A letter

মঙ্গলবার
রাত ২:১০ মিনিট
তাং ২৪. ১০. ০৭ ইং

আব্বু,
প্রথমেই আমার ভক্তিপূর্ণ সালাম গ্রহণ করবেন। আশা করি মহান আল্লাহর কৃপায় ভালো আছেন। আমি ভালো নেই।
পরসমাচার, আমি নাহয় একটা অন্যায় করেছি তার জন্য আপনারা আমাকে এতো কঠিন শাস্তি দেবন ভাবতে পারিনি। আপনি সারা জীবন মায়ের কথা শুনে নিজের জীবনটা নষ্ট করেছেন। আপনার বোঝা উচিৎ ছিল আপনার যা বুদ্ধি তার ১‰ আমার মায়ের নেই। আপনার মত করে যদি আমাদের চালাতেন তাহলে আমাদের জীবনটা অনেক সুন্দর হতো, পরের লাথি-গুতো খেয়ে চোট মন করে থাকতে হত না। আব্বু আমাদেরতো সব ছিল তবে কেন পরের অধীনে কুকুরের মত নির্লজ্জ জীবন কাটাতে হলো? আব্বু অনেক কষ্ট করেছি নানা বাড়িতে যা কোনাদিন আপনাকে বলিনি। কত চিঠি লিখেছিলাম কষ্টের কথাগুলো দিয়ে কিন্তু কখনও আপনার কাছে দেওয়া হয়নি; আপনি কষ্ট পাবেন বলে।

আব্বু মানুষের জন্ম, মৃত্যু, বিয়ে এই তিনটি সম্পূর্ণ আল্লাহর হাতে। যেভাবেই হোক, যত কাহিনী করেই হোক আল্লাহর শরিয়ত মোতাবেক মামুন আমার স্বামী। আপনারা সবাই ওকে মেনে নিয়েছেন তবে কেন ও আপনাদের কাছে মেয়েজামাইয়ের কোনও অধিকার পায়নি? আব্বু বলতে পারেন মামুন কোনদিক থেকে আপনাদের অযোগ্য? আপনি চেয়েছেন ফ্যামিলি ভালো, উচ্চশিক্ষিত, ভাল একটি ছেলে; তার সব যোগ্যতাই ওর আছে। আব্বু আল্লাহর পরীক্ষা কেউ বুঝতে পারে না। এই এক্সিডেন্ট এর জন্যতো মামুন দায়ী না। তাছাড়া ওতো কারও ঘাড়ের ওপর বসে খায় না। নিজের উপার্জনেই চলে। ও এর বাবা মার কাছ থেকেও কোনও সাহায্য নেয় না। [পৃষ্ঠা-১]

আমার শ্বশুর অনেক বড় মাপের মানুষ। আমার মা কখনও আমার ভালো চায়নি। সে নানাভাবে আমাকে ঠকিয়েছে। স্কুলে স্যারের প্রাইভেটের টাকা কখনও তার কাছে চেয়ে পাইনি। খাতা কলমও হিসাব করে দিয়েছে। কত কিপ্টামু করে খাতা শেষ করেছি। দুই তিন বছর পার হয়ে গেল এর মধ্যে তার কাছ থেকে কোনও পোশাক পাইনি। বিয়েল পর প্রত্যেক মেয়েই বাবা-মার কাছ থেকে কিছু পায়; আমি কী পেয়েছি বলতে পারেন?

মামুনের মা রোজার প্রথম দিকে তার বাড়িতে নেওয়ার জন্য ফোন করেছিল। শ্বাশুড়ী আমায় ডেকেছে শ্বশুর বাড়ির সম্মান দেওয়ার জন্য। আমার মা এতো নিষ্ঠুর! সেই ভাগ্য থেকেও আমায় বঞ্চিত করতে চেয়েছিল। এতোদিনে বুঝতে পেরেছি আমার জন্য সামান্য অনুষ্ঠান করাও আপনাদের স্বার্থে ঠেকে। আমার শ্বাশুড়ী অনেকবার চেয়েছে আমাদের বাড়ি যেতে; ছোটখাটো কিছু করে আমাকে নিয়ে আসতে। কিন্তু আমার মা সেটাও হতে দেয়নি তার ভয় হল আমার শ্বশুর শাশুড়ী গেলে তাদের খাওয়ানোর খরচ, তাদের যদি কোনও পোশাক দিতে হয় সেই ভয়ে। আমি কি সত্যিই আপনাদের মেয়ে? এতোটুকুও কি আশা করতে পারি না আপনাদের কাছে? মা সরাসরি তাদের নিষেধ করে দিয়েছেন।

আমার শাশুড়ী ব্যাংকএর মাধ্যমে টাকা পাঠিয়েছিলেন আমাকে শ্বশুরবাড়ি যাওয়ার জন্য। আমার এমন ডাইনী মা শ্বশুরবাড়ি যাওয়ার জন্য একটা টাকাও দেয়নি। মাত্র দু’শ টাকা দিয়ে ঢাকা পাঠিয়েছিলেন। ওই দু”শ টাকায় ঢাকায় আসতেও পথে অনেক সমস্যায় পরতে হয় হয়েছিল। সে ইচ্ছে করলে আর কিছু টাকা দিতে পারতো। আমাকে ভালো কোনও ড্রেসও দেয়নি, যা দিয়ে শ্বশুরবাড়িতে আপনাদের সম্মান বাঁচাতে পারতাম।[পৃষ্ঠা-২] আর গহনা বলতে ছিল শুধু শ্বাশুড়ীর দেওয়া সোনার নাকফুল। আব্বু বাড়ি থেকে যেদিন বের হলাম সেদিন তাছলি জোর করে ওর কসমেটিকস হারানোর জন্য আমাকে চোর বলে দাবি করে। আর আমার নিষ্ঠুর ভাই মনির যাকে আমি এতো ভালোবাসতাম সেও তাছলির সাথে তাল মিলালো। আব্বু আমার সাথে কেন এতো কিছু হলো বলতে পারেন?

শ্বশুর বাড়িতে যাওয়ার পর শাশুড়ী আমাকে হাসিমুখে বরণ করে নেয়। সে তারাতারি তার ভাইকে বাজারে পাঠিয়ে তিন কেজি মিষ্টি আনায় আমার উপলক্ষে গ্রামের সবাইকে মিষ্টিমুখ করাবে বলে। মার্কেটে গিয়ে দুটি সুতিশাড়ি নিয়ে আসে কারণ তাদের সম্মান রক্ষার জন্য তেমন ভাল কোনও পোশাক আমার ছিল না যা একটা নতুন বৌএর থাকে। আমাকে গোসল করিয়ে নতুন শাড়ি পরিয়ে হাতে সোনার রুলি, আংটি পরিয়ে দেয়, কানে তার দুলজোড়া খুলে আমাকে পরিয়ে দেয়। এতো আদর তারা কেন করকে আব্বু? এ আদর কখনও আমার কপালে স্থায়ী হবে না। কারণ আপনারা কেউ মামুনের কোনও সম্মান রাখেননি।

আব্বু আমার শ্বশুর ঠিক আপনার মত। পার্থক্য এতটুকু সে তার বিচক্ষণ বুদ্ধি দিয়ে সব সুন্দর করে গড়েছে, আর আপনি মায়ের ওপর ছেড়ে দিয়েছেন। সে এবার ঈদের দশদিন আগেই বাড়ি চলে আসে। আনন্দের বিষয় কি জানেন সে আমাকে বুকে জড়িয়ে ধরে কপালে চুমু খেয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে আদর করেছে। সে আমাকে বলে ‘লক্ষ্মী মা’। [পৃষ্ঠা-৩]

আব্বু আপনাদের অবহেলার জন্য আমার কপালে এই সুখটুকুও থাকবে না। please আব্বু আমাকে বাঁচান। এভাবে আমাকে মারবেন না। আপনারা মামুনকে কোনও সম্মান করেন না জামাই হিসেবে, এটা তাদের খুব লাগে। আমার শ্বশুর-শাশুড়ী খুব কষ্ট পেয়েছে এবার ঈদে। কারণ তার বড় ছেলেকে তার শ্বশুরবাড়ি থেকে ২০০০টাকা দামের জুতো ও ২৫০০টাকা দিয়ে প্যান্টশার্ট দিয়েছে, কিন্তু মামুন আপনাদের কাছ থেকে একটা সুতাও পায়নি। মামুন ঈদের দিন খুব মন খারাপ করেছিল। মামুন ঈদে কোনও নতুন পোশাক পড়তে পারেনি, আমার শ্বশুর শাশুড়ীর সামনে মাথা নিচু হয়েছিল। মামুন কেঁদেছে। আব্বু আমি কেন এভাবে বঞ্চিত হলাম? আমার শ্বশুর ঈদে আমাকে ২৫০০ টাকা দামের শাড়ি, মামুনের বড় ভাই ৮৫০টাকার থ্রিপিস, শাশুড়ী ৬৫০ টাকার সুতি শাড়ি দিয়েছে, তাছাড়া সিটি গোল্ডের ১২টি চুরী, গলার সেট, সাজুগুজুর সবকিছু কিনে দিয়েছে। হাতে পড়ার মেহেদি পর্যন্ত।

আব্বু আমি যেখানেই যাই মামুনের পরিচয় দিলে সবাই আমাকে কত সম্মান করে। ও সবার কাছে মাথা উঁচু করে চলতে পারে। সবাই ওকে কত সম্মান করে, দেখলে বুক ভরে যায়। শুধু আপনাদের কাছে কোনও সম্মান পায়নি। মামুন ওর বাড়ির আশপাশের মানুষের নানা প্রশ্নের উত্তর দিতে দিতে ও ক্লান্ত। সবাই ওকে ধিক্কার দেয় এমন বিয়ে করার জন্য। যে শ্বশুরবাড়িতে কোনও সম্মান পায় না।

মামা মামুনের সাথে কথা বলে না, আমার শ্বশুর-শাশুড়ী শুনে খুব কষ্ট পেয়েছে। আব্বু মামুন এখন আমাকে সহ্য করতে পারে না। [পৃষ্ঠা-৪] আর কয়দিন পর হয়ত আমার শ্বশুর-শাশুড়ীও আমাকে অবহেলা করবে। আব্বু please আমাকে বাঁচান। ওকে জামাইয়েল মর্যাদা দিন।

অনেকবার আত্মহত্যা করতে ছাদে উঠেছিলাম, কিন্তু পারিনি। কারণ আমার সাথে আরকেটা জীবন জড়িয়ে আছে। এই প্রথমবারের মত আপনি নানা হচ্ছেন। দু’মাস পার হয়েছে আমি যে প্রেগন্যান্ট তা আজ দুপুরে ডাক্তারের কাছ থেকে নিশ্চিত জানতে পারলাম। আমি খুব অসুস্থ। প্রায় মাসখানেক ধরে। আজ দুপুরে মামুনের কলিগের ডাক্তার বান্ধবী আমাকে দেখে এই সংবাদটা দিয়েছে। বড় কোনও ডাক্তারকে ইমিডিয়েটলি দেখাতে বলেছে। কিন্তু মামুন হয়ত তা করবে না কারণ আপনাদের অবহেলা আর খারাপ ব্যবহার পেতে পেতে ও খারাপ হয়েগেছে। এখনও সময় আছে আমাকে বাঁচান আর ওকে জামাইয়ের সম্মান দিয়ে বাড়িতে ডেকি নিন। তা নয়তো আর জীবনেও আপনার মেয়ে ও নাতিনকে দেখতে পাবেন না। ভাল থাকবেন। দোয়া করবেন।
-আপনার বড় মেয়ে।[টুকরো কাগজ ৫ও৬]

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.