পাঠক প্রতিক্রিয়া
পাঠক প্রতিক্রিয়া
মামুন মাহফুজ
জীবনে বহুবার ভালোবাসা আমার কাছে ধরা দিয়েছে। কখনও সেটা ছিল দয়ার, কখনও সেটা ছিল করুণার কখনও বা প্রেমের। কেউ আমাকে শুধুই ভালোবেসেছে...কেউ স্বাথের টানে... কেউবা...দায়বদ্ধতায়। |
প্রতিদন অফিস থেকে ফিরি রাত ১২টার পর তাই বাসায় এসে ইচ্ছে থাকলেও কিংবা প্ল্যান থাকলেও আর কিছুই করা হয়ে ওঠে না। কিছু ইমপর্ট্যান্ট খোঁজখবরি ফোন, একআধটু ডায়রি লেখা বা বিছানায় গড়াগড়ি করে দুপাতা পড়া কিছুই হয়ে ওঠে না। চারটা গেলা আর কম্পিউটারে কিছু ফাইল নাড়াচাড়া করা ছাড়া বিশেষ কিছু হয়ে ওঠে না। আজ বাসায় ফিরেছি ঘণ্টাদুয়েক আগে। অফিসে কাজের চাপ ছিল কম তারওপর নিউজ প্রেজেন্টার তাজকিয়ার গাড়িটা পেয়ে গেলাম। এই ঘণ্টাদুয়েক বাঁচাতে পেরে বেশকিছু কাজ সম্পন্ন করতে পারলাম। বিশেষকরে চানাচুর ম্যাগাজিনটা পড়ার সুযোগ নিলাম। আমি সাধারণত কবিতাগুলো পড়ি আগে, বিশেষকরে পরিচিতদের লেখাগুলো; আর কিছু লেখা পড়ে ফেলি পত্রিকাটা হাতে পাওয়ার পর নাড়াচাড়া করতে করতে। এভাবে নাড়াচাড়াপড়ার মধ্যে কোনও স্বাদ পাই না। উনুনে থাকা ব্যঞ্জনের সব স্বাদ যেমন আঙুলের মাথায় চেখে পাওয়া যায় না তেমনি। আর আমি যেহেতু কোনও লেখাকেই সমালোচনার তীক্ষ্ণ নজর ছাড়া এবং উপলব্ধি অনুভূতি ও কল্পনার নির্জাসে জারিত না করে পড়তে পারি না সেহেতু পড়তে আমার সময় লেগেই যায়। প্রথমেই হাতড়ে বের করলাম সংগীতা সরকারের লেখাটা। সে বরাবরই কবিতা লেখে। তার কবিতা গল্পের চেয়ে স্বাদে কোনও অংশে কম না। তাকে চানাচুরের লেখক বানানোর কারণও ছিল এটি। একদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের দেয়ালে তার বন্ধুদের সেঁটেদেয়া একটি দীর্ঘ কবিতা পড়ে আমি সঙ্গে সঙ্গে তাকে ফোন দেই। আবেদন জানাই এমন লেখা চানাচুরে দেওয়ার জন্য... সেই থেকে এখনও তার কবিতা আমাকে প্রবলভাবে টানে। এমন অকৃত্রিম জীবন্ত শব্দের কবিতা খুব কম লোকই লিখতে পারে। তার চেয়ে বড় কথা কবিতার আধুনিকতম লক্ষণ অকপট অভিব্যক্তি তার কবিতায় এমনভাবে প্রতিফলিত যে মনে হবে গল্পচ্ছলেই মনের সব কথা কেউ বলে গেল। এবারের সংখ্যায় ছিল তার ভালোবাসার মিউজিয়াম। জীবনে বহুবার ভালোবাসা আমার কাছে ধরা দিয়েছে। কখনও সেটা ছিল দয়ার, কখনও সেটা ছিল করুণার কখনও বা প্রেমের। কেউ আমাকে শুধুই ভালোবেসেছে...কেউ স্বাথের টানে...কেউবা...দায়বদ্ধতায়। এমন সরল অকপট স্বীকারোক্তি তার- কবির প্রতিটি কথাই চুলচেরা বিশ্লেষণের দাবি রাখে। ধরে নিচ্ছি ফার্স্টপারসনে যেহেতু লেখা; কবিতার ভিকটিম সে নিজেই। সম্প্রতি সে মাস্টার্স কম্প্লিট করেছে। জীবনের এতোটা সময়ে সে নিশ্চই বহুবার বহু রকমের ভালোবাসাই পেয়েছে। তার কোনওটা দয়ার? কেউ কি তাকে দয়া করে ভালো বেসেছে? একটি মেয়ের ব্যক্তিত্ব কতোটা টনটনে হলে সে টের পায় যে তাকে কেউ দয়া করছে! প্রায় একই রকম হলেও কিছুটা ভিন্ন ব্যঞ্জনা আছে করুণার মধ্যে। দয়া করুণা একসঙ্গে ব্যবহৃত হলে আমরা ধরে নিতে পারি সেটি নেহায়েত দ্বিরুক্তি বা পুনরুক্তিবদাভাস অলংকার। কিন্তু যখন দুটিকে আলাদাভাবে উল্লেখ করা হয় তখন অবশ্যই ধরে নিতে হবে নিশ্চই আলাদা কিছু কবি তাতে প্রকাশ করতে চেয়েছেন। দয়ার ভালোবাসাটি হয়ত তিনি পেয়েছেন তার বড়ভাই বা অভিভাবকগোছের কারও কাছ থেকে আর করুণার ভালোবাসা ছিল হয়ত বন্ধুবান্ধব রুমমেট টাইপের কারও কাছ থেকে। আহারে! মেয়েটি কতো দূর থেকে এসছে লেখাপড়া করতে, আমরা ভালো না বাসলে যাবে কোথায় এমনটি ভেবেছে হয়ত কেউ কেউ। কিন্তু আমার ধারণা ওকে কেউ দয়া বা করুণা দেখানোর সাহস কখনও করেনি। আর করলেও সেই ভালোবাসা ও মেনে নেয়নি। এপর্যন্ত আমি স্বাভাবিকভাবেই দেখছি কিন্তু এর পরের কথাটিতো আরও মারাত্মক! এ উপলব্ধি ও কী করে করলো? কখন করলো? ...কেউবা দায়বদ্ধতায়। দায়বদ্ধতার ভালোবাসাকে আমি উপলব্ধি করেছি সংসার জীবনে পরিপূর্ণ হবার পর। এর আগে এটি টের পাওয়া কঠিন। তবে কবিকে সাহসী না বলে উপায় নেই; যখন সে বলে আবার কখনও বা অশ্লীল শব্দে কামনার একান্ত মোহে...এটি একধরণের ইভটিজিং। মেয়েরা সাহস করে এ কথা কাউকে বলতে পারে না। তারচেয়ে বড় কথা হলো এরপরই সে স্বীকৃতি দিচ্ছে সবইতো ভালোবাসা। অর্থাৎ ভালোবাসার মুখোশেইতো এসেছে এসব! অথবা এসবকেও সে ভালোবাসা ভেবে একসময় পুলকিতও হয়েছে। এখানে আমি আরেকটা কথা বলতে চাই কামনার একান্ত মোহে। মোহ শব্দটাকে অনেকে লোভের সঙ্গে মিলিয়ে ফেলেন বরং আমরা এটিকে আলাদা করতে পারি এভাবে; একটি বস্তুগত অন্যটি ভাবগত বা অবস্তুগত। যেমন মেয়েটির টাকাপয়সার লোভে তাকে ভালো বাসলেন আর রূপের মোহে নিজেই পাগল হলেন। এছাড়া একটি প্রত্যক্ষ অন্যটি পরোক্ষ। এক্ষেত্রেও কবিকে তার শব্দচয়নের কৃতিত্ব দিতেই হবে।....একটি কবিতা নিয়ে সব কথা বলে ফেললে বাকী অনুভূতি অপ্রকাশই থেকে যাবে। তাই কবিতার আলোচনা শেষ করে গল্পের দিকে যাচ্ছি। ...
প্রথমেই পড়লাম সিজানুর রহমানের প্রক্সিলাইফ। অসম্ভব সুন্দর একটা গল্প! কল্পনার আত্যন্তিক বহি:প্রকাশ হলেও কথনের ঢং এ ছিল সাবলিল এবং চিরায়ত সৌন্দর্য। ক্লাস এইটে আমরা যখন হন্যে হয়ে ভালোবাসার মানে খুজেঁ বেড়াই; রঙ্গন তখন থেকেই চুটিয়ে প্রেম করে। এখানেতো লেখক বলতে পারতো যে ক্লাস এইটে থাকতে তারা ভালোবাসা কী বুঝতই না। এটি কেন সে বলেনি? বললে কি সেটি সত্য হতো? তারা ভালোবাসা বোঝেই না আর রঙ্গন চুটিয়ে...! এটি কি পাঠক স্বাভাবিকভাবে বিশ্বাস করবে? আর করবেই বা কেন? আজকাল ক্লাস সেভেনএইটের পোলাপানরাও যা পাকা পেকেছে! কিন্তু তাই বলে সবাই কি প্রেম করতে পারছে? পারছে না। কারওটা হয়ে হয়েও হয় না, কারওটা খানিকটা দানা বেধেও নানাপ্রতিকূলতায় একসময় ম্লান হয়ে যায়। সে হিসেবে ওর লাইনটাই পারফেক্ট এতে একদিকে যেমন অস্বীকার প্রকাশ পায় না তেমনি ওই বয়সে তারা পাকা প্রেমতরু হয়ে উঠেছিল বলেও প্রমাণ হয় না। বরং একটা আকাঙ্ক্ষা একটা দুর্বোধ্য ভয়, একটু পছন্দ একটু অপছন্দ ইত্যাদি মিশিয়ে একধরণের অবস্থা। তার আরেকটা লাইন উল্লেখ করি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেকটা সময় পার করেও আমাদের বন্ধুদের অনেকেই আছে যারা এখনও এটাই ঠিক করতে পারেনি, কোন মেয়েটাকে তাদের ভালো লাগে। আমার ধারণা এটি অনেকের ক্ষেত্রেই সত্য। যদিও এটিকে আমরা চরিত্রের দূর্বলতা মনে করি কিন্তু এটিই বাস্তবতা। একজন মানুষের মনের আকাশে তার আশা-আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী কতো রঙের ফুল-প্রজাপতিই উড়ে বেড়ায়! কতোভাবেই তাকে কনফিউসড করে! তাকে স্বপ্ন দেখায়! কারও হয়ত হাসিটা বেশি টানে কারও হয়ত ফিগারটা; কারও হয়ত আন্তরিকতা কাছে টানে কারওবা ব্যক্তিত্ব!সবমিলে সে থাকে সিদ্ধান্তহীনতার ঘোর অন্ধকারে...ন্যান্সি যাকে বলেছে বাহির বলে দূরে থাকুক, ভেতর বলে আসুক না...(এটির আরও অর্থ আছে সেদিকে না যাই)
এছাড়া সময়ের কিছু ব্যাপার আছে যা গল্পটিকে আরও বেশি সত্য করে তুলেছে বরং সত্য বলেই এই সৌন্দর্য সে প্রকাশ করতে পেরেছে। দিনটি আমার আজও মনে আছে, ৬ জানুয়ারি; আমার জন্মদিনের ঠিক তিন দিন পর। এভাবে না বলে সে সরাসরিই বলতে পারত ৬ই জানুয়ারি...আসলে দিনটিকে সে মনে রেখেছে তার জন্মদিনকে মাধ্যম করে। সেটি প্রকাশ করায় বর্ণনার গ্রহণযোগ্যতা এবং আবেদন অনেকগুন বেড়ে গেছে। পাঠক একটু চিন্তা করলেই বুঝতে পারবেন এই জন্মদিন উল্লেখ করে লেখক তার জন্মদিনটি সবাইকে জানাতে চাননি বরং অনেক না বলা কথাই বলে দিয়েছেন। আমরাকি ধরে নিতে পারি না সিজানের জন্মদিনটি যেমন ছিল তার দারুণ আনন্দের! ঠিক সেই আনন্দের পরপরই এলো এমন একটি কষ্টের দিন!এটিকেই তিনি বুঝাতে চেয়েছেন! এরচেয়ে বেশিও আপনি ভাবতে পারেন, ধরে নিন এই জন্মদিনে রঙ্গন কতো ধরনের মজা করেছে কিন্তু সেই রঙ্গন আর কোনওদিন বন্ধুর জন্মদিনে থাকতে পারবে না, অথচ সিজানের জন্মদিনতো আসবেই, যতোদিন সে বাঁচবে। আর এই স্মৃতিও তাকে কাঁদাবে। সাহিত্য হচ্ছে ভাববিনিময় বা প্রকাশের অলংকৃত মাধ্যম। একের দু:খ আনন্দ অন্যের সঙ্গে ভাগাভাগি করার মাধ্যম। তাই হয়ত দুর্বোধ্য বা দ্ব্যার্থবোধক কোনও কথাকে আমরা বলি ভাবের কথা। সাহিত্যে এমন ভাব বা ভাবের কথা থাকবেই যার ব্যাখ্যা হবে একেকজনের কাছে একেক রকমের।
গল্পের থিমটা সত্যিই সুন্দর। প্রচণ্ড ভালোবাসার বা কাছের মানুষের অকালমৃত্যু মানুষকে যেভাবে শকড করে তাতে এমন অনেক ভাবলুতার জন্ম হতেই পারে। |
সিজানকে ধন্যবাদ। তার গল্পের থিমটা সত্যিই সুন্দর। প্রচণ্ড ভালোবাসার বা কাছের মানুষের অকালমৃত্যু মানুষকে যেভাবে শকড করে তাতে এমন অনেক ভাবলুতার জন্ম হতেই পারে। যার অধিকাংশই হয়ত তার ফিরে আসা নিয়ে। আমার একটা কাজিন মারা গেছে ২০০৪এর এপ্রিলে। ওর মৃত্যুর পর কতোরকমের স্বপ্নই যে আমি দেখেছি...এমন স্বপ্নও আমি দেখেছি যাতে ওর ফিরে আসার যৌক্তিক ব্যাখ্যাও ছিল। হয়ত তাকে সায়েন্স ফিকশানও বলা হবে। সিজানও ওর প্রিয় বন্ধুকে কোনও না কোনওভাবে ফিরে পেতে চেয়েছে। হয়ত সে বিজ্ঞানের ছাত্র বলে সায়েন্সফিকশানে ভর করেছে। এ থেকে আমরা সত্যকে কতোটা খুঁজবো জানি না তবে গবেষণা চালিয়ে দেখতে পারি। মৃত মানুষের মস্তিষ্কতো মরে না। অনুভূতিও মরে না। পবিত্র কোরআনও তার ইঙ্গিত দিয়েছে, আল্লাহর পথে যারা শহীদ হয়েছে তাদের তোমরা মৃত মনে করো না, বরং তারা জীবিত। অবশ্য এর ব্যখাও বিভিন্নভাবে করা হয়। এমনওতো জানি আমরা কবরে শোয়ানোর পর কী কী আযাব হবে, আর কী কী প্রাপ্তি হবে। সেসব কীভাবে হবে? যদি অনুভূতি বা মস্তিষ্ক সক্রিয় না থাকে?
আমার কাজিনের জীবিত হয়ে ফিরে আসার স্বপ্নটার বিবরণ এবং আমার ফিলিংটা কবিতা আকারে আমার ডায়রিতে লিখে রেখেছি, যদি সুযোগ হয় চানাচুরের এই সংখ্যায় সংযোজনের অনুরোধ থাকবে সম্পাদকের প্রতি। আমার কেন যেন মনে হয় এভাবে মৃত্যুর পরও মানুষ ফিরে আসতে পারে।...
সবশেষে চানাচুরের সামগ্রিক একটি চিত্র তুলে ধরার চেষ্টা করছি।
অনূদিত গল্প কলার মূল্য লিখেছেন মিয়া মো: রাসিদুজ্জামান। গল্পটি নিয়ে অন্য কোনও মূল্যায়ন করবো না কারণ এটি মৌলিক রচনা নয়, অনুবাদ। তবে এধরনের অনুবাদ বাংলা সাহিত্যে নতুন মাত্রা যোগ করে। একটু ভিন্ন স্বাদ, ভিন্ন থিম ভিন্ন প্রকৃতি আস্বাদন করে আমাদের মেধা মনন চিন্তা চেতনা সাহিত্যজগৎ সমৃদ্ধ হয়। আমি অনুরোধ করবো প্রতি সংখ্যায় যেন এরকম একটি করে অনুবাদ গল্প ছাপানো হয়। যদি সম্ভব হয় নোবেলজয়ী সাহিত্যের অনুবাদ ধারাবাহিকভাবে ছাপানোর উদ্যোগ নেওয়া হোক।
চানাচুরের সবগুলো লেখা পাঠ করলেও সময় এবং পাতার অভাবে মন্তব্য করতে পারছি না তবে কিছু ভালোলাগা মন্দলাগা জানিয়ে দিচ্ছি যা একান্তই চানাচুর সম্পাদনা পরিষদের জন্য নিবেদিত।
চানাচুরের এবারের সংখ্যায় কিছু বানান আমাকে আশাপ্রদ করেছে যেমন বাঙালি, রক্ষণশীল, অনুভূতি, বেশি, চূড়ান্ত, পাখি, ইংরেজি, স্পর্শযোগ্য, কুলমর্যাদা জাতীয় বানানগুলো। অন্যদিকে হতাশ করেছে ভূল, ফেব্রুয়ারী, গরীব, বঙালী, চৈতালী, দক্ষিণা বানানগুলো এবং একারের মাত্রা দেয়া। যেমন বাতাস গল্পের শুরুর শব্দটা সোহা এটি লেখা হয়েছে ‡mvnv| একবার স্পেসবার চেপে শুরু করলেই শুরুর শব্দে এরকম মাত্রা দেখতে হতো না। খোকন ‡LvKb bq, শেঠজি ‡kVRx bq|
Avi GKwU K_v bv ej‡jB bq, kxwib Avn¤§‡`i evsjv fvlv I mvwn‡Z¨i †KŠwjb¨ †jLvwU LyeB Zvrch©c~Y© Ges my›`i n‡q‡Q| বাংলায় পড়তে এবং পড়াতে গিয়ে একই অভিজ্ঞতা উপলব্ধি আমারও হয়েছে। আমার আন্তরিক শ্রদ্ধা জানাচ্ছি তাঁকে।
কোন মন্তব্য নেই
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন