আজ সারাদিন মনটা খুব খারাপ ছিল


আজ সারাদিন মনটা খুব খারাপ ছিল। শরীরটা ভালো নেই, বোধয় সেজন্যই। মন হয়ত শরীরের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করেছে। আজকাল ঐক্যব্দ্ধভাবে কতোকিছু হচ্ছে। রাজনীতিতে যতো দলাদলি তারমধ্যে আরো বেশি জোটবদ্ধতা। সাহিত্যিকদের যতোটা লড়াই টেরপাই লেখনীতে ঠিক ততোটাই উষ্ণতা কিন্তু মঞ্চে। কেউ কারও বিরুদ্ধাচরণ করছে না। বরং আল মাহমুদতো একবার এমনও বললেন তার প্রতিদ্বন্দ্বী কবি শামসুর রাহমানও নোবেল প্রাইজ পাওয়ার যোগ্য। বাংলাদেশের অন্তত ৫জন কবি নোবেল পেতে পারে। আজ আল মাহমুদের জন্মদিন ছিল। মিডিয়াগুলো একেবারে দায়সারাভাবে এবং একপ্রকার অবজ্ঞার ভেতর দিয়েই পালন করেছে। অথচ আব্দুল্লাহ আল মামুনদের নিয়ে কতো মাতামাতি; যেন তাকে নিয়ে কিছু একটা না করলে নিজেরা আনকালচারড, বন্য, ক্ষ্যাত হয়ে যাবে। আর তাকে নিয়ে কিছু করতে পারলেই যেন মহা সংস্কৃতিবান বলে লোকে মাথায় করে নাচবে। অথচ তার কাছের লোকেরাই তার স্মরণমঞ্চ থেকে নেমে ফেরদৌসী মজুমদারের সঙ্গে তার সম্পর্ক নিয়ে কুৎসিত ইঙ্গিত করে হাসছে একগাল। মানুষের ভেতর আর বাহির এক নয়। তাহলে শরীর খারাপ বলে মন কেন খারাপ? নাকি আমি বা আমার শরীর এখনও কালচারাল হতে পারেনি।

রাজনীতি আমাদের ধর্ম সাহিত্য দর্শন এবং সংসারে এমনভাবে ঢুকে পড়েছে এড়াবার উপায় নেই। মনটা ভালো বলেই লিখতে বসেছিলাম। কিন্তু প্রসঙ্গটা কেমনকরে অন্যদিকে চলে গেল?
সারাদিনের খারাপ থাকা মনটা হঠাৎ ভালো হলো কী করে সেটাই বিরাট একটা ব্যাপার। আমার সাধারণত মন খারাপ থাকলে ক্রমশ: সেটা বাড়তেই থাকে। দেখা গেলো কোনও কারণে মন খারাপ তাই অহেতুক পরিবারের অন্যদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করছি, খিটমিট করছি। এমন হয় কেন? রাগ ক্রোধ ঘৃণা ভালোবাসা এসব নাকি সংক্রামক! এই যে আর্জেন্টিনার এতো ভক্ত এরা কি আর্জেন্টিনার খেলা দেখে ভক্ত? কয়জন আছে? যারা একেবারেই এ প্রজন্মের; তারাকি দেখেছে আর্জেন্টিনার সেই ঐতিহাসিক ফর্ম? দেখেনি, এরা শুনে শুনে অন্যরা সাপোর্ট করে দেখে নিজেও করে। আজ বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলা। যাদের কথা ভাবেনি কেউ, যাদের পক্ষ-বিপক্ষ নিয়ে মারামারি কাটাকাটি করেনি কেউ এমন দুটি দল জীবনের প্রথম ফাইনালে অবতীর্ণ! এটাইতো হওয়া উচিৎ! প্রতিবার ই সেই তথাকথিত দুয়েকটি দলই কাপ ছিনিয়ে নেবে এটাই যদি অনিবার্য হয় তাহলে অন্য দলগুলো কেন আসবে খেলতে? তবে এটা বোধয় শুধু খেলাতেই সম্ভব! রাজনীতিতেতো এমন ঘটতে দেখি না? হয় বিএনপি না হয় আওয়ামী লীগ! এর বাইরে ক্ষমতা ছোঁয়ার উপায় নেই। যদিও এবার ওয়ানইলেভেনের সরকার চেষ্টা করেছিল এই মোহ ভাঙতে! কিন্তু শেষে নিজেরাই কেমনকরে যেন এদেরই একজনের প্রেমে পড়ে গেলেন। নাকি জনগণকে বোঝাতে তারা ব্যর্থ হয়েছিলেন? তাদের সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা ছিল দ্রব্যমূল্য! এইক্ষেত্রে হাসিনার কি কোনও সাফল্য আছে? প্রশ্নটা অবশ্য কর্মীদের করে লাভ নেই। তাদের উল্টা করলেও যা চিৎ করলেও তা। জিজ্ঞেস করতে হবে জনগণকে তবে নিরপেক্ষ জনগণ যেন দেশের সবচেয়ে হাস্যকর শব্দ এখন। জামায়াতের মিছিলে যারা যোগ দেয় তারা দলীয় কর্মী নেতা ক্যাডার, খালেদার সমাবেশে আসে নেতা-কর্মী-জনগণ আর আওয়ামী লীগের মিছিলে  জাতির অকুণ্ঠ সয়লাব। আসলে সবই দলীয় লোক। রাজশাহীতে ফারুক মরেছে তাই সন্ত্রাসীদের ধরতে চষে ফেলেছে জামাত-শিবিরের ঘাটিঁ। জামাত শিবিরের বাড়িঘর নেই। আমাদের মিডিয়াগুলো জামাত-শিবিরের জন্য কোনও বাড়ি বরাদ্দ দেয়নি। বাড়ি-ঘর থেকে খুচিয়ে খুচিয়ে জামাত- শিবির সন্দেহে শত শত মানুষ গ্রেফতার কেরেছে পুলিশ এমন কথা পত্রিকা বা টিভিতে পাই না। পাই এখনও অক্ষত প্রায় অর্ধশত ঘাটিঁ টাইপের শিরোনাম। আমার খুব দেখতে ইচ্ছে করে শিবিরের ঘাঁটিগুলো কেমন। মিডিয়া কীভাবে আমাদের সাপোর্ট নিয়ে নিজেদের বক্তব্য-এজেন্ডা বাস্তবায়ন করে তার আরেকটি নিদর্শন ওয়ানইলেভেনের সরকার। সাংবিধানিক পরিভাষায় যা ছিল তত্ত্বাবধায়ক সরকার তা এখন ওয়ান ইলেভেনের সরকার। এক্ষেত্রে সামন্তপ্রভূদের দাস্য ভালোবাসাও দায়ী। তাদের সঙ্গে মিলিয়ে নিতে পারলেই যেন নিজেরা কালচারাল হয়ে উঠি, জাতে উঠি। হিন্দুরা যেমন কুলীন দেখে বিয়ে দেয় জাতে উঠে। আর এই পদ্ধতির আশ্রয়ে একদল সামন্তপ্রভূ চিরকাল দুধের সর খায়, মধু খায় ছোবড়া রেখে যায় অচ্ছুতদের জন্য।

খেলার সাইত্রিশ মিনিট চলছে এখনও কোনো গোল হয়নি কোনও পক্ষে। আশা করি ফার্স্টহাফে গোল হবে না। হয়ত দ্বিতীয় হাফেও হবে না। খেলা গড়াবে টাইব্রেকারে। ১৯৯৪ সালের মতো। প্রবল উত্তেজনা নিয়ে খেলা দেখতে দেখতে ফজর হয়ে গেলো, তারপর ক্লাসে যেতে পারলাম না পরদিন বেঞ্চে দাঁড়িয়ে সেই পাপের প্রায়শ্চিত্য করলাম। আর পড়বি পর মালির ঘাড়ে...পড়ালেখায় মোটামুটি ভালো ছিলাম তাই কোনওদিন ক্লাসে মার খেয়েছি শাস্তি পেয়েছি মনে করা কঠিন কিন্তু সেদিন বেঞ্চে দাড়িয়েঁ আছি আর সেই সময় ক্লাসের সামনে এসে দাঁড়ালেন বড় খালু আর তার বড় ছেলে মনির ভাই। ক্লাস নাইনে তখন। টনটনে আত্মসম্মানবোধে কী যে কষ্ট হয়েছে মেনে নিতে। তারা কখনই আসেননি এই প্রতিষ্ঠানে। তারা কেন আমার বাবাই এসছেন জীবনে চার থেকে পাঁচবার। আর কোনও আত্মীয়স্বজনকে পাইনি সেই হোস্টেল জীবনে। এলো এমন দিনেই, যেদিন আমি প্রায়শ্চিত্য করছি নগ্নভাবে। অবশ্য সান্ত্বনার দিক ছিল, ক্লাসের অধিকাংশ স্টুডেন্টই ছিল বেঞ্চের ওপর দাঁড়িয়ে। আজ সেসব টিচারদের হুঙ্কার দিয়ে জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে হয় কোথায় গেছে তোমাদের সেসব বেত? কোথায় গেছে তোমাদের সেই শাসন? কে বলেছিল জাতিকে শুরতেই মেরুদণ্ডহীন বানাতে এভাবে নির্যাতন করে পড়ালেখা শেখাতে? শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড! কিন্তু যে শিক্ষা কেড়ে নেয় শিশুমনের আনন্দের খোরাক, কেড়ে নেয় কিশোরের স্বাধীন বিনোদনের ইচ্ছা! সে শিক্ষা কি কোনও কাজে আসে? আজ আমি যে চাকরি করে নিজের পরিবার চালাই। প্রতিমাসে ১৮-বিশহাজার টাকা উপার্জন করে এগিয়ে নিচ্ছি অন্যদের পড়ালিখা সেই চাকরিই আমাকে বলে খুটেখুটে খেলা দেখতে। আমি সাংবাদিক। খেলার বিট করি। স্যারদের কাছে জানতে ইচ্ছে করে কী শিক্ষা সেদিন দিয়েছিলেন; যা না দিলে হতো না? সেদিন যে অপমানিত আমি হয়েছিলাম; এবং চরম অপমানিত হয়েছেন আমার বাবা মা- সবাই ভাবতেন পড়ালিখায় আমরা সবার সেরা। আর সেটা নিয়ে আমার বাবা মার বেশ খানিকটা গর্বও ছিল, কিন্তু খালুরা সে ঘটনা চেপে রাখেননি, মায়ের সঙ্গে আফসোস করে বলেছেন খুব খারাপ লেগেছে তোর ছেলেকে দেখলাম কানধরে বেঞ্চের ওপর দাড়িয়েঁ আছে।.... এটুকু বলাইকি তার জন্য যথেষ্ঠ ছিল? তিনিও একজন শিক্ষক তিনি বলতে পেরেছেন? এমন শাস্তি শিশু-কিশোরদের মনে চরম নেতিবাচক প্রভাব ফেলে? এতে ওদের মাঝে আত্মহত্যার প্রবণতা বাড়ে আর নয়ত আত্মসম্মানবোধ কমে যায়। কমতে কমতে এক পর্যায়ে মেরুদণ্ডহীন, ব্যক্তিত্বহীন গরু-গাধাতে পরিণত হয় যা পরোক্ষভাবে একটি জাতিকেই ক্ষতিগ্রস্ত করে। এসব শাস্তি দিতে নেই। এবং খেলা দেখার জন্য তো নয়ই। বরং শেখানো উচিৎ খেলাও একটি শিল্প হতে পারে। খেলাও একটি মাধ্যম যা দিয়ে দেশকে বিশ্বের কাছে পরিচিত- মুল্যবান করে তোলা যায়। একটি জাতি বিকাশ লাভ করে বিশ্বপরিমণ্ডলে। আমার খালু যেমন সেদিন প্রতিবাদ করতে পারেন নি তেমনি প্রতিবাদ করতে পারেন না অনেক অভিভাবকরাই। সম্ভবত একইভাবে তাদেরও মেরুদণ্ড ভেঙে গেছে বহু আগেই। আর আমার খালুতো নিজেই শিক্ষক, নেজেও হয়ত লাঠির আগা দিয়ে পড়ান।
অবশ্য আজকের মন ভালো হওয়ার সঙ্গে এই প্রসঙ্গটার অন্যরকম একটা মিল আছে। খালুর একেবারে ছোট যে মেয়েটা; মিনা ওর নাম। আজ প্রায় দেড়বছর পর ও ফোন দিয়েছিল। আমি যখন ইন্টারমিডিয়েট ফার্স্ট ইয়ারে পড়ি, ও তখন ক্লাস এইটে কিন্তু নানানজনের কাছে আমার কথা, আমাদের কথা শুনতে শুনতে ওর ভেতর একটা জগৎ তৈরি হয়েছিল। বুদ্ধি হবার পর সেই ক্লাস এইটের বছরই প্রথম দেখা হলো ওর সঙ্গে। এবং ওর দেখা পৃথিবীর সেরা ব্রিলিয়ান্ট, সেরা সুন্দর মানুষ নাকি আমি।  আমি সেসময় সানগ্লাস ব্যবহারের কৌশলটা আয়ত্ত করেছিলাম। কীভাবে জিনসের প্যান্ট পড়ে হাঁটতে হয়, কীভাবে ছবি তুলতে হয়, কীভাবে আবৃত্তির ঢংএ শুদ্ধ উচ্চারণে কথা বলতে হয়,  কীভাবে ভ্যারাইটি প্রসঙ্গ নিয়ে যারতার সঙ্গে আলোচনায় মেতে উঠতে হয় এসব আয়ত্ত্ব করেছিলাম, আর জানতাম কীভাবে সুন্দর করে লিখতে হয়। মেয়েটা আমার প্রেমে পড়লো এবং সে প্রেমকে লুকিয়ে রাখলো....লুকিয়ে রাখতে রাখতেই একদিন তার বিয়েও হয়ে গেলো....বিয়ের পরই প্রকাশ পেলো আসল ঘটনা। জানাজানি হলো হাত কেটে আমার নাম খোদাইয়ের ঘটনা।
সেই মিনা আজ ফোন করে আমাকে চমকে দেয়। প্রথম টোনটাই এমন যেন কিছুক্ষণ আগেই ওর সাথে কথা হয়েছে।
কী করছেন?
কে?
কে? নাম বলতে হবে?
বলেন
দেখেনতো চিনতে পারেন কি না?
পারছি না, তবে চেনা চেনা লাগছে!
পার্বতী
কোন পার্বতী?
থাক আর চেনা লাগবে না।
ঠিক এসময় ওর কণ্ঠে আঞ্চলিক টোন পেয়ে বুঝলাম কে।
তারপর তের মিনিট কথা হলো। তারপর থেকে মনটা ভালো।
একটা মানুষ চিরকাল আমাকে ভালোবেসে যাবে এটা ভাবতেও ভালো লাগে।
বললাম এতোদিন ফোন করোনি কেন?
আপনি না বলেছেন ঢাকা না আসলে ফোন দিতে না!
তাহলে কি ঢাকা আসছ?
না,
তাহলে ফোন দিলা কেন?
জানি না, আর কতো পর করে রাখবেন? এখনইতো চিনতে পারছেন না, আর কিছুদিন পরতো বাপ-মা চৌদ্দগুষ্ঠির পরিচয় দিলেও চিনবেন না।
নিজের নামটাই বলতে, তাহলেতো বুঝতে অসুবিধা হতো না।
কেন আপনি যে নামে ডাকেতন সবাই যে নামে আমাকে খেপাতো সেটা মনে নেই?
মনের ভেতর এখন কতো পলি-ময়লা জমে গেছে। সেসব ধুলো পরিষ্কার না করলে হয়।
সেজন্যইতো আজ ঝাড়ু দিলাম।
কিন্তু শলার ঝাড়ু কেন?
যেন বেশি মনে থাকে।
তারপর ওর পরিবারের অন্যান্য খোঁজখবর নিয়ে ফোন শেষ হলো। সেইসঙ্গে ওর ভাই মনির ভাইয়ার প্রতিও রাগ ঝারলাম খানিকটা। ওও সায় দিল বড় হলে সবাই পাল্টে যায়।

পার্বতী একবার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল আমার কাছে পালিয়ে চলে আসবে। বিয়ের তিনবছর পর্যন্ত এই ফন্দি ওর মনে ছিল। কিন্তু সেসময় মোবাইলের এমন পরিধি ছিল না। যে কারণে আমার ট্রেস জানা অতো সহজ ছিল না।
একটা প্রশ্নে ও খুব আঘাত পেলো...
তোমার সংসার আর বাড়েনি?
না,
বাড়বে না?
জানি না!
সন্তান নিচ্ছ না কেন?
আল্লাহ দেয়নি (গভীর দীর্ঘশ্বাস)
চেষ্টা করেছ? নাকি নিজে খেয়ে দেয়ে খালি মোটা হতে চাও?
কীভাবে চেষ্টা করবো?
এসময় আমি একটু লজ্জায় পড়ে গেলাম! সাথে সাথে অন্যদিকে ঘুরিয়ে নিলাম!
ডাক্তার দেখিয়েছ?
কতো ডাক্তারইতো দেখালাম!
কী বলে ডাক্তার?
জানি না।
সমস্যা কার? তোমার না তোমার বরের?
সমস্যা আমারই।
ল্যাপারেস্কোপিক চিকিৎসায় অনেকেই ১৯-বিশ বছর পরও মা হয়েছে। এখন এটা কোনও সমস্যাই না। সত্যি করে বলো সন্তান চাও কি না।
ও আবার দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে। আমি জানি এর কারণ। সংসারে কী নির্মম নির্যাতন চলছে ওর ওপর দিয়ে, এই সন্তান সন্তান করে। আম্মু বলেছে, প্রায়। নাকি মারধর করে বাড়ি ফেলে রেখে যায়। তবু আমি জানি না এমন ভাবটা বজায় রাখার জন্য ফান করলাম। ও বলে-
সন্তান আবার কেউ না চায়?
অনেকেই চায় না, অনেকেতো নিজের শরীর নষ্ট হবে,  চাকরি করতে পারবে না, ফ্রি চলতে পারবে না এ আশংকায় বিয়েই করে না। আবার বিয়ে করলেও দুজনে অফুরন্ত সময় নেয় আনন্দ করার জন্য। অথবা সন্তান হলেও সিজারে নেয়, ব্রেস্ট ফিডিং না করে আলগা খাওয়ায়। হচ্ছে না এসব?
ও কিছু বলে না। আমিই আবার বলি
আবার কেউ কেউ কী করে জানো?
কী করে?
এ সময় আমার মনে হলো এ প্রসঙ্গে ওর কথা বলতে ভালো লাগছে না। তবু শেষ করার জন্য বললাম
কেউ কেউতো পরকীয়ার জন্য নিজের ৫-৬ বছরের সন্তানকেও খুন করে পরকীয়া প্রেমিকের হাত ধরে চলে যায়। সাম্প্রতিক ঘটনা আয়শা হুমায়রার উদাহরণ দিলাম।
খেলার ৭৯ মিনিট গ্যাছে এখনও গোল হয়নি কোনও পক্ষে। মনে হয় রাত জাগতেই হবে।
মিনাকে কী একবার ফোন দেবো? ও নিশ্চই ঘুমিয়ে গ্যাছে? ওর কি ভালো লাগে এসব খেলাধুলো?  ওর স্বামী ট্যুরে গেছে। কিন্তু অন্য কেউ সঙ্গে থাকলে মাইন্ড করবে। এতো রাতে কোনও মেয়েকে ফোন দেয়া মানে ভালো উদ্দেশ্য নয়; এটাই বুঝবে সবাই। কেবল কৌতূল মেটাবার জন্য সেটা কেউ বিশ্বাস করবে না। হয়ত ওর ননদ-দেবর-দেবর বউরা কেউ না কেউ এটা জানবে, জেনে ওর স্বামীর কানে লাগাবে ভাবী যেন অনেক রাতে কার সাথে কথা বলে....হয়ত সে আমাকে ভালো জানা সত্ত্বেও শুধুমাত্র রাতে ফোন দিয়েছি এ কারণে ঠিকই ওর ওপর টর্চার চালাবে।
ফোন দেয়ার চিন্তা বাদ দিলাম।
এমনওতো হতে পারে, ওও ভাবছে ফোন দেয়ার কথা কিন্তু আমার স্ত্রী মাইন্ড করবে এই ভয়ে দিচ্ছে না!
একটা মিসকল দেয়া যায়। অথবা অন্য নাম্বার থেকে ফোন দেয়া যায়!
৮৮ মিনিট চলছে খেলার। টানটান টেনশন! নেদারল্যান্ডসের পক্ষে একটা গোলের প্রবল সম্ভাবনা কিন্তু সেই মুহূর্তে অফসাইড ডিকলার। ওরাকল ভবিষ্যতবাণী করেছে স্পেন জিতবে। এ পর্যন্ত তার সব ভবিষ্যতবাণী শতভাগ সফল হয়েছে এবারও হবে এমনটাই ভাবছে সবাই। তবে আশা করেছিলাম নেদারল্যন্ডস জিতবে। কারণ নেদারল্যন্ডসের মধ্যেই আমি ব্রাজিলের ছায়া দেখেছি সেদিন। ব্রাজিলের সঙ্গে কোয়ার্টার ফাইনালে।
খেলার টাইম শেষ অতিরিক্ত তিনমিনিট চলছে। দেখা যাক।
বেশ কিছু সুবর্ণসুযোগ দুদলই মিস করেছে।
এখন শুরু হবে অতিরিক্ত ত্রিশ মিনিটের খেলা।
গান বাজছে পিসিতে। কেন আশা বেধে রাখি....
পার্বতীর একটা স্মৃতি মনে পড়ছে খুব।
বিয়ের পর একবার আমাদের বাড়িতে আসে ওরা। এ দেখাটা ছিল প্রায় ৫ বছর পর। এর মধ্যে কতো কাহিনী ঘটে গেছে! কিন্তু সেবার ও আসার পর সবাই ওকে এমন আপনভাবে টেনে নিল আর ওর ও যেন কী একটা যোগ্যতা ছিল! হয়ত ও যাকে চেয়েছে তাকে পায়নি এই সিমপ্যাথী অথবা বিয়ের এতোবছর পরও ভালোবাসার মানুষকে ভুলে যায়নি এই আত্মত্যাগেই অন্যরা মুগ্ধ ছিল। কিন্তু বিদায়ের সময়টা ছিল কেমন যেন, আমার খালা বলেছেন সোমবার যাবেন, সোমবারই যাবেন। এতো করে যে সবাই বলল নানা নানু আমরা সবাই! কথাটা ভাবতেও এখন বুকটা ফেটে যাচ্ছে। ওরা আমাদের বাড়িতে মাত্র দুদিন থাকল। তারপর একসঙ্গে নানাবাড়ি এলাম। নানাবাড়ি বলতে মায়ের নানাবাড়ি। আমার মা-খালারা ছোটবেলা থেকে এতিম তারা মানুষ হয়েছেন মামাদের স্নেহে। সেই মামা বা নানাদের বাড়ি এলাম। আমাদের আগমনে পুরো বাড়িতে যেন বিয়ের উৎসব শুরু হলো।
খেলার সাতমিনিট ওভার। গোলশূন্য।
নানা যে সে কি খুশি। এতোবছর পর এতোগুলো নাতি-নাতনিসহ ভাগ্নিদের কাছে পেয়ে। তার আনন্দের প্রকাশ অন্যরকম। নানা কথা বলেন খুব কম! কারও সাথেই কথা বলেন না। একান্ত প্রিয় মানুষ না হলেও ইয়ার্কীও করেন না। মিনার সঙ্গে অনেক ইয়ার্কী করলেন। আমার মা কে খেপালেন, খালাকে খেপালেন ছোটবেলার কিচ্ছা তুলে। আমরাও যেন আমাদের মা খালাদেরে সাথে সাথে একেবারে বাচ্চা হয়ে গেলাম। যেখানে মায়েদের বয়সই নেমে গেছে ১১-১২ বছরে সেখানে আমরাতো নস্যি। মামাখালারা সব একাকার! কে কার সমবয়সী কে কার বন্ধুর মতো এসব কোনও ব্যবধানই থাকল না। নানা এই বেলা ইয়াবড় একটা মোরগ এনে বলছে এই দেখতো মুরগীর বাচ্চাটাতে তোদের হবে কি না? নানু না দেখে, শুনেই খেপে গেলেন! এতোগুলো মানুষ আর আপনি... কিন্তু মোরগ দেখে আমার মা নিদ্বিধায় সেটাকে ছাগল বানিয়ে ফেললেন। মামা এই খাশি আপনি কয় টাকা দিয়ে কিনছেন? ব্যাস হয়ে গেলো, মোরগ না এটা খাশী। হৈ চৈ পড়ে গেলো সবার মধ্যে। আসলেই খাশী। খালু দুষ্টুমি করছে- এটাকি মামা অর্ডার দিয়া বানাইছেন?
নানা বলে- কার মাপে অর্ডার দিমু, তোমার মাপতো এর চেয়ে ছোট। হাসির রোল বয়ে গেলো সবার মধ্যেই।
সেই নানা আর নেই। বছরও হয়নি মারা গেছেন। তখন নানাকে এভাবে অনুভব করিনি। তখন বুকে বিঁধে ছিল মিনাদের চলে যাওয়া আর ক্ষোভ জন্মেছিল আমার খালার একরোখামি।
মিনা সারক্ষণ আমার আশপাশে থাকত। খালা এটা ভালো চোখে দেখতেন না। বিবাহিত মেয়ে অন্য ছেলের প্রতি আকৃষ্ট হবে কেন? তিনি কী ভুলে গেছেন ভালোবাসলেও বা প্রেমের অপরাধ করলেও আমরাতো ভাইবোনও!
তিনি আটকাতে পারেনি একই লেপের ভেতর আধশোয়া হয়ে আমাদের গল্পে মেতে থাকা। কারণ অন্য খালারা যাদের বয়স আমাদের কাছাকাছি তারা একচেটিয়াভাবে আমাদের উৎসাহিত করে যাচ্ছেন। আমাদের দুজনকে নিয়েই তাদের যতো হৈ-হল্লা। খালারাই ঘুরতে বেড়িয়ে আমাদের দুজনকে দিলেন এক রিক্সায়। এবং আমি যখন ওকে একটা শাড়ী কিনে দিলাম ও যখন কিছুতেই নিচ্ছিল না তখন খালারাই ওকে তা নিতে বাধ্য করলেন, দায়ভার নিলেন- কেউ জানবে না।

অতিরিক্ত ১৯ মিনিট শেষ!

কিন্তু সেই খালারা আটকাতে পারলেন না ওদের সোমবারের চলে যাওয়া। ও মায়ের সঙ্গে বাড়াবাড়িতে যায়নি তবে কৌশল করেছিল থেকে যাবার। লঞ্চ ছাড়ার একমিনিট আগেও ঘর থেকে বের হয়নি বিভিন্ন অজুহাতে, বোরকা পাচ্ছি না, জুতা কই, কানের দুলটা রাতে ঘুমানোর পর কই পরলো এসব অজুহাতে। তুই কি সব হারানোর আর টাইম পাইলি না। লঞ্চ ছাইড়া দিলতো।
এবং লঞ্চ ছেড়েও দিল, কিন্তু ততক্ষণে লোক পাঠিয়ে দশমিনিট আটকে রাখার ব্যবস্থা করে ফেলেছে মামারা। সব কংস মামার দল। ক্ষমতার দাপট দেখাতেই তারা একাজটা অতি উৎসাহ নিয়ে করেছে।
অবশেষে মিনার পাটাও পড়লো, এবং সবার শেষে। কিন্তু সবার চোখেমুখে অন্যরকম একটা ভাব। ঠিক ও যখন গিয়ে লঞ্চের সিঁড়িতে পা রাখলো সবাই হাততালি দিয়ে উঠলো। সবাই হাঁ করে তাকিয়ে ছিল, দেখছিল একটি মেয়ে একটি ছেলে হাত ধরে এগিয়ে আসছে লঞ্চ ছেড়ে যাচ্ছে কোনও তাড়া নেই সবাই যেন উপভোগ করছিল মুহূর্তটা। কেউ ভেবেছে মেয়েটি লঞ্চে উঠতে পারবে? ছেলেটির হাত ছেড়ে?
 যত্তোসব পাগলামি। থাকার ইচ্ছে থাকলেকি এতো নাটক করার কোনও দরকার ছিল?
স্পেন একগোল দিয়ে ফেলেছে। খেলা ২৯ মিনিট শেষ! কী ছায়া হতাশার নেদারর‌ল্যান্ডস প্লেয়ারদের। ঠিক আমরই মতো। ৩:

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.