তবু আমি বেঁচে আছি বুকে নিয়ে ব্যথারই পাহাড়।
Sunday, September 13, 2009, 10:06:28 PM
আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসী।
তবু আমি বেঁচে আছি বুকে নিয়ে ব্যথারই পাহাড়।
পাথরেরই চোখ স্বপ্ন দেখে না কোনওদিন
শুধু চেয়ে রয় বোবা ভাষা কয়
সে চাওয়া দৃষ্টিবিহীন
আজ সোমবার। আমার অফ ডে। সপ্তাহের নিয়মিত ব্যস্ততার বাইরেও এখন বিশেষ ব্যস্ততা যোগ হয়েছে সে হিসেবে এই একটি দিন আমার খুব প্রয়োজনের। কিন্তু সে দিনটাও ভালো কাটে না। ভালো লাগে না। কেন এমন হয়? কেন মানুষের চাওয়া শেষ হয় না?
কিছুদিন আগেও কেবল একটা চাকরি হলেই হয়...এরকম ভাবতাম। চাকরি হলো । এরপর শুরু হলো চাকরিতে অবস্থান তৈরির সংগ্রাম। সে সংগ্রামে মনপ্রাণ ঢেলে দিতে পারিনি। সেই প্রথম থেকেই দুজন মানুষ আমার জীবনটাকে অর্থহীন করে রেখেছে। একজন টুটুল আরেকজন লুৎফর। জীবনের প্রথম কাজটা ছিল লুৎফরের সঙ্গে..তার অ্যাসেসমেন্টটা ছিল প্রতিশোধ-মূলক। আমি তাকে অন্যদের মতো কুর্ণিশ করি না; এর শোধ নিতে সে এমন এক খেলা খেললো আমার সঙ্গে...আমাদের বস ছিলেন মনজু ভাই আর মাহবুব স্যার। এই দুজন মানুষেরই নৈতিকতার ভিত্তি এতো অটল এবং নিরপেক্ষতার দৃষ্টান্ত এতো প্রবল যে লুৎফরকে ধুর্ততা বেছে নিতে হলো। সে আমার পজিটিভ দিকগুলো তুলে ধরে আমার শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে হাইলাইট করে তাদের কাছে আমার হিতকারী বন্ধু সাজলো। ভদ্রলোকেরা নিজেরা যেমন চক্রান্ত করতে অভ্যস্ত নন তেমনি অন্যের চক্রান্ত ও ধরতে পারেন না। সরলমনা সেসব লোকেরা আরও একটি জিনিস খুব পারেন সেটি হলো কাউকে করুণা করতে চাইলে তারা এতোটাই আবেগাপ্লুত হন যে অতিআদরে মানুষ যেমন বিগড়ে যায় তেমনি , প্রশ্রয়ে মাথায় ওঠে, তেমনি অতিকরুণায় আমার প্রতিভাটাও চাপা পড়ে গেল। তারা একটিবারও ভাবলেন না থাকতেওতো পারে এর মাঝেও কোনও পোটেনশিয়ালিটি! তারা আমাকে দয়া করতে পেরেই যেন ধন্য হলেন....
আমাকে ছুড়ে ফেলা হলো এমন কাজে যে কাজে কোনও ফিউচার নেই, পরিচয় নেই, সম্মান নেই....সবচে বড় কথা হলো ক্রিয়েটিভিটি দেখানোর সুযোগ নেই। তবু তারা আমাকে ঠেললেন ...বুঝাতে চাইলেন এরমধ্য দিয়েও তুমি অনেক কিছু করতে পারবা।‘ তাদের কথায় ধৈর্য ধরে লেগে থাকলাম; কিন্তু পাথরে ফুল খুব কম লোকই ফোটাতে পারে। কাগজের ফুল থেকে কেউ যদি ঘ্রাণ আবিষ্কার করতে চায় সেটা কি সম্ভব? আমার কাজটা যেখানে একজন টাইপিস্ট এর সমান সেখানে এর ভিতর দিয়ে আমি আর কীইবা করতে পারি!...এরপরও অতিরিক্ত কিছু কাজ...বা পোটনশিয়ালিটি দেখাতে চেয়েছি কিন্তু সে রোলটাও আবার আমার সঙ্গে যায় না। সেটা আরও বড় পদের রোল। এক্সিকিউটিভ রোল। কিন্তু আমি নিশ্চিত এই রোলটা আমার পক্ষে সম্ভব। সম্ভব না আমার অবস্থানের জন্য। আগে থেকেই যদি আমাকে সে আসনে রাখা হতো তবে আর এমন প্রশ্ন উঠত না। বাড়ির কাজের লোক যতোই বাড়ির কল্যাণ বুঝুক বা চিন্তা করুক তাকে কিন্তু ডিসিশন মেকিং এ রাখা হয় না।...এটাই স্বাভাবিক....আমি নিজের জন্য যে কাজগুলোর তালিকা করলাম সেগুলো আমি করছি অথচ প্রফেশনালি করতে গেলে আমাকে অবশ্যই উর্ধতন পর্যায়ে উঠতে হয়।...আমি জানি আমার প্রতি কার দৃষ্টিভঙ্গি কেমন তাই ওপথে আর পা বাড়াইনি।
কিন্তু অপ্রয়োজনীয়-পরিচয়হীন-অগুরুত্বপূর্ণ রোলে অভিনয় করতে করতে একসময় ঝড় শুরু হলো, ঝড়ে ধুলোবালিই সবার আগে উড়ে যাবে সেটাই স্বাভাবিক। আমি চিন্তিত এবং মনে মনে প্রস্তুতিও নিয়ে ফেলি; যেতে হলে যাবো। এমন প্রস্তুতি এর আগেও কয়েকবার নিতে হয়েছে। টুটুলের চক্রান্ত-তৎপরতায়, হিংসাত্মক আচরণে ঝরে পড়ার পরিস্থিতি এর আগেও হয়েছে। আমি সবচে অবাক হতাম আমাকে বোঝানো হতো আমি খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা কাজ করছি...আইমিন কাজটা গুরুত্বপূর্ণ কিন্তু যে আমি কাজটা করছি তাকে কিন্তু গুরুত্ব দেয়া হতো না। তবু বন্ধুমহলের মতো কর্মক্ষেত্রেও কিছু খবরদারি! (অন্যেরা করলে যেটা নেতৃত্ব হতো) শুরু করলাম। কার অনুষ্ঠান কবে যাবে...ফ্রেশ প্রোগাম নাই কেন...প্যানেল নাই ...ঠিক আছে প্যানেল ম্যানেজ করে দিচ্ছি...এইভাবে; কিন্তু এই ম্যানেজ করার পর্যায়ে আমাকে নাকগলাতে দেখে কারও কারও অসহ্য লাগতে শুরু করলো। একই পর্যায়ের একটি ছেলে কেন (নেতৃত্ব) খবরদারি করবে? তাকে চলতে হবে অন্যের হুকুমে তার হুকুমে কেউ চলবে না। এমনকি একজন পিওনও তার হুকুম শুনতে বাধ্য নয়, পিওনকে দিয়ে যদি কিছু করাতে হয় তাকে তেল মেরে শোনাতে হবে...এমন অবস্থানে থেকে বিরক্ত হতে হতে এবং সবরকম চেষ্টা সত্ত্বেও কাজে ত্রুটি ঘটতো। এটি অনিবার্য ছিল। কারণ শিডিউল আমি যদি করি আমাকে কমান্ডিং পর্যায়ে থাকতে হবে। আমি শিডিউলে দিলাম চিত্রবিচিত্র ফ্রেশ পর্ব যাবে কিন্তু প্রযোজক পারলেন না, আর এই যে পারলেন না এটাও সে আমাকে জানাতে বাধ্য নন বরং আমি তার কাছ থেকে জেনে নেবো...আবার জেনে নেওয়ার পরও যদি না দিতে পারেন সেটার খোঁজও আমাকে রাখতে হবে....অথচ এখানে যদি ঊর্ধতন কেউ হন? তাকে টাইমটু টাইম সব জানাতে হবে...প্রকিউরমেন্ট কোনও তথ্য দিত না। আমি নিতে গেলে বলে অমুকের কাছে যাও...অমুক বলে অমুক যায়গায় দেয়া আছে, চৌদ্দ যায়গায় দিতে পারবো না। অমুক যায়গায় গেলে এটাতো আপনারই ভালো জানার কথা...তারাও জ্ঞান দিত- আপনাকে সমন্বয় করতে হবে...উফ! জ্ঞানবাণীযে কী মধুর অপমানজনক ছিল...ভাবলে কান্না পায়।
প্রতিটি মিটিংএ টুটুল উঠে দাঁড়িয়ে বলতো অমুক বিভাগ সম্পর্কে আমার কিছু কথা আছে (কমপ্লেইন) সে একচিটিয়া বলতো। আমাকে ডিফেন্ড করারা সুযোগ দেয়া হতো না। তবু আমি করতাম..ত্যাড়া, ঘাড় ত্যাড়া আখ্যা নিয়ে। এতে যেটা হতো কেউ আমাকে ত্যাড়া ভাবলেও সহযোগীরা সাহসী এবং নিদোর্ষ ভাবতো। তারা বাইরে এসে হাততালি দিত, থ্যাংকস দিত। এমন অনেক বড় বড় ভুল গেছে যার কারণে আমাকে নোট দেয়া হয়েছে অথচ তদন্ত সাপেক্ষে দেখা গেছে ভুলটা আমার নয়। কিন্তু এই যে চাপের মুখে আমাকে ফেলা হলো...আমার কয়েকদিনের খাওয়া না খাওয়া টেনশন...অপমান এসবের কী হলো? আমিতো কখনও কৈফিয়ত চাইতে পারিনি..অন্যায়ভাবে কেন আমার উপর এ দায় চাপানো হয়েছিল? বরং কৃতার্থ হতাম মনজু ভাইর উপর...উনি ছিলেন বলে আমি নিজেকে নিদোর্ষ প্রমাণ করতে পেরেছি , তিনি না থাকলে প্রমাণের আগেই আমার দাফারফা করে ছাড়তেন টুটুল চেয়ারম্যান!
ছোট ছোট ঝড়গুলো কেটে যেতে যেতে একবার এলো প্রবল ঝড়! আগের ঝড়গুলো যেমন আমার একার গায়ে লাগতো..এবারের ঝড় এলো সবার গায়ে। এমনকি চরম সংকটাপন্ন হলো সেই ক্ষমতাধর টুটুলের অবস্থাও। অর্থনৈতিক কেলেঙ্কারীতে অভিযুক্ত! অবশ্য ভিটে ছেড়ে নিজেকে রক্ষা করলো সে। তার ডিপার্টমেন্ট ক্লোজড হলো। সে হলো মন্ত্রণালয়বিহীন মন্ত্রী। কয়েকদিন সে কী নিরীহ আচরণ সবার সাথে...একসময় তাকেও নির্দোষ প্রমাণ করা হলো দায় অন্যের ঘাড়ে চাপিয়ে; ভিডিও এডিটর হীরাতো আর এখানকার চাকরিজীবি নয়! তার পায়ে পড়লেন টুটুল...নিজেকে সেভ করার জন্য। কিন্তু যেই আবার বেঁচে উঠলেন ফের সে নিজের ট্র্যাকে ফিরে এলো। ঝড়টা মায়ানমার দিয়ে ঘুরে গিয়ে আঘাত হানল ভারতের পরিবর্তে বাংলাদেশের বুকে। পতন ঘটলো সাতটি উইকেটের। এরমধ্যে শক্তিশালী উইকেটের সংখ্যাই বেশি। আমি অবশ্য কারও কারও ব্যাপারে খুশি হয়েছি কারণ তারা আমার সঙ্গে বেশ জঘন্য কিছু ব্যবহার করেছেন। অবশ্য আমার সাথে ঠিক না, আমার পজিশনটার সঙ্গে। পিওনকে যেমন সবাই ট্রিট করে তাতে তার প্রতিক্রিয়া মানায় না আর প্রতিক্রিয়া যদি করে তাহলে যা হবার সেরকম হয়েছে। তবে সেকারণেই যে খুশি হয়েছি এটা মিথ্যা! চাকরি যাওয়া সাতজনের কারও কারও দুর্নীতি আমার নিজের চোখকেও অবাক করে দিয়েছে। কিন্তু দুর্নীতির দায়ে চাকরি তাদের যায়নি। যাওয়া উচিৎও না কারণ এর চে বড় বড় দুর্নীতিবাজরা এখনও বহাল তবিয়তে আছে। যাদেরকে তারেক জিয়ার সঙ্গে তুলনা করা হয়। সেই এসএম রিপনরা আজও ভরে তুলছে সোনার ফসল নিজের গোলায়। দেখার কেউ নাই! এমনকি যেই টুটুল সবার বেলায় নাক গলিয়েছে সেও এখানে নীরব দর্শক! কারণ সে তাকে কখনও প্রতিদ্বন্দ্বী ভাবেনি। আর রিপনও কখনও কাউকে ঘাটেনি, শুধু দুহাতে উপার্জনের ধান্দা আর যতোটা পারা যায় সবার সঙ্গে ভাব বজায় রেখে চলা...নীতি অবলম্বন করেছে। অনুসারীও বানিয়েছে এক নারীকে; সাকিয়া সে তার যোগ্য উত্তরসুরী। কোনও সাড়া শব্দ ছাড়া নিজের কাজ করে যাচ্ছে...পকেট ভরছে...এসব বলার লোক আছে কিন্তু প্রমাণ করার উপায় নাই।...সবাই একমত হয় কিন্তু কেউ প্রটেস্ট করে না, নিজের হাঁড়ির খবর যদি বের হয়ে যায়? সে হিসেবে যাদের চাকরি গেছে তাদের চাকরি কোনওভাবেই যাওয়া উচিৎ হয়নি। অবশ্য তালিকায় আমি এবং তৌহিদ ভাই ছিলাম। মনজু ভাই সে তালিকা থেকে আমাদের রেহাই দিলেন...কেন দিলেন? কিছু মানুষের কিছু অদ্ভুৎ খেয়াল থাকে...হয়ত সে কারণেই। অথবা আমাদের চাকরিতো এর আগেও কয়েকবার গেছে তাই এবারের তালিকায় রেখে সমপর্যায়ে ফেলতে চাননি। পরবর্তী তালিকার কথা ভেবেছিলেন! এবং তেমন আভাস ছড়িয়ে গিয়েছিল সর্বত্র। সবাই বলাবলি করে ৯ উইকেটের লিস্টটি টুটুল করেছিল। এবং সেখান থেকে ২জনের বেঁচে যাওয়ায় সে মনজুভাইকে দায়ীকরে কৈফিয়তও চেয়েছেন!....টুটুলকে এ পর্যায়ে এনেছেন দুজন মানুষ; মাহবুব স্যার আর মনজু ভাই স্বয়ং। তারা আবিষ্কার করেছেন চেয়ারম্যানের সবচে ঘনিষ্টজন টুটুল। তাই তাকে যতোটা সম্ভব খুশি রাখতে হবে। এবং এটা সত্য যে তাদের দুজনের ব্যাপারেই ইনফরমেশন-মিস ইনফরমেশন দেয়ার ক্ষমতা ছিল এই টুটুলেরই। তবে এখানেও টুটুল লুৎফরের পদ্ধতিই নিলেন: মনজুভাই মাহবুব স্যারের নৈতিক পদস্খলন বা অন্য কোনও অন্যায়ের কথা বলে যে চেয়ারম্যানের আস্থাভাজন হওয়া যাবে না এটা সে ভালোই বুঝত তাই তার আচরণ ছিল এহতেছাব মূলক। অনেক প্রশংসাসহ দুখানা অভিযোগ! মনজু ভাই বেশি নরম! কঠোর হতে পারেন না কিন্তু প্রশাসন চালাতে গেলে কঠোর হতে হয়...আর মাহবুব স্যার খুবই জিনিয়াস এই সেই ...সে দুইঘণ্টা সময় দিলেই চ্যানেলের চেহারা চেঞ্জ হয়ে যাবে...সে ক্ষমতা তার আছে...
এটি নি:সন্দেহে প্রশংসা বাক্য! কিন্তু এর মিনিং বা মোটিভেশন কি?
মনজুভাই প্রশাসনের জন্য অযোগ্য!
মাহবুব স্যার দুইঘণ্টা সময়ও দেন না....বেতন নেন ৮ঘণ্টা ডিউটির!
চেয়ারম্যানের কাছে এমন তথ্য যিনি দিতে পেরেছেন তাকেতো ভয় বা সমীহ করে চলাই উচিৎ!
তা-ই চলেছেন কর্তাব্যক্তিদ্বয়। তার কথার ভিত্তিতে সেলিম ভাই গেল, মনজু ভাইর অপজিটে কঠোর একজনকে আনা হলো। আফতাবুর রহমান। যিনি জাতির কাছে এখন একটা গাধার উদাহরণ। আফতাব টোস্ট, আফতার ফুড এন্ড বেভারেজ এর কলাবিস্কিট খাইয়ে অশেষ নেকি হাসিল করেছেন।
তিনি এসে তার কঠোরতার হাত সম্প্রসারিত করলেন....সেই হস্তেই সাতজনের ভাগ্যলিপি লেখা হলো। নরম মানুষ মনজু ভাই দুজনকে বাঁচিয়ে আনলেন ....তার সে ক্ষমতা আছে। ইনি একমাত্র ব্যক্তি চেয়ারম্যানের পর যে কোনও সিদ্ধান্ত নেয়ার রাইট তার আছে; যে কোনও সিদ্ধান্ত! যে কোনও ক্রাইসিস! যে কোনও ইমার্জেন্সি সিচুয়েশনে, অর্থনৈতিক ক্ষমতা...প্রশাসনিক ক্ষমতা...সম্প্রচার ক্ষমতা...স-ব। কিন্তু তিনি টুটুলের মতো ক্ষমতার ব্যবহার বা অপব্যাবহার করতে জানেন না- আসলে চান না! তবু একআধটু মাঝে মধ্যে দেখান সে হিসেবে আমাদের দুজনকে বাঁচানোতে তার তেমন কোনও ক্ষমতা দেখাতে হয় না। হয়ত বলেছিলেন যে শেষ চেষ্টাকরে দেখি এদের কোনও কাজে লাগানো যায় কি না এবং কেবল নিজের মনের ইচ্ছাতেই টুটুল বা কারও দ্বারা প্রভাবিত না হয়ে আমাকে আর তৌহিদভাইকে পাঠালেন নিউজে। দুজনকে দুই সেকশনে....পরদিন থেকেই আমার পারফর্মেন্সে উপরমহলসহ খুশি। শত্রুমহল তখনও ভাবছে দেখি না কী করে... কিন্তু একেরপর এক যখন প্রশংসা পাচ্ছে আইমিন অ্যাপ্রিশিয়েট! তখন টুটুলও গলা মেশালো কিন্তু প্রতিহিংসা-ঈর্ষা-পরাজয় ভুলতে পারল না।...এদিকে তৌহিদ ভাই তখনও কাজ শুরু করেনি...তাই বলাবলি চলছিল তৌহিদ পারবে না, যেই অলস...আমি চ্যালেঞ্জ করেছিলাম সে পারবেই ইনশাআল্লাহ! তাকেও বললাম বসে না যে কোনও একটা অ্যাসাইনমেন্টে নেম পড়েন, বুঝতে বুঝতে একমাস সময় নিলে চলবে না, নেমে দেখেন কাজ কতো সহজ....
সে বলে- নাকি নিউজরুমে কাজ করবো?
আমি বলি- আপনিকি আমার মতো ল্যাংরা? চ্যালেঞ্জ নিতে ভয় পান? আমিওতো নিউজরুমে বসে থাকব না। চান্স পেলে অ্যাসাইনমেন্টে নামবো...
সোয়াইনফ্লু নিয়ে রিপোর্ট করলেন, কোথাও কোনও ত্রুটি ধরা পড়ল না। আমরা যারা তার আরও ভালো চাই তারা শুধু বললাম বিবরণটা অন্য কারও অনুসরণ না করে কেটে কেটে না পড়ে আরও স্মুথলি বলেন....পজ মনির উদ্দিনের মতো বেশি হয়ে যাচ্ছে...সেইসঙ্গে প্রবল অ্যাপ্রিশিয়েটতো করেছিই...তারপর সর্বত্র শুনতে পাই প্রশংসা! টুটুলের দু:খ দেখলে এখন করুণা হয়। আমার বা তৌহিদের রিপোর্ট দেখার সময় তার অন্য চ্যানেলে কী যনে গুরুত্বপূর্ণ চলতে থাকে। সে চ্যানেল চেইঞ্জ করে...আমরা হাসি...আহারে!
এরপর নিজেকে নিয়ে আরও কিছু ভাবতে হয়। কেমনকরে যেন একটা চান্স চলে আসে। আমার কবিতার কথা অনুষ্ঠানের উপস্থাপক আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের টিচার; যিনি তার ছাত্র থাকাকালীন আমার প্রতি টুটলের মতোই অন্যায় আচরণ করেছেন...কিন্তু তাকেই যখন আমি চ্যানেলে অনুষ্ঠান উপস্থাপনার মতো সম্মান-খ্যাতির সুযোগ করে দিলাম এরপর সে নিজেই তার ভুল বুঝতে পারলেন এবং সে কারণেই তিনি আমার এমফিলসহ বিভিন্নভাবে সহযোগিতার মনোভাব দেখান। তিনিও সেদিন ফোন করে বলেন তার কাছে এশিয়ান ইউনিভার্সিটির একটা অফার আছে তিনি আমার নাম প্রস্তাব করেছেন...তিনি নিজে আমাকে ভাইবার জন্য প্রস্তুত করে দেবেন বলে জানালেন...অবশ্য তার আর প্রয়োজন হলো না। সে যেভাবে কর্তৃপক্ষের কাছে প্রশংসা করেছেন তাতে আর কিছু লাগে না। আর তাছাড়া তাদের দাবি ছিল রেজাল্ট, সেটাতো আমার আছে...হয়ে গেলো আল্লাহর ইচ্ছায়! আমি এখন একটা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের টিচার। কতো বড় বড় মানুষ এখন আমাকে স্যার বলে!
সেই অলস খ্যাতির ছেলেটা এখন জাস্টটাইমের চাকরির পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪টা ক্লাস নেয়। তাও আবার ৩টা মাস্টার্সের ক্লাস!
যারা জীবনে খুব হতাশ হয় তাদের জন্য এ গল্প উদাহরণ হতে পারে। কদিন আগেও আমি মাহবুব স্যারের কাছে ইমেইলে নিজের এমন হতাশাই ব্যক্ত করেছিলাম! প্রার্থনা চেয়েছিলাম নিজের মৃত্যুর! স্যার কবিতায় আমাকে সান্ত্বনা দেন!....মনজুভাইকে ও লিখেছিলাম! কিন্তু তাকে লেখা আমার সবকিছু আমি লুকিয়ে রাখি...ভয়ে এবং ক্ষোভে। ভয় এ কারণে যে সে আমাকে আর ভালো বাসবে না। ক্ষোভ সে যে আমাকে ভালোবাসে এটা তার যুক্তিসঙ্গত আচরণ, আমি মনে করি...(যদিও অন্যরা বিপরীতটাই ভাবে) কিন্তু সেই মানুষটা টুটুলকে কেন চিনতে পারছে না? আর লুৎফরকেইবা কেন এতো প্রশ্রয় দেন? যে ছেলেটা মনজু ভাইর প্রতি সবচে বেশি কৃতজ্ঞ থাকার কথা...সে উল্টো দাবি করে মনজু ভাই তার প্রতি অকৃতজ্ঞ! মনজু ভাইকে গীতিকার বানিয়েছে সে। মনজু ভাই গান লিখতে জানতো না, মাত্রা তাল লয় বুঝত না...খালি কবিতা লিখলেই হয়?...এমন কথা যে বলে সেই লুৎফরকে সে এখনও বুকের মধ্যে রাখেন কেন? এতো ভালোবাসা মানুষের মধ্যে থাকা ঠিক না। এটাও একধরনের মানসিক রোগ।
তবু তার সব যৌক্তিক অযৌক্তিক আচরণ এবং তার দেয়া শাস্তিও কেন যে এতো ভালো লাগে! বুঝি না। আমি সারাক্ষণ আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি আল্লাহ তুমি আমাকে এমন যোগ্যতা দাও যেন মনজু ভাই আমাকে নিয়ে গর্ব করতে পারে...কারণ এই লোকটা আমাকে ভালোবাসে বলে অনেক কথা শুনেছে লোকের কাছে,.... সেই মানুষটা চাপা স্বভাব সত্ত্বেও সেদিন বলে ফেলেছে আমিও তোমার পার্ফরমেন্সে খুব খুশি! যতো অল্পই বলুক আর নাই বলুক আমি জানতাম সেই সবচে বেশি খুশি হবে আমাদের বিজয়ে, কারণ এই চ্যালেঞ্জ আমাদের ছিল না, ছিল তারই চ্যালেঞ্জ! অযোগ্য দুটো ছেলেকে যোগ্য প্রমাণ করতে পারা তারই বিজয়।
আজ সে মানুষটা অসুস্থ। এমন কখনও হয়নি সে এতাদিন অফিসের বাইরে ছিল! অনুষ্ঠান বিভাগ নিয়ে তার লড়াই সেই প্রথম দিন থেকে...কিন্তু এখন?
আজ বাসায় বসে কেমন খিটখিটে লাগছে। আমার বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকনিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে। মনের ভেতর সেই স্বপ্নটা জেগে উঠেছে...আমার বাবা মার স্বপ্ন , আমার আপুর স্বপ্ন...আমার হিতাকাঙ্ক্ষী টিচারদের স্বপ্ন!...অবশ্য প্রাইভেট ভার্সিটির পার্টটাইম টিচার হওয়াতে বাবা খুব খুশি, তবে তিনি চান যেন কুষ্টিয়া ভার্সিটির টিচার হতে পারি...আমি জানি না হয়ত এ স্বপ্নটাও পূরণ হবে.....সেদিনকি মনজুভাই আমাকে নিয়ে গর্ব করবেন না? তিনি কি বুক ফুলিয়ে বলতে পারবেন না যে তার সিলেকশন ভুল ছিল না, তার করুণা অযৌক্তিক ছিল না!...
স্রষ্টার কাছে আমার বিনীত প্রার্থনা আমাকে যারা নি:স্বার্থভাবে ভালোবসেছে আল্লাহ যেন আমাকে দিয়ে তাদের মুখ উজ্জল করেন, তাদের সম্মানীত করেন...
তারা যেন একটা অপদার্থকে ভালোবেসেছেন ভেবে কষ্ট না পান।...আমীন!
সে...হাসপাতালে...যদিও সমস্যাটা জীবনাশংকার নয়। তবে ভেঙেপড়ামতো....জীবনকে মৃত্যুর চেয়ে বেশি মূল্যমান করে জীবনের শিথীলতা, গতিহীনতা। আমাকে যেমন জীবনের মর্ম বুঝিয়েছে আমার পঙ্গুত্ব!....
বয়ে চলার নাম জীবন। গতির নাম জীবন, থেমে যাওয়া বা স্থিরতার নাম মৃত্যু! এর যন্ত্রণা অনেক বেশি! মনজু ভাই একবার আমাকে বলেছিল এরকম হলে তুমি চাকরি করবে কী করে?...সেবার বেশ কয়েকদিন অফিস কামাই করতে হয় পা টার জন্য... নিজেকে ভঙ্গুর করে উপস্থাপনের চেয়ে মৃতভাবে উপস্থাপন উত্তম। কেউ বোঝা ভাবতে পারে না। এটা আমার ব্যাখ্যা...কিন্তু এর বিপরীত ব্যাখ্যাও আছে।...প্রতিবন্ধীদের জন্য নির্মিত একটি ছবি দেখলাম সেদিন; রেডিওভাই। অসাধারণ একটা ফিল্ম! সবাই যেমন প্যারালাইজড ছেলেটাকে অপয়া ভেবে অপমান গঞ্জনা দেয়, সবাই বলতে দুষ্টলোকেরা...তাদের প্রভাবে অন্যরাও ছেলেটাকে অভিসপ্ত ভেবে নেয়....তেমনি জ্বরে মরে যাওয়া একটি মেয়ের বাবা মা আফসোস করে আমার মেয়েটা যদি রফিকের মতো ল্যাংরা হয়েও বেঁচে থাকত!...তাদের সংসারে সব আছে কিন্তু সুখ নাই...মেয়েটার মৃত্যুতে তারা কখনও সুখি হতে পারে না। যতটুকু সুখ আসে তাও আবার মেয়েটার কথা বেশিকরে মনে করিয়ে দেয়.... অতএব বেঁচে থাকাটাই বড় কথা এখানে...
বাঁচার মতো বাঁচতে পারলে বাঁচবো নয়তো মৃত্যুই ভালো, আমার মতো এমন চিন্তা যারা মনেপ্রাণে করে তাদের জীবনে গতিহীনতা আরোপ হলে যে কী কষ্ট নেমে আসে তা কেবল আমরাই বুঝি...
অবশ্য আমার চিত্র আর মনজু ভাইর চিত্র এক নয় তবু অসুস্থতা মানুষকে যে পীড়ন দেয় সেটা ভাবতে কষ্ট হচ্ছে...সে নিশ্চই কষ্ট পাচ্ছে!
আমি জানার পর একবারও খোঁজ নেইনি। খোঁজ নেয়াটা প্রয়োজন মনে করিনি। আমি কিছুতেই নিজেকে বোঝাতে পারি না মনজুভাই লেভেলের মানুষের খোঁজ নেয়াটা আমার সৌজন্য নাকি ধৃষ্টতা? তবে মনের ভেতর একটা টান টের পাই সেটাকেও অহেতুক ভাবি। আমি কে তার জন্য ভাববার?
আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসী।
তবু আমি বেঁচে আছি বুকে নিয়ে ব্যথারই পাহাড়।
পাথরেরই চোখ স্বপ্ন দেখে না কোনওদিন
শুধু চেয়ে রয় বোবা ভাষা কয়
সে চাওয়া দৃষ্টিবিহীন
আজ সোমবার। আমার অফ ডে। সপ্তাহের নিয়মিত ব্যস্ততার বাইরেও এখন বিশেষ ব্যস্ততা যোগ হয়েছে সে হিসেবে এই একটি দিন আমার খুব প্রয়োজনের। কিন্তু সে দিনটাও ভালো কাটে না। ভালো লাগে না। কেন এমন হয়? কেন মানুষের চাওয়া শেষ হয় না?
কিছুদিন আগেও কেবল একটা চাকরি হলেই হয়...এরকম ভাবতাম। চাকরি হলো । এরপর শুরু হলো চাকরিতে অবস্থান তৈরির সংগ্রাম। সে সংগ্রামে মনপ্রাণ ঢেলে দিতে পারিনি। সেই প্রথম থেকেই দুজন মানুষ আমার জীবনটাকে অর্থহীন করে রেখেছে। একজন টুটুল আরেকজন লুৎফর। জীবনের প্রথম কাজটা ছিল লুৎফরের সঙ্গে..তার অ্যাসেসমেন্টটা ছিল প্রতিশোধ-মূলক। আমি তাকে অন্যদের মতো কুর্ণিশ করি না; এর শোধ নিতে সে এমন এক খেলা খেললো আমার সঙ্গে...আমাদের বস ছিলেন মনজু ভাই আর মাহবুব স্যার। এই দুজন মানুষেরই নৈতিকতার ভিত্তি এতো অটল এবং নিরপেক্ষতার দৃষ্টান্ত এতো প্রবল যে লুৎফরকে ধুর্ততা বেছে নিতে হলো। সে আমার পজিটিভ দিকগুলো তুলে ধরে আমার শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে হাইলাইট করে তাদের কাছে আমার হিতকারী বন্ধু সাজলো। ভদ্রলোকেরা নিজেরা যেমন চক্রান্ত করতে অভ্যস্ত নন তেমনি অন্যের চক্রান্ত ও ধরতে পারেন না। সরলমনা সেসব লোকেরা আরও একটি জিনিস খুব পারেন সেটি হলো কাউকে করুণা করতে চাইলে তারা এতোটাই আবেগাপ্লুত হন যে অতিআদরে মানুষ যেমন বিগড়ে যায় তেমনি , প্রশ্রয়ে মাথায় ওঠে, তেমনি অতিকরুণায় আমার প্রতিভাটাও চাপা পড়ে গেল। তারা একটিবারও ভাবলেন না থাকতেওতো পারে এর মাঝেও কোনও পোটেনশিয়ালিটি! তারা আমাকে দয়া করতে পেরেই যেন ধন্য হলেন....
আমাকে ছুড়ে ফেলা হলো এমন কাজে যে কাজে কোনও ফিউচার নেই, পরিচয় নেই, সম্মান নেই....সবচে বড় কথা হলো ক্রিয়েটিভিটি দেখানোর সুযোগ নেই। তবু তারা আমাকে ঠেললেন ...বুঝাতে চাইলেন এরমধ্য দিয়েও তুমি অনেক কিছু করতে পারবা।‘ তাদের কথায় ধৈর্য ধরে লেগে থাকলাম; কিন্তু পাথরে ফুল খুব কম লোকই ফোটাতে পারে। কাগজের ফুল থেকে কেউ যদি ঘ্রাণ আবিষ্কার করতে চায় সেটা কি সম্ভব? আমার কাজটা যেখানে একজন টাইপিস্ট এর সমান সেখানে এর ভিতর দিয়ে আমি আর কীইবা করতে পারি!...এরপরও অতিরিক্ত কিছু কাজ...বা পোটনশিয়ালিটি দেখাতে চেয়েছি কিন্তু সে রোলটাও আবার আমার সঙ্গে যায় না। সেটা আরও বড় পদের রোল। এক্সিকিউটিভ রোল। কিন্তু আমি নিশ্চিত এই রোলটা আমার পক্ষে সম্ভব। সম্ভব না আমার অবস্থানের জন্য। আগে থেকেই যদি আমাকে সে আসনে রাখা হতো তবে আর এমন প্রশ্ন উঠত না। বাড়ির কাজের লোক যতোই বাড়ির কল্যাণ বুঝুক বা চিন্তা করুক তাকে কিন্তু ডিসিশন মেকিং এ রাখা হয় না।...এটাই স্বাভাবিক....আমি নিজের জন্য যে কাজগুলোর তালিকা করলাম সেগুলো আমি করছি অথচ প্রফেশনালি করতে গেলে আমাকে অবশ্যই উর্ধতন পর্যায়ে উঠতে হয়।...আমি জানি আমার প্রতি কার দৃষ্টিভঙ্গি কেমন তাই ওপথে আর পা বাড়াইনি।
কিন্তু অপ্রয়োজনীয়-পরিচয়হীন-অগুরুত্বপূর্ণ রোলে অভিনয় করতে করতে একসময় ঝড় শুরু হলো, ঝড়ে ধুলোবালিই সবার আগে উড়ে যাবে সেটাই স্বাভাবিক। আমি চিন্তিত এবং মনে মনে প্রস্তুতিও নিয়ে ফেলি; যেতে হলে যাবো। এমন প্রস্তুতি এর আগেও কয়েকবার নিতে হয়েছে। টুটুলের চক্রান্ত-তৎপরতায়, হিংসাত্মক আচরণে ঝরে পড়ার পরিস্থিতি এর আগেও হয়েছে। আমি সবচে অবাক হতাম আমাকে বোঝানো হতো আমি খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা কাজ করছি...আইমিন কাজটা গুরুত্বপূর্ণ কিন্তু যে আমি কাজটা করছি তাকে কিন্তু গুরুত্ব দেয়া হতো না। তবু বন্ধুমহলের মতো কর্মক্ষেত্রেও কিছু খবরদারি! (অন্যেরা করলে যেটা নেতৃত্ব হতো) শুরু করলাম। কার অনুষ্ঠান কবে যাবে...ফ্রেশ প্রোগাম নাই কেন...প্যানেল নাই ...ঠিক আছে প্যানেল ম্যানেজ করে দিচ্ছি...এইভাবে; কিন্তু এই ম্যানেজ করার পর্যায়ে আমাকে নাকগলাতে দেখে কারও কারও অসহ্য লাগতে শুরু করলো। একই পর্যায়ের একটি ছেলে কেন (নেতৃত্ব) খবরদারি করবে? তাকে চলতে হবে অন্যের হুকুমে তার হুকুমে কেউ চলবে না। এমনকি একজন পিওনও তার হুকুম শুনতে বাধ্য নয়, পিওনকে দিয়ে যদি কিছু করাতে হয় তাকে তেল মেরে শোনাতে হবে...এমন অবস্থানে থেকে বিরক্ত হতে হতে এবং সবরকম চেষ্টা সত্ত্বেও কাজে ত্রুটি ঘটতো। এটি অনিবার্য ছিল। কারণ শিডিউল আমি যদি করি আমাকে কমান্ডিং পর্যায়ে থাকতে হবে। আমি শিডিউলে দিলাম চিত্রবিচিত্র ফ্রেশ পর্ব যাবে কিন্তু প্রযোজক পারলেন না, আর এই যে পারলেন না এটাও সে আমাকে জানাতে বাধ্য নন বরং আমি তার কাছ থেকে জেনে নেবো...আবার জেনে নেওয়ার পরও যদি না দিতে পারেন সেটার খোঁজও আমাকে রাখতে হবে....অথচ এখানে যদি ঊর্ধতন কেউ হন? তাকে টাইমটু টাইম সব জানাতে হবে...প্রকিউরমেন্ট কোনও তথ্য দিত না। আমি নিতে গেলে বলে অমুকের কাছে যাও...অমুক বলে অমুক যায়গায় দেয়া আছে, চৌদ্দ যায়গায় দিতে পারবো না। অমুক যায়গায় গেলে এটাতো আপনারই ভালো জানার কথা...তারাও জ্ঞান দিত- আপনাকে সমন্বয় করতে হবে...উফ! জ্ঞানবাণীযে কী মধুর অপমানজনক ছিল...ভাবলে কান্না পায়।
প্রতিটি মিটিংএ টুটুল উঠে দাঁড়িয়ে বলতো অমুক বিভাগ সম্পর্কে আমার কিছু কথা আছে (কমপ্লেইন) সে একচিটিয়া বলতো। আমাকে ডিফেন্ড করারা সুযোগ দেয়া হতো না। তবু আমি করতাম..ত্যাড়া, ঘাড় ত্যাড়া আখ্যা নিয়ে। এতে যেটা হতো কেউ আমাকে ত্যাড়া ভাবলেও সহযোগীরা সাহসী এবং নিদোর্ষ ভাবতো। তারা বাইরে এসে হাততালি দিত, থ্যাংকস দিত। এমন অনেক বড় বড় ভুল গেছে যার কারণে আমাকে নোট দেয়া হয়েছে অথচ তদন্ত সাপেক্ষে দেখা গেছে ভুলটা আমার নয়। কিন্তু এই যে চাপের মুখে আমাকে ফেলা হলো...আমার কয়েকদিনের খাওয়া না খাওয়া টেনশন...অপমান এসবের কী হলো? আমিতো কখনও কৈফিয়ত চাইতে পারিনি..অন্যায়ভাবে কেন আমার উপর এ দায় চাপানো হয়েছিল? বরং কৃতার্থ হতাম মনজু ভাইর উপর...উনি ছিলেন বলে আমি নিজেকে নিদোর্ষ প্রমাণ করতে পেরেছি , তিনি না থাকলে প্রমাণের আগেই আমার দাফারফা করে ছাড়তেন টুটুল চেয়ারম্যান!
ছোট ছোট ঝড়গুলো কেটে যেতে যেতে একবার এলো প্রবল ঝড়! আগের ঝড়গুলো যেমন আমার একার গায়ে লাগতো..এবারের ঝড় এলো সবার গায়ে। এমনকি চরম সংকটাপন্ন হলো সেই ক্ষমতাধর টুটুলের অবস্থাও। অর্থনৈতিক কেলেঙ্কারীতে অভিযুক্ত! অবশ্য ভিটে ছেড়ে নিজেকে রক্ষা করলো সে। তার ডিপার্টমেন্ট ক্লোজড হলো। সে হলো মন্ত্রণালয়বিহীন মন্ত্রী। কয়েকদিন সে কী নিরীহ আচরণ সবার সাথে...একসময় তাকেও নির্দোষ প্রমাণ করা হলো দায় অন্যের ঘাড়ে চাপিয়ে; ভিডিও এডিটর হীরাতো আর এখানকার চাকরিজীবি নয়! তার পায়ে পড়লেন টুটুল...নিজেকে সেভ করার জন্য। কিন্তু যেই আবার বেঁচে উঠলেন ফের সে নিজের ট্র্যাকে ফিরে এলো। ঝড়টা মায়ানমার দিয়ে ঘুরে গিয়ে আঘাত হানল ভারতের পরিবর্তে বাংলাদেশের বুকে। পতন ঘটলো সাতটি উইকেটের। এরমধ্যে শক্তিশালী উইকেটের সংখ্যাই বেশি। আমি অবশ্য কারও কারও ব্যাপারে খুশি হয়েছি কারণ তারা আমার সঙ্গে বেশ জঘন্য কিছু ব্যবহার করেছেন। অবশ্য আমার সাথে ঠিক না, আমার পজিশনটার সঙ্গে। পিওনকে যেমন সবাই ট্রিট করে তাতে তার প্রতিক্রিয়া মানায় না আর প্রতিক্রিয়া যদি করে তাহলে যা হবার সেরকম হয়েছে। তবে সেকারণেই যে খুশি হয়েছি এটা মিথ্যা! চাকরি যাওয়া সাতজনের কারও কারও দুর্নীতি আমার নিজের চোখকেও অবাক করে দিয়েছে। কিন্তু দুর্নীতির দায়ে চাকরি তাদের যায়নি। যাওয়া উচিৎও না কারণ এর চে বড় বড় দুর্নীতিবাজরা এখনও বহাল তবিয়তে আছে। যাদেরকে তারেক জিয়ার সঙ্গে তুলনা করা হয়। সেই এসএম রিপনরা আজও ভরে তুলছে সোনার ফসল নিজের গোলায়। দেখার কেউ নাই! এমনকি যেই টুটুল সবার বেলায় নাক গলিয়েছে সেও এখানে নীরব দর্শক! কারণ সে তাকে কখনও প্রতিদ্বন্দ্বী ভাবেনি। আর রিপনও কখনও কাউকে ঘাটেনি, শুধু দুহাতে উপার্জনের ধান্দা আর যতোটা পারা যায় সবার সঙ্গে ভাব বজায় রেখে চলা...নীতি অবলম্বন করেছে। অনুসারীও বানিয়েছে এক নারীকে; সাকিয়া সে তার যোগ্য উত্তরসুরী। কোনও সাড়া শব্দ ছাড়া নিজের কাজ করে যাচ্ছে...পকেট ভরছে...এসব বলার লোক আছে কিন্তু প্রমাণ করার উপায় নাই।...সবাই একমত হয় কিন্তু কেউ প্রটেস্ট করে না, নিজের হাঁড়ির খবর যদি বের হয়ে যায়? সে হিসেবে যাদের চাকরি গেছে তাদের চাকরি কোনওভাবেই যাওয়া উচিৎ হয়নি। অবশ্য তালিকায় আমি এবং তৌহিদ ভাই ছিলাম। মনজু ভাই সে তালিকা থেকে আমাদের রেহাই দিলেন...কেন দিলেন? কিছু মানুষের কিছু অদ্ভুৎ খেয়াল থাকে...হয়ত সে কারণেই। অথবা আমাদের চাকরিতো এর আগেও কয়েকবার গেছে তাই এবারের তালিকায় রেখে সমপর্যায়ে ফেলতে চাননি। পরবর্তী তালিকার কথা ভেবেছিলেন! এবং তেমন আভাস ছড়িয়ে গিয়েছিল সর্বত্র। সবাই বলাবলি করে ৯ উইকেটের লিস্টটি টুটুল করেছিল। এবং সেখান থেকে ২জনের বেঁচে যাওয়ায় সে মনজুভাইকে দায়ীকরে কৈফিয়তও চেয়েছেন!....টুটুলকে এ পর্যায়ে এনেছেন দুজন মানুষ; মাহবুব স্যার আর মনজু ভাই স্বয়ং। তারা আবিষ্কার করেছেন চেয়ারম্যানের সবচে ঘনিষ্টজন টুটুল। তাই তাকে যতোটা সম্ভব খুশি রাখতে হবে। এবং এটা সত্য যে তাদের দুজনের ব্যাপারেই ইনফরমেশন-মিস ইনফরমেশন দেয়ার ক্ষমতা ছিল এই টুটুলেরই। তবে এখানেও টুটুল লুৎফরের পদ্ধতিই নিলেন: মনজুভাই মাহবুব স্যারের নৈতিক পদস্খলন বা অন্য কোনও অন্যায়ের কথা বলে যে চেয়ারম্যানের আস্থাভাজন হওয়া যাবে না এটা সে ভালোই বুঝত তাই তার আচরণ ছিল এহতেছাব মূলক। অনেক প্রশংসাসহ দুখানা অভিযোগ! মনজু ভাই বেশি নরম! কঠোর হতে পারেন না কিন্তু প্রশাসন চালাতে গেলে কঠোর হতে হয়...আর মাহবুব স্যার খুবই জিনিয়াস এই সেই ...সে দুইঘণ্টা সময় দিলেই চ্যানেলের চেহারা চেঞ্জ হয়ে যাবে...সে ক্ষমতা তার আছে...
এটি নি:সন্দেহে প্রশংসা বাক্য! কিন্তু এর মিনিং বা মোটিভেশন কি?
মনজুভাই প্রশাসনের জন্য অযোগ্য!
মাহবুব স্যার দুইঘণ্টা সময়ও দেন না....বেতন নেন ৮ঘণ্টা ডিউটির!
চেয়ারম্যানের কাছে এমন তথ্য যিনি দিতে পেরেছেন তাকেতো ভয় বা সমীহ করে চলাই উচিৎ!
তা-ই চলেছেন কর্তাব্যক্তিদ্বয়। তার কথার ভিত্তিতে সেলিম ভাই গেল, মনজু ভাইর অপজিটে কঠোর একজনকে আনা হলো। আফতাবুর রহমান। যিনি জাতির কাছে এখন একটা গাধার উদাহরণ। আফতাব টোস্ট, আফতার ফুড এন্ড বেভারেজ এর কলাবিস্কিট খাইয়ে অশেষ নেকি হাসিল করেছেন।
তিনি এসে তার কঠোরতার হাত সম্প্রসারিত করলেন....সেই হস্তেই সাতজনের ভাগ্যলিপি লেখা হলো। নরম মানুষ মনজু ভাই দুজনকে বাঁচিয়ে আনলেন ....তার সে ক্ষমতা আছে। ইনি একমাত্র ব্যক্তি চেয়ারম্যানের পর যে কোনও সিদ্ধান্ত নেয়ার রাইট তার আছে; যে কোনও সিদ্ধান্ত! যে কোনও ক্রাইসিস! যে কোনও ইমার্জেন্সি সিচুয়েশনে, অর্থনৈতিক ক্ষমতা...প্রশাসনিক ক্ষমতা...সম্প্রচার ক্ষমতা...স-ব। কিন্তু তিনি টুটুলের মতো ক্ষমতার ব্যবহার বা অপব্যাবহার করতে জানেন না- আসলে চান না! তবু একআধটু মাঝে মধ্যে দেখান সে হিসেবে আমাদের দুজনকে বাঁচানোতে তার তেমন কোনও ক্ষমতা দেখাতে হয় না। হয়ত বলেছিলেন যে শেষ চেষ্টাকরে দেখি এদের কোনও কাজে লাগানো যায় কি না এবং কেবল নিজের মনের ইচ্ছাতেই টুটুল বা কারও দ্বারা প্রভাবিত না হয়ে আমাকে আর তৌহিদভাইকে পাঠালেন নিউজে। দুজনকে দুই সেকশনে....পরদিন থেকেই আমার পারফর্মেন্সে উপরমহলসহ খুশি। শত্রুমহল তখনও ভাবছে দেখি না কী করে... কিন্তু একেরপর এক যখন প্রশংসা পাচ্ছে আইমিন অ্যাপ্রিশিয়েট! তখন টুটুলও গলা মেশালো কিন্তু প্রতিহিংসা-ঈর্ষা-পরাজয় ভুলতে পারল না।...এদিকে তৌহিদ ভাই তখনও কাজ শুরু করেনি...তাই বলাবলি চলছিল তৌহিদ পারবে না, যেই অলস...আমি চ্যালেঞ্জ করেছিলাম সে পারবেই ইনশাআল্লাহ! তাকেও বললাম বসে না যে কোনও একটা অ্যাসাইনমেন্টে নেম পড়েন, বুঝতে বুঝতে একমাস সময় নিলে চলবে না, নেমে দেখেন কাজ কতো সহজ....
সে বলে- নাকি নিউজরুমে কাজ করবো?
আমি বলি- আপনিকি আমার মতো ল্যাংরা? চ্যালেঞ্জ নিতে ভয় পান? আমিওতো নিউজরুমে বসে থাকব না। চান্স পেলে অ্যাসাইনমেন্টে নামবো...
সোয়াইনফ্লু নিয়ে রিপোর্ট করলেন, কোথাও কোনও ত্রুটি ধরা পড়ল না। আমরা যারা তার আরও ভালো চাই তারা শুধু বললাম বিবরণটা অন্য কারও অনুসরণ না করে কেটে কেটে না পড়ে আরও স্মুথলি বলেন....পজ মনির উদ্দিনের মতো বেশি হয়ে যাচ্ছে...সেইসঙ্গে প্রবল অ্যাপ্রিশিয়েটতো করেছিই...তারপর সর্বত্র শুনতে পাই প্রশংসা! টুটুলের দু:খ দেখলে এখন করুণা হয়। আমার বা তৌহিদের রিপোর্ট দেখার সময় তার অন্য চ্যানেলে কী যনে গুরুত্বপূর্ণ চলতে থাকে। সে চ্যানেল চেইঞ্জ করে...আমরা হাসি...আহারে!
এরপর নিজেকে নিয়ে আরও কিছু ভাবতে হয়। কেমনকরে যেন একটা চান্স চলে আসে। আমার কবিতার কথা অনুষ্ঠানের উপস্থাপক আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের টিচার; যিনি তার ছাত্র থাকাকালীন আমার প্রতি টুটলের মতোই অন্যায় আচরণ করেছেন...কিন্তু তাকেই যখন আমি চ্যানেলে অনুষ্ঠান উপস্থাপনার মতো সম্মান-খ্যাতির সুযোগ করে দিলাম এরপর সে নিজেই তার ভুল বুঝতে পারলেন এবং সে কারণেই তিনি আমার এমফিলসহ বিভিন্নভাবে সহযোগিতার মনোভাব দেখান। তিনিও সেদিন ফোন করে বলেন তার কাছে এশিয়ান ইউনিভার্সিটির একটা অফার আছে তিনি আমার নাম প্রস্তাব করেছেন...তিনি নিজে আমাকে ভাইবার জন্য প্রস্তুত করে দেবেন বলে জানালেন...অবশ্য তার আর প্রয়োজন হলো না। সে যেভাবে কর্তৃপক্ষের কাছে প্রশংসা করেছেন তাতে আর কিছু লাগে না। আর তাছাড়া তাদের দাবি ছিল রেজাল্ট, সেটাতো আমার আছে...হয়ে গেলো আল্লাহর ইচ্ছায়! আমি এখন একটা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের টিচার। কতো বড় বড় মানুষ এখন আমাকে স্যার বলে!
সেই অলস খ্যাতির ছেলেটা এখন জাস্টটাইমের চাকরির পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪টা ক্লাস নেয়। তাও আবার ৩টা মাস্টার্সের ক্লাস!
যারা জীবনে খুব হতাশ হয় তাদের জন্য এ গল্প উদাহরণ হতে পারে। কদিন আগেও আমি মাহবুব স্যারের কাছে ইমেইলে নিজের এমন হতাশাই ব্যক্ত করেছিলাম! প্রার্থনা চেয়েছিলাম নিজের মৃত্যুর! স্যার কবিতায় আমাকে সান্ত্বনা দেন!....মনজুভাইকে ও লিখেছিলাম! কিন্তু তাকে লেখা আমার সবকিছু আমি লুকিয়ে রাখি...ভয়ে এবং ক্ষোভে। ভয় এ কারণে যে সে আমাকে আর ভালো বাসবে না। ক্ষোভ সে যে আমাকে ভালোবাসে এটা তার যুক্তিসঙ্গত আচরণ, আমি মনে করি...(যদিও অন্যরা বিপরীতটাই ভাবে) কিন্তু সেই মানুষটা টুটুলকে কেন চিনতে পারছে না? আর লুৎফরকেইবা কেন এতো প্রশ্রয় দেন? যে ছেলেটা মনজু ভাইর প্রতি সবচে বেশি কৃতজ্ঞ থাকার কথা...সে উল্টো দাবি করে মনজু ভাই তার প্রতি অকৃতজ্ঞ! মনজু ভাইকে গীতিকার বানিয়েছে সে। মনজু ভাই গান লিখতে জানতো না, মাত্রা তাল লয় বুঝত না...খালি কবিতা লিখলেই হয়?...এমন কথা যে বলে সেই লুৎফরকে সে এখনও বুকের মধ্যে রাখেন কেন? এতো ভালোবাসা মানুষের মধ্যে থাকা ঠিক না। এটাও একধরনের মানসিক রোগ।
তবু তার সব যৌক্তিক অযৌক্তিক আচরণ এবং তার দেয়া শাস্তিও কেন যে এতো ভালো লাগে! বুঝি না। আমি সারাক্ষণ আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি আল্লাহ তুমি আমাকে এমন যোগ্যতা দাও যেন মনজু ভাই আমাকে নিয়ে গর্ব করতে পারে...কারণ এই লোকটা আমাকে ভালোবাসে বলে অনেক কথা শুনেছে লোকের কাছে,.... সেই মানুষটা চাপা স্বভাব সত্ত্বেও সেদিন বলে ফেলেছে আমিও তোমার পার্ফরমেন্সে খুব খুশি! যতো অল্পই বলুক আর নাই বলুক আমি জানতাম সেই সবচে বেশি খুশি হবে আমাদের বিজয়ে, কারণ এই চ্যালেঞ্জ আমাদের ছিল না, ছিল তারই চ্যালেঞ্জ! অযোগ্য দুটো ছেলেকে যোগ্য প্রমাণ করতে পারা তারই বিজয়।
আজ সে মানুষটা অসুস্থ। এমন কখনও হয়নি সে এতাদিন অফিসের বাইরে ছিল! অনুষ্ঠান বিভাগ নিয়ে তার লড়াই সেই প্রথম দিন থেকে...কিন্তু এখন?
আজ বাসায় বসে কেমন খিটখিটে লাগছে। আমার বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকনিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে। মনের ভেতর সেই স্বপ্নটা জেগে উঠেছে...আমার বাবা মার স্বপ্ন , আমার আপুর স্বপ্ন...আমার হিতাকাঙ্ক্ষী টিচারদের স্বপ্ন!...অবশ্য প্রাইভেট ভার্সিটির পার্টটাইম টিচার হওয়াতে বাবা খুব খুশি, তবে তিনি চান যেন কুষ্টিয়া ভার্সিটির টিচার হতে পারি...আমি জানি না হয়ত এ স্বপ্নটাও পূরণ হবে.....সেদিনকি মনজুভাই আমাকে নিয়ে গর্ব করবেন না? তিনি কি বুক ফুলিয়ে বলতে পারবেন না যে তার সিলেকশন ভুল ছিল না, তার করুণা অযৌক্তিক ছিল না!...
স্রষ্টার কাছে আমার বিনীত প্রার্থনা আমাকে যারা নি:স্বার্থভাবে ভালোবসেছে আল্লাহ যেন আমাকে দিয়ে তাদের মুখ উজ্জল করেন, তাদের সম্মানীত করেন...
তারা যেন একটা অপদার্থকে ভালোবেসেছেন ভেবে কষ্ট না পান।...আমীন!
সে...হাসপাতালে...যদিও সমস্যাটা জীবনাশংকার নয়। তবে ভেঙেপড়ামতো....জীবনকে মৃত্যুর চেয়ে বেশি মূল্যমান করে জীবনের শিথীলতা, গতিহীনতা। আমাকে যেমন জীবনের মর্ম বুঝিয়েছে আমার পঙ্গুত্ব!....
বয়ে চলার নাম জীবন। গতির নাম জীবন, থেমে যাওয়া বা স্থিরতার নাম মৃত্যু! এর যন্ত্রণা অনেক বেশি! মনজু ভাই একবার আমাকে বলেছিল এরকম হলে তুমি চাকরি করবে কী করে?...সেবার বেশ কয়েকদিন অফিস কামাই করতে হয় পা টার জন্য... নিজেকে ভঙ্গুর করে উপস্থাপনের চেয়ে মৃতভাবে উপস্থাপন উত্তম। কেউ বোঝা ভাবতে পারে না। এটা আমার ব্যাখ্যা...কিন্তু এর বিপরীত ব্যাখ্যাও আছে।...প্রতিবন্ধীদের জন্য নির্মিত একটি ছবি দেখলাম সেদিন; রেডিওভাই। অসাধারণ একটা ফিল্ম! সবাই যেমন প্যারালাইজড ছেলেটাকে অপয়া ভেবে অপমান গঞ্জনা দেয়, সবাই বলতে দুষ্টলোকেরা...তাদের প্রভাবে অন্যরাও ছেলেটাকে অভিসপ্ত ভেবে নেয়....তেমনি জ্বরে মরে যাওয়া একটি মেয়ের বাবা মা আফসোস করে আমার মেয়েটা যদি রফিকের মতো ল্যাংরা হয়েও বেঁচে থাকত!...তাদের সংসারে সব আছে কিন্তু সুখ নাই...মেয়েটার মৃত্যুতে তারা কখনও সুখি হতে পারে না। যতটুকু সুখ আসে তাও আবার মেয়েটার কথা বেশিকরে মনে করিয়ে দেয়.... অতএব বেঁচে থাকাটাই বড় কথা এখানে...
বাঁচার মতো বাঁচতে পারলে বাঁচবো নয়তো মৃত্যুই ভালো, আমার মতো এমন চিন্তা যারা মনেপ্রাণে করে তাদের জীবনে গতিহীনতা আরোপ হলে যে কী কষ্ট নেমে আসে তা কেবল আমরাই বুঝি...
অবশ্য আমার চিত্র আর মনজু ভাইর চিত্র এক নয় তবু অসুস্থতা মানুষকে যে পীড়ন দেয় সেটা ভাবতে কষ্ট হচ্ছে...সে নিশ্চই কষ্ট পাচ্ছে!
আমি জানার পর একবারও খোঁজ নেইনি। খোঁজ নেয়াটা প্রয়োজন মনে করিনি। আমি কিছুতেই নিজেকে বোঝাতে পারি না মনজুভাই লেভেলের মানুষের খোঁজ নেয়াটা আমার সৌজন্য নাকি ধৃষ্টতা? তবে মনের ভেতর একটা টান টের পাই সেটাকেও অহেতুক ভাবি। আমি কে তার জন্য ভাববার?
কোন মন্তব্য নেই
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন