আমার বন্ধু রাশেদ বনাম আমার বন্ধু তানভির


দেশকে মেধাহীন করতেই ওরা বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করেছিল...কিন্তু সেই চক্রান্ত, সেই হত্যা আজও বন্ধ হয়নি.... খুব ছোটবেলায় জাফর ইকবালের আমার বন্ধু রাশেদ পড়ে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কেঁদেছি। সেটি ছিল আমার কৈশোরকাল। বইটা পড়তে পড়তে কেন যেন বারবার মনে হচ্ছিল রাশেদ আমারই বন্ধু। আর সত্যি সত্যি রাশেদ নামে আমারও একটা বন্ধু ছিল। শুনতাম ও মন্ত্রী তোফায়েলের আত্মীয়। সেই বন্ধুটাকে ক্লাস ওয়ানে পেয়েছিলাম। আমি ক্লাসে ঢুকতেই রাশেদ আমাকে জড়িয়ে ধরতো, চুমু খেতো। আমি খুব অপছন্দ করতাম চুমু খাওয়া। কিন্তু বুঝতাম ও আমাকে খুব ভালোবাসে। আমাদের দুজনার সাইজ ছিল এক। বোধয় সবচেয়ে পিচ্চি। ও আমার জন্য আচার কিংবা বাদাম কিনে বসে থাকতো। আমি এলে আমার সাথে শেয়ার করে খাবে। ও কিন্তু আমার বন্ধুই ছিল না, ছিল সবচেয়ে নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী। আমি ফার্স্ট আর ও সেকেন্ড। সাধারণত ক্লাসে ফার্স্ট যারা হতো তারাই ক্লাসক্যাপ্টেন হতো। কিন্তু স্যার যখন বললেন আমাকে ক্যাপ্টেন হতে হবে, আমি তখন বেঁকে বসলাম। আমার ক্যাপটেনসির দায়িত্ব নিয়েছিল রাশেদ। নানা কারণে আমার ছোটবেলার সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিল এই রাশেদ। আর জাফর ইকবালের গল্পে যে রাশেদ ছিল সে স্বাধীনতাযুদ্ধে মারা যায়। পাকিস্তানী সেনারা ওকে গুলি করে হত্যা করে। আমার বারবারই মনে হচ্ছিল আমার সেই বন্ধুটিই যেন শহীদ হয়েছে। ওই একটি বই পড়েই আমি জাফর ইকবালের ভক্ত হয়ে গেলাম। কোনও এক বই মেলা থেকে কিনলাম তার কিশোর সমগ্র। বোধয় ছয়টা কিশোর উপন্যাস ছিল তাতে। আমার বন্ধুরা আমাকে কোনও বই গিফট করলে জাফর ইকবালের বইই দিত। কিশোর থেকে আমি তরুণ হলাম জাফর ইকবালও যেন লিখতে শুরু করলেন সাইন্স ফিকশান এবং কাঁচ সমুদ্র’র মতো বই। একটা একটা করে শেষ করি আর মুগ্ধতা নিয়ে অপেক্ষা করি আরেকটা বই কখন বেরুবে। জাফর ইকবালকে আমি একজন লেখক হিসেবেই জানতাম। সে কারও ভাই, কিংবা সে কোনও রাজনীতির সাথে জড়িত কিংবা সে কাউকে বিশেষভাবে ঘৃণা করে এসবের কিছুই আমি জানতাম না। অনেক বড় হয়ে জানলাম তার মতাদর্শের কথা। তিনি কোনও রাজনৈতিক দলকে ঘৃণা করেন, কিংবা একটি রাজনৈতিক দলকে প্রিফার করেন এটি আমার কাছে কোনও বিবেচ্য বিষয় নয়। তিনি লেখক হিসেবে অতূলনীয় এই ছিল আমার কাছে শেষকথা। কিন্তু ধীরে ধীরে প্রকাশিত হলো তার অন্য নানান পরিচয়।.... এখন তিনি একজন টিচার তিনি একজন বুদ্ধিজীবী তিনি একজন বামপন্থী এর কোনও একটি পরিচয় নিয়ে আমার কোনও মাথাব্যথা, খেদ ছিল না। কিন্তু তিনি নাস্তিক এটিই যেন কোনওভাবে মানতে পারিনি। অনেক যুক্তি খুঁজতাম...তিনি নাস্তিক নন। বিরোধীরা প্রচার করে বেড়াচ্ছেন..এমনটিই ভাববার চেষ্টা করতাম। এমনকি তার ভাই জননন্দিত লেখক হুমায়ূন আহমেদের মৃত্যুর পর তিনি স্রষ্টার কাছে হাত তুলেছেন, জানাজায় অংশ নিয়েছেন এসব দেখেও আমি আমার সেই চিন্তায় যুক্তি যুগিয়েছি। তিনি নাস্তিক নন। নাস্তিক হলেই বা কী? একজন লেখক তার ব্যক্তিজীবনে যা-খুশি হননা কেন তাতে পাঠকের কী? কিন্তু নাস্তিক মানে যে আল্লাহকে বিশ্বাস করে না। যে মানুষ তার আল্লাহ, তার স্রষ্টাকে অস্বীকার করতে পারে তার চেয়ে অকৃতজ্ঞ কে হতে পারে? আর সেই অকৃতজ্ঞ মানুষ যদি খুব ভালো লিখেও থাকে তাকে নিয়ে এতো মাতামাতি করার কী আছে? জাফর ইকবালের সমালোচনা যারা করেন তাদের সাথে অযথা তর্ক করার অভ্যেসটা ছাড়লাম। কারণ প্রায় শতভাগ মুসলমানের এই দেশে আমিও একজন মুসলিম। আমার কাছে আমার বাবা-মা সন্তানের চেয়েও আমার ধর্মই বড়। আর এই ঘোষনা দেয়ার কারণেই আমি মুসলিম। আর যে মানুষ মুসলিম হয়েও স্রষ্টাকে অস্বীকার করেন তাকে বলা হয় মুরতাদ বা ধর্মত্যাগী। ধর্মত্যাগীদের ব্যাপারে সব মুসলমানই একাট্টা। কিন্তু বাংলাদেশে শতকরা একভাগ মুসলমানও শতভাগ মুসলিমচেতনার অধিকারী নয়, যাকে আমরা উগ্র বা জঙ্গী নাম দিয়েছি। ফলে জাফর ইকবালের মতো লেখকরা বাংলাদেশে অনায়াসেই নিরাপদে কাটিয়ে দিতে পারছেন। কিন্তু এই প্রায় শতভাগ মুসলমানের দেশে উগ্রবাদ! মুসলিম না থাকলেও কিছু উগ্রপন্থী ভক্ত আছেন সেটিই প্রমাণ পেলাম আজ। ভোরে একটা ফোনে ঘুম ভাঙল...ছেলেটা আমার ঘুমের কথা শুনে ফোনটা রেখে দিল। সকাল সাড়ে দশটায় আমি তাকে ফোন ব্যাক করলাম, আর তখনই শুনলাম সেই দুর্ঘটনার কথা। জাফর ইকবালের ভক্তরা তানভির আহমাদ আরজেল নামের একটা ছেলেকে পিটিয়ে হাত-পা ভেঙে দিয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যপ্লাইড ফিজিক্স এর চতুর্থবর্ষের ছাত্র আরজেল কী এমন লেখা লিখেছিল? আরজেলের সেই লেখাটি সম্ভবত ফেসবুকের সবচেয়ে বেশি পঠিত-পছন্দ এবং শেয়ারের মর্যাদা পেয়েছে। লেখাটিতে লাইক দিয়েছেন ২৫০০’র বেশি সাবস্ক্রাইবার। আর লেখাটি শেয়ার করেছেন প্রায় ১৫শ’ ব্যক্তি। কিন্তু কী ছিল তাতে?....যাই থাক একজন লেখককে নিয়ে লেখাইতো? এর বেশি কিছুতো নয়? একজন লেখক সবমানুষের প্রিয় নাও হতে পারেন। এমনকি কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে নিয়েওতো কতো সমালোচনা তার সাহিত্যভূবনে, ব্যক্তিজীবনে! বুদ্ধদেব বসু, আবু সয়ীদ আয়ূবের মতো সমালোচকরা সাহিত্যে বিশেষ স্থান পেয়েছেন রবীন্দ্রসমালোচক হিসেবে। সাহিত্যের সমালোচনার পাশাপাশি তার ধর্মীয় চেতনা, ব্যক্তিজীবনের নানা কর্মকাণ্ড নিয়েও নানা সমালোচনা লিখে গেছেন ইতিহাসবিদরা। এমনকি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা করে তিনি রীতিমত প্রত্যাখ্যাত ছিলেন এই বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে। তাই বলে কি বিশ্বজোড়া পাঠককূল সমালোচকদের মেরে হাত-পা ভেঙে দিয়েছেন? এমন দৃষ্টান্ত এই প্রথম। তানভিরের কাছে জানলাম ওকে কীভাবে ডেকে নিয়ে গিয়ে, ওরই বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ছোটভাই’রা ওকে মেরে, রড দিয়ে পিটিয়ে হাত-পা ভেঙে রাস্তায় ফেলে রেখে গেছে। পেটানোর পর হাসপাতালে পৌঁছানোর মতো মানবিকতা একসময় দেখতাম বড় বড় সন্ত্রাসীদের ক্ষেত্রেও। শত্রু হলেও অসুস্থকে সেবা দেওয়া, আহত মানুষকে প্রথমে সেবা তারপর অন্যকিছু....এরকম কিছু রিচুয়াল-রেওয়াজ ছিল, কিন্তু জাফর ইকবালের ভক্তদের কাছে সেটা পাওয়া গেলো না। হয়ত সারারাত রক্তক্ষরণে মারাই যেত ছেলেটি। কিন্তু এখানেই স্রষ্টার আসল পরিকল্পনা। লেখক হুমায়ূন আজাদকে তারই ছাত্ররা পিটিয়ে আহত করে রাস্তায় ফেলে রেখে যায়, আবার তারই ছাত্ররা তাকে হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে জীবন রক্ষা করে। লেখকের লেখায় পাঠকদের মাঝে নানান রকম প্রতিক্রিয়া হয়। কখনও দেখেছি ভক্তরা হুমায়ূন আহমেদের বাড়ি ভাঙতে গেছে তারই গল্পের নায়ক বাকেরভাইকে ফাঁসী দেওয়ায়, দেখেছি তসলিমাকে দেশ থেকে বিতাড়িত করা, হুমায়ুন আজাদকে মেরে রক্তাক্ত করা। কিন্তু লেখকের বিরুদ্ধে কিছু লেখার জন্য ভক্তদের এমন সন্ত্রাসী আচরণ বোধয় এই প্রথম? তবে কি জাফর ইকবাল শুধু লেখক নন? ভেতরে ভেতরে তিনি কোনও রাজনীতির ধারক-বাহক? যেই ছেলেগুলো তানভিরকে মেরে একটা একটা শিবির ধর, ধরে ধরে জবাই কর স্লোগান দিয়ে পৈশাচিক উল্লাস নিয়ে ফিরে গেলো নেশার আড্ডায়, তারা কারা? তার কি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। তাহলে তানভির কী? যাকে প্রতিটা টিচার জানে মেধাবী বলে, যে কি না ডুবে থাকে অগাধ বইয়ের ভান্ডারে, যার কাছে পাওয়া গেছে জামায়াত শিবিরের পরিবর্তে বঙ্গবন্ধু ও ইসলাম টাইপের বইগুলো...যার ধ্যান-জ্ঞান ছিল ইসলাম, যার ফেসবুকের সর্বশেষ (আহত হওয়ার আগে) স্ট্যাটাসে ছিল প্রতিটি মানুষকে ৭০০টাকার টিকিট কেটে খেলা দেখার পরিবর্তে নামাজের জন্য মসজিদে আসার আহ্বান। সে শিবির করে না। তার বাপও জামায়াত করে না। প্রায় শতভাগ মুসলমানের এই দেশে সে হতে চেয়েছিল শতভাগ মুসলিম চেতনাধারী। এটাই তার অপরাধ। যদি আল্লাহর কথা বলার কারণে বা মুসলিম জীবন যাপনের জন্য কাউকে এতো বড় মূল্য দিতে হয় তাহলেতো বলতেই হয় এই দেশ সবচেয়ে বড় সাম্প্রদায়িক দেশ। সেই সাথে এই আশংকাও করতে হয় যে এই দেশের প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধারাও এদের হাতে নিরাপদ নয়। কারণ এ যাবৎ টেলিভিশনে যতো মুক্তিযোদ্ধা দেখেছি, অসহায়, দরিদ্র, অবহেলিত তাদের অধিকাংশই দাড়ি-টুপি অলা। এমনকি নাটক-সিনেমাগুলোতেও প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধার পরনে দেখানো হয় হাতাঅলা স্যান্ডো গেঞ্জি। যা আগে মানুষপরতো নবীজির সুন্নত হিসেবে। কিছুদিন আগেও এই ডিসেম্বর মাসে মুক্তিযোদ্ধাদের একটি মানববন্ধনে দেখলাম অধিকাংশই টুপি-দাড়ি-পাঞ্জাবিপড়া। বোধকরি এনাদের প্রত্যেকের বাসায়ই পবিত্র কুরআন আছে। আছে অন্যান্য ইসলামী বই। হয়ত যুদ্ধাপরীদের বিচার শেষ করে এই মুক্তিযোদ্ধাদেরকেই ধরা হবে জামাত-শিবির হিসেবে। হয়ত তারাই হবেন ফেইক মুক্তিযোদ্ধা! ফেসবুকে তানভির ইসলামি কথা বলতো। ওর মুখে আছে পাতলা দাড়ি। অতএব ও শিবির! আর শিবির বলেই তাকে মেরে ফেলাটা আমাদের দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষার সর্বোচ্চ ব্যক্তির নির্দেশ। মন্ত্রী কোথাও বলেন নাই অপরাধীদের ধরা হোক, তার নির্দেশে তিনি যুবলীগকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন শিবিরবধের জন্য। এটি কি আইনসিদ্ধ? এখন মন্ত্রীর এই নির্দেশকে পুঁজি করে তাদের এই প্রশ্রয়কে পুঁজি করে কিছু সন্ত্রাসী বিরোধপক্ষকে শিবির সাজিয়ে মারধোর, গুম এবং হত্যা করছে। এতে যেমন ছাত্রলীগের হাতে ছাত্রলীগও মার খাচ্ছে তেমনি একদিন হয়ত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নিজেও ধরা খাবেন, কারণ তাকেও ইতোমধ্যে রাজাকার বা পাকিস্তানীদের সহযোগী বলে ফেলেছেন একজন চিহ্নিত মুক্তিযোদ্ধা। ধর ধর রাজাকার ধর বলে যদি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ওপর কেউ হামলা চালায় আমারতো মনে হয় না পুলিশ তাকে শেল্টার দেবে। দেখা যাবে পুলিশ তাকে তখন চিনতেই পারছে না, জয়বাংলার পবিত্র স্লোগানে কানে তালা লেগে গেছে। এবার আসি আমার বন্ধু তানভিরের কথায়। হাত-পা ভেঙে দেয়ার পর যখন ওর কাতরানোর কথা তখনও মুখে নিষ্পাপ হাসি। বলে আল্লাহ যাকে চায় এভাবেই বাঁচিয়ে রাখে। ও বলে আমি ভাবিনি ত্রিশটা ছেলে আমাকে রড দিয়ে মেরে ফেলে রেখে গেছে তারপরও আমি বেঁচে থাকবো। ওরা তানভিরকে প্রশ্রাব করার সুযোগ দিয়েছিল। তানভির সেই সুযোগে তওবা পড়ে নিয়েছিল। সন্ত্রাসীরা ওর দেরি দেখে বাথরুমের দরজা ভাঙতে চায়। তানভির প্রভুকে বলেছিল হে আল্লাহ আমাকে ওরা তোমার কাছে ক্ষমা চাইবার সুযোগটাও দিল না....তুমিতো জানো আমার অন্তর! আমাকে তুমি ক্ষমা করে দিও....তারপর বাথরুম থেকে বের করে এনে নিচে নামিয়ে বেধড়ক পেটানো। তানভির বলে ভাইয়া জানেন, আমি কোনও ব্যথা পাইনি....যখন দেখলাম সারা শরীর দিয়ে ঝরঝর করে রক্ত ঝরছে তখন নিজেই এক বুড়ো চাচা রিক্সাঅলাকে ডেকে নিজে রিক্সায় উঠে মেডিকেলে গেলাম।.... আমি জিজ্ঞেস করলাম তোমার সহপাঠীরা কেউ আসেনি দেখতে? না, ওদেরও তো জানে ভয় আছে। শিবির বলে পিটাইলে এই এক শান্তি, তাকে কেউ দেখতেও আসতে পারে না। তোমার টিচাররা আসেননি? কী বলেন? তাদের চাকরি থাকবে? হলপ্রভোস্ট? তারতো দায়িত্ব তোমাদের নিরাপত্তা দেয়া। ঠিক এই সময় পাশ থেকে একজন বলে ‘এইসব স্যারদের গোশতো টুকরা টুকরা করে খাবে ওই কুকুররাই’ কিন্তু তানভির বলে সবারই চাকরির চিন্তা আগে, পরে দায়িত্ব, নীতিবোধ.... আমার খুব খারাপ লাগে কথাটা শুনে। আমার শিক্ষকরাতো এমন পাষাণ ছিলেন না! আমি একবার এক্সিডেন্ট করেছিলাম, হাসপাতালে আসেননি এমন কোনও শিক্ষকই বোধয় ছিলেন না। বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাক্তার স্টাফ টিচার ছাত্র সব মিলে বিশাল একটা বাহিনী এলো আমাকে দেখতে। কারও মাথায় এই প্রশ্ন আসেনি আমি কোন দল করি কি না, আমার মুখে দাড়ি আছে কি না, আমি মুসলিম কি না.... সবাই যেন এটাই ভেবেছেন আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। তার পাশে আমাদের দাঁড়াতে হবে। এমনকি ট্রেজারার স্যার পর্যন্ত...আমার এক্সিডেন্টের হিস্যা বুঝে নিতে গাড়িমালিকের বাড়ি পর্যন্ত গিয়েছেন। তবে কি মনুষ্যত্ববোধ, মানবিকতা, নৈতিকতা, আদর্শ সব ধংস হয়ে গেছে। তাহলেতো বলতেই হয় পৃথিবী ধংসেরও সময় হয়ে গেছে। স্যাররা হয়ত ভাবছেন কোন না কোন ছাত্র কার হাতে না কার হাতে মার খেয়েছে...তাতে এতো আদিখ্যেতার কী আছে? সেইসব স্যারদের বলতে চাই...আদিখ্যেতার কিছু নেই।...লাখ লাখ মেধাবী ছাত্রকে টপকিয়ে যেই ছেলেটি আপনার বিদ্যাপীঠে পড়তে আসে তাকে দেখে রাখার দায়িত্ব আপনারই। অমর একুশে হলের মহামান্য হলপ্রভোস্টকে বলতে চাই আপনার হলের মধ্যে এমন একটি সন্ত্রাসী ঘটনা ঘটলো, আপনি তার কোনও প্রতিকার করলেন না, আইন কি আপনাকে ছাড়বে? কড়ায়গণ্ডায় উসুল করে নেবে আপনার এতোকিছু করে বাঁচানো চাকরির হিস্যা। কোনও সরকারই চিরন্তন নয় এই গণতান্ত্রিক! শাসনব্যবস্থায়। বিবেকের কাঠগড়ায় আপনারা দাঁড়াবেন না, তাই আইনের কাঠগড়ায় অবশ্যই দাঁড়াতে হবে। তানভিরের এই ঘটনা, এর আগে আবুবকরের মৃত্যুসহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘটে যাওয়া প্রতিটি ঘটনার জন্য সংশ্লিষ্টদের কৈফিয়ত একদিন না একদিন দিতেই হবে। আর জাফর ইকবাল স্যারকে বলব....আপনার সমালোচনা করায় যে ছেলেটিকে আপনার ভক্তরা পিটিয়ে হাত-পা ভেঙে দিল আপনার উচিৎ তাকে দেখতে যাওয়া। এবং আপনার ভক্তদের উদ্দেশ্যে কিছু বলা। হয় তাদের বাহবা দেবেন নয়তো কি তিরস্কার করবেন; সেটি আপনার বিবেকের ওপর ছেড়ে দেয়া। আজ সত্যিই খুব কষ্ট পেলাম। আপনার লেখা আমার বন্ধু রাশেদ পড়ে যে কষ্ট পেয়েছিলাম; আমার বন্ধু তানভিরকে দেখে ঠিক সেই কষ্টটাই পেলাম....একজন জীবন দিল দেশের স্বাধীনতার জন্য। আর একজন পঙ্গু হলো স্বাধীন দেশে বাকস্বাধীনতা চর্চার জন্য। আপনি কি একটিবার ভেবে দেখবেন কারা স্বাধীনতার শত্রু? কারা বাংলাদেশ থেকে মেধাবীদের উপড়ে ফেলতে চায়? কারা দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠগুলো একেরপর এক সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করে দেশকে মেধাহীন নেতৃত্বহীন করে ভবিষ্যতের গোলামে পরিণত করতে চায়? এই তানভির একদিন বড় বিজ্ঞানী হবে। হবে দেশের বড় সম্পদ। ওর বাবা-মা ওকে পড়তে পাঠিয়েছে যাতে দেশের জন্য সম্পদ হতে পারে। তা না করে যদি রিক্সাঅলা বানাতো প্রতিমাসে অন্তত হাজার তিনেক টাকা পেত বাবা-মা। এই তানভিরের পেছনে সরকারের ব্যায় আছে মাসে অন্তত ৫০হাজার টাকা। তার বিনিময়ে দেশ একটা পঙ্গুকে বরণ করবে? নাকি একজন পদার্থবিদ চাইবে? প্রাচ্যের অক্সফোর্ডে এই সন্ত্রাস বন্ধ না হলে মানুষ পড়া-লেখা ছেড়ে রিক্সার প্যাডেলে পা রাখবে। তখন কী মূল্য থাকবে আপনার মতো জ্ঞানী শিক্ষকদের? আপনি বুকে হাত দিয়ে বলুন আপনি কেমন ছাত্র চান? যে ছাত্র আপনার কোনও লেখার সমালোচনা করে যুক্তিপূর্ণ লেখা লিখবে, তেমন ছাত্র নাকি যে আপনার লেখার জবাব দেবে বন্দুকের নলে?....আপনি কি সৌভাগ্যবান আপনার পক্ষে লড়বার মতো সন্ত্রাসী ভক্ত পেয়ে? আমার মনে হয় প্রথম আলোতে আপনার আবার একটি লেখা দেয়া উচিৎ; যার শিরোনাম হবে....তোমরা যারা আমাকে ভালোবাসো, তারা কখনও হাতে অস্ত্র তুলে নিও না...। আশা করি আপনার শক্তিশালী লেখনী অবশ্যই বাংলাদেশের সোনার ছেলেদের হাতের অস্ত্র কেড়ে নিয়ে, তাদের হাতে কলম-খাতা তুলে দেবে। সেই অপেক্ষায় থাকলাম। রাত ১টা ঊনিশ। রোববার দিবাগত রাত।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.