ঢাকার একটি দৈনিক পত্রিকা ও তার প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য ইসরাইল প্রেম

ঢাকার একটি দৈনিক পত্রিকা ও তার প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য ইসরাইল প্রেম
ড. হোসেন খিলজী
জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে বাংলাদেশের শত ভাগ মানুষ যে মানবতা, গণতন্ত্র, সভ্যতার জানি দুশমণ
ইসরাইলের মানবতা বিরোধী কর্মকান্ডের ঘোর বিরোধী তা মনে হয় বলার অপেক্ষা রাখেনা। এখানকার মানুষ বিশ্বের অন্য সব শান্তিকামী মানুষের মতোই ফিলিস্তিনের মজলুম মুক্তিকামী জনতার পক্ষে। এদেশের মানুষ ইসরাইলকে স্বীকার করে না। জনগণের সেন্টিমেন্টের কথা মাথায় রেখেই জাতির জনক বংগবন্ধু শেখ মুজিব থেকে শুরূ করে হাল আমলের শেখ হাসিনা সরকারসহ যত ধরনের সামরিক, অসামরিক, বা গনতান্ত্রিক সরকার এসেছে তারা কেউই মানবতার ঐ দুষমন রাষ্ট্রের সাথে সম্পর্ক তো দূরে থাক, কোন ধরনের আলাপ-আলোচনারও ঘোর বিরোধী ছিল বরাবরই। এমনকি মইন-ফখরদ্দিনের রিমোর্ট কন্ট্রোলের সরকারও সাহস করেনি। ইসরাইলের মানবতা বিরোধী কর্মকান্ডের মাত্রা এতই গভীর যে এদেশে ইসরাইলের দু-চারজন এজেন্ট, চেলা-চামুন্ডার অস্তিত্ব থাকলেও তারা কোন দিনও ইসরাইলের পক্ষে কোন ধরনের লেখালেখি, বক্তব্য-বিব্রতি দেওয়ার সাহস দেখায়নি। তারা ভাল করেই জানে বাংলাদেশের মানুষ এটাকে সহজভাবে নেবে না। মইন-ফখরদ্দিনের অদ্ভুদ সরকারের আমলে ব্যারিষ্টার তানিয়া আমির একুশে টিভির কিছু টকশোতে ইসরাইলের পক্ষে ওকালতি করলেও পরে জনরোষের ভয়ে চুপসে যান।

অনেকের ধারনা, সন্ত্রাসী রাষ্ট্র ইসরাইল ও তার এদেশীয় চেলারা মিডিয়ায় অলড়েডী ভাল অবস্থান স্রষ্টি করতে সক্ষম হয়েছে। অনেক সাংবাদিক, মিডিয়া ও সাংস্ক্রতিক কর্মী এখন তাদের নিয়মিত মাসোহারা ভোগী। এরই মধ্যে ঢাকার একটি দৈনিকের ইসরাইল প্রেমের প্রকাশ্য প্রমান দিতে তর আর সইছেই না। কৌশলগত কারনে এতদিন একটু রাখডাক করলেও অনুকুল পরিবেশ পেয়ে এখন আর তাও করছে না। পত্রিকাটি চিনতে ও তার ইসরাইল প্রেমের নমুনা পেতে হলে পাঠকদের নিম্নলিখিত তথ্য গুলোর দিকে নজর দেওয়ার অনুরোধ রইল----

ক.

পত্রিকাটির যাত্রা শুরু ২০০৪ সালে ঢাকার বাংলামটর থেকে। প্রথম দিকে আট পাতার পত্রিকাটি মুলত ২-৩ টাকায় বিক্রি হতো বিধায় পাঠকের কাছে ২ টাকার পত্রিকা হিসেবে পরিচিতি পায়। ১/১১ (ওয়ান-ইলেভেন) আগে ও পরে গোয়েন্দা সুত্র (ডিজিএফআই) থেকে কিছু আগাম খবর পরিবেশন করে, ডিজিএফআই এর পত্রিকা হিসেবেও বেশ খ্যাতি পায়। কম দাম, আগাম আর গসিপ (gossip) ধরনের খবরের কারনে দৈনিকটি পাঠক প্রিয়তাও পায়। আমেরিকার ৯/১১ (নাইন-ইলেভেন) এর আদলে মঈন-ফুখরুদ্দিনের অদ্ভুত সরকারকে ১/১১ (ওয়ান-ইলেভেন) সরকার বলে যে কথা চালু হয় তা মুলত ওই পত্রিকার সম্পাদকের চয়ন (coin) করা। মঈন-ফুখরুদ্দিনের সরকারের পুরো যমানায় গসিপ ধর্মী খবর পরিবেশনের জন্য পত্রিকাটির কাঠতিও ভাল থাকে।

খ.

ইসরাইল প্রেমিক পত্রিকা সম্পাদকের আগের পরিচয় অধুনালুপ্ত দৈনিক আজকের কাগজের সম্পাদক হিসেবে। ১৯৯০ বিচারপতি সাহাবুদ্দিনের আহমদের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে তার নেত্রীত্বেই দৈনিক আজকের কাগজের যাত্রা শুরু হয়। নিজের বর্ননা মতে, তিনি কুমিল্লার বিখ্যাত রাজাকার নুরুল ইসলাম খানের সুসন্তান। দৈনিক আজকের কাগজে রমেন বিশ্বাস সংকলিত ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত ঘাতকের দিনলিপিতেই নিজ পিতাকে পরিচয় করিয়ে দেন রাজাকার হিসেবে।
দৈনিক আজকের কাগজের সহযোগী মিডিয়া সাপ্তাহিক কাগজের (বর্তমানে বিলুপ্তু) সম্পাদক থাকা অবস্থায় তসলিমা নাসরিনকে নিয়মিত কলাম লেখার সুযোগ করে দেন নিজের সম্পাদিত সাপ্তাহিক পত্রিকায়। সাপ্তাহিক কাগজের মাধ্যমেই মুলত তসলিমা কলাম লেখক হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। নিয়মিত লিখতেন নির্বাচিত কলাম, রমনীয় নয় সহ নানা নামের কলাম। পরে কবি রুদ্ধ মুহাম্মদ শহিদুল্লাহর (তসলিমার প্রথম স্বামী) সাথে ছাড়াছাড়ি হলে সাপ্তাহিক কাগজের সুযোগ্য সেই ভার্জিন সম্পাদক তালাক প্রাপ্তা তসলিমার দুই নম্বরী স্বামী হিসেবে পরিগনিত হন। পরে অবশ্য তসলিমার সাথে সেই বিয়েও টিকেনি।

গ.

ঢাকার এই দুই টাকার দৈনিকের বিশেষ সংবাদদাতা হিসেবে আছেন সালাউদ্দিন শোয়েব চৌধুরী ও ড. রিচার্ড বেনকিন। সাংবাদিকতা ও সংবাদপত্রের সাথে যাদের নুন্যতম যোগাযোগ আছে তারা জানেন, কোন পত্রিকার বিশেষ সংবাদদাতা হচ্ছেন ঐ পত্রিকার অন্যতম গুরুত্বপুর্ণ একজন। আর তিনি পত্রিকার মুল পলিসির সাথে থাকেন নিবিড়ভাবে জড়িত। পত্রিকার নীতি আদর্শের সাথে সঙ্গগতিপূর্ণ মনমগজের এমন কোন সিনিয়র সাংবাদিককেই সাধারনত বিশেষ সংবাদদাতা হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।

সালাউদ্দিন শোয়েব চৌধুরী ২০০৩ সালে ২৯ নভেম্বর ইসরাইল যাওয়ার পথে জিয়া বিমান বন্দরে আটক হন। বাংলাদেশের পাসপোর্ট নিয়ে কোন নাগরিক ইসরাইল ভ্রমণ করতে পারেন না। সেই সময় ইসরাইলী গোয়েন্দা সংস্থার পক্ষে গোয়েন্দাগিরির অভিযোগে রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলায় তাকে গ্রেফতার করা হয় । ১ লা ডিসেম্বর ২০০৩ ডেইলী স্টার লিখেছে, বিমানবন্দরে তাকে গ্রেফতার করার সময় তার কাছে একটি প্রজেক্ট প্রোফাইল পাওয়া যায়, যাতে তিনি ইসরাইলের কাছে তিনটি দৈনিক পত্রিকা যথা দৈনিক সোনালী দিন, দৈনিক রূপান্তর, দৈনিক পরিবর্তন প্রকাশের জন্য ১২ কোটি টাকা সাহায্যের আবেদন করেছিলেন। তিনি তার আবেদনে ইসরাইলী বন্ধুদের মুসলিম প্রধান দেশে মিডিয়া গড়ে তোলার জন্য আহবান জানিয়ে বলেন, কোটি কোটি ডলার খরচ করে যুদ্ধবিমান ক্রয়ের চেয়ে মিডিয়া সৃষ্টি করুন, এতে ইসরাইল বেশি লাভবান হবে। (সুত্র, ডেইলী স্টার, ০১/১২/২০০৩)। শোয়েব চৌধুরী তার বিরুদ্ধে আনিত সব অভিযোগ অস্বীকার করেন। পাঠক, ইন্টারনেটে http://www.reborn-by-design.com এই ওয়েবসাইটটিতে চোখ বুলিয়ে নিতে পারেন। আপনি কি ইসরাইলের বন্ধু?(I am a proud friend of Israel, Are you?) শিরোনামের এই সাইটটির ৩য় পেজের ২৭১ নম্বরটিতে দেখবেন শোয়েব চৌধূরীর নাম।

?গভীর অন্ধকারে ঢাকা (darkness in dhaka)? শীর্ষক ওয়াল স্ট্রীট জার্নালের ১৫ অক্টোবর ২০০৬ এর কলামে বলা হয় মি. চৌধুরীকে গ্রেফতার করা হয় মূলত ইসরাইলের পক্ষাবলম্বন এবং পাসপোর্টে অনুমতি না থাকার পরেও ইসরাইল ভ্রমনের চেষ্টা করার জন্য।পত্রিকাটি মি. চৌধুরীর উদ্বৃতি দিয়ে লিখে,"When I began my newspaper [the Weekly Blitz] in 2003 I decided to make an end to the well-orchestrated propaganda campaign against Jews and Christians and especially against Israel. In Bangladesh and especially during Friday prayers, the clerics propagate jihad and encourage the killing of Jews and Christians (আমি যখন প্রথম সাপ্তাহিক ব্লিতস (weekly blitz) প্রকাশ করি তখন সিদ্ধান্ত নেই ইয়াহুদী খৃষ্টানদের বিরুদ্ধে বিশেষত ইসরাইলের বিরুদ্ধে বাংলাদেশে যে সংঘবদ্ধ প্রচারনা চলছে তার অবসান ঘটাতে। বাংলাদেশে শুক্রবারের খুতবায় মোল্লারা মূলত জিহাদের বানী প্রচার করে এবং ইয়াহুদী খৃষ্টানদের হত্যা করতে উদ্বুদ্ধ করে)?। শোয়েব ইসরাইল ভিত্তিক সংগঠন ইফলাক (IFLAC, international forum for literature and culture for peace) এর সদস্য এবং ইসরাইল-ইসলাম বন্ধুত্বের একজন উপদেষ্টা ।

সালাউদ্দীন শোয়েব চৌধুরী জেলমুক্তির জন্য জোর লবিং চালাতে এগিয়ে আসেন স্বঘোষিত ইয়াহুদী মানবাধিকার (?) কর্মী ড. রিচার্ড বেনকিন। তিনিও দৈনিক আমাদের সময়ের বিশেষ আন্তর্জাতিক সংবাদদাতা । মাঝে মাঝেই পত্রিকাটিতে বিশেষ সংবাদ পরিবেশন করে থাকেন। তিনি ইসরাইল ইন্সাইডার (Israel Insider) নামক প্রভাবশালী ইসরাইলী দৈনিকের অনিয়মিত কলাম লেখক। তার পরিচালনায় www.interfaithstrength.com নামে চরম বাংলাদেশ বিরোধী একটি ওয়েবসাইট চালু আছে। উক্ত ওয়েবসাইটটির বিষয়বস্তু বিশ্লেষন করলে কথিত ইয়াহুদী মানবাধিকার কর্মীর (?) ও তার এদেশিয় সাগরেদের আসল উদ্দেশ্য সম্পর্কে আর সন্দেহের অবকাশ থাকেনা । এখানে বাংলাদেশকে মূলত একটি মৌলবাদি রাষ্ট্র এবং ইসলামী উগ্রপন্থী ও জঙ্গিবাদীদের অভয়ারন্য হিসেবে দেখানো হয়েছে। উপস্থাপন করা হয়েছে বহু মিথ্যা, আধা সত্য ও বিকৃত তথ্য। টার্গেট একটাই, বাংলাদেশকে বিশ্ববাসীর সামনে সন্ত্রাসী, মৌলবাদী, তালেবানী রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত করানো। ওয়েবসাইটটির কয়েকটি সংবাদ শিরোনাম এরকম ?ইসলামী সন্ত্রাসীদের নতুন আখড়া?, ?বাংলাদেশ কি ইসলামী সন্ত্রাসীদের হাতে চলে যাচ্ছে?, ?ইসলামী উগ্রবাদীদের কবলে বাংলাদেশ?, ?বাংলাদেশ কি আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসীদের অভয়ারন্য?, ?ইরান বাংলাদেশে সন্ত্রাসীদের মদদ দিচ্ছে?, ?বাংলাদেশ কি মৌলবাদি রাষ্ট্র হছে?? ইত্যাদি ।

ঘ.

এতদিন আকার ইঙ্গিতে ইসরাইলের বিভিন্ন নিঊজ হাইলাইটস করেতো পত্রিকা্টি। ইসরাইলের ছোট-বড় কোন খবর অন্যান্য পত্রিকার আন্তর্জাতিক পাতায় স্থান হলেও কাকতালীয়ভাবে আমাদের সময়ে স্থান পেতো প্রথম বা শেষ পাতায়। ২০০৬ সালাউদ্দিন শোয়েব চৌধুরী আমাদের সময় লিখেছেন? বাংলাদেশ ইসরাইলকে স্বীকৃতি দিলে অনেক লাভবান হবে। বিশেষ করে ক্রষি ক্ষেত্রে। ইসরাইলের সাথে সম্পর্ক হলে চল্লিশ হাজারেরোও বেশী বাংলাদেশী উচ্চশিক্ষিত তরুন চাকরী পাবে?। ২০০৭ শেষ দিকে ভয়াবহ সিড়র আঘাত হানার পর আমাদের সময় প্রথম পাতায় বক্স করে নিউজ চাপে ? ইসরাইল বাংলাদেশের সিডরের ক্ষতিগ্রস্থদের জন্য ত্রাণ সামগ্রি পাঠাতে চায়?। উল্লেক্ষ্য অন্য কোন মিডিয়া এই গুরুত্বপুর্ণ (!) খবরটি পায়নি ও চাপেনি। পেলো শুধু আমাদের সময়। যদিও পরে পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় পরিস্কারভাবে জানিয়ে দেয়, আমাদের সময়ের খবরটি ডাহা মিথ্যা।

ঞ.

আগে আকার ইঙ্গিতে ইসরাইল-বান্দব পত্রিকাটি ইসরাইলের পক্ষে জনমত গঠনের জন্য কাজ করলেও এখন প্রকাশ্য ঊঠে পড়ে লেগেছে। ২৯ মার্চ, ২০১০ আমাদের সময় বাংলাদেশকে প্রথম স্বীকৃতি দেয় ইসরায়েল, ঢাকার সঙ্গে সংলাপ চায় তেলআবিব, শীরোনামে প্রোব নিউজ ম্যাগাজিনের প্রধান সম্পাদক ইরতিজা নাসিম আলী (নেপাল থেকে ফিরে) পরিবেশিত রিপোর্টে লিখেছে? ইসরায়েলই বাংলাদেশকে প্রথম স্বীকৃতি দিয়েছিল। নেপালে নিযুক্ত ইসরায়েলের রাষ্ট্রদূত ড্যান স্ট্যাভ ও ইসরাইলের এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের মহাপরিচালক রুথ ক্যানফ বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে আমরা সংলাপ চাই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. নাজমুল আহসান কলিমউলস্নাহ বলেন, ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্কে স্বাভাবিক করার সূচনা হতে পারে এ সরকারের আমলেই। রাষ্ট্রদূত স্ট্যাভ বলেন, ?সেকারণে ইসরায়েল মনে করে- উভয় দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠায় কোনো বাধা নেই। কিন্তু একথাও সত্য যে, ইসরায়েল ও বাংলাদেশের মধ্যে কোনো বিরোধপূর্ণ ইসু নেই। বরং উভয় দেশ পরস্পরকে স্বীকৃতি প্রদানের মাধ্যমে উপকৃত হতে পারে? (সুত্রঃ আমাদের সময়, ২৯ মার্চ, ২০১০)। ড. কলিমউলস্নাহ জানিপপ নামের একটি ইলেকশান মনিটরিং গ্রুপের চেয়ারম্যান। ্তার বিরুদ্ধে ইসরাইলের হয়ে কাজ করার অভিযোগ বেশ পুরনো। তিনি ইসরাইলি গুপ্তচর সংস্থার আমন্ত্রণে একাধিকবার তেলআবিব সফর করেন বলেও অভিযোগ রয়েছে (সুত্রঃ নয়া দিগন্ত, ৭ এপ্রিল, ২০১০)।

৩ এপ্রিল আমাদের সময় ইসরাইলের পক্ষে জনমত গঠনের ধারাবাহিকতায় প্রথম পাতায় ১০ বছরের আরেকটি পুরোনো নিউজ ছাপে। ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনে সচেষ্ট ছিলেন আবদুর রহমান ওয়াহিদ শিরোনামে প্রতিবেদনে লেখা হয়, ?ইন্দোনেশিয়ার সঙ্গে ইসরায়েলের সম্পর্ক স্থাপনে বিশেষভাবে সচেষ্ট ছিলেন ইন্দোনেশিয়ার প্রয়াত প্রেসিডেন্ট আবদুর রহমান ওয়াহিদ। এছাড়াও ইসরায়েলের সঙ্গে মুসলিম বিশ্বের সম্পকোন্নয়নে নানাভাবে চেষ্টা করেছেন তিনি। এরই অংশ হিসেবে আবদুর রহমান ওয়াহিদ কয়েক দফা ইসরায়েল সফরে যান। ১৯৯৪ সালে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী আইজ্যাক রবিনের আমন্ত্রণে ইসরায়েল সফর করেন। এ সফরের পর দেশে তার জনপ্রিয়তা আরো বেড়ে যায়। ১৯৯৮ সালে প্রেসিডেন্ট সুহাতেꦣ2494;র পদত্যাগের পর আবদুর রহমান ওয়াহিদ ১৯৯৯-২০০১ সাল পযꦣ2472;্ত?2439;ন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট ছিলেন। ইসলামি দেশগুলোর ইসরায়েলকে স্বীকার করে নেয়া উচিত কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে আবদুর রহমান বলেন, অবশ্যই। কেন নয়?? ইসলামি দেশগুলোর ইসরায়েলের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পক গড়ে তোলা উচিত।?(সুত্রঃ আমাদের সময়, ৩ এপ্রিল, ২০১০)। পাঠক দেখুন, দশ বছরের আগের একটা নিউজ আগা মাথা ছাড়াই (out of context)সম্পুর্ণ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রথম পাতায় ছাপে। একেই বলে গরজ বড়ো বালাই।
ভাবখানা এমন, ইসরাইল সফর ও তার সাথে সম্পর্ক স্থাপনের প্রস্তাবের জন্য আব্দুর রহমান ওয়াহিদের যদি জনপ্রিয়তা বেড়ে যায়, তাহলে হাসিনা সরকারের করলে সমস্যা কোথায়!

চ.

ইসরাইল-প্রেমী পত্রিকা ও তার সম্পাদক এসব ইসরাইল-বান্ধব খবর খামাখা ছাপছেন না। এর পিছনে যে সুদুর প্রসারি পরিকল্পনা আছে তার প্রমান পাওয়া যায় ইসরাইলের প্রভাবশালী পত্রিকা Israel Insider-এ। ঢাকার ঐ দৈনিক পত্রিকার মিশন সম্পর্কে চমকপ্রদ তথ্য দিয়ে গত ০৬ জুন ২০০৬ তারিখে Israel Insider ?বাংলাদেশে অগ্রগতির লক্ষন (Bangladesh: signs of progress)? শিরোনামে লিখেছে, ?Previously, the people of Bangladesh received only anti-Israeli news, and certainly nothing about the tiny openings of interfaith dialogue between Jews and Muslims. That began to change recently with the appearance of such pieces in the pages of Dhaka daily Amader Shomoy. Amader Shomoy is published in Bangladesh's vernacular language of Bangla, and now to a limited extent in English as well (বাংলাদেশের মানুষ এতদিন শুধুমাত্র ইসরাইল বিরোধী সংবাদগূলোই পেত, ইয়াহুদী-মুসলমানদের আন্তধর্মীয় সংলাপের কোন খবরই পেতনা। কিন্তু সম্প্রতি এ পরিস্থিতির পরিবর্তন হতে শুরু করে ঢাকার দৈনিক আমাদের সময়ে এ সম্পর্কিত কিছু সংবাদ প্রকাশের মাধ্যমে)?।

Israel Insider আরও লিখছে, Amader Shomoy editor Nayeemul Islam Khan said that his paper was swamped with phone calls about these and other articles of Benkin's. More surprising, the calls were overwhelmingly positive. Bangladeshis wanted to know more! (আমাদের সময়ের সম্পাদক নাইমুল ইসলাম খান জানান, ড বেনকিনের ইসরাইল সম্পর্কিত লেখাগুলো প্রকাশিত হওয়ার পর, আমাদের সময় পাঠকের কাজ থেকে অনেক অনেক টেলিফোন কল পান। আর্শযজক হলেও সত্য এসব কল আশাতিতভাবে পজিতিভ। বাংলাদেশের মানুষ ইসরাইল সম্পর্কে জানতে চান!)।

সালাউদ্দিন শোয়েব চৌধুরী তার আবেদনে ইসরাইলকে পরামর্শ দিয়ে লিখেছিলেন, কোটি কোটি ডলার খরচ করে যুদ্ধবিমান ক্রয়ের চেয়ে মুসলিম প্রধান দেশে মিডিয়া গড়ে তুলুন, এতে ইসরাইল বেশি লাভবান হবে। মিডিয়াগুলো মুসলিম প্রধান দেশে পাবলিক অপিনিয়ন গড়তে বেশ কাজে দিবে। শোয়েব চৌধুরীর কথা মিথ্যা না। মানবতার দুশমন ইসরাইলের কিছু মাসোহারা পেয়েই যে ঢাকার দুই টাকার পত্রিকাটি ইসরাইলের পক্ষে জনমত গঠন ও তার সাথে কূটনৈতিক সম্পক গড়ার ওকালতির কাজে উঠে পড়ে লেগেছে তা কি আর বলার অপেক্ষা রাখে?

লেখকঃ গবেষক, মানবাধিকার কর্মী, ইমেইল, hossain.khilji@yahoo.com

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.