শনিবারের চিঠি......................................................
শনিবারের চিঠি......................................................
ঠিক যখন বের হবার জন্য প্রস্তুত ঠিক তখনই এমন মুষলধারে বৃষ্টি শুরু হলো! আর শরীরটাও খারাপ, ঠাণ্ডা লেগে হাঁচি আর কাশিতে একাকার; তাই শুক্রবার আর ভার্সিটিতে যেতে পারিনি। চেয়ারম্যান স্যারকে জানালাম; তিনি দেখবেন আশ্বাস দিলেন। সপ্তাহে ২দিন ক্লাস, তারওপর শুক্রবারই সব ছাত্রছাত্রীরা উপস্থিত থাকে; শনিবার অনেকেই আসতে পারে না চাকরির জন্য, আর যারা আসে তারাও অনেক কষ্ট করে দূরদূরান্ত থেকে আসে ক্লাস করতে। একদিন টিচার না আসা মানে ওদের মাথায় বাজ পড়ার মতো। শনিবারও আকাশের অবস্থা একই। একটা ব্যাপার লক্ষ করলাম; বৃষ্টি যখন শুরু হয় তিনদিন একনাগাড়ে চলে; বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এমন হয়। অতএব বৃষ্টির কথা ভেবে লাভ নেই। বেরিয়ে পড়লাম! গাড়িতে ওঠার পর বৃষ্টি নিয়ে আর চিন্তা করতে হয় না। কিন্তু পেশাদারদেরতো আর ঘরে বসে থাকার উপায় নাই; কর্মবাঁচাতে রাস্তায় নামতেই হয়। গাড়িতে কাঁদামাখা-বৃষ্টিভেজা মানুষের ভিড়। এর মধ্যে উঠলো বাচ্চা একটা হকার; পত্রিকা হাতে। বাংলাদেশ প্রতিদিন। ২টাকার এতোগুলো পৃষ্ঠার পত্রিকা যে কারও নজর কাড়ে, যে কারণে বাংলাদেশ প্রতিদিন মাঠে নামার পর আমাদের সময়ের একচেটিয়া ঢাকার বাজার কতখানি মন্দা যাচ্ছে তা পত্রিকার সার্কুলেশন বিভাগ ভালো বলতে পারবে। তবে আজ গাড়িতে যারা আমাদের সময় চেয়েছে তারাও পায়নি, হকার বলে দাম বাড়ানোর পর নাকি সময় আর বিক্রি হয় না, স্যার বাংলাদেশ প্রতিদিন নেন, পৃষ্ঠা বেশি।
ছেলেটার সমস্ত শরীর ভেজা, অথচ একটা পত্রিকাও ভিজতে দিচ্ছে না। পলিথিন পেচিয়ে এমন সুন্দর কায়দা করে রাস্তায় নেমেছে যেন একটা পত্রিকারও ক্ষতি না হয়! আমি একটু অবাক হলাম! নিজের শরীরের যত্ন নেই, যত্ন অন্যের পত্রিকার। যার মাধ্যমে সে ২টাকা পায়, হয়ত দিন শেষে ২শ টাকা হয় তার। অথচ এই পত্রিকার যে বা যারা মালিক তারা এখান থেকে পাচ্ছেন লক্ষ লক্ষ টাকা, উদ্ধার করছেন কোটি কোটি টাকার স্বার্থ। তাদের সার্কুলেশন আছে বলে তারা বিজ্ঞাপন পান। আর এই সার্কুলেশন বৃদ্ধির সবটুকু কৃতিত্ব কি এই বৃষ্টিভেজা শিশু হকারদের নয়? কজন লোক নিয়মিত বাসায় বাংলাদেশ প্রতিদিন রাখেন? বেশিরভাগই বিক্রি হয় এই ভাসমান বাজারে। অবশ্য বাসায় যারা দেন সেসব হকারদেরও অবস্থা খুব একটা ভালো এমন দৃশ্য দেখিনি। কিন্তু যাদের প্রাণান্ত পরিশ্রমে পরিপুষ্ট হয় একটি পত্রিকার ভবিষ্যত জীবন সেসব পত্রিকার মালিকদের কি কিছুই করার নেই এদের জন্য? বাংলাদেশে জাতীয় দৈনিকের সংখ্যা নেহাত কম নয়, তবে প্রথম সাড়ির পত্রিকাগলোকেও যদি ধরি এবং তাদের আর্থিক অবস্থাকে যদি বিবেচনা করি তাহলে তারা একত্র হলে এসব হকার-পরিবারের জন্য এমন ব্যবস্থা কি করতে পারেন না যাতে ওদের স্থায়ী কোনও পুনর্বাসন হতে পারে? হতে পারে স্বাস্থ্য সুরক্ষার ব্যবস্থা, সুচিকিৎসা ও শিক্ষার ব্যবস্থা? এটি হতে পারে সমন্বিত ভাবে অথবা এককভাবে। আমাদের পত্রিকাগুলোর মালিক গোষ্ঠী এমনই শক্তিশালী অর্থনৈতিক ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে যে তাদের এককভাবেই অনেক কিছু করার সম্ভব।
কিন্তু তা তারা করছেন না। কেন করছেন না? এটি কি তাদের চিন্তার অপারগতা? নাকি আরও দূরচিন্তা? তারাকি এমনটি ভেবেছেন যে এদের পুনর্বাসন করে দিলেতো আর এরা হকার থাকবে না, তখন কে বিক্রি করবে তাদের পত্রিকা? এমন চিন্তা কি আমাদের সকল শিল্পপতিদের মাথায় কাজ করে? শ্রমিকদের বেশি সুযোগ দিলে, বড় হয়ে গেলে তারাই শিল্পপতি হয়ে উঠবে? একটা শ্রেণীকে চিরকাল শ্রমিক বানিয়ে রাখা বংশানুক্রমিকভাবে এমন উদ্দেশ্যই কি তাদের? শুনেছি গার্মেন্টস শিল্প-মালিকেরাও নাকি এটা ভেবেই ন্যুনতম মজুরি নিম্ন পর্যায়ের রাখে। আমরা যতোই বলি দেশে বেকার সমস্যা আছে তারচেয়ে কি বেশি এটা সত্য নয় যে দেশে যথার্থ শ্রমিক সংকটও আছে! একজন গার্মেন্টস শ্রমিক এখন যে বেতন পায় তা দিয়ে সে না পারে ভালো একটা বাসা ভাড়া নিতে আর না পারে তাদের সন্তানদের উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করতে, ফলে তারা বংশপরম্পরায় শ্রমিকই থেকে যাচ্ছে; তৃতীয়-চতুর্থ শ্রেণীর শ্রমিক! এধরনের ইন্ডাস্ট্রিয়াল ভেলকির মধ্যে পড়েই কি আজ আমাদের দেশের এ অবস্থা? অবশ্য অনেক শিল্পপতি অনেক নিচু অবস্থান থেকেই এ অবস্থানে এসেছেন, হয়থ এ কারণেই তারা আরও ভালো বোঝেন সেসব মানুষের পোটেনশিয়ালিটি, তাই হয়ত সুযোগ দিতে ভয় পান। তবে সুযোগ তারা দেন বা না দেন কিছু লোক ঠিকই সুযোগ করে নেবে, ইত্তেফাকের অবস্থান কেড়ে নেবে প্রথম আলোরা, প্রথম আলোকে টেক্কা দেবে যুগান্তর, যুগান্তরকে পেছনে ফেলে এগিয়ে যাবে সমকাল, সমকাল-প্রথম আলোদের দেখে নিতে মাঠে আসবে কালের কণ্ঠ, আসবে আমাদের সময়ের যায়গা দখল করতে বাংলাদেশ প্রতিদিন। কারও অবস্থানই অটুট থাকবে না চিরকাল। তাই ভয় বা আশংকা থেকে দেশের বেশিরভাগ জনগোষ্ঠীর মেরুদণ্ড দূর্বল না করে সবাইকে সমানভাবে না হোক অন্তত একটা স্ট্যান্ডার্ড মানে ইন্নীত করার চিন্তা থাকা উচিৎ সব শিল্পপতি, বড় ব্যবসায়ীদের। তাদের ভাবা উচিৎ তাদরে শিল্পকারখানা না থাকলে যেমন আমরা কাজ করে খাওয়ার যায়গা পেতাম না, তেমনি আমরা সস্তায় তাদের মূল্যবান শ্রম না দিলে তারাও এসব শিল্পকারখানা গড়তে পারতেন না।
সেই ছোট্ট্র শিশুটার বৃষ্টিভেজা পরিশ্রমই যে আপনার রিজিকের সংস্থান করছে, আপনার গাড়ির ফুয়েল যোগান দিচ্ছে এটি ভুলে যাবেন না। একটি বাস্তব দৃশ্য মনে করুন। এখন গ্রামাঞ্চলেও বাসাবাড়িতে কাজ করার মানুষ পাওয়া যায় না। আমার আমাদের বৃদ্ধ মাকেই সব পরিশ্রম করতে হয়, মডার্ন বউরা এখন নিজের কাজ নিজেরাই করেন। করতে বাধ্য হন। কেন নেই মানুষ? তারা চলে যাচ্ছে গার্মেন্টসএ। তারা চলে অন্য কাজে। পারছেন কি ধরে রাখতে? মানুষ এখন বিদেশমুখী। দেশের বিশাল একটা অংশ এখন দেশের বাইরে কাজ করে। হয়ত সেদিন বেশি দূরে নয় যেদিন বাংলাদেশে আর কোনও শ্রমিকই খুঁজে পাওয়া যাবে না বিশেষকরে তৃতীয় চতুর্থশ্রেণীর কাজের জন্য। সেসময়ের কথা ভেবে এখনই চিন্তা করুন কীভাবে দেশের ভেতর কাজের পরিবেশ ধরে রাখা যায়। প্রতিভাকে কিছুটা সময়ের জন্য দমিয়ে রাখা যায় চিরকালের জন্য নিভিয়ে ফেলা যায় না। সুযোগ পেলেই সে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে। আজ কের শ্রমিকরা ন্যুনতম মজুরীর জন্য রাস্তায় নামে একদিন সর্বোচ্চ অফার নিয়ে দ্বারে দ্বারে ঘুরবেন শিল্পপতিরা।
এমন চিত্র এখনই দৃশ্যমান কিছু কিছু সেক্টরে। যেমন ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায়; চরম সংকট চলছে যোগ্য লোকের । আজ এই চ্যানেলেতো আরেকটু গ্রেট অফারে কাল অন্য চ্যানেলে। চলছে টাকার বিনিময়ে রদবদল। অথচ এই সাংবাদিকরাই একসময় ছিল পথের কুকুরের মতো অসম্মানের। বলা হতো যারা নাই কোনও গতি সে করে সাংবাদিকতা অথবা ওকালতি। পায়ের চ্যান্ডেল ক্ষয়করা পেশা এখন সমাজের সর্বোচ্চ দামি গাড়িতে চড়া পেশায় পরিণত হয়েছে।
অতএব দমিয়ে রাখার চিন্তা বাদ দিয়ে দেখুন সুযোগ দিয়ে দেশকে কতটুকু এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায়।
শেষে একটা নির্মম দৃশ্যের কথা বলি। সেই ছেলেটা, বৃষ্টিভেজা সেই শিশু হকারটি নামতে গিয়ে গাড়ির ব্রেক সামলাতে না পেরে সামনের সিটের এক ভদ্রমহিলার গায়ে আছড়ে পড়ে। ভদ্রমহিলা তার সাজসজ্জা নষ্ট হবার রাগে ছেলেটাকে কষে এক চড় লাগালেন, এবং এমন একটা ধাক্কা মারলেন যে অন্যরা না ঠেকালে খারাপ কিছু হয়ে যেত। মহিলার দু:খটা বুঝি। রেডি হয়ে যাচ্ছেন হয়ত গুরুত্বপূর্ণ কাজে আর তারবদলে তাকে যদি যেতে হয় আবার ড্রেস পাল্টাতে, সেটা কষ্টেরই বটে। কিন্তু ওরতো কিছু করার ছিল না। খিলক্ষেতের কাছাকাছি এসে গাড়িটা বেশ ফাঁকা হয়ে যায় আর কনক গাড়িটা এমনিতেই বেশ বড়। সামনের যায়গাটা বেশ ফাঁকা। ওতো ধরার কিছু পায়নি!
সবাই মহিলাকে ছিছি করলেন, কিন্তু কীইবা করার আছে, সমাজের নির্মমতা এখন এমন যায়গায় ঠেকেছে যে পরকীয়ার জন্য মা তার সন্তানকে খুন করতে দ্বিধা করে না। আর ওতো পথের ছেলে! ওরা জন্মেছে এর-ওর লাত্থিগুতো খাওয়ার জন্যই।...................
ঠিক যখন বের হবার জন্য প্রস্তুত ঠিক তখনই এমন মুষলধারে বৃষ্টি শুরু হলো! আর শরীরটাও খারাপ, ঠাণ্ডা লেগে হাঁচি আর কাশিতে একাকার; তাই শুক্রবার আর ভার্সিটিতে যেতে পারিনি। চেয়ারম্যান স্যারকে জানালাম; তিনি দেখবেন আশ্বাস দিলেন। সপ্তাহে ২দিন ক্লাস, তারওপর শুক্রবারই সব ছাত্রছাত্রীরা উপস্থিত থাকে; শনিবার অনেকেই আসতে পারে না চাকরির জন্য, আর যারা আসে তারাও অনেক কষ্ট করে দূরদূরান্ত থেকে আসে ক্লাস করতে। একদিন টিচার না আসা মানে ওদের মাথায় বাজ পড়ার মতো। শনিবারও আকাশের অবস্থা একই। একটা ব্যাপার লক্ষ করলাম; বৃষ্টি যখন শুরু হয় তিনদিন একনাগাড়ে চলে; বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এমন হয়। অতএব বৃষ্টির কথা ভেবে লাভ নেই। বেরিয়ে পড়লাম! গাড়িতে ওঠার পর বৃষ্টি নিয়ে আর চিন্তা করতে হয় না। কিন্তু পেশাদারদেরতো আর ঘরে বসে থাকার উপায় নাই; কর্মবাঁচাতে রাস্তায় নামতেই হয়। গাড়িতে কাঁদামাখা-বৃষ্টিভেজা মানুষের ভিড়। এর মধ্যে উঠলো বাচ্চা একটা হকার; পত্রিকা হাতে। বাংলাদেশ প্রতিদিন। ২টাকার এতোগুলো পৃষ্ঠার পত্রিকা যে কারও নজর কাড়ে, যে কারণে বাংলাদেশ প্রতিদিন মাঠে নামার পর আমাদের সময়ের একচেটিয়া ঢাকার বাজার কতখানি মন্দা যাচ্ছে তা পত্রিকার সার্কুলেশন বিভাগ ভালো বলতে পারবে। তবে আজ গাড়িতে যারা আমাদের সময় চেয়েছে তারাও পায়নি, হকার বলে দাম বাড়ানোর পর নাকি সময় আর বিক্রি হয় না, স্যার বাংলাদেশ প্রতিদিন নেন, পৃষ্ঠা বেশি।
ছেলেটার সমস্ত শরীর ভেজা, অথচ একটা পত্রিকাও ভিজতে দিচ্ছে না। পলিথিন পেচিয়ে এমন সুন্দর কায়দা করে রাস্তায় নেমেছে যেন একটা পত্রিকারও ক্ষতি না হয়! আমি একটু অবাক হলাম! নিজের শরীরের যত্ন নেই, যত্ন অন্যের পত্রিকার। যার মাধ্যমে সে ২টাকা পায়, হয়ত দিন শেষে ২শ টাকা হয় তার। অথচ এই পত্রিকার যে বা যারা মালিক তারা এখান থেকে পাচ্ছেন লক্ষ লক্ষ টাকা, উদ্ধার করছেন কোটি কোটি টাকার স্বার্থ। তাদের সার্কুলেশন আছে বলে তারা বিজ্ঞাপন পান। আর এই সার্কুলেশন বৃদ্ধির সবটুকু কৃতিত্ব কি এই বৃষ্টিভেজা শিশু হকারদের নয়? কজন লোক নিয়মিত বাসায় বাংলাদেশ প্রতিদিন রাখেন? বেশিরভাগই বিক্রি হয় এই ভাসমান বাজারে। অবশ্য বাসায় যারা দেন সেসব হকারদেরও অবস্থা খুব একটা ভালো এমন দৃশ্য দেখিনি। কিন্তু যাদের প্রাণান্ত পরিশ্রমে পরিপুষ্ট হয় একটি পত্রিকার ভবিষ্যত জীবন সেসব পত্রিকার মালিকদের কি কিছুই করার নেই এদের জন্য? বাংলাদেশে জাতীয় দৈনিকের সংখ্যা নেহাত কম নয়, তবে প্রথম সাড়ির পত্রিকাগলোকেও যদি ধরি এবং তাদের আর্থিক অবস্থাকে যদি বিবেচনা করি তাহলে তারা একত্র হলে এসব হকার-পরিবারের জন্য এমন ব্যবস্থা কি করতে পারেন না যাতে ওদের স্থায়ী কোনও পুনর্বাসন হতে পারে? হতে পারে স্বাস্থ্য সুরক্ষার ব্যবস্থা, সুচিকিৎসা ও শিক্ষার ব্যবস্থা? এটি হতে পারে সমন্বিত ভাবে অথবা এককভাবে। আমাদের পত্রিকাগুলোর মালিক গোষ্ঠী এমনই শক্তিশালী অর্থনৈতিক ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে যে তাদের এককভাবেই অনেক কিছু করার সম্ভব।
কিন্তু তা তারা করছেন না। কেন করছেন না? এটি কি তাদের চিন্তার অপারগতা? নাকি আরও দূরচিন্তা? তারাকি এমনটি ভেবেছেন যে এদের পুনর্বাসন করে দিলেতো আর এরা হকার থাকবে না, তখন কে বিক্রি করবে তাদের পত্রিকা? এমন চিন্তা কি আমাদের সকল শিল্পপতিদের মাথায় কাজ করে? শ্রমিকদের বেশি সুযোগ দিলে, বড় হয়ে গেলে তারাই শিল্পপতি হয়ে উঠবে? একটা শ্রেণীকে চিরকাল শ্রমিক বানিয়ে রাখা বংশানুক্রমিকভাবে এমন উদ্দেশ্যই কি তাদের? শুনেছি গার্মেন্টস শিল্প-মালিকেরাও নাকি এটা ভেবেই ন্যুনতম মজুরি নিম্ন পর্যায়ের রাখে। আমরা যতোই বলি দেশে বেকার সমস্যা আছে তারচেয়ে কি বেশি এটা সত্য নয় যে দেশে যথার্থ শ্রমিক সংকটও আছে! একজন গার্মেন্টস শ্রমিক এখন যে বেতন পায় তা দিয়ে সে না পারে ভালো একটা বাসা ভাড়া নিতে আর না পারে তাদের সন্তানদের উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করতে, ফলে তারা বংশপরম্পরায় শ্রমিকই থেকে যাচ্ছে; তৃতীয়-চতুর্থ শ্রেণীর শ্রমিক! এধরনের ইন্ডাস্ট্রিয়াল ভেলকির মধ্যে পড়েই কি আজ আমাদের দেশের এ অবস্থা? অবশ্য অনেক শিল্পপতি অনেক নিচু অবস্থান থেকেই এ অবস্থানে এসেছেন, হয়থ এ কারণেই তারা আরও ভালো বোঝেন সেসব মানুষের পোটেনশিয়ালিটি, তাই হয়ত সুযোগ দিতে ভয় পান। তবে সুযোগ তারা দেন বা না দেন কিছু লোক ঠিকই সুযোগ করে নেবে, ইত্তেফাকের অবস্থান কেড়ে নেবে প্রথম আলোরা, প্রথম আলোকে টেক্কা দেবে যুগান্তর, যুগান্তরকে পেছনে ফেলে এগিয়ে যাবে সমকাল, সমকাল-প্রথম আলোদের দেখে নিতে মাঠে আসবে কালের কণ্ঠ, আসবে আমাদের সময়ের যায়গা দখল করতে বাংলাদেশ প্রতিদিন। কারও অবস্থানই অটুট থাকবে না চিরকাল। তাই ভয় বা আশংকা থেকে দেশের বেশিরভাগ জনগোষ্ঠীর মেরুদণ্ড দূর্বল না করে সবাইকে সমানভাবে না হোক অন্তত একটা স্ট্যান্ডার্ড মানে ইন্নীত করার চিন্তা থাকা উচিৎ সব শিল্পপতি, বড় ব্যবসায়ীদের। তাদের ভাবা উচিৎ তাদরে শিল্পকারখানা না থাকলে যেমন আমরা কাজ করে খাওয়ার যায়গা পেতাম না, তেমনি আমরা সস্তায় তাদের মূল্যবান শ্রম না দিলে তারাও এসব শিল্পকারখানা গড়তে পারতেন না।
সেই ছোট্ট্র শিশুটার বৃষ্টিভেজা পরিশ্রমই যে আপনার রিজিকের সংস্থান করছে, আপনার গাড়ির ফুয়েল যোগান দিচ্ছে এটি ভুলে যাবেন না। একটি বাস্তব দৃশ্য মনে করুন। এখন গ্রামাঞ্চলেও বাসাবাড়িতে কাজ করার মানুষ পাওয়া যায় না। আমার আমাদের বৃদ্ধ মাকেই সব পরিশ্রম করতে হয়, মডার্ন বউরা এখন নিজের কাজ নিজেরাই করেন। করতে বাধ্য হন। কেন নেই মানুষ? তারা চলে যাচ্ছে গার্মেন্টসএ। তারা চলে অন্য কাজে। পারছেন কি ধরে রাখতে? মানুষ এখন বিদেশমুখী। দেশের বিশাল একটা অংশ এখন দেশের বাইরে কাজ করে। হয়ত সেদিন বেশি দূরে নয় যেদিন বাংলাদেশে আর কোনও শ্রমিকই খুঁজে পাওয়া যাবে না বিশেষকরে তৃতীয় চতুর্থশ্রেণীর কাজের জন্য। সেসময়ের কথা ভেবে এখনই চিন্তা করুন কীভাবে দেশের ভেতর কাজের পরিবেশ ধরে রাখা যায়। প্রতিভাকে কিছুটা সময়ের জন্য দমিয়ে রাখা যায় চিরকালের জন্য নিভিয়ে ফেলা যায় না। সুযোগ পেলেই সে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে। আজ কের শ্রমিকরা ন্যুনতম মজুরীর জন্য রাস্তায় নামে একদিন সর্বোচ্চ অফার নিয়ে দ্বারে দ্বারে ঘুরবেন শিল্পপতিরা।
এমন চিত্র এখনই দৃশ্যমান কিছু কিছু সেক্টরে। যেমন ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায়; চরম সংকট চলছে যোগ্য লোকের । আজ এই চ্যানেলেতো আরেকটু গ্রেট অফারে কাল অন্য চ্যানেলে। চলছে টাকার বিনিময়ে রদবদল। অথচ এই সাংবাদিকরাই একসময় ছিল পথের কুকুরের মতো অসম্মানের। বলা হতো যারা নাই কোনও গতি সে করে সাংবাদিকতা অথবা ওকালতি। পায়ের চ্যান্ডেল ক্ষয়করা পেশা এখন সমাজের সর্বোচ্চ দামি গাড়িতে চড়া পেশায় পরিণত হয়েছে।
অতএব দমিয়ে রাখার চিন্তা বাদ দিয়ে দেখুন সুযোগ দিয়ে দেশকে কতটুকু এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায়।
শেষে একটা নির্মম দৃশ্যের কথা বলি। সেই ছেলেটা, বৃষ্টিভেজা সেই শিশু হকারটি নামতে গিয়ে গাড়ির ব্রেক সামলাতে না পেরে সামনের সিটের এক ভদ্রমহিলার গায়ে আছড়ে পড়ে। ভদ্রমহিলা তার সাজসজ্জা নষ্ট হবার রাগে ছেলেটাকে কষে এক চড় লাগালেন, এবং এমন একটা ধাক্কা মারলেন যে অন্যরা না ঠেকালে খারাপ কিছু হয়ে যেত। মহিলার দু:খটা বুঝি। রেডি হয়ে যাচ্ছেন হয়ত গুরুত্বপূর্ণ কাজে আর তারবদলে তাকে যদি যেতে হয় আবার ড্রেস পাল্টাতে, সেটা কষ্টেরই বটে। কিন্তু ওরতো কিছু করার ছিল না। খিলক্ষেতের কাছাকাছি এসে গাড়িটা বেশ ফাঁকা হয়ে যায় আর কনক গাড়িটা এমনিতেই বেশ বড়। সামনের যায়গাটা বেশ ফাঁকা। ওতো ধরার কিছু পায়নি!
সবাই মহিলাকে ছিছি করলেন, কিন্তু কীইবা করার আছে, সমাজের নির্মমতা এখন এমন যায়গায় ঠেকেছে যে পরকীয়ার জন্য মা তার সন্তানকে খুন করতে দ্বিধা করে না। আর ওতো পথের ছেলে! ওরা জন্মেছে এর-ওর লাত্থিগুতো খাওয়ার জন্যই।...................
কোন মন্তব্য নেই
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন