পরিবর্তনের গল্প!

পরিবর্তনের গল্প!
Change thyself’

[পরিবর্তন হলো জীবনের অনিবার্য প্রতিক্রিয়া।
পরিবর্তন মানেই জীবন। স্থিরতা হলো মৃত্যুর সমান। বের্গসঁ’র গতিবাদ জানতে গিয়ে যে উপলব্ধি আমার হয়েছে তাতে দৃঢ়ভাবে বলতে পারি পরিবর্তনই হচ্ছে সত্য, জীবন মানে গতি আর গতি মানে পরিবর্তন।
আমার জীবনেও হঠাৎ এক মহা পরিবর্তন ঘটেছিল; আজ সেই ঘটনাটা বলবো-]


তখন আমি হলে থাকি, বঙ্গবন্ধু হলে। এক বড় ভাই তার এক জুনিয়রকে দিয়ে খবর পাঠালেন তার রুমে যেতে। সাধারণত সেই বাড়ি থেকে এলে আমার রুমে এসে একবার হানা দেন। এবার ডেকে পাঠালেন!...
আমি অনিতি বিলম্বে হাজিরা দিলাম।
কেন ডাকলেন? জরুরি কিছু?
আরে বয়, বয়! তার হাস্য-পরিহাস্য অভ্যর্থনা!
আমি রেগে গেলাম!
সিরিয়াস কিছূ না হলে এভাবে ডেকে পাঠানোর অর্থ কী? যত্তোসব! যাই, একটা জরুরি কাজ ফেলে এসছি,
দাঁড়া! এতোদিন পর এলাম, ভাবলাম তোদের সবার সাথে একটু দেখাসাক্ষাত করি। ...
আচ্ছা আমি আসতেছি। কাজটা একটু শেষকরে আসি?
দাঁড়া না একটু বস! মা কিছু পীঠা পাঠাইছিল। বেশি নাই। তোর রুমেতো আবার সারাদিনই লোকজনের সমাবেশ থাকে! এখানেই খেয়ে যা।
আমি পীঠা খেতে বসলাম। একটুপর সে নাড়ু বের করলো, তারপর সবেদা, আমার প্রিয় ফল, পেঁপে, আমড়া। একটা একটাকরে বের করছে। আমি বললাম
নেক্সট! সে আরেকটা আইটেম বের করে...
এভাবে নেক্সট বলতে বলতে একসময় খাবারের বদলে বেরিয়ে আসে একটা অ্যালবাম।
বলতো এটা কে?
একটা মেয়ের ছবি?
কে?
তানিয়া।
তুই বুঝলি কীভাবে?
আপনার চেহারার সাথে মিল আছে।
বলতো এটা কে? ভালো করে দেখে বলবি! বলে সে উঠে গেলো।
এটা সাইফুল!
কীভাবে জানলি?
এই যে নাম লেখা!
ও!
এরপর দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে-
ওর জন্য একটু দোয়া করিস!
কেন, কী হয়েছে? অসুখ?
না, কিছু হয়নি।
চোখ তার ছলছল। কণ্ঠ রুদ্ধ।
বলেন না কী হইছে?
হারায়ে গেছে!
মানে? কীভাবে?
অভিমান করে চলে গেছে।
মারা গেছে?
মাথা দুলিয়ে সায় দেয়।
কীভাবে?
অভিমান! আমি মারছি বলে...
আব্বুর কাছে যাওয়ার জন্য পীড়াপীড়ি শুরু করলো। এস.এস.সি. পরীক্ষাটার কথা বলে ঠেকিয়ে রেখেছিলাম। পরীক্ষা শেষ হওয়া মাত্র মাথা খারাপ হয়ে গেলো। ও যাবেই যাবে। কোথায় যাবে? যার কোনও ঠিকানা নাই, বেএচ আছে কি মরে গেছে তাও নিশ্চিত নই, সেই বাবাকে ও কীভাবে পাবে?
ঘরের ভিতর ভাঙচুর শুরু করে। বিরক্ত হয়ে আমি আচ্ছারকম মাইর লাগালাম। তারপর থেকে একদম চুপ! সন্ধ্যার সময় বাসায় এসে দেখি ফ্যানের আংটায় কাপড় পেঁচিয়ে ঝুলছে......

ছেলেটার চেহারা খুব সুন্দর। হালকা গোলাপি রঙের পাঞ্জাবি গায়ে। হেসে আছে। ছবিটার তাকিয়ে খুব কষ্ট হচ্ছিল।
বড়ভাই মেরেছে বলে রাগ করে আত্মহত্যা করবে?
রুমে ফিরে নিজেকে শান্ত রাখতে পারছিলাম না। নিজের ছোটভাই শাকিলের কথা মনে পড়লো। ওকেতো আমি কাজে অকাজে ব্যাপক মারধোর করি, ও জিদে ফুঁসতে থাকে, কাঁদে না পর্য়ন্ত! আর ওকে মারতে মারতে না কান্দানো পর্যন্ত আমি অমানুষের মতো মারতে থাকি....
ওওকি একদিন রাগ করে...
না না না তা হতেই পারে না। না আর আমি ওকে মারবো না।
না পড়ুক নামাজ, না পড়ুক, যত্তো দুষ্টামি করুক, যত্তো অন্যায় করুক আর আমি ওর গায়ে হাত তুলব না।
খুব কষ্ট হচ্ছিল। রুম আটকিয়ে চিৎকার করে কাঁদলাম। ওর ছবি বের করে দেখলাম। তখন মোবাইলের সচরাচরযুগটা শুরু হয়নি, যে কথা বলে মনটা একটু শান্ত করবো!
ওর রেকর্ড করা ফাজলামি সঙ্গীতগুলো বেরকরে শুনলাম। অথচ আমার সিডি প্লেয়ার ধরায়, এবং একটা গানের ক্যাসেট ইরেজ করে ফেলায় সেদিনও অনেক মাইর খেয়েছিল। একটা সিডি প্লেয়ার ছিল আমার। বিশাল! তিনটা সিডি এবং দুইটা মেনুয়াল ক্যাসেট চালানো যায়, রেকর্ডিং করা যায়। একটা কর্ডলেস মাইক্রোফোন আছে সেটা দিয়ে বাথরুমে বসেও গান রেকর্ড করা যায়। যারা কিছু বলতে লজ্জা পেতো তাদের বাইরে পাঠিয়ে দিতাম, মুখ লুকয়ে বরার জন্য। সেটা দিয়ে সারাদিন ইচ্ছেমতো যা মনে এসছে তাই বলছে, সুরা কেরাত গান, আবৃত্তি বক্তৃতা সব ছিল!....
রাতটা কেটে গেলো স্মৃতি হাতড়িয়ে আর অনুশোচনায়।
আমি আমার কথা রেখেছি।
এরপর থেকে আর শাকিলের গায়ে হাত তুলিনি।
আব্বা অথবা আম্মা ওর দুষ্টুমিতে অতীষ্ট হয়ে আমাকে নালিশ দিত, কিন্তু আমি যখন কিছু বলতাম না তখন তারা খুব অবাক হতেন! শাকিল নিজেও খুব অবাক হতো!....
রহস্যটা আমি মাকে বলে দেই। যেন তারাও ওর সাথে বাড়াবাড়ি না করে। এ বয়সের ছেলেমেয়েরা খুবই সেন্টিমেন্টাল!

এরপর থেকে শাসনের কাজটা চলতো ভয় দেখিয়ে। ওর সঙ্গে অভিমান করে থাকতাম, দু’দিন কথা বলতাম না। এতেই মোটামুটি কাজ হতো। কিন্তু যেদিন মা আসল রহসৗটা ফাঁস করে দিল সেদিন থেকে ও যেন ইচ্ছেকরেই আরেকটু বেপরোয়া হয়ে উঠলো।...
আমাকে পরীক্ষা করতে চায় খেপিয়ে।
তা কি আর হয়? আমি যে সত্যি বদলেগেছি....
এখন অবম্য ওও অনেক বদলে গেছে। মারধোরতো দূরে থাক রাগটি পর্যন্ত করা যায় না। ওর কাছে যা অন্যায় মনে হয় তা কখনই করে না।...
আসলে নিজে না বদলালে বদলায় না কিছুই।
নিজেকে বদলাও, বদলে দাও সব।
চেইঞ্জ দাইসেলফ!

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.