সিকদার মসজিদ

মানুষ তার নিজের জন্য ধর্মকে বেছে নিয়েছে নিজের নিয়ন্ত্রক হিসেবে। আদৌ কি তাই? ধর্ম দ্বারা কি মানুষ নিয়ন্ত্রিত? কতটুকু? তবে ধর্মের ঊর্ধে কেউ যেতে পারে না। মানুষ যাই করে কোনো না কোনো ভাবে তা ধর্মের অনুশাসন দ্বারা বিধৃত। ভালো মানুষ বা ধার্মিক মানুষ...যদিও এ কথা বলার শক্তি আমার নাই যে ধার্মিক হলেই সে ভালো মানুষ! বা ভালো মানুষ হলেই তাকে ধার্মিক বলা যায়, তবু আমরা সাধারণভাবে চোখে যা দেখি আপাতদৃষ্টে যা ভাবি তাই হলো ভালো এবং ধার্মিক এক অবিচ্ছেদ্য। ব্যক্তি বা পরিবেশভেদে ভিন্নতো অবশ্যই আছে। আমার বাবা আমার কাছে সবচেয়ে ভালো তাই বলে কি তিনি সবচেয়ে ধার্মিক? হ্যা বা না কোনোটাই আমি জানি না। আমি বুঝিও না। তবে ধার্মিক মানুষদের নিষ্ঠুরতা এবং অধার্মিক মানুষের কিছু মানবিক দিক আমাকে খুব প্রভাবিত করে, তেমনি এক গল্প সিকদার মসজিদ! যারা খুব ধর্মভীরু তারা দয়াকরে আমার গল্প পড়বেন না, তারা আমাকে ভুল বুঝবেন, কষ্ট পাবেন...এবং যারা ধর্মকর্ম মোটেও করেন না তারাও দয়াকরে এ গল্প পড়বেন না...তারা হয়ত ধর্মকে অবজ্ঞা করতেই বিশেষ উৎসাহ পাবেন। আমি আসলে চাই না কেউ আমার এ লেখায় বিশেষ প্রভাবিত হোক এবং তার পরবর্তী জীবনে এর কোনো ছায়াপাত ঘটুক।....গল্পের উদ্দেশ্য কখনই উপদেশবাণী প্রচার নয়, এইটুকু যারা বোঝেন শুধু তারাই পড়বেন। প্লিজ! অবশ্য অনেক নীতিবাদিরা বলেন গল্প প্রত্যক্ষ উপদেশ নয় তবে পরোক্ষ উপদেশ অবশ্যই। আমার কাছে এ কথাটাকে একেবারেই অবান্তর মনে হয়। মনে হয় এ কারণে যে পরোক্ষ উপদেশ কিছুতেই উপদেশ নয়....এটি হচ্ছে একধরণের পরিবেশ পরিস্থিতিকে সামনে তুলে ধরা এবং পাঠক যেভাবে মিন করবেন সেভাবে নিজের জন্য উপদেশ গ্রহণ করবেন বা সতর্কতা গ্রহণ করবেন। এতে গল্পকারীর উদ্দেশ্য সফল হওয়ার পাশাপাশি ব্যর্থ হওয়ার সম্ভাবনাও অনেক বেশি। আমি বললাম এক আপনি মিন করলেন আরেক....! হতে পারে না? হয়। মহাকবি ইকবালকে যারা কাফের বলেছিলেন তারাই আবার তাকে ইসলামী চিন্তাবিদ , দার্শনিক বলে মাথায় করে নেচেছেন। আবার কবি কাজী নজরুল ইসলামের ক্ষেত্রেও দেখা গেছে একই চিত্র। কাজী আব্দুল ওদুদ বা মুক্তবুদ্ধির লেখকরা প্রায় একই রকম পরিস্থিতির শিকার! অতএব পরোক্ষ উপদেশ উপদেশ নয়।

সিকদার মসজিদ আসলে যা তা আমার বিষয় নয়। আমার খালার বাসায় যেতে এই মসজিদের নামটি উচ্চারণ করতে হতো। মসজিদের পাশ দিয়ে একটা সরু রাস্তা গেছে কলোনীর রাস্তার মতো তার শেষ মাথার বাসাটা ছিল খালাম্মার। আমি কট্টর নামাজী বা কট্টর বেনামাজীও নই। নামাজ কখনও পড়ি কখনও পড়ি না। কিন্তু এই সিকদার মসজিদে কখনো নামাজ পড়া হয়নি আমার। এর কোনো বিশেষ কারণ নেই। নামাজ পড়তে চাইলে খালাম্মার বাসায় গিয়ে পড়েছি, বা আমাদের বাড়ির পাশেও মসজিদ আছে সেখানে পড়েছি। রিক্সায় বাসা পর্যন্ত যেতাম, পথে নামা হতো না তাই চেনা হলো না সিকদার মসজিদের ভেতরটা।
কিন্তু যেদিন প্রথম দেখলাম সেদিন আমার ভিন্ন রকম একটা অভিজ্ঞতা হলো। অবশ্য এমনিতেই সিকদার মসজিদ নামটার প্রতি আমার বিরূপ প্রতিক্রিয়া ছিল, কারণ মসজিদের পাশেই সিকদার বাড়ির ছেলেরা তখন খুনখারাবিতে উচ্ছৃংখলতায় বেশ নাম করেছে। তাদের বাড়ির কারও নামে মসজিদের নামকরণ করা একদমই ঠিক হয়নি। হতে পারে তাদের দানকৃত জমির উপর এ মসজিদ নির্মিত হয়েছে বলে সেই লোকের নামে নামকরণ করা হয়েছে।....
প্রথম যেদিন মসজিদে যাই সেটি একটি বিশেষ কারণে, আমার খালার বড় মেয়েটা মারা গেছে, তার কবরের যায়গার জন্য।...যায়গা বেছে ঠিকঠাক সেসময় কে একজন এসে বলে মেয়েটা নাকি আত্মহত্যা করেছে...তাকেতো মসজিদের আঙিনায় কবর দেয়া ঠিক হবে না। সঙ্গে সঙ্গে দেখলাম অনেকগুলো কণ্ঠ সোচ্চার! ঠিক ঠিক আত্মহত্যা হচ্ছে মহাপাপ, মহাপাপীকে মসজিদের কাছে কবর দিয়ে যায়গা নষ্টকরা ঠিক হবে না। আমার খুব হাসি পেলো, আল্লাহ মানুষ সৃষ্টি করেছেন এ কথা কে বিশ্বাস করে আর করে না তা আমি জানি না তবে আমি মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি এ পৃথিবীর যা কিছু সৃষ্টি তার একজন স্রষ্টা আছেন এবং তিনি আল্লাহ। যে মাটি বা যে যায়গার কথা বলা হচ্ছে সেসব কিছুই মহান আল্লাহর সৃষ্টি! অথচ তার বণ্টন নিয়ে আমরা একেকজন মালিক বনে গেছি!...দুটি পক্ষ দাঁড়িয়ে গেলো, একপক্ষ বলছে এখানেই কবর হবে , অপর পক্ষ বলছে কিছুতেই এখানে কবর দিতে দেয়া যাবে না। শেষ পর্যন্ত ব্যাপারটা রাজনীতির দিকে গড়ালো। দেখা গেলো যারা এখানে কবর দিতে চায় তারা বিএনপির সমর্থক এবং যারা দিতে চায় না তারা আওয়ামী লীগ। সিকদার বাড়ির লোকজন ছিল ঘোরতর আওয়ামী লীগ সাপোর্ট। কিন্তু সে বাড়ির ইয়াং ছেলেগুলো কবর দেয়ার পক্ষেই, এর একজন নয়ন; আমার কলেজ বন্ধু, ওর পড়ার রুমে শেখমুজিবের বিশাল ছবি টাঙানো দেখে বলেছিলাম কীরে তুই কি নেতা টেতা হয়ে গেলি নাকি....নারে সামনে নির্বাচনতো...ও সত্যি সত্যি ওয়ার্ড কমিশনার নির্বাচন করেছিল সেবার। ও দেখলাম পক্ষে। তবে কিছু বলছে না, কারণ ওর মুরুব্বিরা গলাবাজি করে বিরোধিতা করছে। আমাকে পাশে ডেকে বলে চাচারা হুদাই বাড়াবাড়ি করে, নামাজ পড়ে না এক ওয়াক্ত! অথচ এখন কী দরদ!
খালুর পক্ষে যারা দাঁড়িয়েছেন তারা বলছেন এটি আত্মহত্যা নয়, আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিল কিন্তু তারপর ১৯দিন বেঁচে ছিল, এবং বেশ সুস্থও হয়েছিল, কিন্তু হঠাৎ কী করে আবার মারা গেলো...
একটু পর পত্রিকার হকার এলো। অনেকলোকের ভিড় দেখে সে তার সাইকেল দাঁড় করায়, আমরা তখন যতোটা না শোকের মধ্যে তারচেয়ে বেশি শংকার মধ্যে, মনির কে বললাম আমাদের বাড়ির পত্রিকাটা এখানে দিয়ে যা। পত্রিকার প্রথম পাতায় দেখলাম ছোট্ট একটা নিউজ। রহস্যজনক মৃত্যু! এবং সেটা আমার এই খালাতো বোনেরই মৃত্যুর কথা লেখা। ওর নাম ওর স্বামীর নাম, খালুর নাম ঘটনা সব ঠিক আছে। ঢাকাতে মারা গেছে তাও আবার সিএমএইচে। সংবাদ হওয়ারই কথা। পত্রিকা উল্লেখ করেছে ঘাড়বাঁকা অবস্থায় পাওয়া গেছে।....
এতে জটিলতা আরও বাড়ল। আত্মহত্যা নাকি হত্যা? কে করলো এই হত্যাকাণ্ড? সিএমএইচের মতো নিরাপদ যায়গায় কে করলো এই হত্যাকাণ্ড? কেউ কি ওর ঘাড়টা মটকে দিয়েছে? খালার কাছে শুনলাম তারা ছিলেন সব সময়। তিনি নামাজের জন্য একটু বাইরে এসছেন, কোরানশরীফ পড়ে তারপর গেছেন, গিয়েই তার কেমন যেন লাগছিল, ফাঁকা ফাঁকা....সেসব তার মাতৃস্নেহের কল্পনা রহস্য উদ্ঘাটনের মতো কিছু নয়। তবে কবরের সমাধান নিয়ে আর কোনও বাড়াবাড়ি হলো না। আমার খুব রাগ লাগছিল কিন্তু কিছু বলতে পারছিলাম না। তবু একজনের সঙ্গে মুখফুটে বলে ফেললাম ওর কবরটা কি আমাদের বাড়িতে দেয়া যায় না?....আমি জানতাম না আমার প্রস্তাবটা সবাই এভাবে মেনে নেবে। খালাদের সঙ্গে আমাদের একটা ভুলবোঝাবুঝি চলছিল, যাওয়া আসা বন্ধ ছিল, তারা প্রস্তাবটা মেনে নেবেন এটা ভাবতে পারছিলাম না। খালুর পক্ষের লোকরা যেন শক্তি পেয়ে গেলেন অপর পক্ষকে দুচারকথা শুনিয়ে চলে এলেন কবরের যায়গা ফিক্সড করা হলো। কবর দেয়া হলো। এখন আর দু’বোনের মধ্যে কেউ ফাঁটল ধরাতে পারবে না। মেয়ের কবর দেখার উসিলায় খালাকে এ বাড়িতে আসতেই হবে।

কিন্তু সেদিন আমি খুব অবাক হয়েছিলাম ইমাম সাহেবের আচরণে! তিনি কিছুতেই কবর দিতে দেবেন না। আত্মহত্যা করা মেয়েকে, এটা নাকি জায়েজ নাই। মেয়েটা আত্মহত্যা করলো কি না এটা বোঝার কি কোনও পথ আছে? আমরা যদিও দেখছি কেউ ট্রেনে মাথা দিচ্ছে এর উল্টোটাওতো হতে পারে, দেখি নদীতে ঝাপ দেয়- হতেওতো পারে সেই মুহূর্তে সে ব্রেইন আউট ছিল? ও যখন ফাঁসীর রশি গলায় দেয় তখন এমনোতো হতে পারে ও আসলে চেয়েছিল সবাইকে ভয় দেখিয়ে সিমপ্যাথী নেয়া, সেটাওকি আত্মহত্যা হবে? মানুষকে বাঁচাতে আরেকজন মানুষ যদি আগুনে ঝাপিয়ে পড়ে তাকে উদ্ধারের জন্য কিন্তু সে মারা পরে সেটাওকি আত্মহত্যা?...অথবা বিষ খেয়ে কিছুদিন হাসপাতালে ভোগার পর সুস্থ হয়ে অন্য কোনো ওষুধের প্রভাবে মারা গেলো...সেটা? এছাড়াও অনেক সময় মানুষ জাদুটোনায় পড়ে অনেক রকম আচরণ করে যা তার সুস্থ বিবেকের আচরণ নয় ...কোনটা সুস্থ মস্তিষ্কের আর কোনটা প্রভাবিত সেটা যখন নির্ণয় করা সম্ভ নয় তখন কেন ১৯দিন হাসপাতালে ভোগার পর মারা যাওয়া মেয়েটিকে আমরা নিশ্চিত আত্মহত্যা বলবো?
আমার এক ফুপাতোবোন বলে আমার নাকি কান্নাকাটি করা ঠিক হয়নি, আত্মহত্যাকরা মানুষের জন্য দোয়া করা কান্নাকাটি করা জায়েজ নাই।
আমি বললাম এমন বিধান আমি পাইনি তবে হতে পারে যাতে আত্মহত্যাকে মানুষ ঘৃণা করে, কিন্তু তার চেয়ে বড় কথা হলো এটা যে আত্মহত্যা সেটা কী করে নিশ্চিত হবো? আমি ওকে যতটুকু দেখেছি তাতে অনেক সময় তোদের চেয়ে বেশি ধার্মিক মনে হয়েছে।
আমার ফুপাতো বোনটার গায়ে লাগে, সে বলে তাতো বলবেনই আপনার সঙ্গেতো তার প্রেম ছিল!
প্রেমতো ছিলই কার সাথে না ছিল, আমিতো যাকে দেখি তাকেই ভালোবেসে ফেলি...
কেন ওর সঙ্গে আপনার প্রেম ছিল না অস্বীকার করতে পারবেন?
না , সেটা ভাবলেই বরং ভালো লাগে..
আপনি কতটুকু বাসতেন জানি না তবে ওতো আপনাকে ভালোবাসতো,
হ্যা বাসতো,
আমি আর কথা বাড়াই না, একটা স্মৃতি মনে পড়ে যায়।
একবার আপুর অসুস্থতার কথা শুনে আম্মু সাথে সাথে আপুর বাসায় রওনা হয়। ঠিক সেসময় ও আসে, আম্মু বলে ভালোই হলো তুই একটু থাক, আমি একটু ঘুরে আসি সন্ধ্যার আগেই ফিরে আসবো। রান্নাবান্না কিছু করা নাই, তুই একটু দেখিস।
ভালোবাসার মানুষকে এভাবে একাকী কাছে পাওয়া কী যে আনন্দের তা বোধয় কাউকে বলে বুঝানো যাবে না।....দিনটা আমাদের গেলো খুব মজা করে। গোসলের সময় ও আমার সঙ্গে অনেক দুষ্টুমি করে। আমি বলি তুই যা আমি তোর শাড়ী বেরকরে নিয়ে আসছি.. ও বলে মাথা খারাপ! শাড়ীর বদলে নিজেই শাড়ী হয়ে যাবেন কি না তার ঠিক আছে।
সত্যিই শাড়ী পড়ায় ওকে এত্তো ভালো লাগছিল!
আমি বললাম তোকে একটা কিস খেতে দিবি? এমন ভাবে বললাম ওর ফেরাবার উপায় ছিল না। তবু বলে একটু আগে কেন বললে না? আমি এখন নামাজ পড়বো। নামাজের পর।
নামাজের আগে হলে কী হবে?
অজু ভেঙে যাবে....
এখন খুব প্রশ্ন জাগে ও নামাজ না পড়াটাকে পাপ মনে করতো। কিন্তু পরপুরুষকে চুমু খেতে পাপ মনে হতো না? ও অবশ্য বলতো ও আমার বউ। একদিন বিয়েও পড়ায়। ওর স্কুলের হুজুরস্যার নাকি বলেছে দুজনার সম্মতি আর দুজন সাক্ষী থাকলেই বিয়ে হয়ে যায়। তবে রেজিস্ট্রেশন, বহু মানুষকে জানানো এটা রেওয়াজ , না মানলে ক্ষতি নাই তবে সমস্যা আছে। আর মহরনা নির্ধারণ করার আগে মিলিত হওয়া যাবে না।...এটা শোনার পর ও আমাকে বিয়ে করে। কাজের মেয়েটাকে স্বাক্ষী রাখে, আর ওর সব বান্ধবীরাই জানতো। ও তাদের বলে বেড়াতো আমি একবছরের মধ্যে মা হবো দেখিস! বান্ধবীরা আমাকে জিজ্ঞেস করতো
বাবা হচ্ছেন নাকি শুনলাম!
বাবা না মামা সেটা পরে দেখা যাবে। এই সম্পর্কটা অনেকটা ঢিলে হয়ে যায় আমি ভার্সিটিতে চলে যাবার পর আর ও আরেকটু বড় হবার পর।
একসময় হয়ত মানুষের সব মোহই কেটে যায়।... স্বামী স্ত্রী খেলাকরা মেয়েটার একদিন সত্যিকারের বিয়ে হয় অন্য এক ছেলের সাথে। আমি তখন জীবন সাজাতে ব্যস্ত! কোনওভাবেই যেন লেখাপড়ায় এতটুকু ব্যাঘাত না ঘটে বাবা মার কী সতর্ক দৃষ্টি! তাদের এতো প্রিয় এই মেয়েটিকেও তারা শত্রু ভাবতে শুরু করেন। কারণ মেয়েটি আপুকে দুলাভাইকে সরাসরি বলেছে আমাকে ছাড়া সে বাঁচবে না। আমাকে সে বিয়ে করবেই।...এজন্য ওর কাছ থেকে আমাকে দূরে সরিয়ে রাখার সব ব্যবস্থা তারা করতো। আমার মা আমাকে কিরা-কসম দিয়ে রাখে আমি যেন ওদের বাড়িতে কখনও না যাই। অথচ একদিন মেয়েটাকে ছোট ভেবে তারাই সুযোগ করে দিয়েছিল। অন্তত বাধাতো দেয়নি। এক রিক্সায় মা আমি আর ও চড়েছি। ও আমার কোলের মধ্যে চাদরের আড়ালে আমি ওর হাত ধরে রেখেছি...মা এসব কেন বুঝতেন না?

ভার্সিটি থেকে বাড়ি এসে শুনি ওর এই অবস্থার কথা। তখনও জানি না আসল ঘটনা। শুধু জানি অসুস্থ্, হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এর পরদিনই মৃত্যুর খবর। খুবই হতবাক হয়ে যাই আমি। ওর প্রতি ভালোবাসাটা সেদিনই টের পাই .... বিয়ে করার ভালোবাসা আমি বাসিনি। পেলে খুশি হতাম। না পাওয়ায় আফসোস হয়নি। আমিতো চাইলেই ওর স্বামী যা পেয়েছে তা পেতে পারতম! তাতো পেতে চাইনি। আবার সাধূ পুরুষ ছিলাম না যে ছুতেঁও পারব না। সবমিলে কেমন একটা ভালোবাসা যেন আজও আগলে রাখে ওকে সবকিছু থেকে। ....

সেই সিকদার মসজিদ এলাকা দিয়ে আসার সময় মনে পড়ে গেলো! নয়নের সঙ্গে রাস্তায় দেখা,
কীরে, তবলিগে যোগ দিলি নাকি মাথায় টুপি ?
আরে না, ইমাম সাহেবের ছেলের জানাজা পড়তে গিয়েছিলাম।
কীভাবে মারা গেলো?
জানি না, কেউ বলে সুইসাইড কেউ বলে জ্বিনে ধরা, রাতে হঠাৎ বাবা মার সাথে বকাঝকা, হাতাহাতি মারামারি পর্যন্ত! সকালে দেখা গেলো ফ্যানের সাথে ঝুলছে...
বয়স কতো?
এইতো মাদ্রাসার আলিমে পড়তো।...
এই বয়সের পোলাপান একটু ইমোশনাল হয়।...
কিন্তু ভিন্ন চিন্তাও হচ্ছে। সেদিন টিভিতে দেখলাম ছেলের ডিমান্ড পূরণ করতে করতে বিরক্ত হয়ে বাপ শেষ পর্যন্ত ভাড়াটে খুনী দিয়ে নিজের ছেলেকে খুন করায়।...

ইমাম সাহেব খালাতবোনের কবর দিতে দেননি মসজিদের পাশে। কিন্তু তার ছেলের এখন কী হবে? এদিকে খালাতভাইটা ; ও এখন সৌদিতে আছে। লেখাপড়ায় ভালো ছিল না। এলাকার ছেলেদের সঙ্গে মিশে মাস্তানী ফাস্তানী করে বেড়াত ....
সেই ছেলে বোনের কবরের পাশে যায়গা কিনে একটি মসজিদ কাম হেফজখানা বানাচ্ছে। কাজ শেষ হলে ও আসবে দেখতে।....
মসজিদের নাম বা হেফজ খানার নাম কী হবে?
জান্নাতবাগ মসজিদ ও হেফজ খানা? তাতে কী ওর আত্মা বিশেষ কোনও শান্তি পাবে?
আমি জানি না। তবে এইটুকু জানি এই সংবাদ জানার পর থেকে কী যে ভীষণ আনন্দ হচ্ছে আমার! এই আনন্দতো ওর ভাইটারও হচ্ছে...বাকীদেরও...ক্ষতি কী কিছু মানুষকে কষ্ট না দিলে। আল্লাহ কি নিষ্ঠুরতার শিক্ষা দেন?
আত্মহত্যার দায়ে মসজিদের পাশে কবর দেয়া পাপ হলেও কবরের পাশে মসজিদ করা পাপ এমন কথা কেউ বলছে না।....

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.