Boishakh
তখন ছিল বৈশাখ..........
বিশ্ববিদ্যালয়ের শেষ দিনগুলো বোধয় সবার জন্যই খুব বেদনাময় হয়ে ওঠে। বন্ধুদের ত্যাড়া ত্যাড়া ভাবটা আর চোখে পড়ে না। সবাই যেন কেমন নেতিয়ে পড়ে। কেমন একটা বিনয়ী, কেমন একটা বেদনার ছাপ লুকিয়ে থাকে-চলায় বলায় ভঙ্গিতে। হয়ত বিদায় ঘনিয়ে আসে তাই। প্রতিদ্বন্দ্বিতা ভুলে সবাই কেবল অনাগত কালটা কেমন হতে পারে সেই চিন্তা বা দু:শ্চিন্তাটাই সবাইকে তাড়া করে। ভবিষ্যত নির্মাণ! যেন অনেক গহীনে লুকিয়ে থাকা দৃঢ় একটি প্রত্যয়, যাকে খণ্ডানো যায় না। যাকে সুন্দর করে সাজাতেই যতো প্রয়াস। ঠিক তেমনি এক সময়ে আমাদের বিদায় ঘণ্টা বাজে। এমএ ক্লাসের শেষ ঘণ্টা। ড. রেজাউল করিম স্যারের ক্লাস ছিল সেটা। স্যার ক্লাসে ঢুকলেন আমাদেরকে সালাম দিয়ে। শুরুতেই তার মুডটা দেখলাম অন্যরকম। তোমরা আজ অনেক বড় হয়ে গেছো। স্যারদের সামনে এমন বিনীত ভঙ্গিতে আর বসতে হবে না। বরং তোমাদের সামনে থাকবে ছাত্রছাত্রীদের সারি।...কোর অতল থেকে শব্দগুলো বেরিয়ে আসছিল বলতে পারবো না, তবে আমাদের ভেতরকার অতি গভীরে যেন টুপটাপ করে ঝরছিল কিছু একটা; হয়ত বৃষ্টি। সবাই বুঝে ফেললাম ফাসির আদেশের নিদাঘের মতোই অমোঘ এই পরিণতি।...পরীক্ষার প্রস্তুতি আশাকরি সবাই ভালোভাবেই নিয়েছ....আজ আর পড়ালেখা নিয়ে কিছু বলবো না। আজ মন খুলে কথা বলবার দিন। যার যা খুশি তাই বলতে পারবে। বরং আমার অনুরোধ তোমরা অকপটে সবকিছু আজ অকপটে শেয়ার করবে।
তারপর স্যার সুযোগটা আমাদের হাতে ছেড়ে দিলেন-
বলো কে শুরু করবে?
কেউই কিছু বলছে না। সঙ্কোচ, ভয় জড়তা লজ্জা....
স্যার ছেলেদের একজনকে উদ্দেশ করে বললেন বলো সাবিত, তুমি বলো
সাবিত কাচুমাচু করছে কিছু বলতে পারছে না। ক্লাসে বরাবরই দেখেছি সাবিত আগে কিছু বলতে যায় না, তবে আমি যদি কিছু বলি তাহলে সেও দাঁড়াবে কিছু একটা বলবে...প্রশ্ন করবে...বোধয় প্রতিদ্বন্দ্বিতার সুখ।
বন্ধুদের একজন আমার নাম প্রস্তাব করলো। ওরাও জানে সাবিতের স্বভাবটা।
সবাই হেসে ফেললো স্যারও বললেন বেশতো তুমি কিছু একটা বলো...দুখের সুখের আনন্দের বেদনার প্রাপ্তির অপ্রাপ্তির....
আমি উঠে দাঁড়ালাম, বললাম স্যার সুযোগ যখন দিয়েছেন তখন কিছু কথা বলবোই তবে আমার মনে হয় লেডিস ফার্স্ট কথাটা ঠিক, মেয়েরা আগে বলুক...
মেয়েদের মধ্য থেকে কর্কশভাষী ডিবেটার সাথী জোর প্রতিবাদ জানিয়ে বলে না স্যার ওদেরই আগে বলতে হবে....
স্যার বলেন- সাথী আজকের দিনে ডিবেট শুরু করো না...আজকের দিনটা তোমাদের একে অপরকে জানার দিন, বোঝার দিন, ভালোবাসার দিন, শেয়ার করার দিন...এরপর আর তোমরা এভাবে একত্র হতে পারবে না। কর্মজীবনে কে কোথায় চলে যাবে...কারও কারও সাথে হয়ত দেখা হবে...আবার কারও কারও দেখা হয়ত কখনই হবে না।...বলতে বলতে স্যার সেই গুরুগম্ভীর অথচ ঐকান্তিক সেই পরিবেশটা আবার সৃষ্টি করলেন...বললেন তোমরা চাইলে যে কেউ একটা গানও গাইতে পারো।
কিন্তু কারওই সাড়া যখন মিলছে না তখন স্যার নিজেই বলতে শুরু করলেন।
শোনো তোমরা আমাকে কে কী হিসেবে জানো বা কীভাবে দেখো আমি জানি না, তবে একটা কথা আজ তোমাদের বলি আমার মনে হয় আমি তোমাদের কাউকেই আলাদা করে কখনও দেখিনি। কে দেখতে কেমন. কার বাবা কী করে কিংবা কে কোন রাজনীতির সঙ্গে জড়িত....কোনও কিছুই আমি বিবেচনায় আনিনি। হয়ত রাজনৈতিক বিরোধবোধ আমারও আছে তবে ছাত্রছাত্রীদের আমি আলাদা করে কখনো দেখিনি।....
আমার শিক্ষকতা জীবনের একটা ঘটনা তোমাদের বলি, তোমরাতো জানো এর আগে আমি কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে ছিলাম। ঘটনাটা সেখানকার।
সেখানকার মাস্টার্সের এক ছাত্রকে রাজনৈতিক মতবিরোধের কারণে কমিটিতে সিদ্ধান্ত নেয়া হলো যেন কোনোভাবেই ওকে ফার্স্টক্লাস দেয়া না হয়। কারণ ফার্স্টক্লাস পাওয়া মানে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে বা যে কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের টিচার সে হবে....ভিন্ন রাজনৈতিক
কোন মন্তব্য নেই
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন