন্তু রোদের অবস্থা দেখে কিছুতেই সাহস হচ্ছে না বেরুতে। এতো রোদ! উফ! বৈশাখের ১১তম দিন। চৈত্রতো গেছে খরতাপের দুর্নাম ঘুচলো না। ঝড় বা বৃষ্টি কোনওটারই দেখা মিলছে না। একেই বলে পরিবেশ বিপর্যয়! জলবায়ু সম্মেলন নিয়ে অনেক হৈ চৈ হলো কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হলো না। তার ফলভোগ করছি আমরা। জনমনে স্বস্তি বা শান্তি বিরাজ করুক এমনটি চায় না কেউ। শুধু শুধু আমরা জনগণ কেন যে রাজনীতির পেছনে ঘুরে নিজেদের বিপন্ন করি! অবশ্য সাময়িক লাভতো আছেই। আমরা বাঙালি তাই দূরভবিষ্যত চিন্তা আমরা করতে পারি না। যে কারণে লড়াইতে নেমেছি বারবার। যারা জিতে গেছে তার ফলভোগ করেছে আর যারা প্রাণ দিয়েছে?....কোনও প্রাণবিয়োগ ছাড়া বা রক্তপাত ছাড়া কি স্বাধীনতা অর্জন সম্ভব ছিল না? পাকিস্তান পিরিয়ডেরতো অনেক সুনাম শুনি এখনও। খুজেঁ খুজেঁ চাকরি দেয়া হতো। দেলু কাকাকে মাঠ থেকে ডেকে এনে চাকরিতে ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছিল। সরকারি চাকরি। অন্যদের সঙ্গে কাজ করতে করতে কিছুটা শিখে নিয়েছে। একসময় রিটায়ার করে কয়েকলক্ষ টাকা পেনশন নিয়ে এখন স্ত্রী-পরিবার নিয়ে সুখে দিন কাটাচ্ছে। তেমন লেখাপড়া জানত না। মাঠে কাজ করতো। অথচ আজ আমাদের অবস্থা কি? স্বাধীনতার পর দুর্ভিক্ষ শুরু হয়, কেন দুর্ভিক্ষ হলো। এমন নাকি হয়, কিন্তু আমাদেরতো অনেক আগবাড়িয়ে সাহায্য করার বন্ধু বা মিত্ররা ছিল, তারা কি একবেলা না খেয়ে কাটিয়েছে? যারা অস্ত্রসস্ত্র প্রশিক্ষণ ইত্যাদি দিয়ে পাকিদের বিরুদ্ধে অস্ত্রধারণ করালো আমাদের? কোথায় ছিলেন তারা? যারা দুর্ভিক্ষে মারা গেছেন তারা কি মুক্তিযোদ্ধার সম্মান পেয়েছেন? তাদের সন্তানরা কি কোটায় চাকরি পান? পান না তারা শুধু হারিয়েছেন। অতএব যে দেশ আমার জন্য ভাবে না আমি সে দেশের জন্য ভাবতে পারি না।... আফটার অল দেশের জন্য বলতে কিছু নেই। আশরাফ ভাই বাজারে টেলিটক আসার পর আর অন্য অপারেটর ব্যবহার করে না, টেলিটক দেশের ফোন। কিন্তু আদৌ কি টেলিটক দেশের বা সরকারের জন্য তোমন কোনো লাভজনক প্রতিষ্ঠান হতে পেরেছে? বরং আমলারা ঠিকই উদরপুর্তি করতে সক্ষম হয়েছেন। দেশের জন্য জনগণ যাই করুক তার ফল ভোগ করে কতিপয় সরকারি ব্যক্তি , মন্ত্রী এমপি আমলারা। আর দুর্ভোগ কিছু হলে সেটা বহন করে জনগণ। আমি ট্যাক্স বাড়ানোর পক্ষে ছিলাম, কিন্তু যখন শুনি এসব রাজস্ব অর্তমন্ত্রীর নেতৃত্বে কীভাবে লুট করে তখন মনে হয় যারা করফাকিঁ দেয় তারা ঠিকই করে। আর করফাঁকি যারা দেয় তারা সবসময় ক্ষমতাসীনদের আঁচলের আশ্রয়ে থেকেই তা করে। তারা জানে প্রতিটি সরকারই কালোটাকা সাদা করার সুযোগ দেবে। অতএব দেশপ্রেম নামে যা বলা হয় করা হয় তা আসলে স্যাবোটইজ! একটি ফোন কোম্পানী দেশের টাকা দেশে রাখুন, লোগোতে জাতীয় পতাকার রং মাখানো...সেদিন দেখলাম অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসার দায়ে তাদের কার্যক্রম ক্লোজড। লালসবুজটা ছিল তাদের ফাঁদ? দেশের পণ্য ছেড়ে প্রতিনিয়ত যারা বিদেশী পণ্যের প্রতি আকৃষ্ট করে মার্চ মাসে তাদেরই দেখি স্বাধীনতার রঙে প্যাভিলিয়ন সাজিয়ে রাখে। আসলে ওরা বোঝে এদেশের বোকা মানুষ একবার যখন স্বাধীনতার জন্য জীবন দিয়েছে তখন দেশেপ্রেমের ধুয়া তুলে এদের ধোঁকা দেয়া কঠিন কিছু না। আমরা বোকা জনগণ আসলেও বোকা। যে কারণে দেশেপ্রেম কাকে বলে জানি না। আমরা মনে করি মুক্তিযোদ্ধাদের পুজো করাই দেশপ্রেম। যদিও প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধারা নিজেদের স্বার্থ আদায়ের চেয়ে নিজেকে আড়ালে রাখতেই বেশি পছন্দ করে এবং তালিকার অধিকাংশই ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা এমন সংবাদও পত্রিকার পাতায় দেখি। আমরা আম জনতা মনে করি নিজেকে নি:শেষ করে দেশের জন্য কিছু করা, জীবনুৎসর্গ করাই দেশে প্রেম! তাই তারা দেশের মঙ্গলহিত কামনায় নিজেদের ধংস হতে দিতেও দ্বিধা করে না। অথচ দেশ যে মানুষকে নিয়ে সে মানুষটি সে নিজেও, সে যদি দেশকে গড়ার জন্য নিজেকে গড়ে তুলতে পারত, দেশের প্রকৃত মানবসম্পদ হিসেবে গড়ে উঠতে পারত সেটাই কি দেশের জন্য সবেচয়ে বড় উপকার হতে পারত না। সে যদি পারতো বড় গবেষক হতে, বিশ্বখ্যাত বিজ্ঞানী হতে তাহলে কি তথাকথিত বুদ্ধিজীবীদের পরামর্শে দেশেকে অন্যের করুণাপ্রার্থী হতে হতো? বুদ্ধিজীবী নামের বিদেশী মানসপ্রভূদের দাস হতে হতো?
এটা জনগণকে ভাবতে দেয়া যাবে না। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সব ছাত্রই যদি নিজেদের ক্যারিয়ারগঠনের মাধ্যমে দেশকে গড়ার চেষ্টা করে তাহলে ছাত্রদল ছাত্রলীগ ছাত্রশিবিরের মিছল কারা করবে? বড় কর্মী বাহিনী না থাকলে ছাত্রনেতারা কোনও পেশা ছাড়াই কী করে বড় বড় দালানকোঠা নির্মাণ করবে? বড় বড় ব্যবসায়ী হবে, ব্যাংক ব্যালেন্স করবে? অতএব দেশেপ্রেমের নামে তাদের কানে ক্যারিয়ার সেক্রিফাইসের মন্ত্রটা ঢুকিয়ে দিতে হবে। এতে করে যে ছেলেটার পরমাণু বিজ্ঞানী হওয়ার কথা ছিল সে হচ্ছে টেন্ডারবাজ, যে ছেলেটার ডাক্তার হয়ে দেশের জনগণকে অকালমৃত্যুর হাত থেকে বাঁচাবার কথা ছিল সে নিজেই হচ্ছে অকালমৃত্যুর শিকার। যে ছেলেটার কথা ছিল দেশের যে কোনও দুর্যোগ মুহূর্তে নেতৃত্বশীল ভূমিকা রাখা সে নিজেই হচ্ছে অস্ত্রবাজ কারও দাস। এমন দেশপ্রেম আমি শিকার করি না। দেশ প্রেম শব্দটিকে ব্যাপক অর্থে দেখতে হবে। আমি নিজেকে গড়ে তুলতে পারলে আমার পরিবারটি গড়ে উঠবে, আমি সঠিক পথে চললে আমার পরের জেনারেশন সঠিক পথে চলবে, আমার মাধ্যমে আমার পরিবার এভাবে প্রতেত্যকটি পরিবারের মাধ্যমে সমাজ এবং দেশ স্বচ্ছল হবে, স্বয়ংসম্পূর্ণ হবে। আজ আমি কেন চাকরির জন্য পথে পথে ঘুরছি? এদেশের সজনগণ বা সরকার কি আমার পেছনে কাড়ি কাড়ি টাকা ঢালেনি। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন শুনেছি প্রতিটি ছাত্রের জন্য মাথাপিছু সরকারের ব্যায় আছে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা। সরকার জনগণের এ টাকা কেন খরচ করে আমাকে শিক্ষিত করেছে? রোদে পুড়ে পথে পথে ঘুরবার জন্য? কেন নেই কর্মসংস্থান? অনেক বয়স্ক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষককে বলতে শুনি স্বাধীনতার মধ্য দিয়ে দেশকে অন্তত ২০০বছর পিছিয়ে দেয়া হয়েছে। সময়ের আগে কোনও কিছুই ফলবান হয় না , জোর করে হওয়ালে তার সুফল পাওয়া যায় না। অল্প বয়সে মা যেমন হলে ক্ষতি তেমনি কাঁচা আম-কাঁঠালকে-কলাকে কৃত্রিম উপায়ে পাকালে তার স্বাদ এবং পুষ্টি ধংস হয়, কিছু পুজিপতি, শিল্পপতি এবং স্বার্থান্বেষী মহল দেশটাকেযুগের পর শোষণ করার জন্য স্বাধীনতার দিকে ঠেলে দিয়েছিল। আজ দেশ বেকারত্বের অভিশাপে ধুঁকে মরছে, বেকার যুবকেরা আত্মসম্মান হারিয়ে আত্মহত্যা করছে। অথচ শিল্পপতিরা পৃথিবীর সবচেয়ে কমমূল্যে তাদের কাজে লাগাচ্ছে। এটা তাদেরই চক্রান্ত। তারা চেয়েছে দেশে অরাজক পরিস্থিতি দেশে অভাব দেশে দুর্ভিক্ষ লাগিয়ে রাখতে পারলে তাদের কোম্পানিতে মানুষের ভিড় বাড়বে। তা না হলেতো তাদের নিজেদের ঘানী নিজেদেরই টানতে হবে। শিল্পপতিরা অনেককে চাকরি দেয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের সেরা ছাত্রটিকেও তারা চাকর বানায়। তারা সার্ভিস শব্দের অর্থ শেখায় চাকরি বা চাকরগিরি, সার্ভিস অর্থ সেবা সেটা তারা ভুলিয়ে দেয়।কারণ ওসব শিক্ষিত কর্মচারীরা একবার জেগে উঠলে তাদের সর্বনাশ হয়ে যাবে। তাদের এতোদিনের কুক্ষিগত ধনদৌলৎ বেহাত হয়ে যাবে। স্বাধীন দেশের সরকারের পক্ষে সম্ভব হবে না দেশের সবদিকে খেয়াল রাখা, সম্ভব হবে না দেশকে রাতারাতি স্বয়ংসম্পূর্ণ করা সে সুযোগে পৃষ্ঠপোষকতার নামে দেশের মানুষ এবং সরকার উভয়কেই করতলগত করা সম্ভব হবে। এসব বণিক-শিল্পপতিদের মধ্যে দেশীয় বিদেমী উভয় শ্রেণী আছে। ব্যবসায়ীদের দল থাকে না, দেশ থাকে না। সকল দেশের ব্যবসায়ীরা নিজেদের ব্যবসাকেই প্রধান আরাধ্য মনে করে। আর ইংরেজ বেনিয়াদের কাছ থেকেতো সেই সর্বগ্রাসী বাণিজ্যনীতি আমাদের রক্তে মিশে গিয়েছিল । সরকার তার দেশের উন্নয়নের জন্যই আমাকে এতো টাকা খরচ করে আমাকে শিক্ষিত করেছে অথচ আমার সে জ্ঞানকে কাজে লাগাবার পাত্র তার নাই....তাই পরের হিতসাধনে আমরা নিজেদের বিলিয়ে দেয়ার সুযোগ খুঁজি পথে পথে।
অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের মতো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও অপেক্ষাকৃত মেধাবীদের নিয়োগ না দিয়ে দলীয় সম্প্রীতি, আত্মীয়তা ও দুর্নীতির মাধ্যমে অদক্ষ-অনভিজ্ঞদের নিয়োগ দেয়া হয়। এটিও সেই চক্রান্তের ফল। মেধাবী শিক্ষক মানে ছাত্ররা মেধাবী হয়ে উঠবে, তারা জেনে যাবে তাদের নিজেদের শক্তির কথা, তারা সচেতন হয়ে যাবে এতে অনেকেরই গদি বুজরকি ভুলুণ্ঠিত হবে। অতএব জেনেশুনে বেশিজানা লোকদের আনা যাবে না, রাখা যাবে না। এমন দৃশ্য অহরহ চোখে পড়ে থার্ডক্লাস ছেলেগুলোর চাকরি হয় আর বহু ফার্স্টক্লাস ছেলে বেকার ঘুরে ঘুরে মরে। এর অন্য কারণও আছে ফার্স্টক্লাস ছেলেরা হয়ত নিজেদের ওয়েট বোঝে তাই যে সে যায়গায় তারা চাকরি করতেও চায় না। তার তেলবাজ হতে পারে না, তারা নত হতে জানে না। তবে বিনয় নিশ্চই জানে! ‘যে যতো জ্ঞানী সে ততো বিনয়ী’ যে বিনয়ী নয় সে প্রকৃত অর্থে জ্ঞানী নয়।
সংবাদে দেখি অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক সংকট। খুব হাসি পায়, কর্মসংস্থানের চেয়ে বেশি ছেলেমেয়ে আউটপুট দেয় দেশের উচ্চশিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো অথচ শিক্ষক সংকট? কী করে সম্ভব? সম্ভব এ কারণে যার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হবার কথা ছিল সে হয়েছে কোনও হাউজিং কোম্পানীর অ্যাডমিনিস্ট্রেটর অথবা পিআরও খুব ভালো হলে ব্যাংকার। ম্যাচিং করতে আমরা জানি না। সুইটেবল লোক আমাদের কর্মকর্তারা চায় না, তারা চায় অল্প বেতনে, আয়ত্তাধীন রাখা সম্ভব এমন লোক।
স্বাধীনতা যুদ্ধে আমাদের আরো একটা ক্ষতি হয়েছে। সেটি হচ্ছে ছাত্রদের অংশগ্রহণ। কথায় আছে একবার যে নেকড়ে নর মাংসের স্বাদ পেয়েছে সে হিংস্র হবেই, আবার যে পুরুষ নারী মাংসের স্বাদ পেয়ে যায় তাকে সামাল দেওয়া কঠিন একবার যে ছাত্ররা লড়াইতে নেমেছে তাদের আর টেবিলে ফেরানো সহজ নয়। অতএব দেশ গঠনে আইমিন ক্যরিয়ার গঠনে যাদের ভূমিকা থাকার কথা সবেচয়ে অগ্রগণ্য তারা রক্তজাত স্বাভাবগত আন্দোলনপ্রতিভার কারণে পড়ার টেবিলে বসার চেয়ে বিভিন্ন ইস্যুতে মাঠে ময়দানে থাকাটাকেই বেশি কর্তব্য বলে মনে করে। এবং সেটাকেই ভাবে দেশের জন্য লড়াই। তাতে কী হলো? যোগ্য দক্ষ মানব সম্পদ থেকে দেশ বঞ্চিত হলো। আজ যখন বিশ্ব রাজপথের লড়াই বা অস্ত্রের লড়াই নয় জ্ঞানের যুদ্ধে লিপ্ত আমরা সেখানে গোঁয়ার এবং জঙ্গী। এ সবই চক্রান্তের ফসল আমরা যাকে নিয়তি বলে ক্ষমা করে দেই।
আমার এসব নীতির সাথে বেশিরভাগ লোকই ভিন্নমত পোষণ করে, বিশেষত স্বাধীনতাকে তারা বিতর্কিত করতে চায় না। এটা তাদের আবেগ। দেশ-পরিবার-আত্মজ এরা অবিচ্ছেদ্য নিজেকে ভালোবাসার প্রমাণ যেমন দিতে হয় না তেমনি দেশপ্রেমের প্রমাণ দেয়ার এসব সংস্কৃতিও যুক্তিহীন।....
আজ রোববার।
গতকাল সিভিটা জমা দিয়েছি, অনেক কষ্ট হয়েছে। চাকরির ইচ্ছে আর নেই তবে বাবা মার চাপটা বুকে বাধে তাই বারবার বাস্তবতার সংঘাতে নিজেকে খাপখাইয়ে নিতে চেষ্টা করি। একটা চাকরি হলে বাবা মা খুশি হবেন এটাই সান্ত্বনা। আমি স্বপ্ন দেখি বিশ্ববিদ্যালয়েল শিক্ষক হবো। দেশের বাইরে গিয়ে গবেষণা করবো, দেখবো ওদের শিক্ষাপদ্ধতি কেমন, আমাদের দেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে আরো কী করে যুগোপযোগী করা যায় সেসব। শুনেছি বাইরের দেশে কোনও পেশা আছে কি নেই সেটা দেখা হয় না শিক্ষা ও গবেষণার মাধ্যমে প্রফেসর অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর হওয়া যায় এবং সে সম্মানও পাওয়া যায়। সে দেশেতো আর কেউ কাজের জন্য ঘুরে বেড়ায় না, কাজই নাকি তাদের খুজেঁ বের করে।....
কিন্তু সে স্বপ্নটা বুকে লালন করে কর্মহীন ঘরে বসে থাকলেতো আরও অপচয় তাই কোনও একটা কিছুতে ঢুকতে পারলেই যেন বেঁচে যাই।
অনেক্ষণ ধরে ফোনের মিউজিকটা বাজছে। গানের শব্দে টের পাইনি। দেখলাম টিএন্ডটি নাম্বার। ব্যাক করার সুযোগ নাই। মোবাইল হলেও কথা ছিল। একটু পর ফোনটা আবার বাজলো।
হ্যালো!
হ্যালো অমুক বলছেন?
হ্যা, বলছি
স্যার আমি নুসরাত
একবাক্যেই চিনে ফেললাম। তবে সম্বোধনটা অপরিচিত।
অটবি থেকে..স্যার আপনাকে যে কাল একটু আসতে হবে!
কেন? মেয়েটা যেন মজা করছে, হয়ত আমার আগ্রহটা বাড়াতে চাইছে। ওতো একসাথেই বলতে পারতো।
স্যার আপনার অ্যাপয়েন্টমেন্ট লেটারটা হয়ে গেছে সেটা নিতে আসবেন নাকি আমরা কুরিয়ারে পাঠাবো।
আমি একটু চুপ করে থাকলাম। হয়ত কোনও আনন্দ সংবাদ হঠাৎ করেই মানুষকে বিমূঢ় করে ফেলে।
হ্যাঁ আমি নিতে আসবো। কখন আসতে হবে?
আজতো আসতে পারবেন না কাল আসবেন?
আজ কেন পারব না সেটা জানতে পারি?
পারবেন আসতে? আচ্ছা আপনার বাসা কোথায়? মানে কোথায় থাকেন?
বনশ্রী! ও...সেখান থেকে আসতে আসতে আমাদের অফিস টাইম বোধয় পার হয়ে যাবে।
তাহলে কালই আসি...
আচ্ছা আমার বাসাও বনশ্রী ই ব্লকে, কিছু মনে না করলে আমি নিয়ে আসি?
আমি স্বাগত জানালাম।
ভাবতেই যেন কেমন লাগছে। চাকরি হতে না হতেই স্যার বলা শুরু। ওদের অবস্থানটাকি এমনই? কদিন আগে ভাইয়া বলেছে তাতে কী এমন ক্ষতি হয়েছে? স্যার বলতেই হবে কেন? জানি না হয়ত বেনিয়াদের শেখানো কোনও ফর্মালিটি। যা লঙ্ঘন করা পাপ! ইংরেজদের তাড়িয়েছি বহু আগে কিন্তু কিন্তু ওদের কিছু দুষ্ট সংস্কৃতি চেপে বসে আছে আমাদের ঘাড়ে। আমাদের বেনিয়াদের ঘাড়ে। প্রতিটি ব্যবসায়ীর রক্তেই যেন ইংরেজ বেনিয়াদের আদর্শ! তবে ওদের ভালো গুণগুলো আমরা আয়ত্ত করতে পারিনি। চলচ্চিত্র দেখে যেমন নায়কের অন্যায়ের প্রতিবাদে অন্যায় করতে দেখে অন্যায় করতে শিখি কিন্তু নায়কের ন্যায়বোধ শিখি না তেমনি ওদের দাসবানানো নীতিটা ভালো লাগলেও গ্রহণ করতে পারিনি উদারতা, দূরদৃষ্টি এবং শিক্ষানুরাগ।
বিকেলে দেখা হবে নুসরাতের সঙ্গে। আমি আবার নিজেকে পরিপাটি করতে ব্যস্ত! ও যেন আমার অ্যপয়েন্ট রেঠার বয়ে আনছে না, আসছে আমার সঙ্গে একান্তে সাক্ষাত করতে! ও কি নিজের কোনও কথা বলতে চায়? প্রেম জাতীয় কিছু হলে নিশ্চই এতোদিনে বলতে পারতো! অফিসঘটিত কিছু বলতে চায়? নয়তো এতো আগ্রহ নিয়ে কেন আসছে?...আমি অপেক্ষায় থাকলাম, আর নিজেকে তৈরি করলাম ও যাই বলুক ওকে রিসিভ করার মতো করে।।
কোন মন্তব্য নেই
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন