গল্প
সবকিছুতে সত্য বলার একটা প্রবণতা আমাকে পেয়ে বসেছে। যে কারণে একটা গল্পও লিখতে পারছি না। আবার গল্প লিখতে গিয়ে একধরনের ভালোমানুষী পেয়ে বসে তাই আর সবকিছু খোলাসা করে বলতে পারি না। তারওপর রয়েছে লাবণ্য’র ভয়। কিছু লিখতে বসলেই ও স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকে। অপূর্ণাঙ্গ কোনও লেখা কেউ দেখে ফেললে সে লেখা আর শেষ করা যায় না। স্বভাবটা অনেকটা হাতির মতো। হাতি নাকি বাচ্চা প্রসবের সময় খুবই গোপনীয়তা বজায় রাখে। কিন্তু যদি কোনওরকমে কেউ দেখে ফেলে আর তা যদি হাতি টের পায় বাচ্চাপ্রসব বাদ দিয়ে ওয়াচারকে ধাওয়া করে। সে যদি বাঁচার জন্য গাছে ওঠে, গাছ উপড়ে ফেলে হলেও তাকে ধরাশায়ী করে ছাড়ে। অনুরূপভাবে মুরগী লোকচক্ষুর অন্তরাল ছাড়া ডিম পারতে পারে না। মানুষের কথা আর কী বলবো! আর এসব গল্প-উপন্যাসওতো লেখকের সন্তান প্রসবের মতোই। অতএব একেবারে নির্জন পরিবেশ না হলে হয় না। সন্তান কেমন হবে না হবে, কালো হবে না ফর্সা হবে মা কি তা টের পায়? লেখকও জানে না তার গল্পটা কেমন হবে । লিখতে লিখতে একসময় একটা কিছু দাড়িয়েঁ যায়। দাড়িয়েঁ গেলে গল্প, না দাঁড়ালে লেখককে একদম বসিয়ে দেয়।
ইদানীং কাজের মধ্যে নতুন আরেকটা ডিস্টার্ব যোগ হয়েছে। এক মেয়ে তার পরিবারের সব সমস্যার কথা আমাকে জানায়। বেচারার স্বামী তার ওপর অবিচার করেছে, অন্যায় করেছে এসব সে ঘণ্টাব্যাপী শোনাবে। আবার বেচারার স্বামী যে কিনা ধরাই দিত না সেও একই কাজ করছে। তার যতো কথা বউকে বলার তা সে আমাকে শোনায়; তার প্রধান অভিযোগ স্ত্রী তার দ্বিচারিনী। তার হাতে স্পষ্ট প্রমাণ আছে স্ত্রীর অসতীপনার। দুজনেই আমাকে সমাধানকারী হিসেবে মেনে নিয়েছে অথচ আমি নিজেই নিজের সংসারটাকে ঠিকভাবে চালাতে পারি না। প্রতি বেলায় স্ত্রীর সঙ্গে ছাড়াছাড়ির ভাব হয়। হুটকরে আমার রাগ উঠে যায় সপ্তমে। আমার স্ত্রীর অভিযোগ আমার রাগ নাকি সপ্তমেই থাকে সবসময়, মাঝে মাঝে একটু নামে যখন নিজের কোনও স্বার্থ থাকে। সে অবশ্য বিশেষ একটা প্রয়োজনের কথা ইঙ্গীত করে। সে নিজেও কিন্তু নিজের ইচ্ছাপূরণকালে অনেক কিছু মেনে নেয়। যেমন টিভিতে তার প্রিয় হিন্দি সিরিয়াল দেখার সময় তার কতোরকমের আকুপাকু। যে আইলাভইউ শব্দটা তার মুখে বিয়ের পর একবারও শুনিনি সেটা সে ১হাজারবারও বলতে রাজি। আমার গায়ে হাত দিতে যার ভীষণ ঘৃণা এই সময় সে আমার পীঠটা চুলকিয়ে দিতেও রাজি হয়। সেদিন রাতে বেচারী এমন একটা ঠক খেলো! আহারে! রাত নয়টায় ছিল সাচি’র সিরিয়ালটা। আমি পিসিতে কাজ করছি, সে সাড়ে আটটা থেকেই শুরু করলো নানান প্রলোভন প্রবচন। দেও না তুমি ভালো, আই লাভ ইউ...ইত্যাদি। আমি বলালাম এখনও আধঘণ্টা সময় আছে এর মধ্যে যদি তুমি আমাকে সন্তুষ্ট করতে পারো তাহলে নাটকটা দেখতে দেবো। ও রাজি হয় বলো কী করতে হবে? আমি সুযোগে পীঠটা একটু চুলকিয়ে নেই। বেচারী আধাঘণ্টা পীঠ চুলকায় আর জিকিরের মতো করে আইলাভ ইউ উচ্চারণ করতে থাকে। একহাজারবার হলো কি না আমি জাস্টিফাই করিনি। কিন্তু যথাসময়ে শর্তমতো কম্পিউটার অফ করে নাটক দিলাম। কিন্তু মিনিট পাচেঁকের মধ্যে লোডশেডিং! তার সব স্বপ্ন পরিশ্রম ভণ্ডুল করে দিল। ইলেকট্রিসিটি চলে গেলে আমরা সাধারণত ছাদে চলে যাই। আর সেদিন ছিল ২০ অক্টোবর, ছিল পুর্ণিমা। ছাদে উঠে মিষ্টি হাওয়াত প্রাণটা আমার জুড়িয়ে গেলেও সে কিছুতেই ভুলতে পারছিল না তার ১ হাজার আইলাভইউ এবং পীঠচুলকানি বিনিয়োগের ব্যর্থথার কথা। একেতো বাণিজ্যবিভাগের ছাত্রী তারওপর বিনিয়োগ লস খেলো এটা কীকরে সে মেনে নেবে। সে রিকোয়েস্ট করলো আমি যেন অন্তত তার পীঠ চুলকিয়ে কিছুটা ঋণ শোধ দেই। কিন্তু আদৌ কি সেটি সম্ভব? শর্ত ছিল তার নাটক দেখার সময়ে আমি আমার কাজ বন্ধ করে কম্পিউটার ছেড়ে দেবো, আমিতো ছেড়েই দিয়েছি, এখন যদি লোডশেডিং এ তার কোনও ক্ষতি হয় তার দায়ভার সরকার নেবে আমি কেন নিতে যাব? সে বলে দেখো এরকম হলে কিন্তু দেশে বিনিয়োগ কমে যাবে। আমি বলি কমে যাবে কি কমে গেছে। এ সরকার বিনিয়োগবান্ধব সরকার নয়। সে তবু হাল ছাড়ে না, বলে অন্তত আইলাভইউটা ফেরৎ দেও! আমার মাথা অতো খারাপ হয়নি যে পরের দায় নিজের ঘাড়ে নিতে যাবো। বরং সরকারের বিভিন্ন সমালোচনা করে ঘণ্টাখানেক পর ইলেকট্রিসিটি এলে বাসায় চলে আসি।
কোন মন্তব্য নেই
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন