নারী সমাজ ও বিশ্বশান্তি

নারী সমাজ ও বিশ্বশান্তি
২৫ শে জানুয়ারি, ২০০৯ রাত ১১:৪৭
শেয়ার করুন:
পৃথিবীতে জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেকই নারী। কোন কোন দেশে নারীর সংখ্যা পুরুষের চেয়ে বেশী। সুতরাং প্রতিটি জাতি তথা গোটা বিশ্বের শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষায় নারী সমাজের ভূমিকা পুরুষের চেয়ে কম নয়, বরং কোন কোন ক্ষেত্রে বেশী। ইসলাম নারীর অধিকার আদায়ের ও কর্ম সম্পাদনের জন্য নীতি নির্ধারণ করে দিয়েছে। তা সঠিকভাবে নিরূপণ করা বর্তমান গতিশীল দুনিয়ায় অত্যন্ত জরুরী একটি বিষয়। তাই আমাদেরকে এ বিষয়টি নিয়ে গভীরভাবে চিন্তাভাবনা করতে হবে এবং বিন্দুমাত্র পপাতিত্ব ভুলে দৃঢ়ভাবে এগিয়ে আসতে হবে। আল-কোরআন ও সহী হাদিছের আলোকে সঠিক বক্তব্য পেশ করতে হবে। শুধু নারী নয়, মহান আল্লাহতায়ালা পুরুষের জন্যও সীমানা নির্ধারন করে দিয়েছেন এবং তা উভয়ের জন্য অবশ্য পালনীয়। এ সীমানার প্রতি শিথিলতা প্রদর্শন যেমন অন্যায় তেমনি অতিরিক্ত চাপিয়ে দেয়াও মোটেই উচিত নয়, বরং কোন কোন ক্ষেত্রে তা জুলুমের সমান। আর জালিমের উপর তো আল্লাহতায়ালার লানত বর্ষিত হতে থাকে। তারা কখনো সঠিক পথের সন্ধান পায় না।পশ্চিমা বিশ্বের জনগণ জ্ঞান-বিজ্ঞান সাধনা, বিলাসিতা ও যান্ত্রিক আরাম-আয়েশ ভোগের ক্ষেত্রে যে অনেক উন্নতি অর্জন করেছে- তা অনস্বীকার্য। তবে (পুরুষ ও নারী উভয়েই) পর্দা প্রথার প্রতি লাগামহীন শিথিলতার করণে তারা নিজেদের অজান্তেই ধ্বংসের পথে এগিয়ে চলেছে। এইডস, ধর্ষন, ফ্রি-সেক্স কালচার এর কারণে জারজ সন্তান ও বিবাহ বিচ্ছেদের হার ক্রমেই বেড়ে চলেছে। ফলে মানসিকভাবে তারা অশান্তিতে ভুগছে এবং পারিবারিক ও সামাজিক অস্থিরতা এমন অবস্থায় পৌছেছে যে গোটা জাতি এই সংকটের হাত থেকে রেহাই পবার জন্য একেক সময় একেক পন্থা ও পথ অবলম্বন করছে। কিন্তু ঐশী বিধানকে অবজ্ঞা করার কারণে সার্বিকভাবে তারা এ সংকট সমাধানের বিষয়ে কোন কুল-কিনারা খুঁজে পাচ্ছেনা। তবে খুব কম সংখ্যক হলেও তাদের মধ্যে যারা ধর্মীয় বিধি বিধানের প্রতি শ্রদ্ধাশীল তারা অবজ্ঞাকারীদের তুলনায় মানসিকভাবে অনেক শান্তিতে আছে। মুসলিম অধ্যুষিত দেশগুলোতেও পশ্চিমা হাওয়া লেগেছে। আমাদের দেশ সহ এসব দেশের জনসংখ্যার প্রায় বেশীর ভাগই জন্মসূত্রে মুসলমান। কিন্তু কোরআন ও হাদিছের স্বচ্ছ জ্ঞান অর্জনের প্রতি অনিহা এবং কোন কোন ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত সুযোগ না থাকার করণে এ জনগোষ্টীর একটি অংশ ধীরে ধীরে পাশ্চাত্য কালচারের প্রতি ঝুঁকে পড়ছে। তাই মুসলিম সংখ্যা গরীষ্ঠের দেশগুলোও এ সমস্যাগুলো থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত নয়। সুতরাং এই স্পর্শকাতর বিষয়টিকে অবজ্ঞা করা উচিত নয়। পুরুষ ও নারী উভয়ের জন্যই মহান আল্লাহ্ সীমানা নির্ধারন করে দিয়েছেন। এই সীমানার বাইরে অতিরঞ্জিত বিধি নিষেধ আরোপের কারণে নারীরা যেন নির্যাতনের স্বীকার না হন সে বিষয়ে সজাগ থাকতে হবে। কারণ অপপ্রয়োগের ফলে এ বিধানকে কঠিন ভেবে তা পালনের ক্ষেত্রে নারীদের মধ্যে অনিহার সৃষ্টি হতে পারে। এই সুজগে কুমন্ত্রনাদাতারা ইসলামের নামে কুৎসা রটনা ও নারীদেরকে বিপথে চালানোর প্রয়াস পাবে। পাশ্চাত্যের মত শিথিলতা প্রদর্শন অথবা অতিরিক্ত কঠোরতা আরোপ, কোনটাই আমাদের কাম্য নয় এবং কোনরূপ বিভ্রান্তি সৃষ্টি বা পশ্চাদপদতার হাত থেকে আল্লাহতায়ালা যেন আমাদের রক্ষা করেন।ইসলাম যেমন লাগামহীন স্বেচ্ছাচারীতা পছন্দ করে না, তেমনি পায়ে বেড়ি পরানোরও পক্ষপাতি নয়। বরং নারী ও পুরুষ উভয়েই যেন আল-কোরআন ও হাদিছে বর্ণীত নির্ধারিত সীমার ভেতরে থেকে ঘরে-বাইরে সর্বত্র তাদের প্রতিটি পদপে সুশৃঙ্খলভাবে ফেলতে পারে- ইসলাম প্রকৃত অর্থে সব সময় সে শিাই দেয়। আল-কোরআনের সর্বপ্রথম বাণী বা শব্দ ইকরা, যার অর্থ পড়। মহান স্রষ্টা তাঁর সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টি মানুষকে সর্বপ্রথমে পড়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। কারণ মানুষ যত পড়বে তার জ্ঞান ও মনন তত স্বচ্ছ ও সমৃদ্ধ হবে। কিন্তু দুঃখের বিষয় এই যে, আমরা (পুরুষ ও নারী উভয়েই) জ্ঞান অর্জনের জন্য খুব একটা সময় ব্যয় করতে চাইনা। বিশেষ করে ইসলামের শিক্ষার ব্যপারে তো দাড়ি, টুপি, তসবি ও সাদা পোষাকধারী ব্যক্তিদের উপর আমরা এতটাই নির্ভরশীল যে অনেক সময় তাদের যে কোন বক্তব্যকে কোরআন/হাদিছের উপরে স্থান দিতেও কুন্ঠাবোধ করি না এবং সঠিকভাবে না যেনে প্রায়ই বিতর্কে লিপ্ত হই। এটা মোটেই কাম্য নয়। তবে ইসলামের জন্য নিঃস্বার্থভাবে নিবেদিতপ্রাণ সকল জ্ঞানতাপস আলেম, পীর-দরবেশগণের প্রতি সম্পূর্ণ শ্রদ্ধাশীল থেকে বলতে চাই যে, তাদের সাহচর্য অত্যন্ত জরুরী। প্রথমত নিজেকে (নারী/পুরুষ প্রত্যেককে) পড়তে হবে, জানতে হবে এবং পাশাপাশি তাঁদের সাথে মতবিনিময় করতে হবে। শুধু ইসলাম নয়, সব ধরনের শিক্ষা অর্জনের এটাই উত্তম পন্থা। সেই সাথে কলমের ব্যবহার অর্থাৎ লিখার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।ইসলামে পুরুষ ও নারী উভয়ের জন্য পর্দা করা ফরজ। দৃষ্টি সংযত রাখা ও যৌনাঙ্গের হেফাজত করা প্রত্যেক পুরুষ ও নারীর অবশ্য কর্তব্য। পুরুষের জন্য দেহের কতটুকু অংশ ঢাকতে হবে এবং নারীর জন্য কখন কতটুকু অংশ কিভাবে ঢাকতে হবে তা আমারা আল-কোরআন ও সহী হাদিছের আলোকে অতি সহজেই বুঝে নিতে পারি। মহান স্রষ্টা সৃষ্টিগতভাবেই নারীদেরকে গঠনগত বিশেষ সৌন্দর্য (জিনাত) দান করেছেন এবং তাদের নিজেদের স্বার্থেই তা ঢেকে রাখতে বলেছেন। মানুষরূপী শয়তানদের কুদৃষ্টি ও কুকর্মের হাত থেকে যেন নিরাপদ থাকতে পারে সেজন্য নারীদেরকে রাস্তাঘাটে অযথা বেপর্দা ঘোরাফেরা করতে নিষেধ করা হয়েছে। শিথিলতা প্রদর্শন বা অতিরিক্ত আরোপ না করে এই নির্ধারিত সীমানা মেনে চলাই ইসলামের দাবি। কেউ যদি স্বেচ্ছায় আপাদমস্তক ঢেকে রাখতে চায় এবং সব সময় ঘরে বসে থাকতে চায়- তবে সেটা তার অতিশয় পরহেজগার মনোভাব বা নিজস্ব চিন্তাধারা হতে পারে। আল্লাহতায়ালা পৃথিবীর সব মানুষকে একই রকম মন-মানসিকতা দিয়ে প্রেরণ করেননি। প্রত্যেকের ক্ষেত্রে কিছু না কিছু ভিন্নতা আছেই। আর এই সৃষ্টি বৈচিত্রের কথা স্মরণ রেখেই বিধাতা মহান আল্লাহ্ তার রাসূলের (সাঃ) মাধ্যমে নারী, পুরুষ উভয়ের জন্য সর্বকালেই গ্রহণযোগ্য ও অত্যন্ত বাস্তবসম্মত বিধান নির্ধারন করে দিয়েছেন। যা মানুষের সামনে সঠিকভাবে পেশ করে ইসলামের প্রকৃত সৌন্দর্যকে তুলে ধরাই বাস্তবতার দাবি।সৃষ্টিগত বৈচিত্রের কারণেই সর্বজ্ঞ মহান আল্লাহ্ পুরুষকে নারীর উপর কিছুটা কর্তৃত্ব দান করেছেন। সেইসাথে পুরুষদের উপর দায়িত্বও চাপানো হয়েছে অনেক বেশী। ক্ষেত্র বিশেষে নারীর উপর কিছুটা প্রাধান্যের অযুহাতে পুরুষেরা যদি নারীদের জন্য আল্লাহর নির্ধারিত বিধানের কিছুটা কম বা বেশী করার মাধ্যমে তাদের অধিকার হরনের চেষ্টা করে এবং অযাচিতভাবে অতিরিক্ত কিছু চাপিয়ে দেয় তবে অবশ্যই তারা (পুরুষেরা) জালিম সম্প্রদায়ের অন্তরর্ভূক্ত হবে। এই জুলুমের জন্য একালেও যেমন তাদের বিচার ও সাজা হতে পারে, তেমনি পরকালীন শাস্তি থেকেও রেহাই পাবেনা। তেমনি নারীরাও যদি আল-কোরআন ও হাদিছের সুস্পষ্ট নির্দেশনা দ্বারা নির্ধারিত সীমা অহেতুক অবজ্ঞা করে অর্থাৎ অহঙ্কার বশতঃ মেনে না না চলে এবং বেপর্দা হয়ে চলাফেরা করে, তবে তারাও হবে পথভ্রষ্ট ও ইহকাল ও পরকালে চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত।এ বিষয়ে আমি আর বক্তব্য না বাড়িয়ে বাংলায় অনুবাদকৃত “রাসূলের (সাঃ) যুগে নারী স্বাধীনতা” নামক বইটির প্রতি সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই। বইটির লেখক “আবদুল হালিম আবু শুককাহ্”। প্রকাশ করেছে “ইনাটারন্যাশ্নাল ইন্সটিটিউট অব ইসলামিক থটস্”, ফোন নং- ৯১১৪৭১৬। আমার মনে হয় আল-কোরআন ও সহী হাদিছসমূহের জ্ঞনগর্ভ বিশ্লেষণের উপর ভিত্তি করে রচিত এই ধরনের একটি মূল্যবান পুস্তক পাঠ করলে বর্তমান ও ভবিষ্যতের নারী ও পুরুষেরা বেশ উপকৃত হবে এবং বিভ্রান্তির হাত থেকে অনেকাংশে রা পাবে। বিশেষ করে নারীসমাজ প্রকৃত অর্থে ধর্মভীরু ও সমাজ সচেতন হিসেবে তাদের জীবনকে গড়ে তুলতে পারবে এবং তাদের মূল্যবান দায়িত্ব ও কর্ম বুঝে নিতে ও পালন করতে সক্ষম হবে। এই সচেতনতা অর্জনের মাধ্যমে গোটা মুসলিম জাতি তাদের হারানো গৌরব ফিরে পাবে এবং বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় যথেষ্ট অবদান রাখতে পারবে, ইনশাল্লাহ্।
collected:blog

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.